অনিয়মের অভিযোগে মন্দিরের নির্মাণকাজ বন্ধ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ১৭

মৌলভীবাজার জেলা শহরে সরকারি বরাদ্দের মন্দিরের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় এলাকাবাসী গত শনিবার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের (হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের) ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে শহরের সেন্ট্রাল রোডে এ মন্দির নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়। মন্দিরের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘বাবা গাছপীর এন্টারপ্রাইজ’ নামে প্রতিষ্ঠান এবং দায়িত্বে ছিলেন ঠিকাদার জয়নাল চৌধুরী।

স্থানীয় লোকজন জানান, ঠিকাদার জয়নাল চৌধুরী ইঞ্জিনিয়ার ও কার্যকরী কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে মন্দিরের ছাদের একাংশের ঢালাই করে। এলাকাবাসী ও কার্যকরী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ করেন। কাজ বন্ধ রেখে নির্মাণাধীন ছাদ ভেঙে পুনরায় নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী হরিকিঙ্কর মোহান্ত।

কার্যকরী কমিটি ও সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার সূত্র জানায়, শিডিউলে আছে ১: ১.৫: ৩ দিয়ে সিমেন্ট, বালু ও খোয়া দেওয়ার কথা। কিন্তু সেখান ১: ৪: ৮ দিয়ে ছাদ ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ৩ সুতা রডের পরিবর্তে ২ সুতা রড ব্যবহার করে ছাদ ঢালাই করা হচ্ছে। তা দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী নির্মাণকাজ বন্ধ করে কার্যকরী কমিটিকে খবর দেন।

কার্যকরী কমিটি মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মিন্টু দেবকে জানান। মিন্টু দেব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে কাজ বন্ধ রেখে পুনরায় ছাদ নির্মাণের নির্দেশ আসে।

মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মিন্টু দেব বলেন, ‘ঠিকাদার কাউকে না জানিয়ে গোপনে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে মন্দিরের ছাদের একাংশ ঢালাই করে। এখানে নিয়ম ছিল আমাকে জানানো। কিন্তু তারা জানায়নি। আমি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের নির্বাহী প্রকৌশলী হরিকিঙ্কর মোহান্তকে জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী হরিকিঙ্কর মোহান্ত বলেছেন নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে ছাদ নির্মাণ হওয়ায় এটি টেকসই হবে না। ভেঙে নতুন করে ছাঁদ ঢালাই ও অন্যান্য কাজ সঠিকভাবে করতে হবে। সঙ্গে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্মাণকাজের বিল বাকি রয়েছে, সে বিষয়েও ভাবা হবে।

নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা বশির মিয়া, মিনু মিয়া, রাজ সরকার।

রাজ সরকার বলেন, একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কাজ এটি। এই কাজ সরকারি বরাদ্দের। এখানে ঠিকাদার দ্বারা চুরি হলে বাকিগুলোর কী অবস্থা হবে?

‘ইঞ্জিনিয়ার ও কার্যকরী কমিটির চলমান কাজের ঠিকমতো তদারকি না করায় এ অবস্থা হয়েছে। এখানে ইঞ্জিনিয়ারের যোগসাজশ রয়েছে বলে আমরা মনে করি,’ বলেন রাজ সরকার।

মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় কালীবাড়ির কার্যকরী কমিটির সভাপতি মনবীর রায় মঞ্জু এবং সাধারণ সম্পাদক নিলিমেশ ঘোষ বলু বলেন, ‘ঠিকাদার আমাদের না জানিয়ে ৭ জানুয়ারি ছাদ ঢালাই শুরু করে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ পাওয়ায় এদিন নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়।’ এ ব্যাপারে তারা (কমিটি) নিয়মিত তদারকি করেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে বলেও জানায় তারা।

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘বাবা গাছপীর কন্সট্রাকশন’-এর জয়নাল চৌধুরীকে কল দেওয়া হয়। এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন এবং পরে দেখা করবেন বলে জানান।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান নির্মাণাধীন মন্দির পরিদর্শন করে বলেন, ‘আমি নির্মাণকাজ দেখেছি। ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করেছে। আমি নির্দেশ দিয়েছি, নির্মিত ছাদ ভেঙে নতুন করে ঢালাইয়ের কাজ করতে হবে। পাশাপাশি কার্যকরী কমিটি থেকে প্রতিদিন দুজনকে দেখভালের নির্দেশও দিয়েছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের রেকর্ড ভাঙল ১৪ বছর পর

৩ মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা

যানজটে গুলি করে ফেঁসে গেলেন জাপার সাবেক এমপি, অস্ত্রসহ আটক

শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরীমনি, কী ঘটেছিল সেখানে

এয়ারক্র্যাফটে স্বর্ণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত