নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ও মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের প্রার্থী না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এমনকি যাঁরা এরই মধ্যে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদেরও নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু দলের এই নির্দেশনা মানছেন না কেউ।
আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত ৩৩টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৪৭ জন প্রার্থীর খোঁজ পাওয়া গেছে, যাঁরা স্থানীয় এমপির স্বজন ও নিকটাত্মীয়। এ ছাড়া তফসিল হয়নি এমন বেশ কিছু উপজেলায় এমপিদের আরও ২৬ জন আত্মীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগসহ নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বজনদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে এরই মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনায় বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখিও হয়েছেন কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে এবার উপজেলায় নৌকা প্রতীক দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার সুবাদে উপজেলা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান এমপিরা। এ জন্য চেয়ারম্যান পদে নিজের আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের মাঠে রাখছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে দলের নিষেধও শুনছেন না অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিশদ আলোচনা হবে বলে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে। সেখানে যেসব এমপি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন, তাঁদের বিষয়ে কী কী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, দল থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, তা মানা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক। তা মানা না হলে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, যেসব এমপি-মন্ত্রী দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নিজের স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনের মাঠে রাখবেন, তাঁরা ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দল তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আগামী নির্বাচনে তাঁদের মনোনয়নও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এরই মধ্যে তিন ধাপের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দ্বিতীয় ধাপের ১৬১ উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ হয়েছে গতকাল রোববার। অন্যদিকে প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলায় মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ সোমবার। এই ধাপের ভোট আগামী ৮ মে।
গতকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাগুরার শালিখায় এমপির একজন আত্মীয় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ ছাড়া নাটোরের সিংড়ায় আলোচিত চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবিব রুবেল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। এর বাইরে কোনো উপজেলা থেকে এমপির স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসেনি। উল্টো স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করার ঘোষণা দিয়েছেন কোনো কোনো এমপি।
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী। ছেলে মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন না বলে এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন এমপি একরামুল। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার ছেলে ভোট করবে। ও এখন ২৮ বছরের ছেলে। সে যে আমার কথা শুনবে, এমন কোনো কথা তো নেই।’ একরামুল হকের স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলী কবিরহাট উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান। টানা তিনবারের চেয়ারম্যান শিউলী এবারও ওই উপজেলায় প্রার্থী হচ্ছেন।
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় এমপি মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস ও তাঁদের বড় ছেলে আশিক আলী। এ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন। তিনি মোহাম্মদ আলীর ছোট ভাই। ভাতিজার সমর্থনে এবার লিটন মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। এখন এমপির স্ত্রী ও ছেলে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে উপজেলার চেয়ারম্যান পদে আবারও তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের এখানে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। দলের কেউ মনোনয়ন দাখিল করেনি। রানিং চেয়ারম্যান আমার ছোট ভাই। সে তার ভাতিজার নাম প্রস্তাব করেছে। এখন আমি এখানে কী করব? এখন যদি কেউ না থাকে (স্ত্রী ও ছেলে প্রত্যাহার করলে) তাহলে কি উপজেলাটি ফাঁকা যাবে? আমাদের এখানে চিত্র ভিন্ন।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘এখন আমরা চেষ্টা করছি এমপিদের স্বজনেরা যাতে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে। যদি কেউ প্রত্যাহার না করে, তাহলে কোনো যাতে এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেই ব্যাপারে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন মাদারীপুর-২ আসনের এমপি শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান। এমপির চাচাতো ভাই সাবেক চেয়ারম্যান পাভেলুর রহমান শফিক খানও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান এমপির আপন ছোট ভাই অ্যাডভোকেট ওবাইদুর রহমান খান।
এ প্রসঙ্গে শাজাহান খান বলেন, ‘মাদারীপুরে (সদর) চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন একজন আমার ছেলে অন্য প্রার্থী আমার চাচাতো ভাই। সিদ্ধান্ত মতে, দুজনেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে এখন এ প্রসঙ্গে আমি আর কিছু বলতে চাই না।’
কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুব উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই ও বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন স্থানীয় এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর ছোট ভাই বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী।
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে আশিক আবদুল্লাহ, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় এমপি মো. মকবুল হোসেনের ছেলে গোলাম হাসনায়েন রাসেল, বেড়া উপজেলায় পাবনা-১ আসনের এমপি ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর আপন ছোট ভাই আব্দুল বাতেন এবং ভাতিজা আব্দুল কাদের সবুজ প্রার্থী হয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ফুফাতো ভাই সাইদুর রহমান স্বপন ও তাঁর সাবেক এপিএস বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কায়ছার ভূঁইয়া জীবন। একইভাবে বাঞ্ছারামপুরে বর্তমান এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামের বোনের ছেলে কাজী জাদিদ-আল-রহমান জনি ও ভাইয়ের ছেলে আমিনুল ইসলাম তুষার ভোট করছেন।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বিদায়ী চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী সুইট স্থানীয় এমপি আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের নিকটাত্মীয়। এমপি ডিউকের চাচাতো ভাই হাসান তবিকুর চৌধুরী পলিনও এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সোহেলী পারভিন নিরী নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তির ভাগনি। এবারও একই পদে নির্বাচন করছেন নিরী। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের ভগ্নিপতি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ রায়পুর উপজেলায় আবারও প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর মামা হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু। তিনি এমপির ফুফাতো শ্যালক।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি আলী আজগার টগরের আপন ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আলী মুনছুর বাবু, চাচাতো চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদুল ইসলাম এবং মো. আবু তালেব মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এবারও দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন করছেন বর্তমান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইসরাফিল হোসেন। তিনি মানিকগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফুফাতো ভাই।
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান রেহেনা মজিদ স্থানীয় এমপি অধ্যাপক আব্দুল মজিদের স্ত্রী। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বর্তমান এমপি আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই। মুরাদনগর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ডক্টর আহসানুল আলম সরকার বর্তমান এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে। লাকসাম উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. মহব্বত আলী পুনরায় এ পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এ বি এম বাহার সাবেক রেলপথমন্ত্রী ও বর্তমান এমপি মুজিবুল হকের ভাতিজা। মনোহরগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ভাতিজা আমিরুল ইসলাম।
পিরোজপুরের নাজিরপুরে উপজেলা পারিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পিরোজপুর-১ আসনের এমপির ভাই এস এম নূরে আলম সিদ্দিকী।
শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি ইকবাল হোসেন অপুর চাচাতো ভাই বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ভোলার লালমোহনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন রিমন ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ফুফাতো ভাই। আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম লাবু এমপির চাচাতো ভাই। বোরহানউদ্দিন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম এমপি তোফায়েল আহমেদের ভগ্নিপতি। তিনি এবারও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী।
রাঙামাটির ১০টি, বান্দরবানের ৭টি ও খুলনার ৯টি উপজেলার একটিতেও মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলার মধ্যে শুধু রামগড়ে চেয়ারম্যান পদে পুনরায় প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কারবারী। তিনি সম্পর্কে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার জামাতা।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন চাঁদপুর-২ আসনের এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ভাতিজার স্ত্রী লাভলী চৌধুরী। তিনি ছাড়া আর কেউ এই পদে মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ও মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের প্রার্থী না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এমনকি যাঁরা এরই মধ্যে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদেরও নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু দলের এই নির্দেশনা মানছেন না কেউ।
আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত ৩৩টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৪৭ জন প্রার্থীর খোঁজ পাওয়া গেছে, যাঁরা স্থানীয় এমপির স্বজন ও নিকটাত্মীয়। এ ছাড়া তফসিল হয়নি এমন বেশ কিছু উপজেলায় এমপিদের আরও ২৬ জন আত্মীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগসহ নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বজনদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে এরই মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনায় বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখিও হয়েছেন কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে এবার উপজেলায় নৌকা প্রতীক দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার সুবাদে উপজেলা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান এমপিরা। এ জন্য চেয়ারম্যান পদে নিজের আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের মাঠে রাখছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে দলের নিষেধও শুনছেন না অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিশদ আলোচনা হবে বলে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে। সেখানে যেসব এমপি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন, তাঁদের বিষয়ে কী কী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, দল থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, তা মানা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক। তা মানা না হলে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, যেসব এমপি-মন্ত্রী দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নিজের স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনের মাঠে রাখবেন, তাঁরা ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দল তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আগামী নির্বাচনে তাঁদের মনোনয়নও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এরই মধ্যে তিন ধাপের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দ্বিতীয় ধাপের ১৬১ উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ হয়েছে গতকাল রোববার। অন্যদিকে প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলায় মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ সোমবার। এই ধাপের ভোট আগামী ৮ মে।
গতকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাগুরার শালিখায় এমপির একজন আত্মীয় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ ছাড়া নাটোরের সিংড়ায় আলোচিত চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবিব রুবেল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। এর বাইরে কোনো উপজেলা থেকে এমপির স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসেনি। উল্টো স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করার ঘোষণা দিয়েছেন কোনো কোনো এমপি।
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী। ছেলে মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন না বলে এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন এমপি একরামুল। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার ছেলে ভোট করবে। ও এখন ২৮ বছরের ছেলে। সে যে আমার কথা শুনবে, এমন কোনো কথা তো নেই।’ একরামুল হকের স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলী কবিরহাট উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান। টানা তিনবারের চেয়ারম্যান শিউলী এবারও ওই উপজেলায় প্রার্থী হচ্ছেন।
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় এমপি মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস ও তাঁদের বড় ছেলে আশিক আলী। এ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন। তিনি মোহাম্মদ আলীর ছোট ভাই। ভাতিজার সমর্থনে এবার লিটন মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। এখন এমপির স্ত্রী ও ছেলে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে উপজেলার চেয়ারম্যান পদে আবারও তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের এখানে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। দলের কেউ মনোনয়ন দাখিল করেনি। রানিং চেয়ারম্যান আমার ছোট ভাই। সে তার ভাতিজার নাম প্রস্তাব করেছে। এখন আমি এখানে কী করব? এখন যদি কেউ না থাকে (স্ত্রী ও ছেলে প্রত্যাহার করলে) তাহলে কি উপজেলাটি ফাঁকা যাবে? আমাদের এখানে চিত্র ভিন্ন।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘এখন আমরা চেষ্টা করছি এমপিদের স্বজনেরা যাতে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে। যদি কেউ প্রত্যাহার না করে, তাহলে কোনো যাতে এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেই ব্যাপারে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন মাদারীপুর-২ আসনের এমপি শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান। এমপির চাচাতো ভাই সাবেক চেয়ারম্যান পাভেলুর রহমান শফিক খানও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান এমপির আপন ছোট ভাই অ্যাডভোকেট ওবাইদুর রহমান খান।
এ প্রসঙ্গে শাজাহান খান বলেন, ‘মাদারীপুরে (সদর) চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন একজন আমার ছেলে অন্য প্রার্থী আমার চাচাতো ভাই। সিদ্ধান্ত মতে, দুজনেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে এখন এ প্রসঙ্গে আমি আর কিছু বলতে চাই না।’
কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুব উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই ও বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন স্থানীয় এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর ছোট ভাই বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী।
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে আশিক আবদুল্লাহ, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় এমপি মো. মকবুল হোসেনের ছেলে গোলাম হাসনায়েন রাসেল, বেড়া উপজেলায় পাবনা-১ আসনের এমপি ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর আপন ছোট ভাই আব্দুল বাতেন এবং ভাতিজা আব্দুল কাদের সবুজ প্রার্থী হয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ফুফাতো ভাই সাইদুর রহমান স্বপন ও তাঁর সাবেক এপিএস বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কায়ছার ভূঁইয়া জীবন। একইভাবে বাঞ্ছারামপুরে বর্তমান এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামের বোনের ছেলে কাজী জাদিদ-আল-রহমান জনি ও ভাইয়ের ছেলে আমিনুল ইসলাম তুষার ভোট করছেন।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বিদায়ী চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী সুইট স্থানীয় এমপি আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের নিকটাত্মীয়। এমপি ডিউকের চাচাতো ভাই হাসান তবিকুর চৌধুরী পলিনও এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সোহেলী পারভিন নিরী নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তির ভাগনি। এবারও একই পদে নির্বাচন করছেন নিরী। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের ভগ্নিপতি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ রায়পুর উপজেলায় আবারও প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর মামা হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু। তিনি এমপির ফুফাতো শ্যালক।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি আলী আজগার টগরের আপন ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আলী মুনছুর বাবু, চাচাতো চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদুল ইসলাম এবং মো. আবু তালেব মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এবারও দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন করছেন বর্তমান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইসরাফিল হোসেন। তিনি মানিকগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফুফাতো ভাই।
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান রেহেনা মজিদ স্থানীয় এমপি অধ্যাপক আব্দুল মজিদের স্ত্রী। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বর্তমান এমপি আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই। মুরাদনগর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ডক্টর আহসানুল আলম সরকার বর্তমান এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে। লাকসাম উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. মহব্বত আলী পুনরায় এ পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এ বি এম বাহার সাবেক রেলপথমন্ত্রী ও বর্তমান এমপি মুজিবুল হকের ভাতিজা। মনোহরগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ভাতিজা আমিরুল ইসলাম।
পিরোজপুরের নাজিরপুরে উপজেলা পারিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পিরোজপুর-১ আসনের এমপির ভাই এস এম নূরে আলম সিদ্দিকী।
শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি ইকবাল হোসেন অপুর চাচাতো ভাই বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ভোলার লালমোহনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন রিমন ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ফুফাতো ভাই। আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম লাবু এমপির চাচাতো ভাই। বোরহানউদ্দিন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম এমপি তোফায়েল আহমেদের ভগ্নিপতি। তিনি এবারও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী।
রাঙামাটির ১০টি, বান্দরবানের ৭টি ও খুলনার ৯টি উপজেলার একটিতেও মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলার মধ্যে শুধু রামগড়ে চেয়ারম্যান পদে পুনরায় প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কারবারী। তিনি সম্পর্কে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার জামাতা।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন চাঁদপুর-২ আসনের এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ভাতিজার স্ত্রী লাভলী চৌধুরী। তিনি ছাড়া আর কেউ এই পদে মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে