রুট পারমিট আছে, সড়কে চলাচলের সুযোগ নেই

খান রফিক, বরিশাল
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ০৬: ৫৯
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ০৬

বরিশাল নগরসহ গোটা জেলায় ৪০০ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের জন্য এক বছর আগে রুট পারমিট দেয় বিআরটিএ। টানা ছয় মাস সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো বিনা বাধায় চলাচল করে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করে মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ এবং বাস মালিকদের বাধায় রুট পারমিট পাওয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোর চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

বৈধ এ যানগুলো এখন কোথায় চলবে তার কোনো জবাব কেউ দিচ্ছেন না। এতে ৪ শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ও শ্রমিক পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এ অবস্থায় সড়কে সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের দাবিতে সোমবার নগরে গতকাল মানববন্ধন, বিক্ষোভ এবং জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারকে স্মারকলিপিও দিয়েছে বরিশাল সিএনজি চালক-শ্রমিক ইউনিয়ন। চালকেরা দাবি করেছেন, এর আগে তাদের ১৫০০ টাকা করে বিট মানি দিয়ে চলতে হয়েছে। এখন পুলিশ ও থ্রি হুইলার মালিক সমিতিই তাদের পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জেলা সিএনজি চালক-শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাসান জাহাঙ্গীর সিকদার বলেন, এক বছর আগে তাদের এই ৪০০ সিএনজি রুট পারমিট পায়। এরপর থেকে বরিশাল সিটি থেকে শুরু করে জেলার সব রুটে সিএনজি অটোরিকশা চলতো। কিন্তু গত ৫-৬ মাস আগে হঠাৎ করে মেট্রো পুলিশ নগরে চলাচল বন্ধ করে দেয়। জেলা শহরে চলাচলেও বাস মালিকেরা বাধা দেন। একটি বৈধ সিএনজির পেছনে প্রায় ৫ লাখ টাকা পুঁজি খাঁটিয়ে এখন মাসের পর মাস ঘরে ফেলে রাখতে হচ্ছে।

হাসান জাহাঙ্গীর সিকদার জানান, গতকাল তাঁরা সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি চেয়ে নগরে বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ জেলা প্রশাসক ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক আশ্বাস দিয়েছেন। মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (সদর) বলেছেন বিষয়টি সভায় উত্থাপন করবেন। হাসান জাহাঙ্গীর বলেন, কিছুদিন কেউ সাংবাদিক, কেউ পুলিশকে কিংবা কেউ থ্রি হুইলার মালিক সমিতিকে বিট দিয়ে চলতো। এখন আর কিছুই করা যাচ্ছে না।

বিক্ষোভে আসা অটোরিকশা চালক আরাফাত, সোহান বলেন, শুরুতে ১৫০০ টাকা করে বিট মানি দেওয়া হতো। এখন আরও বেশি চায়। এ নিয়ে মালিক সমিতির সঙ্গে ঝামেলা দেখা দিয়েছে। তাঁরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

তবে বরিশাল জেলা থ্রি হুইলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন বলেন, বরিশাল-থ সিরিয়ালের এই সিএনজি অটোরিকশাগুলো হাইওয়ে এবং মেট্রো এলাকা ব্যতীত জেলা সড়কে চলাচলের পারমিট দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছুদিন জেলা শহরে এমনকি নগরেও চলেছে এগুলো। কোনো একটি কারণে এগুলো চলাচল বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এখন তারা বাসদের মনিষাকে নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। ট্রাফিক বিভাগও তাই আইন দেখাচ্ছে। সিএনজি চালকেরা থ্রি হুইলার মালিক সমিতিকে কেন দুষছেন এ প্রসঙ্গে বলেন, তাদের সঙ্গে কোনো ঝামেলা নেই। প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা বিট মানি দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, কোনো সিএনজি চালক কি এটা বলতে পারবে?

জানতে চাইলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক আব্দুর রহিম বলেন, আরটিসি সভায় বরিশাল জেলা প্রশাসক ৬০০ সিএনজি অটোরিকশা জেলা শহরে চলাচলের জন্য রুট পারমিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুরুতে বরিশাল-থ সিরিজের সিএনজির সংখ্যা কম থাকায় মেট্রো এলাকা অতিক্রম করতে পারত। কিন্তু এখন থ্রি হুইলারের চাপ বাড়ায় ওই ৪০০ সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না।

বাসদের বরিশাল জেলা সদস্যসচিব এবং জেলা সিএনজি চালক-শ্রমিক ইউনিয়নের প্রধান উপদেষ্টা ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন, বিআরটিএ থেকে জেলা পর্যায়ে চলাচলের জন্য ৪০০ সিএনজির রুট পারমিট দেওয়া হয়েছে। গত ৫ মাস ধরে জেলা, মেট্রো কোথাও চলতে পারছে না এসব সিএনজি অটোরিকশা। গ্যাস রিফিল করার জন্য মেট্রোতে ঢুকতেও ট্রাফিক পুলিশ বাধা দেয়। মানবেতর জীবনযাপন করছে ওই সব সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ও শ্রমিকেরা। তিনি বলেন, বৈধ এসব সিএনজির চালক ও শ্রমিকেরা যাবে কোথায়?

এ ব্যাপারে বিআরটিএ’র বরিশালের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কাজী সামছুল হক বলেন, বরিশাল-থ নম্বরের সিএনজি অটোরিকশার রুট পারমিট তারা দিয়েছেন। এসব সিএনজি হাইওয়ে ব্যতীত চলতে পারবে। কেন ৫ মাস ধরে চলাচল বন্ধ সে বিষয়ে থ্রি হুইলার মালিক সমিতিও তাদের অবহিত করেনি। সিএনজি চালকেরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে এলে ব্যবস্থা নেবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত