মোনায়েম সরকার
আমি মূলত রাজনীতির মানুষ। গত শতকের ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। পাকিস্তানি সামরিক একনায়ক আইয়ুব-ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার যে লড়াই-সংগ্রাম, তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবেই ছিলাম। ছিলাম গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধেও। দেশে বাম-প্রগতিশীল ধারার যে রাজনীতি তা খুব কাছে থেকেই দেখেছি। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির উত্থান-পতনের আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী। একসময় যাঁরা ছিলেন দেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতির নিয়ন্ত্রক, তাঁদের প্রায় সবার সঙ্গেই আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল, একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও আছে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতির পথ নির্ধারণের প্রাথমিককালে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালে ভেতর-বাইরে কত ধরনের খেলা চলছিল, তার সবটা না হলেও অনেকটাই দেখা বা বোঝার সুযোগ আমার হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে কেমন রাজনীতি চলছিল, একদিকে দেশ পুনর্গঠনের কঠিন সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধুর তিন বছর কিছু দিতে না-পারার আহ্বান, অন্যদিকে চাটার দলের উত্থান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বৈরিতা, ভারত-সোভিয়েতের মনোভাব—সবই আমি দেখেছি। দেখেছি বঙ্গবন্ধু-হত্যা-পরবর্তী রাজনীতির পালাবদলও।
সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান কীভাবে সমন্বয়ের রাজনীতির নামে পাকিস্তানমুখী হয়ে মুক্তিযুদ্ধের ধারা থেকে দেশকে সরিয়ে নিয়েছেন, পরাজিত রাজাকার-আলবদরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, রাজনীতিকে কেনাবেচার পণ্যে পরিণত করেছেন—এর সবই আমার দেখা। এক চরম প্রতিকূল পরিবেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যে আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন, তার পূর্বাপর ঘটনাধারার আমি একজন অংশীজন। আমি এখন সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় না হলেও রাজনীতিই আমার সারাক্ষণের ধ্যানজ্ঞান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমি একজন হিতার্থী। ব্যক্তিগতভাবে কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা থেকে নয়, দেশ ও দেশের মানুষের ভালোর জন্যই আমি আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে, শেখ হাসিনার পক্ষে। অনেকেই এটা জানেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার ভাই-বোন সম্পর্ক। তাঁকে আমি ‘গুড সিস্টার’ বলে সম্বোধন করি, তিনি আমাকে ‘ব্রাদার’ বলেন। এখন আমাদের খুব দেখা হয়, কথা হয়, তা নয়। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে আমরা একে অপরের খোঁজখবর রাখি না।
শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার এই প্রীতিময় সম্পর্কের কথা যাঁরা জানেন, তাঁরা আমার সঙ্গে এখন যোগাযোগ করেন কিছুটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সঙ্গে। প্রায় সবাই জানতে চান, দেশে কী ঘটছে? শেখ হাসিনা ঠিক পথে আছেন তো? তিনি কি পারবেন ঘরে-বাইরে এত শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে? এসব প্রশ্নের উত্তর সব আমার জানা, তা নয়। তবে কিছু কিছু ঘটনায় আমি পীড়িত বোধ করি, ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না, আবার আস্থাও হারাই না। শেখ হাসিনা যখন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন, তখনো কারও কারও মনে সংশয় ছিল, তিনি পারবেন তো? তিনি প্রমাণ করেছেন, তিনি পারেন। আওয়ামী লীগ আর কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে যারা আস্ফালন করত, তারা এখন ক্ষমতা থেকে দূরে, আর আওয়ামী লীগ টানা চার মেয়াদে সরকার গঠন করে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা সফল হবেন কি না, সে প্রশ্নও তো ছিল। কী প্রমাণ হয়েছে? শেখ হাসিনার চেয়ে দক্ষ ও সফল শাসক শুধু বাংলাদেশে কেন, পৃথিবীতেই খুব বেশি নেই। আমি শেখ হাসিনার সাফল্যে গর্ব অনুভব করি। কিন্তু তার মানে কি এই যে দেশে যা ঘটছে, তার সবকিছু ঠিক? ভুল হচ্ছে না, অন্যায় কিছু হচ্ছে না? আমি অন্ধ নই, স্তাবক নই। তাই আমি মনে করি, দেশ এখন পুরোপুরি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারায় চলছে না। বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে কোথাও কোথাও এমন কিছু ঘটছে, যা বঙ্গবন্ধুর মুখ উজ্জ্বল না করে উল্টোটা করছে। তাই এখনই সতর্ক হতে হবে। শেখ হাসিনাকেও সবাইকে প্রশ্রয় দেওয়ার মনোভাব দূর করে কারও কারও প্রতি কঠোর হতে হবে। কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে, যেগুলো সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনার সততাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যেহেতু সবাই মিলে এটাই বলা হয় যে শেখ হাসিনার নির্দেশ বা পরামর্শ ছাড়া কিছু হয় না, সেহেতু খারাপ কিছু হলে তার দায়ও স্বাভাবিকভাবেই শেখ হাসিনার ওপরও বর্তায়। ভালোটার জন্য প্রশংসিত হলে মন্দটার জন্য নিন্দিত কেন নয়?
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি যেভাবে গণমাধ্যমে নিয়মিত খবর হচ্ছেন, তার জন্য সরকার বিব্রত নয় বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে মন্তব্য করেছেন, সেটাও যথার্থ নয় বলে আমি মনে করি। আজিজ আহমেদ ও বেনজীর আহমেদের ঘটনাগুলো থেকে এ প্রশ্ন সামনে আসছে, এমন আখের গোছানোয় পারদর্শী আরও কতজন কত দায়িত্বে আছে? শেখ হাসিনা নিজেই একবার বলেছিলেন, তাঁকে ছাড়া আর সবাইকে কেনা যায়। আবার ওবায়দুল কাদের একাধিকবার বলেছেন, কে কী করেন সব তথ্য শেখ হাসিনার কাছে আছে। সরকারপ্রধান হিসেবে সব তথ্য তাঁর কাছে থাকাটাই স্বাভাবিক। তাহলে সংগতভাবেই প্রশ্ন আসে, আজিজ-বেনজীরের তথ্যও তাঁর কাছে ছিল বা আছে। তাহলে এই দুই ব্যক্তি সেনা ও পুলিশের মতো দুটি বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন কীভাবে?
দুদকের মামলায় সম্প্রতি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশনা দেন আদালত। আর সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যত প্রভাবশালীই হোক—অপরাধ করতে পারে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, অপরাধের শাস্তি নিশ্চিতের ব্যাপারে সরকার সৎসাহস দেখিয়েছে কি না। শেখ হাসিনা সরকারের সেই সৎসাহস আছে। কেউ পার পাবে না। বিচার বিভাগ, দুদক স্বাধীন। সেখানে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আমরা তাকে প্রটেক্ট করতে যাব না। সেখানে কোনো সাবেক আইজিপি বা কোনো সাবেক সেনাপ্রধান যে-ই হোক না কেন, সরকারের কাউকে প্রটেকশন দেওয়ার বিষয় নেই।’
দায়িত্ব পালনকালে অবাধে ‘অপরাধ’ করতে দিয়ে অবসরে যাওয়ার পর ‘প্রটেকশন’ না দেওয়ার কথা বললে সেটা কি মানুষ ভালোভাবে নেয়? নানা কারণে মানুষের মধ্যে এখন অনেক প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, সাধারণ মানুষ আন্দোলন-সংগ্রামে নেই। শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও কম নয়। মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে লক্ষণীয় পরিবর্তন। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় প্রতিবছর যে মঙ্গা লেগে থাকত, তা এখন অতীতের বিষয়। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া, এখানেই মানুষের চরম অসন্তোষ। আয় বাড়ে না, ব্যয় বাড়ে। ফলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ে। আবার কোটিপতির সংখ্যাও বাড়ে। এই বৈষম্যের বিষয়টি উপেক্ষা করার মতো নয়। সাধারণ মানুষ মনে করে, যে পাকিস্তানি বৈষম্যের নীতির বিরোধিতা করে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হলো, সেই বৈষম্যের নীতি কেন আওয়ামী লীগের নীতি হয়ে দাঁড়াল? আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া মানেই সম্পদ বৃদ্ধি। রাজনীতি মানে লাভজনক ব্যবসা। একবার কোনোভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া মানেই আঙুল ফুলে কলাগাছ। দেশের রাজনীতি কেন এমন অসৎ হওয়ার প্রতিযোগিতার বিষয় হয়ে দাঁড়াল, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে লেখাটি শেষ করতে চাই। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি যাঁরা বিদেশে পলাতক রয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা হবে। দেশের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি ও দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখা—এটাই আমার লক্ষ্য।’
লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা যেন মানুষকে পেয়ে না বসে, সেদিকেও প্রধানমন্ত্রীকেই লক্ষ রাখতে হবে। কারণ, তাঁর কাছেই এখনো মানুষের সব প্রত্যাশা।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ
আমি মূলত রাজনীতির মানুষ। গত শতকের ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। পাকিস্তানি সামরিক একনায়ক আইয়ুব-ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার যে লড়াই-সংগ্রাম, তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবেই ছিলাম। ছিলাম গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধেও। দেশে বাম-প্রগতিশীল ধারার যে রাজনীতি তা খুব কাছে থেকেই দেখেছি। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির উত্থান-পতনের আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী। একসময় যাঁরা ছিলেন দেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতির নিয়ন্ত্রক, তাঁদের প্রায় সবার সঙ্গেই আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল, একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও আছে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতির পথ নির্ধারণের প্রাথমিককালে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালে ভেতর-বাইরে কত ধরনের খেলা চলছিল, তার সবটা না হলেও অনেকটাই দেখা বা বোঝার সুযোগ আমার হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে কেমন রাজনীতি চলছিল, একদিকে দেশ পুনর্গঠনের কঠিন সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধুর তিন বছর কিছু দিতে না-পারার আহ্বান, অন্যদিকে চাটার দলের উত্থান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বৈরিতা, ভারত-সোভিয়েতের মনোভাব—সবই আমি দেখেছি। দেখেছি বঙ্গবন্ধু-হত্যা-পরবর্তী রাজনীতির পালাবদলও।
সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান কীভাবে সমন্বয়ের রাজনীতির নামে পাকিস্তানমুখী হয়ে মুক্তিযুদ্ধের ধারা থেকে দেশকে সরিয়ে নিয়েছেন, পরাজিত রাজাকার-আলবদরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, রাজনীতিকে কেনাবেচার পণ্যে পরিণত করেছেন—এর সবই আমার দেখা। এক চরম প্রতিকূল পরিবেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যে আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন, তার পূর্বাপর ঘটনাধারার আমি একজন অংশীজন। আমি এখন সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় না হলেও রাজনীতিই আমার সারাক্ষণের ধ্যানজ্ঞান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমি একজন হিতার্থী। ব্যক্তিগতভাবে কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা থেকে নয়, দেশ ও দেশের মানুষের ভালোর জন্যই আমি আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে, শেখ হাসিনার পক্ষে। অনেকেই এটা জানেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার ভাই-বোন সম্পর্ক। তাঁকে আমি ‘গুড সিস্টার’ বলে সম্বোধন করি, তিনি আমাকে ‘ব্রাদার’ বলেন। এখন আমাদের খুব দেখা হয়, কথা হয়, তা নয়। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে আমরা একে অপরের খোঁজখবর রাখি না।
শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার এই প্রীতিময় সম্পর্কের কথা যাঁরা জানেন, তাঁরা আমার সঙ্গে এখন যোগাযোগ করেন কিছুটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সঙ্গে। প্রায় সবাই জানতে চান, দেশে কী ঘটছে? শেখ হাসিনা ঠিক পথে আছেন তো? তিনি কি পারবেন ঘরে-বাইরে এত শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে? এসব প্রশ্নের উত্তর সব আমার জানা, তা নয়। তবে কিছু কিছু ঘটনায় আমি পীড়িত বোধ করি, ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না, আবার আস্থাও হারাই না। শেখ হাসিনা যখন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন, তখনো কারও কারও মনে সংশয় ছিল, তিনি পারবেন তো? তিনি প্রমাণ করেছেন, তিনি পারেন। আওয়ামী লীগ আর কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে যারা আস্ফালন করত, তারা এখন ক্ষমতা থেকে দূরে, আর আওয়ামী লীগ টানা চার মেয়াদে সরকার গঠন করে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা সফল হবেন কি না, সে প্রশ্নও তো ছিল। কী প্রমাণ হয়েছে? শেখ হাসিনার চেয়ে দক্ষ ও সফল শাসক শুধু বাংলাদেশে কেন, পৃথিবীতেই খুব বেশি নেই। আমি শেখ হাসিনার সাফল্যে গর্ব অনুভব করি। কিন্তু তার মানে কি এই যে দেশে যা ঘটছে, তার সবকিছু ঠিক? ভুল হচ্ছে না, অন্যায় কিছু হচ্ছে না? আমি অন্ধ নই, স্তাবক নই। তাই আমি মনে করি, দেশ এখন পুরোপুরি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারায় চলছে না। বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে কোথাও কোথাও এমন কিছু ঘটছে, যা বঙ্গবন্ধুর মুখ উজ্জ্বল না করে উল্টোটা করছে। তাই এখনই সতর্ক হতে হবে। শেখ হাসিনাকেও সবাইকে প্রশ্রয় দেওয়ার মনোভাব দূর করে কারও কারও প্রতি কঠোর হতে হবে। কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে, যেগুলো সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনার সততাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যেহেতু সবাই মিলে এটাই বলা হয় যে শেখ হাসিনার নির্দেশ বা পরামর্শ ছাড়া কিছু হয় না, সেহেতু খারাপ কিছু হলে তার দায়ও স্বাভাবিকভাবেই শেখ হাসিনার ওপরও বর্তায়। ভালোটার জন্য প্রশংসিত হলে মন্দটার জন্য নিন্দিত কেন নয়?
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি যেভাবে গণমাধ্যমে নিয়মিত খবর হচ্ছেন, তার জন্য সরকার বিব্রত নয় বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে মন্তব্য করেছেন, সেটাও যথার্থ নয় বলে আমি মনে করি। আজিজ আহমেদ ও বেনজীর আহমেদের ঘটনাগুলো থেকে এ প্রশ্ন সামনে আসছে, এমন আখের গোছানোয় পারদর্শী আরও কতজন কত দায়িত্বে আছে? শেখ হাসিনা নিজেই একবার বলেছিলেন, তাঁকে ছাড়া আর সবাইকে কেনা যায়। আবার ওবায়দুল কাদের একাধিকবার বলেছেন, কে কী করেন সব তথ্য শেখ হাসিনার কাছে আছে। সরকারপ্রধান হিসেবে সব তথ্য তাঁর কাছে থাকাটাই স্বাভাবিক। তাহলে সংগতভাবেই প্রশ্ন আসে, আজিজ-বেনজীরের তথ্যও তাঁর কাছে ছিল বা আছে। তাহলে এই দুই ব্যক্তি সেনা ও পুলিশের মতো দুটি বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন কীভাবে?
দুদকের মামলায় সম্প্রতি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশনা দেন আদালত। আর সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যত প্রভাবশালীই হোক—অপরাধ করতে পারে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, অপরাধের শাস্তি নিশ্চিতের ব্যাপারে সরকার সৎসাহস দেখিয়েছে কি না। শেখ হাসিনা সরকারের সেই সৎসাহস আছে। কেউ পার পাবে না। বিচার বিভাগ, দুদক স্বাধীন। সেখানে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আমরা তাকে প্রটেক্ট করতে যাব না। সেখানে কোনো সাবেক আইজিপি বা কোনো সাবেক সেনাপ্রধান যে-ই হোক না কেন, সরকারের কাউকে প্রটেকশন দেওয়ার বিষয় নেই।’
দায়িত্ব পালনকালে অবাধে ‘অপরাধ’ করতে দিয়ে অবসরে যাওয়ার পর ‘প্রটেকশন’ না দেওয়ার কথা বললে সেটা কি মানুষ ভালোভাবে নেয়? নানা কারণে মানুষের মধ্যে এখন অনেক প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, সাধারণ মানুষ আন্দোলন-সংগ্রামে নেই। শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও কম নয়। মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে লক্ষণীয় পরিবর্তন। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় প্রতিবছর যে মঙ্গা লেগে থাকত, তা এখন অতীতের বিষয়। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া, এখানেই মানুষের চরম অসন্তোষ। আয় বাড়ে না, ব্যয় বাড়ে। ফলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ে। আবার কোটিপতির সংখ্যাও বাড়ে। এই বৈষম্যের বিষয়টি উপেক্ষা করার মতো নয়। সাধারণ মানুষ মনে করে, যে পাকিস্তানি বৈষম্যের নীতির বিরোধিতা করে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হলো, সেই বৈষম্যের নীতি কেন আওয়ামী লীগের নীতি হয়ে দাঁড়াল? আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া মানেই সম্পদ বৃদ্ধি। রাজনীতি মানে লাভজনক ব্যবসা। একবার কোনোভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া মানেই আঙুল ফুলে কলাগাছ। দেশের রাজনীতি কেন এমন অসৎ হওয়ার প্রতিযোগিতার বিষয় হয়ে দাঁড়াল, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে লেখাটি শেষ করতে চাই। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি যাঁরা বিদেশে পলাতক রয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা হবে। দেশের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি ও দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখা—এটাই আমার লক্ষ্য।’
লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা যেন মানুষকে পেয়ে না বসে, সেদিকেও প্রধানমন্ত্রীকেই লক্ষ রাখতে হবে। কারণ, তাঁর কাছেই এখনো মানুষের সব প্রত্যাশা।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে