আব্দুর রাজ্জাক
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসের একটি কথা আছে, ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ’। বর্তমানে বিরোধী দলগুলোর অবস্থা দেখে অনেকেই মনে করতে পারেন, বিরোধী রাজনীতি পথ হারিয়েছে। বেশ কয়েক বছর যাবৎ বিরোধী দলগুলো সময়োচিত যথাযথ কার্যকর ভূমিকা পালন না করার জন্য সংসদের ভেতরে ও বাইরে সরকার সঠিক কাজ করছে না বলে মনে করেন অনেকেই।
২০০৯ সালে প্রথম কয়েক মাস প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদে সোচ্চার ছিল বিএনপি—আসনবণ্টন নিয়ে। তাদের সাকল্যে সদস্যসংখ্যা ছিল ৩০। সামনের সারিতে তাদের আগের নির্বাচিত স্পিকার ছিলেন জমিরউদ্দিন সরকার। তিনি হয়তো ইচ্ছা করেই বিএনপিকে সামনের সারিতে তাদের প্রাপ্যতার তুলনায় অনেকগুলো আসন বণ্টন করেছিলেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচিত স্পিকার মহোদয় এই আসন পুনর্বিন্যাস করার পরে সংসদের মধ্যে তাদের শুরু হয় তীব্র ক্ষোভ।
সংসদের বাইরে সেই সময় সাধারণ মানুষের পক্ষে তাদের খুব একটা কথা বলতে শোনা যায়নি। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তাদের আগুন-সন্ত্রাসসহ গোপন আন্দোলন, অর্থাৎ চোরাগোপ্তা হামলায় সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। আসলে তারা মানুষের মনের ভাষা পড়তে পারেনি। মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারের ওপর ক্ষোভ ও বিতৃষ্ণা আছে মানুষের, এটা বিএনপি একেবারেই অনুধাবন করতে পারেনি।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করে ভুল করেছিল বলে তারা স্বীকার করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতন নাগরিক সমাজও মনে করেছে বিএনপি একটি মারাত্মক আত্মঘাতী কাজ করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা আবার অংশগ্রহণ করে, ৬ জন সদস্য নিয়ে সংসদে প্রথম দিকে ভালোই ভূমিকা রেখেছিল। তারপরের ঘটনা এখনো চলমান। তাদের নিজস্ব দলীয় অ্যাজেন্ডা নিয়েই তারা মাঠ গরম করে যাচ্ছে। জনগণের মৌলিক চাহিদা, সাধারণ মানুষের মনের ভাষা পড়তে না পারায় তাদের কোনো আন্দোলন হালে পানি পাচ্ছে না।
জাতীয় পার্টি প্রথমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের শরিক হিসেবে সংসদে ভূমিকা রেখেছে। আবার বিরোধীদলীয় ভূমিকায় থেকেছে, সরকারের আনুকূল্য পেয়েছে সব সময়। জাতীয় পার্টির ওপর মানুষের কোনো আস্থা নেই। বর্তমানে জাতীয় পার্টির খণ্ড-বিখণ্ডতা দেখে একবাক্যে সবাই বলবেন—এইটা কোনো রাজনৈতিক দলই না। একজন স্বেচ্ছাচারী স্বৈরাচারী সামরিক শাসক, নিজেদের গোষ্ঠী ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলসহ নিজেদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম করেছিলেন।
জাতীয় পার্টির কয়টি ধারা কোন দিকে আছে—উত্তর, পূর্ব-দক্ষিণ, পশ্চিম বা ঊর্ধ্বমুখী, নিম্নমুখী—তা বলা মুশকিল। তারা কী চায়, তাদের পরিকল্পনা কী, তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ভবিষ্যৎ দর্শন সম্পর্কে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। দেবর-ভাবির পার্টিতে ঝগড়া-বিবাদ চলে প্রতিদিন। এখন অবশ্য দেবর-ভাবি আলাদা হয়েছেন, তবে ঝগড়া চলবে। এই দলটি চায় সরকারের আনুকূল্য পেয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজন ও চেনা পরিচিত মানুষদের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করতে! গত সংসদে সাদ এরশাদ ছিলেন এর উদাহরণ।
তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে কোনো ভূমিকা রেখেছেন বলে সাধারণ মানুষ জানে না। তবে তাঁর সংসদ সদস্য হিসেবে পাওনা-দাওনা মোটামুটি বুঝে নিয়েছেন। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে শেরিফা কাদের নামে এক ভদ্রমহিলাকে ঢাকার একটি আসন থেকে, যেখানে নৌকা ছিল না, সেখান থেকে নির্বাচন করিয়েছিলেন। শেরিফা নামের পরে কাদের যুক্ত থাকায় মানুষ বুঝতে পেরেছে, তিনি গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের স্ত্রী। তবে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়, রাজনৈতিক ইতিহাস ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সম্পর্কে না জানার কারণে জনগণের ইচ্ছায় তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই দলটির অস্তিত্বই এখন মোটামুটি ত্রিশঙ্কু অবস্থার মধ্যে।
বিএনপির অবস্থা আগেই বর্ণনা করেছি, তারা লন্ডননির্ভর হয়ে গেছে। দলের নেতা প্রায় ১৭ বছর আগে লন্ডন গেছেন। নেতার লন্ডন যাওয়ার পরে গঙ্গা-যমুনায় অনেক পানি প্রবাহিত হয়েছে। দেশে জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে, করোনা মহামারি গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ বলতে গেলে সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর আঘাত করে যাচ্ছে। নিজের দেশের মানুষের আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা লন্ডনে বসে নেতা দেখতে পাচ্ছেন কি না, এ ব্যাপারে অনেকেরই সন্দেহ আছে। তাই তো বিরোধী দলের আন্দোলন হালে পানি পাচ্ছে না।
যার কারণে আমাদের অর্থনীতি, সমাজনীতি ঠিকমতো চলছে না। লুটেরা, ব্যবসায়ী, আমলা, সুবিধাবাদী রাজনৈতিক কর্মীরা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে এই স্বেচ্ছাচারী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংকের তারল্যসংকট, ঘুষ-দুর্নীতি সবকিছু ঘটছে জবাবদিহি না থাকার কারণে। আর এই জবাবদিহির অনুপস্থিতি ঘটছে বিরোধী দলের সঠিক রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকার কারণে।
এসব বিশ্লেষণ করলে বিরোধী দলের রাজনীতির পদস্খলন ঘটেছে—এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আর এই বিরোধী দল—বিএনপি ও জাতীয় পার্টি, আসলেই তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে যেভাবে গড়ে ওঠার কথা ছিল, সেভাবে গড়ে ওঠেনি। দুজন জেনারেলের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণে এই দল দুটি গড়ে উঠেছিল।
বিএনপি গড়ে উঠেছিল আওয়ামীবিরোধী কিছু শক্তি, তদানীন্তন অতিবামপন্থী কিছু স্বেচ্ছাচারী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংগঠন, মুসলিম লীগ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের নিয়ে। সামরিক শাসক ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে বসে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে এই দলটি গড়ে তুলেছিলেন। এই দলটি যে সঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি তার প্রমাণ তাদের নিজেদের কথাতেই বারবার বেরিয়ে আসে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী কয়েকবার বলেছেন, বিএনপির জন্ম রাজপথে।
এই দলটি সঠিক পন্থায় গড়ে উঠেছে বলে তিনি মনে করেন। আবার বিএনপির প্রভাবশালী নেতা যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে, অর্থাৎ পবিত্র স্থানে। দুজন নেতা সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলেন! আসলে বিএনপির সব নেতা-কর্মী মনে মনে বোঝেন তাঁদের দলের গঠনপ্রক্রিয়াটি ঠিক ছিল না। বিএনপির সমর্থক এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা স্বীকার করেছেন তাঁদের দলের গঠনপ্রক্রিয়া ছিল একটু অন্য রকম—সরকারের আনুকূল্য পেয়ে, সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে।
জাতীয় পার্টির গঠনপ্রক্রিয়া ছিল একই রকম, তবে বিএনপি যেহেতু আওয়ামীবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধীদের আগে দলে নিয়ে নিয়েছিল, তাই জাতীয় পার্টি পেয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কিছু সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত। তাই তো জাতীয় পার্টি কিংবা বিএনপি বিরোধী দল হিসেবে খুব একটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। অদূর ভবিষ্যতে তাদের কার্যক্রম একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়বে। এটা হবে দেশের জন্য আত্মঘাতী। সরকারের কার্যক্রমকে ঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য বিরোধী দলের সঠিক রাজনীতি অত্যাবশ্যকীয়।
এই দুই দলের বাইরে বাকি রাজনৈতিক দলের উচিত একটি মোর্চা করে জনগণের মনের ভাষা পড়ে, সঠিক একটি রাজনৈতিক বিরোধী মোর্চা তৈরি করা; দেশের সার্বিক অবস্থা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংকের তারল্যসংকট, বিদেশে অর্থ পাচার, বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন নামে বাংলাদেশিদের আবাসস্থল গড়ে তোলাসহ, রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাটের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার করা উচিত।
এই মোর্চা সংসদে না থাকুক, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অন্যায়, অবিচার ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহারসহ ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ রকম আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে মানুষ তাদের পক্ষে দাঁড়াবে। আমরা আশা করব, আগামী নির্বাচনে এই মোর্চা অনেক ভালো ফল করবে—জনগণের পক্ষে দাঁড়ানো আমরা একটি বিরোধী দল পাব, জাতি ঘুরে দাঁড়াবে, রাজনীতি সঠিক পথে এগোবে।
লেখক: প্রকৌশলী
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসের একটি কথা আছে, ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ’। বর্তমানে বিরোধী দলগুলোর অবস্থা দেখে অনেকেই মনে করতে পারেন, বিরোধী রাজনীতি পথ হারিয়েছে। বেশ কয়েক বছর যাবৎ বিরোধী দলগুলো সময়োচিত যথাযথ কার্যকর ভূমিকা পালন না করার জন্য সংসদের ভেতরে ও বাইরে সরকার সঠিক কাজ করছে না বলে মনে করেন অনেকেই।
২০০৯ সালে প্রথম কয়েক মাস প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদে সোচ্চার ছিল বিএনপি—আসনবণ্টন নিয়ে। তাদের সাকল্যে সদস্যসংখ্যা ছিল ৩০। সামনের সারিতে তাদের আগের নির্বাচিত স্পিকার ছিলেন জমিরউদ্দিন সরকার। তিনি হয়তো ইচ্ছা করেই বিএনপিকে সামনের সারিতে তাদের প্রাপ্যতার তুলনায় অনেকগুলো আসন বণ্টন করেছিলেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচিত স্পিকার মহোদয় এই আসন পুনর্বিন্যাস করার পরে সংসদের মধ্যে তাদের শুরু হয় তীব্র ক্ষোভ।
সংসদের বাইরে সেই সময় সাধারণ মানুষের পক্ষে তাদের খুব একটা কথা বলতে শোনা যায়নি। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তাদের আগুন-সন্ত্রাসসহ গোপন আন্দোলন, অর্থাৎ চোরাগোপ্তা হামলায় সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। আসলে তারা মানুষের মনের ভাষা পড়তে পারেনি। মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারের ওপর ক্ষোভ ও বিতৃষ্ণা আছে মানুষের, এটা বিএনপি একেবারেই অনুধাবন করতে পারেনি।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করে ভুল করেছিল বলে তারা স্বীকার করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতন নাগরিক সমাজও মনে করেছে বিএনপি একটি মারাত্মক আত্মঘাতী কাজ করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা আবার অংশগ্রহণ করে, ৬ জন সদস্য নিয়ে সংসদে প্রথম দিকে ভালোই ভূমিকা রেখেছিল। তারপরের ঘটনা এখনো চলমান। তাদের নিজস্ব দলীয় অ্যাজেন্ডা নিয়েই তারা মাঠ গরম করে যাচ্ছে। জনগণের মৌলিক চাহিদা, সাধারণ মানুষের মনের ভাষা পড়তে না পারায় তাদের কোনো আন্দোলন হালে পানি পাচ্ছে না।
জাতীয় পার্টি প্রথমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের শরিক হিসেবে সংসদে ভূমিকা রেখেছে। আবার বিরোধীদলীয় ভূমিকায় থেকেছে, সরকারের আনুকূল্য পেয়েছে সব সময়। জাতীয় পার্টির ওপর মানুষের কোনো আস্থা নেই। বর্তমানে জাতীয় পার্টির খণ্ড-বিখণ্ডতা দেখে একবাক্যে সবাই বলবেন—এইটা কোনো রাজনৈতিক দলই না। একজন স্বেচ্ছাচারী স্বৈরাচারী সামরিক শাসক, নিজেদের গোষ্ঠী ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলসহ নিজেদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম করেছিলেন।
জাতীয় পার্টির কয়টি ধারা কোন দিকে আছে—উত্তর, পূর্ব-দক্ষিণ, পশ্চিম বা ঊর্ধ্বমুখী, নিম্নমুখী—তা বলা মুশকিল। তারা কী চায়, তাদের পরিকল্পনা কী, তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ভবিষ্যৎ দর্শন সম্পর্কে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। দেবর-ভাবির পার্টিতে ঝগড়া-বিবাদ চলে প্রতিদিন। এখন অবশ্য দেবর-ভাবি আলাদা হয়েছেন, তবে ঝগড়া চলবে। এই দলটি চায় সরকারের আনুকূল্য পেয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজন ও চেনা পরিচিত মানুষদের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করতে! গত সংসদে সাদ এরশাদ ছিলেন এর উদাহরণ।
তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে কোনো ভূমিকা রেখেছেন বলে সাধারণ মানুষ জানে না। তবে তাঁর সংসদ সদস্য হিসেবে পাওনা-দাওনা মোটামুটি বুঝে নিয়েছেন। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে শেরিফা কাদের নামে এক ভদ্রমহিলাকে ঢাকার একটি আসন থেকে, যেখানে নৌকা ছিল না, সেখান থেকে নির্বাচন করিয়েছিলেন। শেরিফা নামের পরে কাদের যুক্ত থাকায় মানুষ বুঝতে পেরেছে, তিনি গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের স্ত্রী। তবে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়, রাজনৈতিক ইতিহাস ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সম্পর্কে না জানার কারণে জনগণের ইচ্ছায় তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই দলটির অস্তিত্বই এখন মোটামুটি ত্রিশঙ্কু অবস্থার মধ্যে।
বিএনপির অবস্থা আগেই বর্ণনা করেছি, তারা লন্ডননির্ভর হয়ে গেছে। দলের নেতা প্রায় ১৭ বছর আগে লন্ডন গেছেন। নেতার লন্ডন যাওয়ার পরে গঙ্গা-যমুনায় অনেক পানি প্রবাহিত হয়েছে। দেশে জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে, করোনা মহামারি গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ বলতে গেলে সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর আঘাত করে যাচ্ছে। নিজের দেশের মানুষের আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা লন্ডনে বসে নেতা দেখতে পাচ্ছেন কি না, এ ব্যাপারে অনেকেরই সন্দেহ আছে। তাই তো বিরোধী দলের আন্দোলন হালে পানি পাচ্ছে না।
যার কারণে আমাদের অর্থনীতি, সমাজনীতি ঠিকমতো চলছে না। লুটেরা, ব্যবসায়ী, আমলা, সুবিধাবাদী রাজনৈতিক কর্মীরা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে এই স্বেচ্ছাচারী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংকের তারল্যসংকট, ঘুষ-দুর্নীতি সবকিছু ঘটছে জবাবদিহি না থাকার কারণে। আর এই জবাবদিহির অনুপস্থিতি ঘটছে বিরোধী দলের সঠিক রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকার কারণে।
এসব বিশ্লেষণ করলে বিরোধী দলের রাজনীতির পদস্খলন ঘটেছে—এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আর এই বিরোধী দল—বিএনপি ও জাতীয় পার্টি, আসলেই তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে যেভাবে গড়ে ওঠার কথা ছিল, সেভাবে গড়ে ওঠেনি। দুজন জেনারেলের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণে এই দল দুটি গড়ে উঠেছিল।
বিএনপি গড়ে উঠেছিল আওয়ামীবিরোধী কিছু শক্তি, তদানীন্তন অতিবামপন্থী কিছু স্বেচ্ছাচারী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংগঠন, মুসলিম লীগ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের নিয়ে। সামরিক শাসক ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে বসে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে এই দলটি গড়ে তুলেছিলেন। এই দলটি যে সঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি তার প্রমাণ তাদের নিজেদের কথাতেই বারবার বেরিয়ে আসে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী কয়েকবার বলেছেন, বিএনপির জন্ম রাজপথে।
এই দলটি সঠিক পন্থায় গড়ে উঠেছে বলে তিনি মনে করেন। আবার বিএনপির প্রভাবশালী নেতা যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে, অর্থাৎ পবিত্র স্থানে। দুজন নেতা সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলেন! আসলে বিএনপির সব নেতা-কর্মী মনে মনে বোঝেন তাঁদের দলের গঠনপ্রক্রিয়াটি ঠিক ছিল না। বিএনপির সমর্থক এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা স্বীকার করেছেন তাঁদের দলের গঠনপ্রক্রিয়া ছিল একটু অন্য রকম—সরকারের আনুকূল্য পেয়ে, সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে।
জাতীয় পার্টির গঠনপ্রক্রিয়া ছিল একই রকম, তবে বিএনপি যেহেতু আওয়ামীবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধীদের আগে দলে নিয়ে নিয়েছিল, তাই জাতীয় পার্টি পেয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কিছু সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত। তাই তো জাতীয় পার্টি কিংবা বিএনপি বিরোধী দল হিসেবে খুব একটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। অদূর ভবিষ্যতে তাদের কার্যক্রম একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়বে। এটা হবে দেশের জন্য আত্মঘাতী। সরকারের কার্যক্রমকে ঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য বিরোধী দলের সঠিক রাজনীতি অত্যাবশ্যকীয়।
এই দুই দলের বাইরে বাকি রাজনৈতিক দলের উচিত একটি মোর্চা করে জনগণের মনের ভাষা পড়ে, সঠিক একটি রাজনৈতিক বিরোধী মোর্চা তৈরি করা; দেশের সার্বিক অবস্থা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংকের তারল্যসংকট, বিদেশে অর্থ পাচার, বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন নামে বাংলাদেশিদের আবাসস্থল গড়ে তোলাসহ, রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাটের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার করা উচিত।
এই মোর্চা সংসদে না থাকুক, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অন্যায়, অবিচার ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহারসহ ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ রকম আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে মানুষ তাদের পক্ষে দাঁড়াবে। আমরা আশা করব, আগামী নির্বাচনে এই মোর্চা অনেক ভালো ফল করবে—জনগণের পক্ষে দাঁড়ানো আমরা একটি বিরোধী দল পাব, জাতি ঘুরে দাঁড়াবে, রাজনীতি সঠিক পথে এগোবে।
লেখক: প্রকৌশলী
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১১ ঘণ্টা আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১৪ ঘণ্টা আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে