মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার পর প্রায় সবারই ধারণা ছিল যে দ্বিতীয় পর্বে ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যদিও দাবি করেছেন যে কিছুটা ভোটার উপস্থিতি বেড়েছে, কিন্তু কত শতাংশ ভোটার বেড়েছে, তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। উপজেলা নির্বাচনে কারা জয়লাভ করেছেন কিংবা কারা করতে পারেননি, তা খুব একটা আলোচনায় আসে না। আলোচনায় গুরুত্ব পায় ভোটারের উপস্থিতি কতটা বেড়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণ হচ্ছে—এমনটি ভোটাররাও দাবি করছেন। কিছু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটনা কোথাও ঘটেনি। বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর প্রার্থীরা নির্বাচনে যাতে কোনোভাবেই অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য দল থেকে বহিষ্কার করার কঠোর অবস্থানে তারা রয়েছে। তার পরও বিএনপির বেশ কিছুসংখ্যক প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবেই নির্বাচন করেছেন। বিএনপি সমর্থকদের একটি অংশ স্থানীয় পর্যায়ে ভোট প্রদান করছেন, তা সবারই জানা বিষয়। তার পরও উপজেলা নির্বাচনে যদি সব দল অংশগ্রহণ করত, তাহলে ভোটার উপস্থিতি বর্তমানের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। যেহেতু নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বিরোধীদের সামনে দল বড় ধরনের ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে, তাই তাদের অংশগ্রহণ এবং ভোটদানের ইচ্ছাশক্তিকে দমন করা ছাড়া অনেকের পক্ষেই করার কিছু নেই। তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নিষেধাজ্ঞাও উপেক্ষিত হতো, যদি আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নিজেদের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। এতে নির্বাচনের দৃশ্যপটে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কারণে ভোটের পালে হাওয়া তীব্রতর করা খুব একটা সম্ভব হয়নি। এর ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে।
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে বেশ কিছু প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। যাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ থাকুক—এমনটি নিশ্চয় চাননি। কীভাবে নিজের একক প্রার্থিতা নিশ্চিত করেছিলেন, তা মনে হয় খুব বেশি বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। কোথাও কোথাও চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনতা কীভাবে তৈরি হয়েছে, তা স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জেনেও না জানার ভান করেন। অথচ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সভাপতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো প্রার্থী যেন নির্বাচিত না হতে পারেন তা নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে সেটি করা সম্ভব হয়নি। অথচ এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে কোনো ব্যত্যয় দল থেকে অনুমোদন কিংবা প্রশ্রয় দেওয়া একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না। যেসব উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ভোটারের আগ্রহ সহজেই নির্বাচন থেকে সরে গেছে। এ ছাড়া মন্ত্রী, এমপি এবং প্রভাবশালীদের সমর্থিত প্রার্থী থাকায় প্রতিটি উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা খুবই সীমিত হয়ে গেছে।
অনেক ক্ষেত্রেই দু-তিনজনের বেশি প্রার্থী একেকটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছিলেন না। অথচ প্রতিটি উপজেলা থেকে যোগ্য ও জনপ্রিয় অন্তত অর্ধ ডজন প্রার্থী একেক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে গোটা উপজেলাতেই নির্বাচনী আবহ উত্তপ্ত হয়ে উঠত। উপজেলা নির্বাচনে প্রতিটি এলাকার ভোটাররা নিজেদের পরিচিত মুখ দেখতে চান। কিন্তু আওয়ামী লীগের যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা প্রথমত প্রতিদ্বন্দ্বী কাউকে রাখতে চাননি, থাকলেও সংখ্যাটা যেন ২-৩-এর বেশি না হয় এবং শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নির্বাচনে দাঁড়াক, সেটিও অনেকে চাননি। নিজের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনকে হাওয়াহীন করে তুলতে যা যা দরকার ছিল, তা অনেকেই করেছেন। গোটা উপজেলায় যোগ্য এবং ভোটারদের সমর্থিত প্রার্থী হওয়া বা করার ক্ষেত্রে আগ্রহ না থাকায় নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে। প্রার্থীদের কর্মীদের মধ্যেও ভোটার টানার প্রবণতা দেখা যায়নি। এসব নানা হিসাব-নিকাশ উপজেলা নির্বাচনে যেভাবে কাজ করেছে, তাতে বিজয়ী প্রার্থীরা বেজায় খুশি আছেন। বরং ভোটার বেশি হলে তাঁদের কারও কারও চক্ষুশূল বেড়ে যেত, হয়তো বেড়েও গেছে। ফলে উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নির্বাচন কমিশন কিংবা গণমাধ্যমের চাপে আরও বেশি হওয়া আশাব্যঞ্জক হলেও প্রার্থীদের কাছে তা মোটেও ছিল না। তাদের কাছে যত কম ভোটার উপস্থিতিতে বিজয় নিশ্চিত করা যায়, ততটাই নিরাপদ বলে মনে হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে কারও কারও বিশেষ পছন্দ ছিল। সেটিই তাঁরা প্রয়োগ করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
কোথাও কোথাও কিছু জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তা প্রতিহত করতে দেখা গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে হালকা আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে। কেউ কেউ কেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়া নিয়ে নানা অভিযোগ করেছেন। কারও কারও এজেন্ট ঠিকমতো আসতে পারেননি। রংপুরে একজন সংসদ সদস্যের ভাই জাল ভোট প্রদানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এসব কি আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি? কিন্তু রাজনৈতিকভাবে উপজেলা নির্বাচনের মূল্যায়নটি আওয়ামী লীগের আরও গভীরভাবে করা প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলের নীতিগত অবস্থান উপেক্ষা করে যাঁরা দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন, তাঁদের কার্যক্রম যথাসময়ে মূল্যায়ন করা হবে। এটি তিনি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। রাজনীতি অত্যন্ত জটিল একটি প্রক্রিয়া। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে নির্বাচনী গণতান্ত্রিক ধারা সৃষ্টি করেছে, সেটি এখন দেখা যাচ্ছে শুধু প্রতিপক্ষরাই নয়, দলের অভ্যন্তরের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে মোটেও দ্বিধা করছে না। এই নির্বাচনে জনগণ উৎসবমুখরভাবে অংশ নিত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সে জন্য প্রয়োজন ছিল উপজেলার সব অঞ্চল থেকে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া, প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করা এবং নির্বাচনে ৬০-৭০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করার পরিবেশ ও প্রক্রিয়া সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একান্ত ভূমিকা রাখা। কিন্তু প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই কতিপয় প্রভাবশালী দুষ্টচক্রের কাছে সেই রাজনীতি সচল থাকতে পারেনি। স্থানীয় এমপিরা নিজেদের ব্যক্তিগত বলয়কে রক্ষা করতে গিয়ে দলের রাজনীতিকে কতটা জনবিচ্ছিন্ন করার ভূমিকা রেখেছেন, তা তাঁরা এখন হয়তো উপলব্ধি করছেন না। তবে ভোটারদের নীরবতা বলে দিচ্ছে যে তাঁরা এর জবাব সুযোগ পেলে দিতে ভুল করবেন না।
তার পরও উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির দুই দফায় ডজনখানেক প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। জাতীয় পার্টি, জনসংহতি কমিটি, ইউপিডিএফ ও একেবারে নির্দলীয় কেউ কেউ জয়লাভ করেছেন। আরও দুটি পর্বে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেও ভোটার উপস্থিতি, প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র এবং জয়-পরাজয়ের হালচালে খুব বেশি নতুনত্ব দেখা যাবে বলে মনে হয় না। বিএনপি নির্বাচনটিকে একেবারে ভোটারশূন্য করতে চেয়েছিল, সেটি হয়তো হয়নি। আওয়ামী লীগের ভোটাররাও নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচনী হাওয়াটা আরও দৃশ্যমান হতো। কিন্তু প্রভাব বিস্তারকারীরাই সেই দৃশ্য দেখতে বা দেখাতে উৎসাহী ছিলেন না। এখন আওয়ামী লীগকে ভেবে দেখতে হবে, সামনে ইউপিসহ স্থানীয় সরকারের আরও কিছু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেগুলোর ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, মনে হয় না কেউই নিজের বলয় সৃষ্টিতে ন্যূনতম ছাড় দেবেন। রাজনীতির নতুন এই বাস্তবতা সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগ কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা রাজনীতিসচেতন মহলের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে আসছে।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার পর প্রায় সবারই ধারণা ছিল যে দ্বিতীয় পর্বে ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যদিও দাবি করেছেন যে কিছুটা ভোটার উপস্থিতি বেড়েছে, কিন্তু কত শতাংশ ভোটার বেড়েছে, তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। উপজেলা নির্বাচনে কারা জয়লাভ করেছেন কিংবা কারা করতে পারেননি, তা খুব একটা আলোচনায় আসে না। আলোচনায় গুরুত্ব পায় ভোটারের উপস্থিতি কতটা বেড়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণ হচ্ছে—এমনটি ভোটাররাও দাবি করছেন। কিছু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটনা কোথাও ঘটেনি। বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর প্রার্থীরা নির্বাচনে যাতে কোনোভাবেই অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য দল থেকে বহিষ্কার করার কঠোর অবস্থানে তারা রয়েছে। তার পরও বিএনপির বেশ কিছুসংখ্যক প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবেই নির্বাচন করেছেন। বিএনপি সমর্থকদের একটি অংশ স্থানীয় পর্যায়ে ভোট প্রদান করছেন, তা সবারই জানা বিষয়। তার পরও উপজেলা নির্বাচনে যদি সব দল অংশগ্রহণ করত, তাহলে ভোটার উপস্থিতি বর্তমানের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। যেহেতু নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বিরোধীদের সামনে দল বড় ধরনের ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে, তাই তাদের অংশগ্রহণ এবং ভোটদানের ইচ্ছাশক্তিকে দমন করা ছাড়া অনেকের পক্ষেই করার কিছু নেই। তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নিষেধাজ্ঞাও উপেক্ষিত হতো, যদি আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নিজেদের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। এতে নির্বাচনের দৃশ্যপটে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কারণে ভোটের পালে হাওয়া তীব্রতর করা খুব একটা সম্ভব হয়নি। এর ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে।
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে বেশ কিছু প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। যাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ থাকুক—এমনটি নিশ্চয় চাননি। কীভাবে নিজের একক প্রার্থিতা নিশ্চিত করেছিলেন, তা মনে হয় খুব বেশি বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। কোথাও কোথাও চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনতা কীভাবে তৈরি হয়েছে, তা স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জেনেও না জানার ভান করেন। অথচ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সভাপতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো প্রার্থী যেন নির্বাচিত না হতে পারেন তা নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে সেটি করা সম্ভব হয়নি। অথচ এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে কোনো ব্যত্যয় দল থেকে অনুমোদন কিংবা প্রশ্রয় দেওয়া একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না। যেসব উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ভোটারের আগ্রহ সহজেই নির্বাচন থেকে সরে গেছে। এ ছাড়া মন্ত্রী, এমপি এবং প্রভাবশালীদের সমর্থিত প্রার্থী থাকায় প্রতিটি উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা খুবই সীমিত হয়ে গেছে।
অনেক ক্ষেত্রেই দু-তিনজনের বেশি প্রার্থী একেকটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছিলেন না। অথচ প্রতিটি উপজেলা থেকে যোগ্য ও জনপ্রিয় অন্তত অর্ধ ডজন প্রার্থী একেক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে গোটা উপজেলাতেই নির্বাচনী আবহ উত্তপ্ত হয়ে উঠত। উপজেলা নির্বাচনে প্রতিটি এলাকার ভোটাররা নিজেদের পরিচিত মুখ দেখতে চান। কিন্তু আওয়ামী লীগের যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা প্রথমত প্রতিদ্বন্দ্বী কাউকে রাখতে চাননি, থাকলেও সংখ্যাটা যেন ২-৩-এর বেশি না হয় এবং শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নির্বাচনে দাঁড়াক, সেটিও অনেকে চাননি। নিজের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনকে হাওয়াহীন করে তুলতে যা যা দরকার ছিল, তা অনেকেই করেছেন। গোটা উপজেলায় যোগ্য এবং ভোটারদের সমর্থিত প্রার্থী হওয়া বা করার ক্ষেত্রে আগ্রহ না থাকায় নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে। প্রার্থীদের কর্মীদের মধ্যেও ভোটার টানার প্রবণতা দেখা যায়নি। এসব নানা হিসাব-নিকাশ উপজেলা নির্বাচনে যেভাবে কাজ করেছে, তাতে বিজয়ী প্রার্থীরা বেজায় খুশি আছেন। বরং ভোটার বেশি হলে তাঁদের কারও কারও চক্ষুশূল বেড়ে যেত, হয়তো বেড়েও গেছে। ফলে উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নির্বাচন কমিশন কিংবা গণমাধ্যমের চাপে আরও বেশি হওয়া আশাব্যঞ্জক হলেও প্রার্থীদের কাছে তা মোটেও ছিল না। তাদের কাছে যত কম ভোটার উপস্থিতিতে বিজয় নিশ্চিত করা যায়, ততটাই নিরাপদ বলে মনে হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে কারও কারও বিশেষ পছন্দ ছিল। সেটিই তাঁরা প্রয়োগ করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
কোথাও কোথাও কিছু জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তা প্রতিহত করতে দেখা গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে হালকা আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে। কেউ কেউ কেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়া নিয়ে নানা অভিযোগ করেছেন। কারও কারও এজেন্ট ঠিকমতো আসতে পারেননি। রংপুরে একজন সংসদ সদস্যের ভাই জাল ভোট প্রদানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এসব কি আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি? কিন্তু রাজনৈতিকভাবে উপজেলা নির্বাচনের মূল্যায়নটি আওয়ামী লীগের আরও গভীরভাবে করা প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলের নীতিগত অবস্থান উপেক্ষা করে যাঁরা দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন, তাঁদের কার্যক্রম যথাসময়ে মূল্যায়ন করা হবে। এটি তিনি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। রাজনীতি অত্যন্ত জটিল একটি প্রক্রিয়া। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে নির্বাচনী গণতান্ত্রিক ধারা সৃষ্টি করেছে, সেটি এখন দেখা যাচ্ছে শুধু প্রতিপক্ষরাই নয়, দলের অভ্যন্তরের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে মোটেও দ্বিধা করছে না। এই নির্বাচনে জনগণ উৎসবমুখরভাবে অংশ নিত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সে জন্য প্রয়োজন ছিল উপজেলার সব অঞ্চল থেকে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া, প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করা এবং নির্বাচনে ৬০-৭০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করার পরিবেশ ও প্রক্রিয়া সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একান্ত ভূমিকা রাখা। কিন্তু প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই কতিপয় প্রভাবশালী দুষ্টচক্রের কাছে সেই রাজনীতি সচল থাকতে পারেনি। স্থানীয় এমপিরা নিজেদের ব্যক্তিগত বলয়কে রক্ষা করতে গিয়ে দলের রাজনীতিকে কতটা জনবিচ্ছিন্ন করার ভূমিকা রেখেছেন, তা তাঁরা এখন হয়তো উপলব্ধি করছেন না। তবে ভোটারদের নীরবতা বলে দিচ্ছে যে তাঁরা এর জবাব সুযোগ পেলে দিতে ভুল করবেন না।
তার পরও উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির দুই দফায় ডজনখানেক প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। জাতীয় পার্টি, জনসংহতি কমিটি, ইউপিডিএফ ও একেবারে নির্দলীয় কেউ কেউ জয়লাভ করেছেন। আরও দুটি পর্বে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেও ভোটার উপস্থিতি, প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র এবং জয়-পরাজয়ের হালচালে খুব বেশি নতুনত্ব দেখা যাবে বলে মনে হয় না। বিএনপি নির্বাচনটিকে একেবারে ভোটারশূন্য করতে চেয়েছিল, সেটি হয়তো হয়নি। আওয়ামী লীগের ভোটাররাও নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচনী হাওয়াটা আরও দৃশ্যমান হতো। কিন্তু প্রভাব বিস্তারকারীরাই সেই দৃশ্য দেখতে বা দেখাতে উৎসাহী ছিলেন না। এখন আওয়ামী লীগকে ভেবে দেখতে হবে, সামনে ইউপিসহ স্থানীয় সরকারের আরও কিছু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেগুলোর ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, মনে হয় না কেউই নিজের বলয় সৃষ্টিতে ন্যূনতম ছাড় দেবেন। রাজনীতির নতুন এই বাস্তবতা সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগ কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা রাজনীতিসচেতন মহলের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে আসছে।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে