রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষার একটি অতিপরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত শব্দ হলো টাউট। আমাদের যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দটি পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে প্রয়োগ করেছি। টাউট শব্দটির সঙ্গে আরেকটি শব্দ প্রায়ই জুড়ে থাকে সেটি হলো—বাটপার। মূলত টাউট-বাটপার দুটো শব্দই জালিয়াতি বা প্রতারণা অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু টাউট শব্দের মূল অর্থ কী? এটি কি প্রথম থেকেই প্রতারণা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? বাংলা ভাষায় টাউট শব্দটি ঠিক কোন সময়ে প্রবেশ করেছে? আজ জানব, টাউট শব্দের ইতিবৃত্ত।
টাউট ইংরেজি শব্দ। শব্দটি বিশেষ্য এবং বিশেষণ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অভিধানে টাউট শব্দের যে অর্থগুলো পর্যায়ক্রমে লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো হলো দালাল; খদ্দের বা মক্কেল সংগ্রাহক; ভদ্রবেশী প্রতারক; (ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায়) ঘোড়ার দক্ষতা সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহকারী। শেষোক্ত অর্থটিই মূলত টাউট শব্দের প্রাচীনতম অর্থ। এ অর্থটির উপযোগিতা বর্তমানে এতদঞ্চলে নেই বললেই চলে। যদিও বর্তমানে ভদ্রবেশী প্রতারক বা দালাল অর্থেই টাউট শব্দের প্রধানতম অর্থটি ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিককালে কেউ যদি কথা দিয়ে কথা না রাখে বা ক্রমাগত মিথ্যাচার করে, তাকেও টাউট বলেই সম্বোধন করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বলা যায়, এটিও টাউট শব্দের অর্থের একটি বিবর্তিত রূপ।
ভারতীয় উপমহাদেশ এবং কালের পরিক্রমায় স্বাধীন বাংলাদেশে টাউট শব্দের উৎপত্তি কবে হলো, সেদিকে লক্ষ করলে আমরা জানতে পারি, ১৮৭৯ সালে প্রথম টাউট আইন (দ্য টাউটস অ্যাক্ট, ১৮৭৯) প্রণীত হয়। এই আইনের ৩ নম্বর ধারায় টাউটের সংজ্ঞা ও ৩৬ নম্বর ধারায় টাউটের তালিকা প্রণয়নের বিধান রয়েছে।
পরবর্তীকালে ১৯২৬ সালের বার কাউন্সিল অ্যাক্ট, ১৯৬৫ সালের দ্য লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অ্যাক্ট, এই আইনের সবগুলোতেই টাউট-সম্পর্কিত ধারা যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭২ সালের বার কাউন্সিল অর্ডারে টাউট-সম্পর্কিত সরাসরি কোনো ধারা না থাকলেও টাউটিংয়ের পর্যায়ে পড়ে এমন সব কর্মকাণ্ড করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ তো গেল ব্রিটিশ আমলের কথা। এবার দেখি, আমাদের আইনে টাউট সম্পর্কে কী বলা হয়েছে।
‘টাউট আইন ২০২৪’-এ টাউট সম্পর্কে বলা হয়েছে, নিজে আইনজীবী না হয়েও কোনো আইনজীবী বা আইন পেশাজীবীদের মতো যদি কোনো ব্যক্তি বিচারপ্রার্থীদের মামলা বা মামলাসংক্রান্ত কোনো কাজ অর্থের বিনিময়ে গ্রহণ করে বা কোনো বিচারপ্রার্থীকে এ বিষয়ে প্রস্তাব দেয়, কোনো বিচারপ্রার্থী প্রতিষ্ঠানের মামলা বা মামলাসংক্রান্ত কোনো কাজ অর্থের বিনিময়ে গ্রহণ করে বা এ বিষয়ে প্রস্তাব দেয় অথবা কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি বা রাজস্ব আদালত বা সরকারি দপ্তর বা কোনো পেশাজীবীর দপ্তর থেকে সেবা প্রদানের আইনি পদ্ধতি থাকার পরও দ্রুত ও সহজে কাজ করিয়ে দেওয়ার প্রলোভনে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ করে বা অর্থ গ্রহণের চেষ্টা করেন, তবে তিনি ‘টাউট’ বলে গণ্য হবেন।
একই সঙ্গে এই আইনের আওতায় আদালত, থানা, হাসপাতাল, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস ও সরকারি লাইসেন্স প্রদানকারী দপ্তর, রোড ট্রান্সপোর্ট অফিস, রেলওয়ে স্টেশন, যানবাহনের টার্মিনাল, সরকারি সেবা প্রদানকারী যেকোনো অফিস, পাবলিক রিসোর্ট প্রভৃতি স্থানকে টাউটদের বিচরণক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নতুন এই আইনে কেবল টাউটের কাজের পরিধি বেড়েছে এমনটি নয়, এতে অর্থদণ্ড ও সাজার মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে।
সুতরাং আইনের ভাষায় টাউট শব্দটির সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করা হলেও আমাদের যাপিত জীবনে মিথ্যাচার-প্রতারণা-জালিয়াতি-জোচ্চুরি-লোক ঠকানো ব্যক্তিকেই টাউট বলে অভিহিত করা হয়। এমনকি প্রতারণা বা মিথ্যাচারের মাত্রাভেদে টাউট শব্দটি গালির মাত্রা ছাপিয়ে কখনো কখনো ব্যক্তি-পরিচয়ের মানদণ্ডরূপে পরিগণিত হয়।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষার একটি অতিপরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত শব্দ হলো টাউট। আমাদের যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দটি পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে প্রয়োগ করেছি। টাউট শব্দটির সঙ্গে আরেকটি শব্দ প্রায়ই জুড়ে থাকে সেটি হলো—বাটপার। মূলত টাউট-বাটপার দুটো শব্দই জালিয়াতি বা প্রতারণা অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু টাউট শব্দের মূল অর্থ কী? এটি কি প্রথম থেকেই প্রতারণা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? বাংলা ভাষায় টাউট শব্দটি ঠিক কোন সময়ে প্রবেশ করেছে? আজ জানব, টাউট শব্দের ইতিবৃত্ত।
টাউট ইংরেজি শব্দ। শব্দটি বিশেষ্য এবং বিশেষণ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অভিধানে টাউট শব্দের যে অর্থগুলো পর্যায়ক্রমে লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো হলো দালাল; খদ্দের বা মক্কেল সংগ্রাহক; ভদ্রবেশী প্রতারক; (ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায়) ঘোড়ার দক্ষতা সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহকারী। শেষোক্ত অর্থটিই মূলত টাউট শব্দের প্রাচীনতম অর্থ। এ অর্থটির উপযোগিতা বর্তমানে এতদঞ্চলে নেই বললেই চলে। যদিও বর্তমানে ভদ্রবেশী প্রতারক বা দালাল অর্থেই টাউট শব্দের প্রধানতম অর্থটি ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিককালে কেউ যদি কথা দিয়ে কথা না রাখে বা ক্রমাগত মিথ্যাচার করে, তাকেও টাউট বলেই সম্বোধন করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বলা যায়, এটিও টাউট শব্দের অর্থের একটি বিবর্তিত রূপ।
ভারতীয় উপমহাদেশ এবং কালের পরিক্রমায় স্বাধীন বাংলাদেশে টাউট শব্দের উৎপত্তি কবে হলো, সেদিকে লক্ষ করলে আমরা জানতে পারি, ১৮৭৯ সালে প্রথম টাউট আইন (দ্য টাউটস অ্যাক্ট, ১৮৭৯) প্রণীত হয়। এই আইনের ৩ নম্বর ধারায় টাউটের সংজ্ঞা ও ৩৬ নম্বর ধারায় টাউটের তালিকা প্রণয়নের বিধান রয়েছে।
পরবর্তীকালে ১৯২৬ সালের বার কাউন্সিল অ্যাক্ট, ১৯৬৫ সালের দ্য লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অ্যাক্ট, এই আইনের সবগুলোতেই টাউট-সম্পর্কিত ধারা যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭২ সালের বার কাউন্সিল অর্ডারে টাউট-সম্পর্কিত সরাসরি কোনো ধারা না থাকলেও টাউটিংয়ের পর্যায়ে পড়ে এমন সব কর্মকাণ্ড করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ তো গেল ব্রিটিশ আমলের কথা। এবার দেখি, আমাদের আইনে টাউট সম্পর্কে কী বলা হয়েছে।
‘টাউট আইন ২০২৪’-এ টাউট সম্পর্কে বলা হয়েছে, নিজে আইনজীবী না হয়েও কোনো আইনজীবী বা আইন পেশাজীবীদের মতো যদি কোনো ব্যক্তি বিচারপ্রার্থীদের মামলা বা মামলাসংক্রান্ত কোনো কাজ অর্থের বিনিময়ে গ্রহণ করে বা কোনো বিচারপ্রার্থীকে এ বিষয়ে প্রস্তাব দেয়, কোনো বিচারপ্রার্থী প্রতিষ্ঠানের মামলা বা মামলাসংক্রান্ত কোনো কাজ অর্থের বিনিময়ে গ্রহণ করে বা এ বিষয়ে প্রস্তাব দেয় অথবা কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি বা রাজস্ব আদালত বা সরকারি দপ্তর বা কোনো পেশাজীবীর দপ্তর থেকে সেবা প্রদানের আইনি পদ্ধতি থাকার পরও দ্রুত ও সহজে কাজ করিয়ে দেওয়ার প্রলোভনে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ করে বা অর্থ গ্রহণের চেষ্টা করেন, তবে তিনি ‘টাউট’ বলে গণ্য হবেন।
একই সঙ্গে এই আইনের আওতায় আদালত, থানা, হাসপাতাল, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট অফিস ও সরকারি লাইসেন্স প্রদানকারী দপ্তর, রোড ট্রান্সপোর্ট অফিস, রেলওয়ে স্টেশন, যানবাহনের টার্মিনাল, সরকারি সেবা প্রদানকারী যেকোনো অফিস, পাবলিক রিসোর্ট প্রভৃতি স্থানকে টাউটদের বিচরণক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নতুন এই আইনে কেবল টাউটের কাজের পরিধি বেড়েছে এমনটি নয়, এতে অর্থদণ্ড ও সাজার মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে।
সুতরাং আইনের ভাষায় টাউট শব্দটির সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করা হলেও আমাদের যাপিত জীবনে মিথ্যাচার-প্রতারণা-জালিয়াতি-জোচ্চুরি-লোক ঠকানো ব্যক্তিকেই টাউট বলে অভিহিত করা হয়। এমনকি প্রতারণা বা মিথ্যাচারের মাত্রাভেদে টাউট শব্দটি গালির মাত্রা ছাপিয়ে কখনো কখনো ব্যক্তি-পরিচয়ের মানদণ্ডরূপে পরিগণিত হয়।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে