দলের টিম ম্যানেজমেন্টে এত পরামর্শক, এত বিশেষজ্ঞ। ধর্মশালায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাজেভাবে হারের পর প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে অনেক টেকনিক্যাল প্রশ্নের ভিড়ে তাই প্রশাসনিক বিষয়েও বলতে হলো। ব্যাখ্যা করতে হলো বাংলাদেশ দলের ‘থিংকট্যাংকে’ যুক্ত কার কাজ কী। 

বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে আকস্মিকভাবে পরামর্শক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন শ্রীধরন শ্রীরাম। যিনি গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রধান কোচের ভূমিকায় কাজ করেছিলেন। এবার তাঁকে হাথুরুর সঙ্গে রাখার প্রধানতম কারণ, ভারতের কন্ডিশন-উইকেট সম্পর্কে যেন নিখুঁত তথ্য মেলে। যেটি সহায়তা করবে প্রতিপক্ষের শক্তি অনুযায়ী রণকৌশল সাজাতে। অনেক সময় তথ্যগত ভুলেরও বড় মাশুল দিতে হয়। টস জেতার পর সিদ্ধান্ত নিতে হলে উইকেট-কন্ডিশন ঠিকঠাক জানতে হয়। ধর্মশালায় কন্ডিশন-উইকেট কিংবা গেম প্ল্যানিংয়ে খুব বেশি ভুল হয়নি বাংলাদেশের। কোচরা যতই ভালো রণকৌশল তৈরি করে দিন, মাঠে খেলতে তো হবে খেলোয়াড়দের। 

তবে চেন্নাইয়ে সাকিবদের সঙ্গে শ্রীরামেরও হতে যাচ্ছে ‘অগ্নিপরীক্ষা’! এ শহরে তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা। চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। এবার শ্রীরামের ‘ইনপুট’ কাজে লাগিয়ে কিউইদের বিপক্ষে দারুণ কিছু উপহার দেওয়ার সুযোগ সাকিবদের। বাংলাদেশ দলের এই ভারতীয় কনসালট্যান্টের কাছে তাই জানতে চাওয়া হলো, ঐতিহ্যগতভাবে চেন্নাইয়ের উইকেট স্পিন-সহায়ক হলেও কাল সেই ধারা কতটা বজায় থাকতে পারে? আজ অনুশীলনে উইকেট দেখে তবেই বুঝতে পারবেন বলে শ্রীরাম বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন।

গতকাল আসলে উইকেট নিয়ে শ্রীরামের পরিষ্কার কিছু বলারও উপায় ছিল না। সকালে ধর্মশালা থেকে রওনা দিয়ে বাংলাদেশ দল চেন্নাইয়ে পৌঁছেছে বেলা আড়াইটার দিকে। সাকিবদের অনুশীলন হবে আজ সন্ধ্যায় ফ্লাডলাইটের আলোয়। তবে নিউজিল্যান্ড কাল ঝালিয়ে নিয়েছে চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। রাতে অনুশীলনের পর কিউইদের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসা বোলিং কোচ শেন জার্গেনসেন জানালেন, বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত চেন্নাইয়ের উইকেট স্পিনারদের হয়ে কথা বলেছে। এ মাঠে ৮ অক্টোবর ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ভারতীয় ঘূর্ণি বোলারদের দাপট দেখা গেছে। অস্ট্রেলিয়ার ৬ উইকেট তাঁদের দখলে। ধর্মশালায় বাংলাদেশের পেসারদের ব্যর্থতার বিপরীতে সফল বাংলাদেশের স্পিনাররা ওই ম্যাচ দেখে আশাবাদী হতেই পারেন।

কাল চেন্নাই যাওয়ার পথে বিমানে বসেই অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের দাবা খেলার চ্যালেঞ্জ নিতে দেখা গেল মেহেদী হাসান মিরাজকে। কিউইদের বিপক্ষে সফল হতে স্পিন বিভাগে এ দুজনকেই তো দাবার ঘুঁটির মতো নিখুঁত ‘চাল’ দিতে হবে কাল। তাঁরা সেটিরই কি একটা ‘রিহার্সাল’ করে নিলেন উড়ানে?

নিজেদের স্পিন আক্রমণ নিয়ে বাংলাদেশ যতই আত্মবিশ্বাসী থাকুক না কেন, নিউজিল্যান্ডও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। টুর্নামেন্টে গতকাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি মিচেল স্যান্টনার। দুই ম্যাচে কিউই বাঁহাতি স্পিনারের উইকেট ৭টি। হায়দরাবাদে নেদারল্যান্ডসের ব্যাটারদের নাচিয়ে ছেড়েছেন। আর কদিন আগে মিরপুরে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে আসা লেগ স্পিনার ইশ সোধি এখনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। চেন্নাইয়ের কালকের লড়াইটা তাই ‘ব্যাটল অব স্পিন’ বললে ভুল হবে না।

স্পিনারদের যুদ্ধে বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন ব্যাটাররা। আইপিএল খেলে অভ্যস্ত নিউজিল্যান্ডের টপ অর্ডারের বেশির ভাগ ব্যাটারের ভালোই জানা, এই কন্ডিশনে কীভাবে স্পিন খেলতে হয়। যেখানে দুর্দান্ত ছন্দে ডেভন কনওয়ে-রাচিন রবীন্দ্ররা, বিপরীতে বাংলাদেশ চিন্তায় তাদের ব্যাটারদের নিয়ে। যত চিন্তাই থাক, বাংলাদেশের যে কটি ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা আছে এই বিশ্বকাপে, এগুলোর মধ্যে ক্রিকেটীয় যুক্তিতেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি ধরতে হবে।

চেন্নাইয়ে কিছুটা চেনা কন্ডিশনে এই সম্ভাবনা কাজে না লাগাতে পারলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযাত্রা আরও পিচ্ছিল হয়ে পড়বে।