জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
একসময় নাটকের নেশায় মহিলা সমিতি মিলনায়তন ছিল জমজমাট। সে যুগ হয়েছে বাসি। খুব কম নাটকই এখন পূর্ণ মিলনায়তন পায়। তাতে কিছু আসে যায় না। যাঁরা নাটক ভালোবাসেন, তাঁরা এখনো খোঁজ নিয়ে নাটক দেখতে যান।
শুক্রবার মহিলা সমিতি মিলনায়তনে ছিল থিয়েটার ফ্যাক্টরির ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’—কালিদাসকে নিয়ে নাটক। সেই যে আবৃত্তি শেখার কালে ‘কশ্চিতকান্তা বিরহগরুনা স্বাধিকারপ্রমত্ত!’ বলতে বলতে হঠাৎ আকাশের দিকে তাকাতাম, সে রোমাঞ্চ এখনো আঁটো করে বেঁধে রাখে আমাদের। মেঘদূত, মন্দাক্রান্তা ছন্দ, কালিদাস আর মেঘ, এ যেন জড়িয়ে জড়িয়ে হয়ে ওঠে একক সত্তা, আর তার ঠিকানা থাকে ওই হিমালয়ের চেয়েও উঁচুতে, আকাশে।
আকাশটাকে মাটিতে নামিয়ে নিয়ে এসেছেন অলোক বসু, তাঁর ‘থিয়েটার ফ্যাক্টরি’র মাধ্যমে। সেই বিরহকাতর মেঘদূতের বাণী আর তার রচয়িতা কালিদাসের পথপরিক্রমার অনবদ্য এক সুর যেন উঠল মহিলা সমিতি মিলনায়তনে।
পৃথিবী বদলে গেছে। মানুষের কিছু কিছু অনুভূতিতে এসেছে পরিবর্তন। সেকাল আর একাল যেন এক নয় কিছুতেই। হাতের মুঠোয় যে পৃথিবীটা, সে পৃথিবী বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে দেখা করতে দিতে চায় না আর। তাই প্রকৃতি বলে যে একটা বাইরের জগৎ আছে, সে জগতের খোঁজ রাখার জন্য তো আনচান করে না হৃদয়।
মুঠোফোনের কাব্য আর যা-ই হোক, হিমালয়ে ঠিকরে পড়া প্রকৃতির আলো হয়ে ওঠে না। তাই সেই কালিদাস কিংবা তাকে কেন্দ্র করে নাটকে যে চরিত্রগুলো উঠে আসে মল্লিকা, অম্বিকা, দন্তুল, মাতুল, নিক্ষেপ, বিলোম, প্রিয়ঙ্গমঞ্জুরী নামে, তারা কি এই প্রজন্মের মানুষকে ছুঁতে পারবে?
নাটক দেখতে এসেছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে তরুণের সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে কম। তিরিশ বা চল্লিশোর্ধ্বরাই দৃশ্যমান, কিংবা আরও বড়রা। তাতে কোনো সংকট হলো না। যাঁরা মেঘ আর প্রকৃতিতে জীবনের স্পন্দন দেখতে পান, তাঁরা দিব্যি নাটকের চরিত্রদের সঙ্গে পার হয়ে গেলেন সকল চড়াই-উতরাই।
কালিদাস আর মল্লিকার গল্পটা পাল্টে দিয়েছিল সময়। পাহাড়ের পাদদেশে থাকা কালিদাস হঠাৎ বড় শহরে গিয়ে রাজা বনে গেল, তাতে কি জীবনের সঞ্চয় বাড়ল, নাকি ওই ছোট্ট লালিত্যময় শহরের অভিজ্ঞতা আর ভালোবাসার ওপর ভর করেই গড়ে উঠল পরবর্তী সৃজনশীলতা? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে মোহন রাকেশের লেখা নাটকটিতে, যার অনুবাদ করেছেন অংশুমান ভৌমিক।
নাটকে গতি আছে, ছন্দ আছে। কখনো কখনো কিছু ব্যত্যয়ও রয়েছে। কিন্তু যে বিষয়টি শেষ দৃশ্য পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রাখে, তা হলো ‘কী হবে কী হবে’ প্রশ্নটা। সত্যিই কি কালিদাস ফিরে আসবে ছোট্ট সেই শহরে, যেখানে এখনো মল্লিকা, পাহাড়, বৃষ্টি, গাছপালা গল্প তৈরি করে চলেছে? সময়ের কাছে পরাজিত হবে সম্পর্ক, নাকি অন্য রকম এক নতুন রূপকথার জন্ম হবে?
প্রশ্নগুলো জেগে থাকুক নতুন দর্শক-শ্রোতার জন্য। মঞ্চে ভালো নাটক হচ্ছে, তা টিকিট কেটে দেখতে যাওয়ার তাড়নায় মিলনায়তনে ফিরে আসুক তরুণেরা, তাতে নাটকের দলগুলোকে আর্থিক সংকটের সামনে পড়তে হবে না এবং নতুন নতুন দর্শক-শ্রোতার আগমনে নতুন নতুন ভাবনারও উন্মেষ ঘটবে। নাটকটিতে ‘ভাবনা’ একটা বড় ভূমিকায় রয়েছে, সেটা তো বলতেই হবে।
আর হ্যাঁ, টিকিট হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে ব্রশিওরটি। তাতে সমস্যা যেটা হলো, মিলনায়তনে ঢোকার সময় ব্রশিওরটি ছিঁড়ে দেওয়া হলো নির্মমভাবে। আঘাত লাগল মনে। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য আলাদা টিকিট যদি না-ই বানানো হবে, তাহলে ব্রশিওরটি না ছিঁড়ে ওপরের দিকে ছোট্ট একটা ফুটো করে দিলে কী এমন ক্ষতি হতো? তাতে ব্রশিওরটি সংগ্রহে রাখা যেত। এখন এই ছেঁড়া ব্রশিওরটা রাখি কোথায়?
শেষে বলি, অলোক বসু কোনো অভিনয়শিল্পীকে খামোখা মঞ্চে ঢোকাননি, তাঁদের নিংড়ে অভিনয় আদায় করে নিয়েছেন। অলোক বসু নিজে, রামিজ রাজু, সঞ্জিতা জামানের নাম আলাদাভাবে নিলাম শুধু এ জন্য যে তাঁদের অভিনয়ের গতি মনের মধ্যে আনন্দ আনে। আর অল্প সময়ের জন্য প্রিয়ঙ্গমঞ্জুরী হয়ে যিনি এসেছিলেন, তিনিও তাঁর সংযত অভিনয়ে তৃপ্তি দিয়েছেন দর্শক-শ্রোতার প্রাণে।
একসময় নাটকের নেশায় মহিলা সমিতি মিলনায়তন ছিল জমজমাট। সে যুগ হয়েছে বাসি। খুব কম নাটকই এখন পূর্ণ মিলনায়তন পায়। তাতে কিছু আসে যায় না। যাঁরা নাটক ভালোবাসেন, তাঁরা এখনো খোঁজ নিয়ে নাটক দেখতে যান।
শুক্রবার মহিলা সমিতি মিলনায়তনে ছিল থিয়েটার ফ্যাক্টরির ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’—কালিদাসকে নিয়ে নাটক। সেই যে আবৃত্তি শেখার কালে ‘কশ্চিতকান্তা বিরহগরুনা স্বাধিকারপ্রমত্ত!’ বলতে বলতে হঠাৎ আকাশের দিকে তাকাতাম, সে রোমাঞ্চ এখনো আঁটো করে বেঁধে রাখে আমাদের। মেঘদূত, মন্দাক্রান্তা ছন্দ, কালিদাস আর মেঘ, এ যেন জড়িয়ে জড়িয়ে হয়ে ওঠে একক সত্তা, আর তার ঠিকানা থাকে ওই হিমালয়ের চেয়েও উঁচুতে, আকাশে।
আকাশটাকে মাটিতে নামিয়ে নিয়ে এসেছেন অলোক বসু, তাঁর ‘থিয়েটার ফ্যাক্টরি’র মাধ্যমে। সেই বিরহকাতর মেঘদূতের বাণী আর তার রচয়িতা কালিদাসের পথপরিক্রমার অনবদ্য এক সুর যেন উঠল মহিলা সমিতি মিলনায়তনে।
পৃথিবী বদলে গেছে। মানুষের কিছু কিছু অনুভূতিতে এসেছে পরিবর্তন। সেকাল আর একাল যেন এক নয় কিছুতেই। হাতের মুঠোয় যে পৃথিবীটা, সে পৃথিবী বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে দেখা করতে দিতে চায় না আর। তাই প্রকৃতি বলে যে একটা বাইরের জগৎ আছে, সে জগতের খোঁজ রাখার জন্য তো আনচান করে না হৃদয়।
মুঠোফোনের কাব্য আর যা-ই হোক, হিমালয়ে ঠিকরে পড়া প্রকৃতির আলো হয়ে ওঠে না। তাই সেই কালিদাস কিংবা তাকে কেন্দ্র করে নাটকে যে চরিত্রগুলো উঠে আসে মল্লিকা, অম্বিকা, দন্তুল, মাতুল, নিক্ষেপ, বিলোম, প্রিয়ঙ্গমঞ্জুরী নামে, তারা কি এই প্রজন্মের মানুষকে ছুঁতে পারবে?
নাটক দেখতে এসেছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে তরুণের সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে কম। তিরিশ বা চল্লিশোর্ধ্বরাই দৃশ্যমান, কিংবা আরও বড়রা। তাতে কোনো সংকট হলো না। যাঁরা মেঘ আর প্রকৃতিতে জীবনের স্পন্দন দেখতে পান, তাঁরা দিব্যি নাটকের চরিত্রদের সঙ্গে পার হয়ে গেলেন সকল চড়াই-উতরাই।
কালিদাস আর মল্লিকার গল্পটা পাল্টে দিয়েছিল সময়। পাহাড়ের পাদদেশে থাকা কালিদাস হঠাৎ বড় শহরে গিয়ে রাজা বনে গেল, তাতে কি জীবনের সঞ্চয় বাড়ল, নাকি ওই ছোট্ট লালিত্যময় শহরের অভিজ্ঞতা আর ভালোবাসার ওপর ভর করেই গড়ে উঠল পরবর্তী সৃজনশীলতা? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে মোহন রাকেশের লেখা নাটকটিতে, যার অনুবাদ করেছেন অংশুমান ভৌমিক।
নাটকে গতি আছে, ছন্দ আছে। কখনো কখনো কিছু ব্যত্যয়ও রয়েছে। কিন্তু যে বিষয়টি শেষ দৃশ্য পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রাখে, তা হলো ‘কী হবে কী হবে’ প্রশ্নটা। সত্যিই কি কালিদাস ফিরে আসবে ছোট্ট সেই শহরে, যেখানে এখনো মল্লিকা, পাহাড়, বৃষ্টি, গাছপালা গল্প তৈরি করে চলেছে? সময়ের কাছে পরাজিত হবে সম্পর্ক, নাকি অন্য রকম এক নতুন রূপকথার জন্ম হবে?
প্রশ্নগুলো জেগে থাকুক নতুন দর্শক-শ্রোতার জন্য। মঞ্চে ভালো নাটক হচ্ছে, তা টিকিট কেটে দেখতে যাওয়ার তাড়নায় মিলনায়তনে ফিরে আসুক তরুণেরা, তাতে নাটকের দলগুলোকে আর্থিক সংকটের সামনে পড়তে হবে না এবং নতুন নতুন দর্শক-শ্রোতার আগমনে নতুন নতুন ভাবনারও উন্মেষ ঘটবে। নাটকটিতে ‘ভাবনা’ একটা বড় ভূমিকায় রয়েছে, সেটা তো বলতেই হবে।
আর হ্যাঁ, টিকিট হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে ব্রশিওরটি। তাতে সমস্যা যেটা হলো, মিলনায়তনে ঢোকার সময় ব্রশিওরটি ছিঁড়ে দেওয়া হলো নির্মমভাবে। আঘাত লাগল মনে। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য আলাদা টিকিট যদি না-ই বানানো হবে, তাহলে ব্রশিওরটি না ছিঁড়ে ওপরের দিকে ছোট্ট একটা ফুটো করে দিলে কী এমন ক্ষতি হতো? তাতে ব্রশিওরটি সংগ্রহে রাখা যেত। এখন এই ছেঁড়া ব্রশিওরটা রাখি কোথায়?
শেষে বলি, অলোক বসু কোনো অভিনয়শিল্পীকে খামোখা মঞ্চে ঢোকাননি, তাঁদের নিংড়ে অভিনয় আদায় করে নিয়েছেন। অলোক বসু নিজে, রামিজ রাজু, সঞ্জিতা জামানের নাম আলাদাভাবে নিলাম শুধু এ জন্য যে তাঁদের অভিনয়ের গতি মনের মধ্যে আনন্দ আনে। আর অল্প সময়ের জন্য প্রিয়ঙ্গমঞ্জুরী হয়ে যিনি এসেছিলেন, তিনিও তাঁর সংযত অভিনয়ে তৃপ্তি দিয়েছেন দর্শক-শ্রোতার প্রাণে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে