মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
বিশ্ব এখন চরম এক অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত। এই সংকটের তিনটি কারণ সবারই জানা। এক. বৈশ্বিক করোনা মহামারি, দুই. ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং তিন. রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন এবং ইউরোপীয়দের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এখন পুরো বিশ্বের জন্যই বুমেরাং হয়ে উঠেছে। রাশিয়াকে এই নিষেধাজ্ঞা যতটা না সমস্যায় ফেলেছে, তার চেয়ে বেশি কাবু করেছে আমাদের মতো রাষ্ট্রগুলোকে। আমরা এখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্বাধীনভাবে বিশ্ববাণিজ্যের সুবিধা নিতে পারছি না। সে কারণে তেল-গ্যাসসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানি করা বেশ দুরূহ হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় আমাদের তেল ও গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমদানিজাত অনেকগুলো কাঁচামাল বা পণ্য আগের মতো আমদানি করা যাচ্ছে না। বিশ্বে ডলার-সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় প্রায় সব দেশই এখন চরম বিপাকে। ইউরোপের দেশগুলোও রাশিয়ার তেল-গ্যাস এবং খনিজ কাঁচামালের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল। তারাও এখন চরম বেকায়দায়। এমন একটি ক্রান্তিকাল বিশ্ব অতিক্রম করবে, এটি বছরের শুরুতেও ভাবা যায়নি।
আমাদের সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে সক্ষমতা অর্জন করেছে, তা আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিবেশে একটি বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতার একটি অংশ বিদেশ থেকে আমদানিনির্ভর তরল গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও কয়লার ওপর নির্ভরশীল। আমাদের অভ্যন্তরীণ গ্যাসের মজুত পর্যাপ্ত নয়। ফলে বর্তমান বিশ্ববাজার থেকে তেল-গ্যাস আমদানির সক্ষমতা যেখানে উন্নত অনেক দেশের জন্যই ব্যয়সাপেক্ষ, আমাদের জন্য তা মোটের ওপর অসম্ভব। সে কারণে সরকার তরল গ্যাস ও জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ রেখেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন তার ফলে দেড়-দুই হাজার মেগাওয়াট কম করতে হচ্ছে। এর ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। লোডশেডিং দেশ থেকে বিদায় নিয়েছিল। কিন্তু এখন বৈশ্বিক এই পরিস্থিতিতে লোডশেডিং যেমন করতে হচ্ছে, একইভাবে সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ে একটি দৃঢ় অবস্থান কার্যকর করা হচ্ছে। মূলত দেশের মোট রিজার্ভ যাতে বড় ধরনের পতনের দিকে না চলে যায়, সে জন্যই এই ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এখন আপৎকাল চলছে। চরম অর্থনৈতিক সংকটে এখন অনেকগুলো রাষ্ট্রই দিশেহারা। সে তুলনায় আমাদের পরিস্থিতি আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ভালো বলছে।
সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, তা কয়েক মাস পর হয়তো একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থানে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ শিথিল হলেই কেবল পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে, এমনটি সবারই আশা। এই মুহূর্তে বৈশ্বিক এক সংকটে সবাই। অপেক্ষা পরিস্থিতি উন্নতি ঘটার। কিন্তু সে পর্যন্ত আমাদের সাশ্রয়ী হওয়া এবং চলমান অর্থনৈতিক সমস্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিকল্প নেই।
কিন্তু বাংলাদেশে বৈশ্বিক এই সংকটকে রাজনৈতিকভাবে পুঁজি করার একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিএনপি লোডশেডিংয়ের কারণ সম্পর্কে সরকারের দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং ব্যর্থতাকে দায়ী করছে। দুর্নীতি কোন খাতে কতটা হয়েছে কি হয়নি, তার তথ্য কেবল তদন্ত সাপেক্ষেই বলা যেতে পারে। দুর্নীতি কিছু হয়ে থাকলেও বিদ্যুৎ খাতে যে উন্নতি লক্ষ করা গিয়েছিল, সেটা অস্বীকারের উপায় নেই। লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। জ্বালানি তেল ও তরল গ্যাস আমদানি করা এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না বলে উৎপাদনশীল কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এই সত্যটি অস্বীকারের উপায় নেই। কিন্তু বিএনপি সেই যুক্তি ও তথ্য এড়িয়ে গিয়ে শুধু দুর্নীতিকেই লোডশেডিংয়ের কারণ হিসেবে দায়ী করছে। তা ছাড়া ২০০৯-১০ সালে কুইক রেন্টাল যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র আনা হয়েছিল, সেগুলোর ব্যাপারে তাদের ঘোরতর আপত্তি যেমন লক্ষ করা যাচ্ছে, একইভাবে বিদ্যুতের মেগা প্রকল্প নিয়েও তাদের অভিযোগের শেষ নেই।
বিএনপি এখন তেল-গ্যাস, জ্বালানি, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করছে। দেশে উন্নয়ন, মেগা প্রকল্প, রিজার্ভ ইত্যাদি নিয়েও নানা ধরনের মনগড়া তথ্য সভা-সমাবেশে বলছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও নানা ধরনের ছবি এবং কল্পকাহিনি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বন্দরে ছাড়ের অপেক্ষায় থাকা পেট্রল-অকটেনের তথ্য গোপন করে দেশে ১৩ দিনের পেট্রল মজুত আছে আর অকটেনের ১১ দিন—এমন বানোয়াট ও মনগড়া তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রবাসে বসে কেউ কেউ জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, চাল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি বিষয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে নানা ধরনের টক শো, ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে বিএনপি এবং বিএনপির নেতা, সমর্থক ও আলোচকেরা এসব বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, অপচয় ইত্যাদি থেকেই বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে বলে দাবি করছেন। সহ-আলোচক হিসেবে এসব টক শোতে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা থাকেন তাঁদের অনেককেই তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে অনেক সময় কথা বলতে দেখা যায় না। সে কারণে মিডিয়ায় বিশেষজ্ঞহীন টক শো অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, বিভ্রান্তি ও হতাশা ছড়ানো ছাড়া বেশি কিছু দিতে পারে না। সচেতন মানুষকে এসব টক শো তেমন আকর্ষণ করতে পারে না। তবে রাজনৈতিকভাবে যাঁরা অতটা সচেতন নন, তাঁদের অনেকেই কারও কারও আলোচনায় বিভ্রান্ত হন।
সামাজিকভাবে বর্তমান পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে নীরবে প্রচার-অপপ্রচার তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। সেখানে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কোনো বিবেচনা থাকে না। প্রচার করা হচ্ছে, বিএনপির আমলে লোডশেডিং ছিল। এখন তার চেয়েও নাকি বেশি। তরুণেরা এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হচ্ছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদির দাম নিয়েও রমরমা অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর কারণেই এই সংকট। আবার কেউ কেউ মেগা প্রকল্পের মেগা দুর্নীতির কল্পকাহিনিও ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতির নানা কাহিনিও এর সঙ্গে জড়িয়ে দিচ্ছে। মুন্সিগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যান আজিজের মাদকসম্রাট ও আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে ওঠার গল্পকাহিনি এই প্রচারণার নতুন সংযোজন। এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নাম যৌন হয়রানিতে যুক্ত হয়েছে। এখন শাবির ছাত্রহত্যা বিষয়টিও আলোচনায়। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই তাঁদের আচার-আচরণে সংযত যে নন, সেটি অস্বীকারের উপায় নেই। রাজশাহীর এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী কিংবা কুমিল্লার রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এখন আলোচনায়।
বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কিছু কিছু নেতা যা করছেন, তাতে তো মনে হয় না দেশে একটা বিশেষ পরিস্থিতি এখন বিরাজ করছে, যখন তাদের সংযত আচরণ করা প্রয়োজন। কিছুদিন আগে নড়াইলে যে দুটি ঘটনা ঘটে গেছে তার পেছনে কারা ইন্ধন জুগিয়েছিল, ফেসবুকে কেউ স্ট্যাটাস দিলে অমনিতেই গেল গেল ধর্ম গেল রব তুলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দির ভাঙচুর, পুড়িয়ে ফেলা, তাদের মারধর, জুতার মালা গলায় পরানো, এসব ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে, কেন ঘটাচ্ছে–এর কোনো সদুত্তর কেন যেন জানা হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রদায়িক এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে অনেক কিশোর, তরুণ, যারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তোয়াক্কা করছে না। অনেকেই লুটপাটে অংশ নিচ্ছে, ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা করতে গিয়ে হিংস্রতা প্রদর্শন, লুটপাট এমনকি নিজের পবিত্র ধর্মগ্রন্থকে অসম্মানিত করার মতো হীনমনোবৃত্তিও অনেকেই প্রদর্শন করছে। এগুলো পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে নাকি যারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে, তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার ছাড়া আর কিছুই বোঝে না নাকি তারাও এমন একটি পরিস্থিতি তৈরির জন্য ওত পেতে ছিল, এখন এমন বৈশ্বিক সংকট, জাতীয় জীবনের চ্যালেঞ্জ এবং নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরির জন্য এত দিন অপেক্ষায় ছিল, এখন সেটি ধীরে ধীরে সংগঠিত করছে!
মনে পড়ে, ১৯৭৪ সালের কথা। তেল এবং খাদ্যের দাম বাড়িয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে উগ্র হঠকারী রাজনীতির ধারকবাহকদের অনেকেই পাটের গুদামে আগুন লাগানো, ব্যাংক লুট, শ্রেণিশত্রু খতমের নামে রাজনৈতিক নেতা ও ধনী ব্যক্তিদের হত্যা করে বঙ্গবন্ধু সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণে উঠেপড়ে লেগেছিল। নানা অপপ্রচারে তখন দেশ ছেয়ে গিয়েছিল। একদিকে দুর্ভিক্ষ, অন্যদিকে এসব অঘটন, অপপ্রচার মিলিয়ে সাধারণ মানুষের কান ভারী করা হলো, জন্ম দেওয়া হয় নতুন রাজনৈতিক সংকট। আমরা সে রকম কিছু আলামত এখন দেখছি। কিন্তু বিশ্বাস করতে চাই যে সরকার এবং দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ চোখকান খোলা রেখে বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
বিশেষত আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোর তৃণমূল থেকে ওপর স্তর পর্যন্ত যেভাবে এখন গা ভাসিয়ে দিয়ে চলছে, ইউপি চেয়ারম্যান আজিজদের মতো লোকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এত ওপরে উঠিয়েছে, তাঁদের হাতকে অঘটন ঘটানোর আগেই অকার্যকর করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প দেখি না।
বিশ্ব এখন চরম এক অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত। এই সংকটের তিনটি কারণ সবারই জানা। এক. বৈশ্বিক করোনা মহামারি, দুই. ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং তিন. রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন এবং ইউরোপীয়দের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এখন পুরো বিশ্বের জন্যই বুমেরাং হয়ে উঠেছে। রাশিয়াকে এই নিষেধাজ্ঞা যতটা না সমস্যায় ফেলেছে, তার চেয়ে বেশি কাবু করেছে আমাদের মতো রাষ্ট্রগুলোকে। আমরা এখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্বাধীনভাবে বিশ্ববাণিজ্যের সুবিধা নিতে পারছি না। সে কারণে তেল-গ্যাসসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানি করা বেশ দুরূহ হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় আমাদের তেল ও গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমদানিজাত অনেকগুলো কাঁচামাল বা পণ্য আগের মতো আমদানি করা যাচ্ছে না। বিশ্বে ডলার-সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় প্রায় সব দেশই এখন চরম বিপাকে। ইউরোপের দেশগুলোও রাশিয়ার তেল-গ্যাস এবং খনিজ কাঁচামালের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল। তারাও এখন চরম বেকায়দায়। এমন একটি ক্রান্তিকাল বিশ্ব অতিক্রম করবে, এটি বছরের শুরুতেও ভাবা যায়নি।
আমাদের সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে সক্ষমতা অর্জন করেছে, তা আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিবেশে একটি বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতার একটি অংশ বিদেশ থেকে আমদানিনির্ভর তরল গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও কয়লার ওপর নির্ভরশীল। আমাদের অভ্যন্তরীণ গ্যাসের মজুত পর্যাপ্ত নয়। ফলে বর্তমান বিশ্ববাজার থেকে তেল-গ্যাস আমদানির সক্ষমতা যেখানে উন্নত অনেক দেশের জন্যই ব্যয়সাপেক্ষ, আমাদের জন্য তা মোটের ওপর অসম্ভব। সে কারণে সরকার তরল গ্যাস ও জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ রেখেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন তার ফলে দেড়-দুই হাজার মেগাওয়াট কম করতে হচ্ছে। এর ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। লোডশেডিং দেশ থেকে বিদায় নিয়েছিল। কিন্তু এখন বৈশ্বিক এই পরিস্থিতিতে লোডশেডিং যেমন করতে হচ্ছে, একইভাবে সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ে একটি দৃঢ় অবস্থান কার্যকর করা হচ্ছে। মূলত দেশের মোট রিজার্ভ যাতে বড় ধরনের পতনের দিকে না চলে যায়, সে জন্যই এই ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এখন আপৎকাল চলছে। চরম অর্থনৈতিক সংকটে এখন অনেকগুলো রাষ্ট্রই দিশেহারা। সে তুলনায় আমাদের পরিস্থিতি আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ভালো বলছে।
সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, তা কয়েক মাস পর হয়তো একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থানে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ শিথিল হলেই কেবল পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে, এমনটি সবারই আশা। এই মুহূর্তে বৈশ্বিক এক সংকটে সবাই। অপেক্ষা পরিস্থিতি উন্নতি ঘটার। কিন্তু সে পর্যন্ত আমাদের সাশ্রয়ী হওয়া এবং চলমান অর্থনৈতিক সমস্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিকল্প নেই।
কিন্তু বাংলাদেশে বৈশ্বিক এই সংকটকে রাজনৈতিকভাবে পুঁজি করার একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিএনপি লোডশেডিংয়ের কারণ সম্পর্কে সরকারের দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং ব্যর্থতাকে দায়ী করছে। দুর্নীতি কোন খাতে কতটা হয়েছে কি হয়নি, তার তথ্য কেবল তদন্ত সাপেক্ষেই বলা যেতে পারে। দুর্নীতি কিছু হয়ে থাকলেও বিদ্যুৎ খাতে যে উন্নতি লক্ষ করা গিয়েছিল, সেটা অস্বীকারের উপায় নেই। লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। জ্বালানি তেল ও তরল গ্যাস আমদানি করা এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না বলে উৎপাদনশীল কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এই সত্যটি অস্বীকারের উপায় নেই। কিন্তু বিএনপি সেই যুক্তি ও তথ্য এড়িয়ে গিয়ে শুধু দুর্নীতিকেই লোডশেডিংয়ের কারণ হিসেবে দায়ী করছে। তা ছাড়া ২০০৯-১০ সালে কুইক রেন্টাল যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র আনা হয়েছিল, সেগুলোর ব্যাপারে তাদের ঘোরতর আপত্তি যেমন লক্ষ করা যাচ্ছে, একইভাবে বিদ্যুতের মেগা প্রকল্প নিয়েও তাদের অভিযোগের শেষ নেই।
বিএনপি এখন তেল-গ্যাস, জ্বালানি, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করছে। দেশে উন্নয়ন, মেগা প্রকল্প, রিজার্ভ ইত্যাদি নিয়েও নানা ধরনের মনগড়া তথ্য সভা-সমাবেশে বলছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও নানা ধরনের ছবি এবং কল্পকাহিনি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বন্দরে ছাড়ের অপেক্ষায় থাকা পেট্রল-অকটেনের তথ্য গোপন করে দেশে ১৩ দিনের পেট্রল মজুত আছে আর অকটেনের ১১ দিন—এমন বানোয়াট ও মনগড়া তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রবাসে বসে কেউ কেউ জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, চাল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি বিষয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে নানা ধরনের টক শো, ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে বিএনপি এবং বিএনপির নেতা, সমর্থক ও আলোচকেরা এসব বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, অপচয় ইত্যাদি থেকেই বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে বলে দাবি করছেন। সহ-আলোচক হিসেবে এসব টক শোতে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা থাকেন তাঁদের অনেককেই তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে অনেক সময় কথা বলতে দেখা যায় না। সে কারণে মিডিয়ায় বিশেষজ্ঞহীন টক শো অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, বিভ্রান্তি ও হতাশা ছড়ানো ছাড়া বেশি কিছু দিতে পারে না। সচেতন মানুষকে এসব টক শো তেমন আকর্ষণ করতে পারে না। তবে রাজনৈতিকভাবে যাঁরা অতটা সচেতন নন, তাঁদের অনেকেই কারও কারও আলোচনায় বিভ্রান্ত হন।
সামাজিকভাবে বর্তমান পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে নীরবে প্রচার-অপপ্রচার তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। সেখানে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কোনো বিবেচনা থাকে না। প্রচার করা হচ্ছে, বিএনপির আমলে লোডশেডিং ছিল। এখন তার চেয়েও নাকি বেশি। তরুণেরা এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হচ্ছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদির দাম নিয়েও রমরমা অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর কারণেই এই সংকট। আবার কেউ কেউ মেগা প্রকল্পের মেগা দুর্নীতির কল্পকাহিনিও ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতির নানা কাহিনিও এর সঙ্গে জড়িয়ে দিচ্ছে। মুন্সিগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যান আজিজের মাদকসম্রাট ও আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে ওঠার গল্পকাহিনি এই প্রচারণার নতুন সংযোজন। এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নাম যৌন হয়রানিতে যুক্ত হয়েছে। এখন শাবির ছাত্রহত্যা বিষয়টিও আলোচনায়। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই তাঁদের আচার-আচরণে সংযত যে নন, সেটি অস্বীকারের উপায় নেই। রাজশাহীর এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী কিংবা কুমিল্লার রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এখন আলোচনায়।
বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কিছু কিছু নেতা যা করছেন, তাতে তো মনে হয় না দেশে একটা বিশেষ পরিস্থিতি এখন বিরাজ করছে, যখন তাদের সংযত আচরণ করা প্রয়োজন। কিছুদিন আগে নড়াইলে যে দুটি ঘটনা ঘটে গেছে তার পেছনে কারা ইন্ধন জুগিয়েছিল, ফেসবুকে কেউ স্ট্যাটাস দিলে অমনিতেই গেল গেল ধর্ম গেল রব তুলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দির ভাঙচুর, পুড়িয়ে ফেলা, তাদের মারধর, জুতার মালা গলায় পরানো, এসব ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে, কেন ঘটাচ্ছে–এর কোনো সদুত্তর কেন যেন জানা হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রদায়িক এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে অনেক কিশোর, তরুণ, যারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তোয়াক্কা করছে না। অনেকেই লুটপাটে অংশ নিচ্ছে, ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা করতে গিয়ে হিংস্রতা প্রদর্শন, লুটপাট এমনকি নিজের পবিত্র ধর্মগ্রন্থকে অসম্মানিত করার মতো হীনমনোবৃত্তিও অনেকেই প্রদর্শন করছে। এগুলো পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে নাকি যারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে, তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার ছাড়া আর কিছুই বোঝে না নাকি তারাও এমন একটি পরিস্থিতি তৈরির জন্য ওত পেতে ছিল, এখন এমন বৈশ্বিক সংকট, জাতীয় জীবনের চ্যালেঞ্জ এবং নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরির জন্য এত দিন অপেক্ষায় ছিল, এখন সেটি ধীরে ধীরে সংগঠিত করছে!
মনে পড়ে, ১৯৭৪ সালের কথা। তেল এবং খাদ্যের দাম বাড়িয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে উগ্র হঠকারী রাজনীতির ধারকবাহকদের অনেকেই পাটের গুদামে আগুন লাগানো, ব্যাংক লুট, শ্রেণিশত্রু খতমের নামে রাজনৈতিক নেতা ও ধনী ব্যক্তিদের হত্যা করে বঙ্গবন্ধু সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণে উঠেপড়ে লেগেছিল। নানা অপপ্রচারে তখন দেশ ছেয়ে গিয়েছিল। একদিকে দুর্ভিক্ষ, অন্যদিকে এসব অঘটন, অপপ্রচার মিলিয়ে সাধারণ মানুষের কান ভারী করা হলো, জন্ম দেওয়া হয় নতুন রাজনৈতিক সংকট। আমরা সে রকম কিছু আলামত এখন দেখছি। কিন্তু বিশ্বাস করতে চাই যে সরকার এবং দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ চোখকান খোলা রেখে বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
বিশেষত আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোর তৃণমূল থেকে ওপর স্তর পর্যন্ত যেভাবে এখন গা ভাসিয়ে দিয়ে চলছে, ইউপি চেয়ারম্যান আজিজদের মতো লোকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এত ওপরে উঠিয়েছে, তাঁদের হাতকে অঘটন ঘটানোর আগেই অকার্যকর করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প দেখি না।
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
৮ ঘণ্টা আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১০ ঘণ্টা আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে