ঘরের মাঠে ওয়ানডেতে শেষ কবে প্রথম ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ? উত্তর পেতে হলে ফিরে যেতে ২০১৬ সালের অক্টোবরে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের কথা 
মনে আছে নিশ্চয়ই। প্রথম ম্যাচে জেতার অবস্থায় থেকেও বাংলাদেশ হেরেছিল ২১ রানে।

সেই সিরিজের পর বাংলাদেশ আরও সাতটি সিরিজ খেলেছে, সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে। সব কটিতেই জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ভালো করার সঙ্গে জড়িয়ে সিরিজ জয়ও। সাত সিরিজের সব কটিই জয় সে কথাই বলে। তবে প্রথম ম্যাচে না হারার ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে সাত সিরিজ পর। এবারও প্রতিপক্ষের নাম ইংল্যান্ড। পরশু প্রথম ওয়ানডেতে ৩ উইকেটের জয়ে সিরিজে দারুণ সূচনা করেছে ইংলিশরা।

প্রথম ওয়ানডের পর গতকাল দুই দলই বিশ্রামে কাটিয়েছে। এমন ফাঁকা দিনে অবশ্য একেবারে হোটেলবন্দী ছিল না বাংলাদেশ দল। আজ সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচের আগে চাপে চ্যাপ্টা না হয়ে নিজেদের যতটা নির্ভার রাখা যায়, সে চেষ্টাই করেছেন ক্রিকেটাররা। নিজেদের মতো করে বের হয়েছেন তামিম ইকবাল, লিটন দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। বাইরে কিছু সময় কাটিয়ে আবার হোটেলে ফিরেছেন। এর মাঝে অবশ্য একটু ব্যতিক্রম বলা যায় মুশফিকুর রহিমকে। যদিও তাঁর ক্ষেত্রে এটা রুটিন কাজই। গতকাল মিরপুর ইনডোরের আউটারের নেটে সকালে ঐচ্ছিক অনুশীলন করেছেন তারকা উইকেটকিপার ব্যাটার। হালকা চোটও পেয়েছেন ব্যাটিং করতে গিয়ে। আঙুলের সেই চোট বেশি গুরুতর হওয়ার কথা নয় বলে জানিয়েছেন বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী।

দেবাশীষ চৌধুরী গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘সে যেহেতু আমাদের কিছু জানায়নি, ধরে নিচ্ছি এটা তেমন বড় কোনো চোট না।’ মুশফিকসহ দলের আরও কিছু চোটাঘাত থাকায় গতকাল সন্ধ্যায় দ্বিতীয় ওয়ানডের দলে বিকল্প হিসেবে হঠাৎ শামীম হোসেন পাটোয়ারিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে সময়টা ভালো যাচ্ছে না মুশফিকের। প্রথম ওয়ানডেতে ৫১ রানে ২ উইকেট হারানোর পর যখন দল তাঁর কাছে একটা ভালো ইনিংস আশা করছিল, মুশফিক আউট হয়েছেন হতাশায় ডুবিয়ে। ৩৪ বলে তাঁর ১৬ রানের ইনিংস থামে আদিল রশিদের বলে মার্ক উডের হাতে ক্যাচ দিয়ে। সর্বশেষ ১৩ ইনিংসে মুশফিকের ফিফটি মাত্র দুটি, সর্বোচ্চ ৮৬ রান গত ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে।

লিটন দাস-সাকিব আল হাসানের রান না পাওয়াও প্রথম ওয়ানডেতে ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। তবে স্বাগতিকদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা, কঠিন উইকেটে কীভাবে ইনিংস বড় করতে হয়। শিক্ষাটা দিয়েছেন ডেভিড মালান। তিনে নেমে অপরাজিত সেঞ্চুরিতে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছেড়েছেন ইংলিশ ব্যাটার। ১১৪ রান তাঁর ছোট্ট ওয়ানডে ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল এক ইনিংস হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের ইনিংসে যে কাজটা করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ফিফটি করে শান্তর ইনিংস থামে ৫৮ রানে। ম্যাচশেষে যে ৩০ রানের আক্ষেপ করছিলেন শান্ত, ৮২ বল খেলে ফেলার পর দায়িত্বটা তাঁর কাঁধেই বেশি ছিল। সে দায় অবশ্য শান্ত নিয়েছেনও। একই ব্যাপার মাহমুদউল্লাহর ক্ষেত্রেও। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান করা মাহমুদউল্লাহও চেনা মাঠে মালানের ভূমিকা নিতে পারেননি।

লো স্কোরিং ম্যাচে ছোট লক্ষ্য নিয়ে বোলাররা অবশ্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন। শুধু মোস্তাফিজুর রহমানের ‘অফ ডে’ না হলে গল্পটা ভিন্নও হতে পারত। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ইংল্যান্ড যেখানে বেশ নির্ভার, বাংলাদেশ আছে বেশ চাপে। আজ হারলেই অনেক দিন পর ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ হারের স্বাদ পাবেন তামিম-সাকিবরা। কিন্তু ঘরের মাঠে কি এটা এত সহজেই হতে দেবেন তাঁরা? সিরিজ বাঁচাতে আজ বাংলাদেশকে ফিরতে হবে পুরোনো ভুল শুধরে নতুন প্রত্যয়ে।