আসাদ সরকার
গোবিন্দ কর্মকারের চোখ প্রমাণ করল, চোখের জলের কোনো বাঁধ নেই। কখন কীভাবে কিসের জন্য গড়িয়ে পড়বে, তা বোঝারও কোনো উপায় নেই। তাঁর গাল বেয়ে যখন অশ্রু অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে, তখন আমরা মাথা নিচু করে ভাবছি, গোবিন্দ কর্মকারের এই চোখের জলের কারণটা কী? উত্তরটা জানার পর মনে হলো, কোনোভাবেই তাঁর এই অশ্রু অকারণে ঝরছে না। বরং আমরাদের মনেও প্রশ্ন জাগল, সত্যিই তো! কী হবে এরপর?
গোবিন্দ কর্মকার জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মহিপুর গ্রামের মানুষ। জন্ম ১৯৫৭ সালে নাটোরের গোপালপুরে। পেশায় বাদ্যযন্ত্রের বাদক তিনি। তবলা, দোতারা, বেহালা, রাবাব, বেঞ্জো, হারমোনিয়াম, একতারা, তানপুরা, মাউথ অরগান—সবই বাজাতে পারেন তিনি। তাঁর গলায়ও সুর চড়ে। রংতুলির আঁচড়ে আবেগও ফুটিয়ে তোলেন তিনি। সব মিলিয়ে পুরোদস্তুর একজন শিল্পী। জেলা শিল্পকলা একাডেমি জয়পুরহাটের বাদ্যযন্ত্র প্রশিক্ষক এই গুণী ব্যক্তি। মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী হয়ে ভারতে পাড়ি জমানোর সময় ২৫ টাকা দিয়ে এক সেট তবলা কিনেছিলেন। তারপর নিজের মনে যেকোনো গানের সঙ্গে বাজাতেন। ভারতে থাকা অবস্থায়ই বাজানোর হাত বেশ পেকে উঠল। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ফিরে ওস্তাদ মন্টু দাস তাঁকে ধরিয়ে দেন তবলার ব্যাকরণ। রংপুর বেতারের অন্ধ নমির উদ্দিন ওস্তাদ শেখান দোতারা বাজানো। ওস্তাদ তপন দাস শেখান বেহালা। বাকি বাদ্যযন্ত্রগুলো বাজানো শিখেছেন নিজে নিজেই।
জয়পুরহাট জেলায় যেকোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গোবিন্দ কর্মকার অপরিহার্য। তবে কোন যন্ত্র বাজাতে তাঁর ডাক পড়ে, তা প্রায় অজানাই থেকে যায়। অনুষ্ঠানের ধরন ও প্রয়োজন বুঝে হাতে তুলে নেন বাদ্যযন্ত্র। তবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তবলা, বেহালা ও দোতারায়। রাস্তায় রাস্তায় মাউথ অর্গান বাজিয়ে হাঁটা বেশ উপভোগ করেন। তবে রাবাব, বেঞ্জো, তানপুরা ও একতারা বাজানোর মতো অনুষ্ঠান এখন আর খুঁজে পান না। তাই নিজের ঘরে কিংবা শিল্পকলার একটা ঘরে আপন মনে এগুলো বাজান।
জয়পুরহাটের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যন্ত্রশিল্পী হিসেবে ডাক পেয়েছেন গোবিন্দ। পাশের দেশ ভারতেও আমন্ত্রণ পেয়েছেন কয়েকবার। অনেক জনপ্রিয় গানের স্টুডিও রেকর্ডিংয়ে বাজিয়েছেন। যন্ত্রশিল্পে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা। সেই মানুষটি অঝোরে কাঁদছেন। তাঁর এ অশ্রুর কারণ পারিবারিক অসচ্ছলতা নয়। যদিও মাঝেমধ্যেই সপরিবারে না খেয়ে থাকতে হয় অনটনের কারণে। মাথার ওপর ঋণের বোঝাও আছে। আবার শিল্পী হিসেবে আত্মসম্মানবোধের কারণে কারও কাছে হাতও পাততে পারেন না। আয় বলতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আর শিল্পকলার নামমাত্র সম্মানী। কিন্তু এই অনটন তাঁর চোখে অশ্রু আনেনি। তাঁর কান্না বাদ্যযন্ত্র বাজানোয় তাঁর শিক্ষা অন্যের মাঝে বিলাতে না পারার যন্ত্রণা। তিনি বলেন, ‘আমি দশটি যন্ত্র বাজানোর বিদ্যা নিয়ে মরে গিয়ে কী করব! একজনকে যদি পেতাম, যার কাছে সব বিলিয়ে দিয়ে শেষ নিশ্বাস নিতাম।’
গোবিন্দ কর্মকারের কান্নার কারণ জানার পর আমার ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস উঠে এল। মন বলে উঠল, ‘হায় অসময়! শেখার মানুষটাও নেই এখন আর।’
লেখক: নাট্যকার ও নির্মাতা
গোবিন্দ কর্মকারের চোখ প্রমাণ করল, চোখের জলের কোনো বাঁধ নেই। কখন কীভাবে কিসের জন্য গড়িয়ে পড়বে, তা বোঝারও কোনো উপায় নেই। তাঁর গাল বেয়ে যখন অশ্রু অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে, তখন আমরা মাথা নিচু করে ভাবছি, গোবিন্দ কর্মকারের এই চোখের জলের কারণটা কী? উত্তরটা জানার পর মনে হলো, কোনোভাবেই তাঁর এই অশ্রু অকারণে ঝরছে না। বরং আমরাদের মনেও প্রশ্ন জাগল, সত্যিই তো! কী হবে এরপর?
গোবিন্দ কর্মকার জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মহিপুর গ্রামের মানুষ। জন্ম ১৯৫৭ সালে নাটোরের গোপালপুরে। পেশায় বাদ্যযন্ত্রের বাদক তিনি। তবলা, দোতারা, বেহালা, রাবাব, বেঞ্জো, হারমোনিয়াম, একতারা, তানপুরা, মাউথ অরগান—সবই বাজাতে পারেন তিনি। তাঁর গলায়ও সুর চড়ে। রংতুলির আঁচড়ে আবেগও ফুটিয়ে তোলেন তিনি। সব মিলিয়ে পুরোদস্তুর একজন শিল্পী। জেলা শিল্পকলা একাডেমি জয়পুরহাটের বাদ্যযন্ত্র প্রশিক্ষক এই গুণী ব্যক্তি। মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী হয়ে ভারতে পাড়ি জমানোর সময় ২৫ টাকা দিয়ে এক সেট তবলা কিনেছিলেন। তারপর নিজের মনে যেকোনো গানের সঙ্গে বাজাতেন। ভারতে থাকা অবস্থায়ই বাজানোর হাত বেশ পেকে উঠল। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ফিরে ওস্তাদ মন্টু দাস তাঁকে ধরিয়ে দেন তবলার ব্যাকরণ। রংপুর বেতারের অন্ধ নমির উদ্দিন ওস্তাদ শেখান দোতারা বাজানো। ওস্তাদ তপন দাস শেখান বেহালা। বাকি বাদ্যযন্ত্রগুলো বাজানো শিখেছেন নিজে নিজেই।
জয়পুরহাট জেলায় যেকোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গোবিন্দ কর্মকার অপরিহার্য। তবে কোন যন্ত্র বাজাতে তাঁর ডাক পড়ে, তা প্রায় অজানাই থেকে যায়। অনুষ্ঠানের ধরন ও প্রয়োজন বুঝে হাতে তুলে নেন বাদ্যযন্ত্র। তবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তবলা, বেহালা ও দোতারায়। রাস্তায় রাস্তায় মাউথ অর্গান বাজিয়ে হাঁটা বেশ উপভোগ করেন। তবে রাবাব, বেঞ্জো, তানপুরা ও একতারা বাজানোর মতো অনুষ্ঠান এখন আর খুঁজে পান না। তাই নিজের ঘরে কিংবা শিল্পকলার একটা ঘরে আপন মনে এগুলো বাজান।
জয়পুরহাটের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যন্ত্রশিল্পী হিসেবে ডাক পেয়েছেন গোবিন্দ। পাশের দেশ ভারতেও আমন্ত্রণ পেয়েছেন কয়েকবার। অনেক জনপ্রিয় গানের স্টুডিও রেকর্ডিংয়ে বাজিয়েছেন। যন্ত্রশিল্পে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা। সেই মানুষটি অঝোরে কাঁদছেন। তাঁর এ অশ্রুর কারণ পারিবারিক অসচ্ছলতা নয়। যদিও মাঝেমধ্যেই সপরিবারে না খেয়ে থাকতে হয় অনটনের কারণে। মাথার ওপর ঋণের বোঝাও আছে। আবার শিল্পী হিসেবে আত্মসম্মানবোধের কারণে কারও কাছে হাতও পাততে পারেন না। আয় বলতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আর শিল্পকলার নামমাত্র সম্মানী। কিন্তু এই অনটন তাঁর চোখে অশ্রু আনেনি। তাঁর কান্না বাদ্যযন্ত্র বাজানোয় তাঁর শিক্ষা অন্যের মাঝে বিলাতে না পারার যন্ত্রণা। তিনি বলেন, ‘আমি দশটি যন্ত্র বাজানোর বিদ্যা নিয়ে মরে গিয়ে কী করব! একজনকে যদি পেতাম, যার কাছে সব বিলিয়ে দিয়ে শেষ নিশ্বাস নিতাম।’
গোবিন্দ কর্মকারের কান্নার কারণ জানার পর আমার ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস উঠে এল। মন বলে উঠল, ‘হায় অসময়! শেখার মানুষটাও নেই এখন আর।’
লেখক: নাট্যকার ও নির্মাতা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে