অরুণ কর্মকার
আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম, অর্থাৎ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যে পরিচালিত গণসংগ্রাম এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি ও অংশ নিয়েছি, তারা খুব ভালোভাবেই জানি যে বাংলাদেশের ডিএনএতে গণতন্ত্র ছিল। একই সঙ্গে আমরা অনেকেই এ কথাও মানি যে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই একটি প্রবল প্রতিকূল রাজনৈতিক উপদ্রব সৃষ্টির মাধ্যমে সেই ডিএনএ প্রতিস্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে শুরু হওয়া আমাদের অভিযাত্রা এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে সেই ডিএনএর অস্তিত্ব নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।
ডিএনএ হলো একটি নিউক্লিক অ্যাসিড, যা জীবদেহের (আমাদের এই নিবন্ধের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের) গঠন ও কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের জিনগত নির্দেশ ধারণ করে।জীবজগতে কারও শরীরে ডিএনএ প্রতিস্থাপন কিংবা বদলে দেওয়া অসম্ভব। তবে কোনো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তা হতে পারে। যদি তা হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্রের চরিত্র বৈশিষ্ট্য নীতি আদর্শ এবং অভীষ্ট পরিবর্তিত হয়ে যায়। বাংলাদেশের অভিযাত্রায় পরিবর্তনের প্রবণতা ও অব্যাহত ধারা লক্ষ করলেই আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে খুব দক্ষ হাতে সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের ডিএনএ প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এ বিষয়ে সবিস্তার আলোচনার আগে বলে নেওয়া দরকার যে ডিএনএর প্রসঙ্গটি উঠল কেন?
প্রসঙ্গটি এসেছে সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি বক্তব্যের সূত্র ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ডিএনএতে গণতন্ত্র রয়েছে।’ ওই সংবাদ সম্মেলনে ভারতের গণতন্ত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত দুই দেশই গণতান্ত্রিক।’
ভারতের ডিএনএতে যে গণতন্ত্র আছে তা প্রশ্নহীন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীন ভারত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাসেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। কিন্তু গণতন্ত্রের সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে কি না, নাকি সেই ডিএনএতেও পরিবর্তন ঘটে গেছে, সে প্রশ্ন প্রবলভাবেই উঠেছে। সে করণেই নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিপীড়ন, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ ও সার্বিকভাবে গণতন্ত্রের নিম্নগামিতা নিয়ে ৭৫ জন কংগ্রেস সদস্যের চিঠি,
নাগরিক সমাজ ও সংবাদমাধ্যমের চাপ সবই ছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর।
কিন্তু ডিএনএতে গণতন্ত্র থাকার সুবাদে তার কোনো কিছুই ভারত ও নরেন্দ্র মোদির জন্য সামান্যতম বিঘ্ন হতে পারেনি। কারণ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কিংবা স্বার্থের বিষয়টি তেমন নয়। কাজেই বাংলাদেশের ডিএনএতে গণতন্ত্র থাকলেও সেটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনো বিবেচনার বিষয় নয়। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের অবস্থানও ভারতের মতো
শক্তিশালী নয়। হওয়ার কথাও না।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএতে যে গণতন্ত্র রয়েছে তাকে কি ভারতের ডিএনএর মতো নির্ভেজাল বা প্রশ্নহীন বলা যায়! বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের অভিযাত্রা তো ভারত কিংবা বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক পন্থায় শুরু হয়নি; বরং শুরু হয়েছিল গণহত্যা, লুণ্ঠন, জবরদস্তির পথ ধরে। ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে ওই অঞ্চলের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করা হয়েছিল। সেখানেই শেষ নয়। আফ্রিকা থেকে অসংখ্য মানুষ ধরে এনে দাস হিসেবে কাজে লাগানো, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন থেকে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএতেই আছে। এসবের অনেক পরেও, গত শতাব্দীর মধ্যভাগে পৃথিবীর অনেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে হত্যা, অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকার পরিবর্তন এবং গণতন্ত্রের স্থলে স্বেচ্ছাচারী-স্বৈরাচারী সরকার প্রতিষ্ঠা এবং তাঁদের অব্যাহতভাবে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার মতো কুকর্মও যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএতে বিদ্যমান। সেই ডিএনএতে গণতন্ত্র কোথায়!
অন্যদিকে বাংলাদেশের ইতিহাস কী বলে? এ দেশটি প্রতিষ্ঠার জন্য যে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এ দেশের মানুষ করেছে তার সবই ছিল গণতান্ত্রিক পন্থায় জনগণসম্পৃক্ত গণ-আন্দোলন। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষ সংগ্রাম শুরু করেছিল। ১৯৫২ সালে তার ব্যাপ্তি আরও বিস্তৃত হয়।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার মিছিলে যখন গুলি করে হত্যা করার ঘটনা ঘটে, তখনো এবং তার পরবর্তী পর্যায়ের আন্দোলনও গণতান্ত্রিকই ছিল।আসলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত আন্দোলন-সংগ্রামের তালিকা অনেক দীর্ঘ। ভাষা আন্দোলনের পর ‘৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনও ছিল আন্দোলনেরই অংশ। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৬ সালের ছয় দফার আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং আইউব খানের সামরিক সরকারের পতন, সেই পথ ধরে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন। এসব আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। মাঝখানে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র নামে একটি মিথ্যা মামলা করে এ দেশের গণমানুষের আন্দোলনে ষড়যন্ত্রের কালিমা লেপনের যে কূটচাল চেলেছিল তা-ও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে যায় গণ-আন্দোলনের ফলেই। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র সেই যুদ্ধও ছিল এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা একটি জনযুদ্ধ। এই প্রক্রিয়ায় যে দেশটি প্রতিষ্ঠিত, সে দেশের ডিএনএতে গণতন্ত্র ছাড়া আর কীই-বা থাকতে পারে?
বাংলাদেশের ডিএনএতে গণতন্ত্র ছাড়া ছিলও না কিছু। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরেই এক অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক উপদ্রব সৃষ্টি করে বাংলাদেশের সেই নির্ভেজাল ডিএনএ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়ায় অবিমৃশ্যকারী রাজনৈতিক শক্তি যেমন ছিল, তেমনি তাঁদের সঙ্গে সুযোগ সন্ধানী হিসেবে যুক্ত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানের এ দেশীয় দোসর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। যুক্ত হয়েছিল হঠকারী বামধারার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বহুধাবিভক্ত উপদলগুলো যারা সব পরিস্থিতিতে সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাসী ছিল। এদের সম্মিলিত শক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ও বিরোধিতা করেছে। ফলে এই ধারার ব্যাপ্তি সারা দেশে বিস্তার লাভ করে এবং বাংলাদেশের ডিএনএ বদলে দেয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার করার পর যে সামরিক শাসনের ধারা এ দেশে চালু হয় তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ডিএনএকে প্রায় অপসৃত করে ফেলে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মূলত সেই ধারাই চলে। এর মধ্যেও এ দেশের মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে। নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। চেষ্টা করেছে দেশের মূল ডিএনএ ফিরিয়ে আনার। মানুষের সেই সংগ্রামে যে গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী বিশ্ব মোড়লদের সমর্থন পাওয়া গেছে তা নয়; বরং গণতন্ত্র হত্যাকারীরাই তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা বেশি পেয়েছে।
১৯৯০ সালের পর দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল যে দেশে গণতন্ত্রের হারিয়ে যাওয়া ডিএনএ আবার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু রাজনৈতিক বৈরিতা, প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করে ফেলার দস্যু মনোবৃত্তি তা অসম্ভব করে তুলেছে। এ জন্যই আমরা অনেকে এখন বাংলাদেশের ডিএনএতে গণতন্ত্রের অস্তিত্বের বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করছি।
কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী কোনো বিশ্ব মোড়লের চাপে কিংবা প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশের সেই ডিএনএ ফিরে আসবে না। রাজনীতির মাঠে, জনগণের জীবনে তো নয়ই। তারা চাপ, প্রেসক্রিপশন এবং আরও অনেক কিছু দিতে পারে। আবার নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য দরকার হলে বাংলাদেশের ডিএনএতে যে গণতন্ত্র ছিল তাকেও বড় করে দেখিয়ে দিতে পারে। আবার গণতন্ত্রের কথা ভুলেও যেতে পারে। আমরা জানি, গণতন্ত্র যদি প্রতিষ্ঠা করতে হয়, বাংলাদেশের আদি ডিএনএতে যে গণতন্ত্র ছিল তাকে যদি ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে একমাত্র দরকার দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সম্মিলিত প্রয়াস। সেটাই হওয়া উচিত আমাদের একমাত্র পথ।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম, অর্থাৎ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যে পরিচালিত গণসংগ্রাম এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি ও অংশ নিয়েছি, তারা খুব ভালোভাবেই জানি যে বাংলাদেশের ডিএনএতে গণতন্ত্র ছিল। একই সঙ্গে আমরা অনেকেই এ কথাও মানি যে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই একটি প্রবল প্রতিকূল রাজনৈতিক উপদ্রব সৃষ্টির মাধ্যমে সেই ডিএনএ প্রতিস্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে শুরু হওয়া আমাদের অভিযাত্রা এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে সেই ডিএনএর অস্তিত্ব নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।
ডিএনএ হলো একটি নিউক্লিক অ্যাসিড, যা জীবদেহের (আমাদের এই নিবন্ধের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের) গঠন ও কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের জিনগত নির্দেশ ধারণ করে।জীবজগতে কারও শরীরে ডিএনএ প্রতিস্থাপন কিংবা বদলে দেওয়া অসম্ভব। তবে কোনো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তা হতে পারে। যদি তা হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্রের চরিত্র বৈশিষ্ট্য নীতি আদর্শ এবং অভীষ্ট পরিবর্তিত হয়ে যায়। বাংলাদেশের অভিযাত্রায় পরিবর্তনের প্রবণতা ও অব্যাহত ধারা লক্ষ করলেই আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে খুব দক্ষ হাতে সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের ডিএনএ প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এ বিষয়ে সবিস্তার আলোচনার আগে বলে নেওয়া দরকার যে ডিএনএর প্রসঙ্গটি উঠল কেন?
প্রসঙ্গটি এসেছে সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি বক্তব্যের সূত্র ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ডিএনএতে গণতন্ত্র রয়েছে।’ ওই সংবাদ সম্মেলনে ভারতের গণতন্ত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত দুই দেশই গণতান্ত্রিক।’
ভারতের ডিএনএতে যে গণতন্ত্র আছে তা প্রশ্নহীন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীন ভারত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাসেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। কিন্তু গণতন্ত্রের সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে কি না, নাকি সেই ডিএনএতেও পরিবর্তন ঘটে গেছে, সে প্রশ্ন প্রবলভাবেই উঠেছে। সে করণেই নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিপীড়ন, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ ও সার্বিকভাবে গণতন্ত্রের নিম্নগামিতা নিয়ে ৭৫ জন কংগ্রেস সদস্যের চিঠি,
নাগরিক সমাজ ও সংবাদমাধ্যমের চাপ সবই ছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর।
কিন্তু ডিএনএতে গণতন্ত্র থাকার সুবাদে তার কোনো কিছুই ভারত ও নরেন্দ্র মোদির জন্য সামান্যতম বিঘ্ন হতে পারেনি। কারণ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কিংবা স্বার্থের বিষয়টি তেমন নয়। কাজেই বাংলাদেশের ডিএনএতে গণতন্ত্র থাকলেও সেটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনো বিবেচনার বিষয় নয়। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের অবস্থানও ভারতের মতো
শক্তিশালী নয়। হওয়ার কথাও না।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএতে যে গণতন্ত্র রয়েছে তাকে কি ভারতের ডিএনএর মতো নির্ভেজাল বা প্রশ্নহীন বলা যায়! বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের অভিযাত্রা তো ভারত কিংবা বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক পন্থায় শুরু হয়নি; বরং শুরু হয়েছিল গণহত্যা, লুণ্ঠন, জবরদস্তির পথ ধরে। ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে ওই অঞ্চলের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করা হয়েছিল। সেখানেই শেষ নয়। আফ্রিকা থেকে অসংখ্য মানুষ ধরে এনে দাস হিসেবে কাজে লাগানো, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন থেকে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএতেই আছে। এসবের অনেক পরেও, গত শতাব্দীর মধ্যভাগে পৃথিবীর অনেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে হত্যা, অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকার পরিবর্তন এবং গণতন্ত্রের স্থলে স্বেচ্ছাচারী-স্বৈরাচারী সরকার প্রতিষ্ঠা এবং তাঁদের অব্যাহতভাবে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার মতো কুকর্মও যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএতে বিদ্যমান। সেই ডিএনএতে গণতন্ত্র কোথায়!
অন্যদিকে বাংলাদেশের ইতিহাস কী বলে? এ দেশটি প্রতিষ্ঠার জন্য যে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এ দেশের মানুষ করেছে তার সবই ছিল গণতান্ত্রিক পন্থায় জনগণসম্পৃক্ত গণ-আন্দোলন। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষ সংগ্রাম শুরু করেছিল। ১৯৫২ সালে তার ব্যাপ্তি আরও বিস্তৃত হয়।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার মিছিলে যখন গুলি করে হত্যা করার ঘটনা ঘটে, তখনো এবং তার পরবর্তী পর্যায়ের আন্দোলনও গণতান্ত্রিকই ছিল।আসলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত আন্দোলন-সংগ্রামের তালিকা অনেক দীর্ঘ। ভাষা আন্দোলনের পর ‘৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনও ছিল আন্দোলনেরই অংশ। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৬ সালের ছয় দফার আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং আইউব খানের সামরিক সরকারের পতন, সেই পথ ধরে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন। এসব আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। মাঝখানে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র নামে একটি মিথ্যা মামলা করে এ দেশের গণমানুষের আন্দোলনে ষড়যন্ত্রের কালিমা লেপনের যে কূটচাল চেলেছিল তা-ও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে যায় গণ-আন্দোলনের ফলেই। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র সেই যুদ্ধও ছিল এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা একটি জনযুদ্ধ। এই প্রক্রিয়ায় যে দেশটি প্রতিষ্ঠিত, সে দেশের ডিএনএতে গণতন্ত্র ছাড়া আর কীই-বা থাকতে পারে?
বাংলাদেশের ডিএনএতে গণতন্ত্র ছাড়া ছিলও না কিছু। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরেই এক অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক উপদ্রব সৃষ্টি করে বাংলাদেশের সেই নির্ভেজাল ডিএনএ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়ায় অবিমৃশ্যকারী রাজনৈতিক শক্তি যেমন ছিল, তেমনি তাঁদের সঙ্গে সুযোগ সন্ধানী হিসেবে যুক্ত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানের এ দেশীয় দোসর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। যুক্ত হয়েছিল হঠকারী বামধারার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বহুধাবিভক্ত উপদলগুলো যারা সব পরিস্থিতিতে সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাসী ছিল। এদের সম্মিলিত শক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ও বিরোধিতা করেছে। ফলে এই ধারার ব্যাপ্তি সারা দেশে বিস্তার লাভ করে এবং বাংলাদেশের ডিএনএ বদলে দেয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার করার পর যে সামরিক শাসনের ধারা এ দেশে চালু হয় তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ডিএনএকে প্রায় অপসৃত করে ফেলে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মূলত সেই ধারাই চলে। এর মধ্যেও এ দেশের মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে। নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। চেষ্টা করেছে দেশের মূল ডিএনএ ফিরিয়ে আনার। মানুষের সেই সংগ্রামে যে গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী বিশ্ব মোড়লদের সমর্থন পাওয়া গেছে তা নয়; বরং গণতন্ত্র হত্যাকারীরাই তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা বেশি পেয়েছে।
১৯৯০ সালের পর দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল যে দেশে গণতন্ত্রের হারিয়ে যাওয়া ডিএনএ আবার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু রাজনৈতিক বৈরিতা, প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করে ফেলার দস্যু মনোবৃত্তি তা অসম্ভব করে তুলেছে। এ জন্যই আমরা অনেকে এখন বাংলাদেশের ডিএনএতে গণতন্ত্রের অস্তিত্বের বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করছি।
কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী কোনো বিশ্ব মোড়লের চাপে কিংবা প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশের সেই ডিএনএ ফিরে আসবে না। রাজনীতির মাঠে, জনগণের জীবনে তো নয়ই। তারা চাপ, প্রেসক্রিপশন এবং আরও অনেক কিছু দিতে পারে। আবার নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য দরকার হলে বাংলাদেশের ডিএনএতে যে গণতন্ত্র ছিল তাকেও বড় করে দেখিয়ে দিতে পারে। আবার গণতন্ত্রের কথা ভুলেও যেতে পারে। আমরা জানি, গণতন্ত্র যদি প্রতিষ্ঠা করতে হয়, বাংলাদেশের আদি ডিএনএতে যে গণতন্ত্র ছিল তাকে যদি ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে একমাত্র দরকার দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সম্মিলিত প্রয়াস। সেটাই হওয়া উচিত আমাদের একমাত্র পথ।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে