অনাবৃষ্টি-বিদ্যুৎবিভ্রাটে নিরুপায় আমন চাষি

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর (যশোর) 
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২২, ০৭: ০১
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২২, ১২: ১৮

আষাঢ়-শ্রাবণ মিলে বর্ষাকাল। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী বর্ষা শেষ হতে আর মাত্র ১৫ দিন বাকি। এ সময়ে বৃষ্টির পানিতে থই থই করে খাল-বিল, ডোবা, নদী-নালা। কিন্তু এবার অনাবৃষ্টিতে প্রকৃতির চিরাচরিত সেই নিয়ম পাল্টে গেছে। আষাঢ় শেষে শ্রাবণ পার হতে চললেও কোথাও পানির দেখা নেই। খরায় মাঠ-ঘাট খাঁ খাঁ করছে। প্রকৃতির এ বৈরিতায় বিপাকে পড়েছেন আমন চাষিরা।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষক খেতে আমনের চারা রোপণ করতে পারছেন না। পুকুর ডোবা নালা শুকিয়ে থাকায় পাট কেটে জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে আছেন তাঁরা। এমন অবস্থায় আমন চাষের জন্য একমাত্র ভরসা সেচযন্ত্র। তাতেও বিপত্তি ঘটছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে।

তীব্র বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানি তুলে কৃষকেরা যে আমন চাষ শুরু করবেন, তারও উপায় নেই। ঠিকমতো সেচযন্ত্রই চালাতে পারছেন না সেচমালিকেরা। ফলে সংকট তীব্র হচ্ছে কৃষকদের।

মনিরামপুর উপজেলা কৃষি দপ্তর বলছে, জুনের মাঝামাঝি সময়ে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়। আর জুলাইয়ের মাঝামাঝি কৃষকেরা খেতে আমনের চারা রোপণ শুরু করেন। কিন্তু এবার বৃষ্টি না হওয়ায় পুরোপুরি আমন চাষ শুরু হয়নি। সময়মতো চাষ শুরু করতে না পারলে ফলনে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষক। এ বছর ২২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে উপজেলার ঢাকুরিয়া, কাশিমনগর, খেদাপাড়া, রোহিতা, ঝাঁপা, চালুয়াহাটি, শ্যামকুড়ের মাঠগুলোতে কিছু কৃষক সেচের পানিতে আমন রোপণ করেছেন। অনেকে জমি চাষ করে বৃষ্টির অপেক্ষায় ফেলে রেখেছেন। পানি কিনে আমন রোপণের ইচ্ছে থাকলেও দিনে ৭-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সেচ যন্ত্রের মালিকেরা কৃষকদের জমিতে পানি ঢোকাতে পারছেন না। ফলে মৌসুম পার হতে চললেও পুরোপুরি এ উপজেলায় আমন চাষ এখনো শুরু হয়নি।

কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মনিরামপুরে ২২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু অনাবৃষ্টি সেই লক্ষ্যমাত্রায় তারতম্য সৃষ্টি করতে পারে।

উপজেলার মামুদকাটি গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আকাশে বিভিন্ন সময় মেঘ জমছে। সামন্য বৃষ্টির ফোটা পড়ে মেঘ সরে যাচ্ছে। খেতে পানি জমার মতো বৃষ্টি হচ্ছে না। সেচযন্ত্রের পানি কিনে ১৫ কাঠায় ধান রোপণ করেছি। অন্য মাঠে এক খণ্ড জমি আছে। সেখানে এখনো সেচের পানি ঢোকেনি। বৃষ্টি না হলি এবারও বোরো চাষের মতো আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পানির দাম দেওয়া লাগবে।’

রঘুনাথপুর মাঠের সেচযন্ত্রের মালিক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার সেচযন্ত্রের আওতায় ২০ বিঘা জমি রয়েছে। এর মধ্যে নিজের সঙ্গে ৩ বিঘা। প্রতিবার বৃষ্টির পানিতে আমন হয়েছে। প্রথম দিকে দু-একবার সেচ দিতে হতো। এবার শুরু থেকে সেচের পানিতে আমন চাষ হচ্ছে।’

নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘বোরো চাষের মতো ২৪ ঘণ্টা মোটর (সেচযন্ত্র) চালু রাখতে হচ্ছে; কিন্তু ঠিকমতো বিদ্যুৎ না থাকায় সেচযন্ত্র চালাতে পারছি না। মোটর চালু করে ঘর থেকে বের হওয়ার পরপরই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। লোডশেডিং হওয়ায় এবার বিদ্যুৎ বিলও বেশি গুনতে হবে। কারণ, বারবার মোটর চালু করতে গেলে বিল বেশি ওঠে।’

মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ায় আমরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষক ও সেচযন্ত্র মালিকদের নিয়ে উঠান বৈঠক করছি। সেচযন্ত্র দিয়ে পানি তুলে আমন চাষ শুরুর পরামর্শ দিচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত