নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বিগত দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে সঙ্গে মানুষের আস্থা হারিয়েছে ভোট ব্যবস্থা সর্বোপরি কমিশনের ওপর থেকে। এ আস্থা এখনো ফেরেনি। তাই নির্বাচন ব্যবস্থায় জনআস্থা ফেরানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। গতকাল মঙ্গলবার ইসির ধারাবাহিক সংলাপে অংশ নিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এই পরামর্শ দেন। এ ছাড়া ইভিএম ব্যবহার না করা, দলীয় সরকারের সময় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করা এবং প্রতিবন্ধকতা এলে কমিশনকে প্রয়োজনে পদত্যাগের পরামর্শও দেন তাঁরা।
আলোচকেরা বলেছেন, ভোট ব্যবস্থাপনার প্রতি ভোটারদের আস্থা ফেরাতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সিইসিকে উদ্দেশ করে তাঁরা বলেন, নিরপেক্ষভাবে ভোট করবেন—তা কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইসি গঠনের পরপরই সংলাপের আয়োজন করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। প্রথম দিনেই আমন্ত্রণে সাড়া দেননি ১৭ জন। একই চিত্র দেখা গেল দ্বিতীয় সংলাপেও। ৩৯ আমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে অর্ধেকের বেশি (২০ জন) আসেননি।
সংলাপে অংশ নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সার্চ কমিটির কারণে বর্তমান কমিশন কিছুটা আস্থা সংকটে পড়েছে। সবার নাম প্রকাশ করেনি কমিটি। জোনায়েদ সাকি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার দলের নিবন্ধন দেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘একটি কঠিন সমস্যা, দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দল বয়কট করে বেড়াচ্ছে। এটাতে সমস্যা। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না এটা অনেকে বলেছেন।’ নিজ বক্তব্য রাখার একপর্যায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে গণস্বাস্থ্যের এই ট্রাস্টি বলেন, ‘খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কি না, তা জানতে চেয়েছি। আমার মতে ওনার নির্বাচন করতে পারা উচিত। কেননা তাঁর মামলার ফয়সালা হয়নি। আমি সব সময়ে বলেছি জামিন পাওয়া তাঁর অধিকার। ছয় মাসের খেলা বন্ধ করা উচিত। কেননা খুনের মামলাতে যার ফাঁসি হবে, তিন মাস আগে তাঁকেও জামিন দেওয়া হয়েছিল।’
অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনাই চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনকালীন আইন-বিধির যথাযথ প্রয়োগ করতে পারেন কি না, তা দেখা যাবে। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন, প্রতিবন্ধকতা এলে পদত্যাগের সাহস রাখবেন।’
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে ৩০০ আসনের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারীদের সরাসরি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে নিজেরা করি-র সমন্বয়ক খুশী কবির বলেন, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যেন ৩৩ শতাংশ নারী আসনের বিষয়টি নিশ্চিত করে সে ক্ষেত্রে ইসির ভূমিকা পালন করা উচিত।
লিডারশিপ স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. সিনহা এম এ সাঈদ, বলেন, ‘ইসি এত সংলাপ করার মানে হচ্ছে এখানে সংকট রয়েছে। আপনার কাজ দিয়ে প্রমাণ করুন, আস্থা অর্জন করুন সবার। নির্বাচনের সময় কতটুকু নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন সংশয় রয়েছে। আমি আশাবাদী মানুষ।’
নির্বাচনকালীন সরকারের চরিত্রের ধরন, কেমন নির্বাচন হবে-এ নিয়ে বিদ্যমান আইন বিধিতে কি ধরনের পরিবর্তন আনা যায় সে বিষয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘ভোটাররা নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েছে। ইসি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অতীতের ভুলভ্রান্তি স্বীকার কাজ এগিয়ে নিতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন বলেন, ‘ভোটের-আগে পরে ছয় মাস নির্বাচনকালীন কর্তৃত্ব কমিশনের কাছে থাকা উচিত। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে একাদশ সংসদের অধিবেশন থাকবে না। এ জন্য ভোটের আগে চার মাস, ভোটের পরে দুই মাস-এ ছয় মাসের জন্য ক্ষমতা ইসির হাতে থাকতে পারে।’
সংলাপ চলাকালে ইভিএম নিয়েও আলোচনা করেন বক্তারা। তারা ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ না করার পরামর্শও দেন। এ প্রসঙ্গে সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহার করলেই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। একটি ভালো ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন দেবেন।’ লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ যন্ত্রে যে ম্যানিপুলেট করা যায় না-তা নিশ্চিত না করে ব্যবহার করা যাবে না।’ ফরাস উদ্দিন বলেন, ‘ইভিএম সব সময় বিতর্কিত। এটার সমাধান না করে ব্যবহার করা ঠিক নয়। জোরের সঙ্গে বলব-ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য।’
সিইসি যা বললেন
সংলাপের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন ৫০-৬০ শতাংশ গ্রহণযোগ্য হলেই বড় সফলতা হবে। ‘মোটা দাগে’ সবার মতামত তুলে ধরে সিইসি জানান, ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হয়। ভোটাররা ভোট দিতে না পারলে, বাধা এলে, পোলিং অফিসারদের তাড়িয়ে দেন-এমন হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘যারা ডিক্লেয়ার করে দিয়েছেন নির্বাচনে অংশ নেবেন না; কিন্তু তাদের অংশগ্রহণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কীভাবে আস্থায় আনা যায়, আমন্ত্রণ জানিয়ে ভদ্রভাবে আসার কথা বলে কিছুটা তাদের পরিবর্তন করা যায় কিনা।’ তিনি আরও বলেন, ‘জীবনের শেষপ্রান্তে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন করতে পারি, যেসব পরামর্শ এসেছে তা বিবেচনায় নিয়ে এগোতে হবে। নির্বাচনটাকে যদি অবাধ, সুষ্ঠু করা যায় তাহলে সেটা সবার অংশগ্রহণে হয় সেটা সফলতা হতে পারে।
ইভিএম প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘ইভিএম-এ কোনো অসুবিধা আছে কিনা, অনেকে অভ্যস্ত নন। মেশিনের মাধ্যমে ভোটে কোনো ডিজিটাল কারচুপি হয় কি না-এটা আমাদের দেখতে হবে। ইভিএমের প্রতি আস্থা নিয়ে কথা উঠেছে।’ নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে তিনি মনে করেন, যে দল সরকারের থাকে তাদের কিছুটা বাড়তি অ্যাডভান্টেজ থাকে। কারণ, প্রশাসন, পুলিশ সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তিনি বলেন, ইসি তাদের ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে, আইনের কোনো অভাব নেই। কিন্তু প্রয়োগের দিক থেকে বাস্তব ঘাটতি রয়েছে। আমরা এনফোর্সমেন্টটা যেন ভালোভাবে করতে পারি সেটা চেষ্টা করব।
না যাওয়ার কারণ কি
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমি একটু অসুস্থ। এ ছাড়া সংলাপে গেলেও কোনো লাভ হতো না। কী আলাপ করব সেখানে গিয়ে? তারা কি জানে না গত দুই নির্বাচনের খবর? এর সমাধান কি তারা কি বোঝে না? নতুন করে তাদের কি জানাব? এই সংলাপে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। ৪০ জনকে সংলাপে ডেকেছে, একেকজনকে পাঁচ মিনিট করে কথা বলতে দিলেও এক দিন চলে যাবে, এ জন্য আমি যাইনি।’
অগোছালোভাবে আয়োজন করায় নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাননি আইনজীবী শাহদীন মালিক। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘দুই ঘণ্টার জন্য ৪০ জনকে ডেকেছে, একেকজনের জন্য ২ থেকে আড়াই মিনিটের বেশি পড়বে না। আমার কাছে এটা উদ্দেশ্যহীন মনে হয়েছে। মিটিং হলে তার কিছু এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়, এখানে কোনো এজেন্ডা ছিল না। নির্বাচন কমিশন আইন নিয়ে কথা বলতে চাইলে ওই মিটিং আমার যাওয়ার অর্থ আছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মহসিন জানান, ‘ইসির সংলাপের জন্য সময় বের করতে পারেননি তিনি। শিডিউলে আগে থেকেই অন্য কাজ ঠিক করা ছিল।’
যারা গেলেন
ইফতেখারুজ্জামান, আলী ইমাম মজুমদার, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মোস্তাফিজুর রহমান, সিনহা এম এ সাঈদ, মহিউদ্দিন আহমেদ, নজরুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ মণ্ডল, শাহীন আনাম, সঞ্জীব দ্রং, হাফিজুর রহমান কার্জন, জহুরুল আলম, শামীম রেজা, মহিউদ্দীন আহমেদ, আবু আলম মো. শহীদ খান, খুশী কবির ও রোবায়েত ফেরদৌস।
যারা গেলেন না
রওনক জাহান, সুলতানা কামাল, বেগম রাশেদা কে চৌধুরী, হোসেন জিল্লুর রহমান, এম হাফিজ উদ্দিন খান, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, মির্জা আজিজুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া এ রহমান, শাহদীন মালিক, তোফায়েল আহমেদ, বদিউল আলম মজুমদার, আবুল বারকাত, ওয়ালি উর রহমান, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, এমএম আকাশ, এএফএম গোলাম হোসেন, কাজী খলীকুজ্জামান, আমেনা মহসিন, কাবেরী গায়েন।
বিগত দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে সঙ্গে মানুষের আস্থা হারিয়েছে ভোট ব্যবস্থা সর্বোপরি কমিশনের ওপর থেকে। এ আস্থা এখনো ফেরেনি। তাই নির্বাচন ব্যবস্থায় জনআস্থা ফেরানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। গতকাল মঙ্গলবার ইসির ধারাবাহিক সংলাপে অংশ নিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এই পরামর্শ দেন। এ ছাড়া ইভিএম ব্যবহার না করা, দলীয় সরকারের সময় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করা এবং প্রতিবন্ধকতা এলে কমিশনকে প্রয়োজনে পদত্যাগের পরামর্শও দেন তাঁরা।
আলোচকেরা বলেছেন, ভোট ব্যবস্থাপনার প্রতি ভোটারদের আস্থা ফেরাতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সিইসিকে উদ্দেশ করে তাঁরা বলেন, নিরপেক্ষভাবে ভোট করবেন—তা কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইসি গঠনের পরপরই সংলাপের আয়োজন করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। প্রথম দিনেই আমন্ত্রণে সাড়া দেননি ১৭ জন। একই চিত্র দেখা গেল দ্বিতীয় সংলাপেও। ৩৯ আমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে অর্ধেকের বেশি (২০ জন) আসেননি।
সংলাপে অংশ নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সার্চ কমিটির কারণে বর্তমান কমিশন কিছুটা আস্থা সংকটে পড়েছে। সবার নাম প্রকাশ করেনি কমিটি। জোনায়েদ সাকি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার দলের নিবন্ধন দেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘একটি কঠিন সমস্যা, দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দল বয়কট করে বেড়াচ্ছে। এটাতে সমস্যা। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না এটা অনেকে বলেছেন।’ নিজ বক্তব্য রাখার একপর্যায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে গণস্বাস্থ্যের এই ট্রাস্টি বলেন, ‘খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কি না, তা জানতে চেয়েছি। আমার মতে ওনার নির্বাচন করতে পারা উচিত। কেননা তাঁর মামলার ফয়সালা হয়নি। আমি সব সময়ে বলেছি জামিন পাওয়া তাঁর অধিকার। ছয় মাসের খেলা বন্ধ করা উচিত। কেননা খুনের মামলাতে যার ফাঁসি হবে, তিন মাস আগে তাঁকেও জামিন দেওয়া হয়েছিল।’
অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনাই চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনকালীন আইন-বিধির যথাযথ প্রয়োগ করতে পারেন কি না, তা দেখা যাবে। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন, প্রতিবন্ধকতা এলে পদত্যাগের সাহস রাখবেন।’
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে ৩০০ আসনের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারীদের সরাসরি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে নিজেরা করি-র সমন্বয়ক খুশী কবির বলেন, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যেন ৩৩ শতাংশ নারী আসনের বিষয়টি নিশ্চিত করে সে ক্ষেত্রে ইসির ভূমিকা পালন করা উচিত।
লিডারশিপ স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. সিনহা এম এ সাঈদ, বলেন, ‘ইসি এত সংলাপ করার মানে হচ্ছে এখানে সংকট রয়েছে। আপনার কাজ দিয়ে প্রমাণ করুন, আস্থা অর্জন করুন সবার। নির্বাচনের সময় কতটুকু নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন সংশয় রয়েছে। আমি আশাবাদী মানুষ।’
নির্বাচনকালীন সরকারের চরিত্রের ধরন, কেমন নির্বাচন হবে-এ নিয়ে বিদ্যমান আইন বিধিতে কি ধরনের পরিবর্তন আনা যায় সে বিষয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘ভোটাররা নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েছে। ইসি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অতীতের ভুলভ্রান্তি স্বীকার কাজ এগিয়ে নিতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন বলেন, ‘ভোটের-আগে পরে ছয় মাস নির্বাচনকালীন কর্তৃত্ব কমিশনের কাছে থাকা উচিত। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে একাদশ সংসদের অধিবেশন থাকবে না। এ জন্য ভোটের আগে চার মাস, ভোটের পরে দুই মাস-এ ছয় মাসের জন্য ক্ষমতা ইসির হাতে থাকতে পারে।’
সংলাপ চলাকালে ইভিএম নিয়েও আলোচনা করেন বক্তারা। তারা ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ না করার পরামর্শও দেন। এ প্রসঙ্গে সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহার করলেই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। একটি ভালো ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন দেবেন।’ লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ যন্ত্রে যে ম্যানিপুলেট করা যায় না-তা নিশ্চিত না করে ব্যবহার করা যাবে না।’ ফরাস উদ্দিন বলেন, ‘ইভিএম সব সময় বিতর্কিত। এটার সমাধান না করে ব্যবহার করা ঠিক নয়। জোরের সঙ্গে বলব-ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য।’
সিইসি যা বললেন
সংলাপের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন ৫০-৬০ শতাংশ গ্রহণযোগ্য হলেই বড় সফলতা হবে। ‘মোটা দাগে’ সবার মতামত তুলে ধরে সিইসি জানান, ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হয়। ভোটাররা ভোট দিতে না পারলে, বাধা এলে, পোলিং অফিসারদের তাড়িয়ে দেন-এমন হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘যারা ডিক্লেয়ার করে দিয়েছেন নির্বাচনে অংশ নেবেন না; কিন্তু তাদের অংশগ্রহণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কীভাবে আস্থায় আনা যায়, আমন্ত্রণ জানিয়ে ভদ্রভাবে আসার কথা বলে কিছুটা তাদের পরিবর্তন করা যায় কিনা।’ তিনি আরও বলেন, ‘জীবনের শেষপ্রান্তে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন করতে পারি, যেসব পরামর্শ এসেছে তা বিবেচনায় নিয়ে এগোতে হবে। নির্বাচনটাকে যদি অবাধ, সুষ্ঠু করা যায় তাহলে সেটা সবার অংশগ্রহণে হয় সেটা সফলতা হতে পারে।
ইভিএম প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘ইভিএম-এ কোনো অসুবিধা আছে কিনা, অনেকে অভ্যস্ত নন। মেশিনের মাধ্যমে ভোটে কোনো ডিজিটাল কারচুপি হয় কি না-এটা আমাদের দেখতে হবে। ইভিএমের প্রতি আস্থা নিয়ে কথা উঠেছে।’ নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে তিনি মনে করেন, যে দল সরকারের থাকে তাদের কিছুটা বাড়তি অ্যাডভান্টেজ থাকে। কারণ, প্রশাসন, পুলিশ সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তিনি বলেন, ইসি তাদের ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে, আইনের কোনো অভাব নেই। কিন্তু প্রয়োগের দিক থেকে বাস্তব ঘাটতি রয়েছে। আমরা এনফোর্সমেন্টটা যেন ভালোভাবে করতে পারি সেটা চেষ্টা করব।
না যাওয়ার কারণ কি
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমি একটু অসুস্থ। এ ছাড়া সংলাপে গেলেও কোনো লাভ হতো না। কী আলাপ করব সেখানে গিয়ে? তারা কি জানে না গত দুই নির্বাচনের খবর? এর সমাধান কি তারা কি বোঝে না? নতুন করে তাদের কি জানাব? এই সংলাপে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। ৪০ জনকে সংলাপে ডেকেছে, একেকজনকে পাঁচ মিনিট করে কথা বলতে দিলেও এক দিন চলে যাবে, এ জন্য আমি যাইনি।’
অগোছালোভাবে আয়োজন করায় নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাননি আইনজীবী শাহদীন মালিক। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘দুই ঘণ্টার জন্য ৪০ জনকে ডেকেছে, একেকজনের জন্য ২ থেকে আড়াই মিনিটের বেশি পড়বে না। আমার কাছে এটা উদ্দেশ্যহীন মনে হয়েছে। মিটিং হলে তার কিছু এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়, এখানে কোনো এজেন্ডা ছিল না। নির্বাচন কমিশন আইন নিয়ে কথা বলতে চাইলে ওই মিটিং আমার যাওয়ার অর্থ আছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মহসিন জানান, ‘ইসির সংলাপের জন্য সময় বের করতে পারেননি তিনি। শিডিউলে আগে থেকেই অন্য কাজ ঠিক করা ছিল।’
যারা গেলেন
ইফতেখারুজ্জামান, আলী ইমাম মজুমদার, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মোস্তাফিজুর রহমান, সিনহা এম এ সাঈদ, মহিউদ্দিন আহমেদ, নজরুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ মণ্ডল, শাহীন আনাম, সঞ্জীব দ্রং, হাফিজুর রহমান কার্জন, জহুরুল আলম, শামীম রেজা, মহিউদ্দীন আহমেদ, আবু আলম মো. শহীদ খান, খুশী কবির ও রোবায়েত ফেরদৌস।
যারা গেলেন না
রওনক জাহান, সুলতানা কামাল, বেগম রাশেদা কে চৌধুরী, হোসেন জিল্লুর রহমান, এম হাফিজ উদ্দিন খান, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, মির্জা আজিজুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া এ রহমান, শাহদীন মালিক, তোফায়েল আহমেদ, বদিউল আলম মজুমদার, আবুল বারকাত, ওয়ালি উর রহমান, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, এমএম আকাশ, এএফএম গোলাম হোসেন, কাজী খলীকুজ্জামান, আমেনা মহসিন, কাবেরী গায়েন।
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
৭ ঘণ্টা আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
৯ ঘণ্টা আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে