মৃত্যুঞ্জয় রায়
প্রায় প্রতিদিনই মন খারাপ করা কিছু বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় থাকে, তা হলো এ দেশ থেকে সবুজ হারিয়ে যাওয়া। যদি আমরা জুন মাসের সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে কোনো-না-কোনো সংবাদপত্রে অন্তত একটি হলেও খবর এসেছে গাছ কাটার। জুনের শেষে এসেও খবর দেখলাম, বরগুনার টেংরাগিরি বনের প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। এই বন স্থানীয়দের কাছে ফাতরার বন নামে পরিচিত, যাকে বলা হয় দ্বিতীয় সুন্দরবন। বরগুনার তালতলী থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত এই বন বিস্তৃত। বনের গাছ কেটে পাচারের পর আলামত ধ্বংস করতে আগুন দিয়ে সেসব গাছের গুঁড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শ্বাসমূলের মতো সেসব পুড়ে যাওয়া গোড়া মাটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, আগুনের তাপে ঝলসে গেছে আশপাশের অসংখ্য গাছের ডাল-পাতা। এ ঘটনায় বন বিভাগ মামলা করেছে। মামলায় যদি দোষী ব্যক্তিদের সাজাও হয়, তাতেও ফিরে আসবে না কেটে ফেলা গাছগুলো। গাছখেকো সেই পাচারকারীরা হয়তো জানেই না যে এভাবে গাছ কাটার মানে তা নিজেদেরই হত্যা করার শামিল।
সম্প্রতি এ দেশে গাছ কাটা নিয়ে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসেই আরেকটি সংবাদ বেরিয়েছে, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘সাড়ে ১১ লাখ গাছ হত্যা সরকারি সংস্থার কোপে’। গত ২০২৩ সালের মার্চ থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১৪ মাসে উন্নয়নের নামে কাটা হয়েছে এসব গাছ। সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা পড়েছে চট্টগ্রামে, যার পরিমাণ ৫ লাখের বেশি। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে, যা বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এর চেয়ে প্রায় তিন গুণ গাছ কেটেছে। বন, বাগিচা, প্রতিষ্ঠান, রাস্তার ধার, বাড়ি—কোনো জায়গা থেকেই গাছ কাটা থেমে নেই।
সারা বিশ্বেই প্রতিমুহূর্তে চলছে গাছ কাটার এই মহোৎসব। বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে ১০টি ফুটবল মাঠের সমান বন উজাড় হচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবীতে কাটা পড়েছে প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ হেক্টর বনভূমির গাছ। বিশ্বে বনভূমি উজাড়ে শীর্ষের দিকে বাংলাদেশ। সংসদীয় কমিটিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। দেশে বন বিভাগের মোট জমি ৩৭ লাখ ৭১ হাজার ১২৪ একর। ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমেছে প্রায় ৪ লাখ ৯৪ হাজার ২১১ একর। অকারণে নিশ্চয়ই কেউ গাছ কাটছে না, কিন্তু সেসব কারণ কতটা যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য তা কেউ যাচাই করছে না, নিবৃত্তও করছে না। অধিকাংশ গাছ কাটা পড়ছে বিভিন্ন উন্নয়নের নামে, প্রকল্পের কাজে অথবা ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণের জন্য।
অনেক দিন আগে ফিলিপাইনের ম্যানিলা ডেটলাইন সংবাদপত্রে রয়টার পরিবেশিত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল—‘গাছ কাটার জন্য ম্যানিলায় তিনজনের জেল’। সংবাদে বলা হয়েছিল, সেন্ট্রাল ম্যানিলায় একাশিয়া ও নারকেলগাছ কাটার জন্য প্রেসিডেন্ট মার্কোসের নির্দেশে নগরীর নর্দমা-ঠিকাদারদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ম্যানিলায় বিনা অনুমতিতে বৃক্ষনিধন শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। রাষ্ট্রপতি এক আদেশবলে গাছ কাটার অপরাধীদের দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ৫ হাজার পেসোস জরিমানার ব্যবস্থা করেছেন। এরূপ শাস্তির বিধান এ দেশে থাকলেও সেসব আইনের দুর্বলতা, বাস্তবায়নের শিথিলতা ও অনীহা ইত্যাদি কারণে গাছ যারা কাটে তারা পার পেয়ে যায়। একটা বয়স্ক সেগুনগাছের দাম যেখানে ৫০ হাজার টাকা, সেখানে আইন অমান্য করে যদি কেউ ধরাও পড়ে, তবে তাকে দিতে হয় গাছপ্রতি মাত্র ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। আর বন বিভাগের হাতে এই ধরা পড়া ও শাস্তি প্রদানের পরিমাণ বিনা অনুমতিতে গাছ কাটার মাত্র ২ শতাংশ। অর্থদণ্ড বা জেল—এর কোনোটাই সেই কর্তিত গাছের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারে না।
গাছ কাটার ব্যাপারে অনেক দেশেই অনেক আইন আছে। কেউ চাইলেই সহজে সে দেশের গাছ কাটতে পারে না, এমনকি নিজেদের ব্যক্তিগত গাছও না। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে ক্যামেরুনের হাইল্যান্ডে যেতে অনেক জনপদ ও বনাঞ্চলে ঘুরতে ঘুরতে যত প্রাচীন আর বিশাল বৃক্ষ দেখেছি, তা এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। আমাদের বনেও তো তেমন বৃক্ষ থাকা উচিত ছিল। কিন্তু বন-বনানীগুলোয় প্রাচীন গাছের চেয়ে নবীন গাছই বেশি চোখে পড়ে। একশ্রেণির মানুষের গাছ কাটা যেন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না।
দিল্লির বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এ বেশ কিছু আইনি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। বৃক্ষ কর্মকর্তার পূর্বানুমতি ছাড়া সৃজিত বনের কোনো বৃক্ষ কেউ কাটতে পারবে না, তা সে সরকারি বা ব্যক্তিগতভাবে রোপিত যা-ই হোক না কেন। কাটলে প্রতিটি গাছ কাটার জন্য তাকে এক বছরের জেল বা গাছপ্রতি ১ হাজার রুপি জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। অনুরূপ আইন ভারতের আরও কয়েকটি রাজ্যেও রয়েছে। বাংলাদেশের বন আইন, ১৯২৭-এর ধারা ৪২ (১) অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কেউ বনের গাছ কাটলে তাকে কমপক্ষে দুই মাস এবং সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। গাছ না কেটে বনের কোনো ক্ষতিসাধন কেউ করলে তারও শাস্তির বিধান রয়েছে। বন আইন, ১৯২৭-এর ধারা ২৬ অনুযায়ী কোনো সংরক্ষিত বনে কেউ কোনো ক্ষতি সাধন করলে তাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
গাছ না কেটেও নানাভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে বনের বৃক্ষের ক্ষতি সাধন করা যায়। যেমন রিং আকারে বৃক্ষের বাকল তোলা, ডালপালা কাটা, বাকল চেঁছে রস সংগ্রহ করা, বৃক্ষ পোড়ানো, বাকল তোলা, বনভূমি পরিষ্কার করে চাষ করা, বনের মধ্যে আগুন জ্বালানো, ঝড়ে পড়া বৃক্ষ কাটা বা কাঠ অপসারণ করা ইত্যাদি। আইন করে পৃথিবীর অনেক দেশেই বৃক্ষ সংরক্ষণের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশেও এ ব্যাপারে আরও কঠোর হওয়ার সময় এসেছে।
তবে সম্প্রতি আশাজাগানিয়া কিছু খবর পেয়ে মাঝে মাঝে খারাপ মনটা ভালো হয়ে যায়। যখন শুনি রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রাচীন গাছগুলো কেটে ফেলার প্রতিবাদ করেছেন সেখানকার পরিবেশবাদীরা। সারা দেশে নির্বিচারে গাছ কাটার কারণে দেশের সবুজ আচ্ছাদন কমে যাচ্ছে। তার মানে, আমরা আমাদের গুরুবৃক্ষের ছায়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এবারের তীব্র গরমে একটু ছায়ার জন্য যেমন ছুটে বেরিয়েছে পথে ও মাঠে থাকা মানুষ—হে বৃক্ষ, ছায়া দাও, প্রশান্তি দাও। কিন্তু কোথায় সেই ছায়া? গাছ কেটে তো আর গাছের ছায়া খুঁজলে তা পাব না। তাই উন্নয়ন প্রকল্পের অজুহাতে অকারণে গাছ কাটা দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
প্রায় প্রতিদিনই মন খারাপ করা কিছু বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় থাকে, তা হলো এ দেশ থেকে সবুজ হারিয়ে যাওয়া। যদি আমরা জুন মাসের সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে কোনো-না-কোনো সংবাদপত্রে অন্তত একটি হলেও খবর এসেছে গাছ কাটার। জুনের শেষে এসেও খবর দেখলাম, বরগুনার টেংরাগিরি বনের প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। এই বন স্থানীয়দের কাছে ফাতরার বন নামে পরিচিত, যাকে বলা হয় দ্বিতীয় সুন্দরবন। বরগুনার তালতলী থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত এই বন বিস্তৃত। বনের গাছ কেটে পাচারের পর আলামত ধ্বংস করতে আগুন দিয়ে সেসব গাছের গুঁড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শ্বাসমূলের মতো সেসব পুড়ে যাওয়া গোড়া মাটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, আগুনের তাপে ঝলসে গেছে আশপাশের অসংখ্য গাছের ডাল-পাতা। এ ঘটনায় বন বিভাগ মামলা করেছে। মামলায় যদি দোষী ব্যক্তিদের সাজাও হয়, তাতেও ফিরে আসবে না কেটে ফেলা গাছগুলো। গাছখেকো সেই পাচারকারীরা হয়তো জানেই না যে এভাবে গাছ কাটার মানে তা নিজেদেরই হত্যা করার শামিল।
সম্প্রতি এ দেশে গাছ কাটা নিয়ে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসেই আরেকটি সংবাদ বেরিয়েছে, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘সাড়ে ১১ লাখ গাছ হত্যা সরকারি সংস্থার কোপে’। গত ২০২৩ সালের মার্চ থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১৪ মাসে উন্নয়নের নামে কাটা হয়েছে এসব গাছ। সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা পড়েছে চট্টগ্রামে, যার পরিমাণ ৫ লাখের বেশি। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে, যা বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এর চেয়ে প্রায় তিন গুণ গাছ কেটেছে। বন, বাগিচা, প্রতিষ্ঠান, রাস্তার ধার, বাড়ি—কোনো জায়গা থেকেই গাছ কাটা থেমে নেই।
সারা বিশ্বেই প্রতিমুহূর্তে চলছে গাছ কাটার এই মহোৎসব। বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে ১০টি ফুটবল মাঠের সমান বন উজাড় হচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবীতে কাটা পড়েছে প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ হেক্টর বনভূমির গাছ। বিশ্বে বনভূমি উজাড়ে শীর্ষের দিকে বাংলাদেশ। সংসদীয় কমিটিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। দেশে বন বিভাগের মোট জমি ৩৭ লাখ ৭১ হাজার ১২৪ একর। ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমেছে প্রায় ৪ লাখ ৯৪ হাজার ২১১ একর। অকারণে নিশ্চয়ই কেউ গাছ কাটছে না, কিন্তু সেসব কারণ কতটা যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য তা কেউ যাচাই করছে না, নিবৃত্তও করছে না। অধিকাংশ গাছ কাটা পড়ছে বিভিন্ন উন্নয়নের নামে, প্রকল্পের কাজে অথবা ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণের জন্য।
অনেক দিন আগে ফিলিপাইনের ম্যানিলা ডেটলাইন সংবাদপত্রে রয়টার পরিবেশিত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল—‘গাছ কাটার জন্য ম্যানিলায় তিনজনের জেল’। সংবাদে বলা হয়েছিল, সেন্ট্রাল ম্যানিলায় একাশিয়া ও নারকেলগাছ কাটার জন্য প্রেসিডেন্ট মার্কোসের নির্দেশে নগরীর নর্দমা-ঠিকাদারদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ম্যানিলায় বিনা অনুমতিতে বৃক্ষনিধন শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। রাষ্ট্রপতি এক আদেশবলে গাছ কাটার অপরাধীদের দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ৫ হাজার পেসোস জরিমানার ব্যবস্থা করেছেন। এরূপ শাস্তির বিধান এ দেশে থাকলেও সেসব আইনের দুর্বলতা, বাস্তবায়নের শিথিলতা ও অনীহা ইত্যাদি কারণে গাছ যারা কাটে তারা পার পেয়ে যায়। একটা বয়স্ক সেগুনগাছের দাম যেখানে ৫০ হাজার টাকা, সেখানে আইন অমান্য করে যদি কেউ ধরাও পড়ে, তবে তাকে দিতে হয় গাছপ্রতি মাত্র ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। আর বন বিভাগের হাতে এই ধরা পড়া ও শাস্তি প্রদানের পরিমাণ বিনা অনুমতিতে গাছ কাটার মাত্র ২ শতাংশ। অর্থদণ্ড বা জেল—এর কোনোটাই সেই কর্তিত গাছের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারে না।
গাছ কাটার ব্যাপারে অনেক দেশেই অনেক আইন আছে। কেউ চাইলেই সহজে সে দেশের গাছ কাটতে পারে না, এমনকি নিজেদের ব্যক্তিগত গাছও না। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে ক্যামেরুনের হাইল্যান্ডে যেতে অনেক জনপদ ও বনাঞ্চলে ঘুরতে ঘুরতে যত প্রাচীন আর বিশাল বৃক্ষ দেখেছি, তা এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। আমাদের বনেও তো তেমন বৃক্ষ থাকা উচিত ছিল। কিন্তু বন-বনানীগুলোয় প্রাচীন গাছের চেয়ে নবীন গাছই বেশি চোখে পড়ে। একশ্রেণির মানুষের গাছ কাটা যেন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না।
দিল্লির বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এ বেশ কিছু আইনি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। বৃক্ষ কর্মকর্তার পূর্বানুমতি ছাড়া সৃজিত বনের কোনো বৃক্ষ কেউ কাটতে পারবে না, তা সে সরকারি বা ব্যক্তিগতভাবে রোপিত যা-ই হোক না কেন। কাটলে প্রতিটি গাছ কাটার জন্য তাকে এক বছরের জেল বা গাছপ্রতি ১ হাজার রুপি জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। অনুরূপ আইন ভারতের আরও কয়েকটি রাজ্যেও রয়েছে। বাংলাদেশের বন আইন, ১৯২৭-এর ধারা ৪২ (১) অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কেউ বনের গাছ কাটলে তাকে কমপক্ষে দুই মাস এবং সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। গাছ না কেটে বনের কোনো ক্ষতিসাধন কেউ করলে তারও শাস্তির বিধান রয়েছে। বন আইন, ১৯২৭-এর ধারা ২৬ অনুযায়ী কোনো সংরক্ষিত বনে কেউ কোনো ক্ষতি সাধন করলে তাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
গাছ না কেটেও নানাভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে বনের বৃক্ষের ক্ষতি সাধন করা যায়। যেমন রিং আকারে বৃক্ষের বাকল তোলা, ডালপালা কাটা, বাকল চেঁছে রস সংগ্রহ করা, বৃক্ষ পোড়ানো, বাকল তোলা, বনভূমি পরিষ্কার করে চাষ করা, বনের মধ্যে আগুন জ্বালানো, ঝড়ে পড়া বৃক্ষ কাটা বা কাঠ অপসারণ করা ইত্যাদি। আইন করে পৃথিবীর অনেক দেশেই বৃক্ষ সংরক্ষণের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশেও এ ব্যাপারে আরও কঠোর হওয়ার সময় এসেছে।
তবে সম্প্রতি আশাজাগানিয়া কিছু খবর পেয়ে মাঝে মাঝে খারাপ মনটা ভালো হয়ে যায়। যখন শুনি রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রাচীন গাছগুলো কেটে ফেলার প্রতিবাদ করেছেন সেখানকার পরিবেশবাদীরা। সারা দেশে নির্বিচারে গাছ কাটার কারণে দেশের সবুজ আচ্ছাদন কমে যাচ্ছে। তার মানে, আমরা আমাদের গুরুবৃক্ষের ছায়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এবারের তীব্র গরমে একটু ছায়ার জন্য যেমন ছুটে বেরিয়েছে পথে ও মাঠে থাকা মানুষ—হে বৃক্ষ, ছায়া দাও, প্রশান্তি দাও। কিন্তু কোথায় সেই ছায়া? গাছ কেটে তো আর গাছের ছায়া খুঁজলে তা পাব না। তাই উন্নয়ন প্রকল্পের অজুহাতে অকারণে গাছ কাটা দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে