ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন আগামী ৫ জানুয়ারি। বিগত ইউপি নির্বাচনে ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও এ বছর ৯টি ইউপির নয়জন বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বিপাকে আছেন নৌকার প্রার্থীরা। কোনো কোনো স্থানে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।

পঞ্চম ধাপে উপজেলার ১২টি ইউপিতে নির্বাচন। ৩টি ইউপিতে (হাকিমপুর, ধলহরাচন্দ্র ও বগুড়া) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ইতিমধ্যে জয় পেয়েছেন। এদিকে দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ভোটাররা ততই নতুন করে হিসাব কষছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে নৌকার প্রার্থীদের লড়াই হবে, এমনটাই ধারণা ভোটারদের। তবে নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কায় রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তাঁরা প্রশাসনের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান।

জানা গেছে, ত্রিবেণী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী সেকেন্দার মোল্লার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম খান (আনারস), মির্জাপুর ইউপিতে নৌকার প্রার্থী ফিরোজ আহাম্মেদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য শহিদুল ইসলাম টুলু (আনারস), দিগনগরে নৌকার প্রার্থী জিল্লুর রহমান তপনের প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক মুক্তারুজ্জামান মুক্ত (আনারস), কাচেরকোলে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন মামুনের প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম বাবলু (আনারস), সারুটিয়ায় নৌকার মনোনীত প্রার্থী মাহমুদুল হাসান মামুনের প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জুলফিকার কায়সার টিপু (আনারস), আবাইপুরে নৌকার প্রার্থী মুক্তার মৃধার প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি হেলাল বিশ্বাস (আনারস), উমেদপুরে বর্তমান চেয়ারম্যান সাবদার হোসেন মোল্লার প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ আব্দুল্লাহ (আনারস)।

দুধসরে নৌকার প্রার্থী সাহাবউদ্দিন সাবু ও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক টি এ রাজু (আনারস)। ফুলহরীতে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামিনুর রশিদ বিপুলের প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আওলাদ হোসেন (আনারস)।

গত ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে সারুটিয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মাহমুদুল হাসান মামুন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জুলফিকার আলী কায়সার টিপুর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ২৫টি বাড়ি ভাঙচুর ও ৭টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের ২৫ জন আহত হয়েছেন। 
উমেদপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী সাবদার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় জয় কঠিন হবে। তবু জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’ তিনি বলেন, ‘দলের অনেক নেতা-কর্মী গোপনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিচ্ছেন।’ ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহ বলেন, ‘জনগণের জন্য নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। প্রচারে বাধা ও সমর্থকদের হুমকি–ধমকি দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জিতব।’

মির্জাপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, আমি সব সময় জনগণের পাশে থেকেছি তাই ভোটের নির্বাচনে ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি। কিন্তু বিদ্রোহী থাকায় জয়ের ব্যাপারে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। আশা করি, শেষ হাসি আমারই হবে।’ মির্জাপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম টুলু বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আমি বিজয়ী হব।’

এসব বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘সতর্ক করার পরও যাঁরা ভোটে দাঁড়িয়েছেন ইতিমধ্যে আমরা সাংগঠনিক শাস্তি হিসেবে তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করেছি। আর যাঁরা বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করবেন তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’