স্বাতী চৌধুরী
পত্রিকার প্রতিবেদনে দেখলাম একজন ফেরদৌস মণ্ডল, যিনি পেশায় রিকশাচালক। ফেরদৌস তাঁর বউকে এমএ পাস করিয়েছেন। বিয়ের সময় ফেরদৌসের বউ সীমানুর দাখিল মাদ্রাসায় পড়তেন। কিন্তু বিয়ে, সন্তানের জন্ম সীমানুরের পড়াশোনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
আমরা তো অহরহ দেখতে পাই শুধু বিয়ের কারণে কত মেধাবী মেয়ের পড়ালেখার স্বপ্ন চিরতরে ভেঙে গিয়ে সারা জীবনের জন্য তাঁদের বুকে হাহাকার জাগিয়ে রেখেছে—এর কোনো হিসাব নেই। সেখানে একজন ফেরদৌস যে নিজের স্ত্রীর স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, এটা সত্যিই আনন্দের বিষয় এবং এই হতাশামগ্ন সময়ে যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক আর প্রেরণাদায়কও বটে।
ফেরদৌস বলেছেন, অভাবের কারণে তিনি নিজে লেখাপড়া করতে পারেননি বলে খুব দুঃখ ছিল। তাই বিয়ের পর যখন দেখলেন স্ত্রী আরও পড়তে চান, তিনি বাধা দেননি; বরং পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। এ ছাড়া নিজের রিকশায় বউকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে আবার কলেজ শেষে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। ভালো কাজের ভালো ফলাফল কোনো না কোনোভাবে একসময় পাওয়াই যায়। ফেরদৌসও পেয়েছেন।
লেখাপড়া নিয়ে তাঁর এবং স্ত্রীর লড়াই-সংগ্রামের কথা জানতে পেরে প্রেসক্লাবের সভাপতি তা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন। সে খবর প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে তাঁর নির্দেশে বগুড়ার জেলা প্রশাসক একটি চাকরি ও একটি ল্যাপটপ দিয়েছেন ফেরদৌসের স্ত্রীকে। সেই সঙ্গে দিয়েছেন ঋণশোধের জন্য ২৫ হাজার এবং ঘর মেরামতের জন্য ৬ হাজার টাকাসহ কিছু ঢেউটিন। ভালো কাজের পুরস্কার পেয়ে ফেরদৌস দম্পতি খুব খুশি। তাঁরা স্বপ্ন দেখছেন ছেলেমেয়েদের ভালো স্কুলে পড়িয়ে মানুষের মতো মানুষ করার।
প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় অনেক মন্দ খবরের মাঝে এ রকম একটা ভালো খবর আমাদের মনেও ভালো লাগা তৈরি করে। তবে পত্রিকার প্রতিবেদন ছাড়াও মাঝে মাঝে এমন কিছু ইতিবাচক ঘটনা আমাদের চোখের সামনেও ঘটে। বছর ত্রিশেক আগের ঘটনা—আমি তখন ধর্মপাশা উপজেলায় চাকরি করি। এসএসসি পরীক্ষার সময় আমার লজিং বাসায় ঘরভাড়া করে থাকতে এল এক পরীক্ষার্থী। সঙ্গে তার শ্বশুর-শাশুড়ি। শ্বশুর বাজার সদাই করেন আর শাশুড়ি রান্না করে খাইয়ে বউকে পরীক্ষা দিতে পাঠান। অজপাড়া গ্রামের মেয়ে পথঘাট চেনে না, তাই শ্বশুর পরীক্ষাকেন্দ্রেও নিয়ে যান বউমাকে।
মাঝে মাঝে তাঁর অষ্টম শ্রেণি পাস কৃষক বর এসে বউয়ের পরীক্ষা কেমন হলো খোঁজখবর নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি চলে যান। বউ পরীক্ষা দিচ্ছে, শ্বশুর, শাশুড়ি, বর সবাই খুব খুশি। শাশুড়ি গর্ব করে বলে বেড়ান, তাঁর বউ খুব ভালো ছাত্রী। মন দিয়ে পড়াশোনা করে। তাঁরা আশা করছেন বউমা ফার্স্ট ডিভিশনে পাস করবে, কলেজে পড়বে, তারপর পড়া শেষে প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার হবে। একজন রসিকতা করে বলেছিল, ‘মাসি, বউ মাস্টার হলে আপনার কী? বউ তো রান্নাবান্না করবে না, উল্টো আপনাকেই বউকে রান্না করে খাওয়াতে হবে।’ শাশুড়ি হেসে বলেছিলেন, ‘তাতে কী? যত দিন তনু তনাই চলে, বউকে রান্না করে খাওয়াব।
বউ তো আর বসে থাকবে না। মাগো, রান্নাবান্না তো সবার ঘরের বউ-ঝিরাই করে, কিন্তু আমার বউ মাস্টারি করলে সেটা হবে গৌরবের।’
তবে ফেরদৌসের খবরের বিপরীতে মনে পড়ল, কয়েক বছর আগে বরের নিষেধ না মেনে পড়াশোনা করার অপরাধে নরসিংদী সরকারি কলেজের ছাত্রী জুঁইয়ের ডান হাতের কবজি কেটে ফেলার কথা। এসএসসি পাস জুঁই বিয়ের পর আরও পড়তে চাইলে নিষেধ করেছিলেন প্রবাসী বর রফিকুল ইসলাম। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি অদম্য আগ্রহের কারণে নিষেধ না মেনে কলেজে ভর্তি হয়েছিল জুঁই। বাপের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে উচ্চমাধ্যমিক ফাইনাল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই সময় রফিকুল দেশে ফিরে জুঁইকে স্বর্ণালংকার দেওয়ার নাম করে ঢাকায় নিজের বোনের বাসায় নিয়ে যান। এরপর জুঁইয়ের চোখ বেঁধে চাপাতির এক কোপে ডান হাতের কবজি কেটে ফেলেন।
জুঁইয়ের কবজি কাটার ঘটনার কাছাকাছি সময়ে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের রেণু খাতুন ও শক্তিগড় থানার ব্রততী মিশ্র সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি পেলে তাঁদের বরেরা সেটা মেনে নিতে পারেননি। নিষেধ অমান্য করার অপরাধে রেণুর বর শরিফুল তাঁর ডান হাতের কবজি কেটে ফেলেন আর ব্রততীর বর রাহুল তাঁকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করেন। আসলে নারীর স্বাবলম্বী হওয়া বা শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতায় বরের থেকে বউয়ের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত, বাংলাদেশ বা এই উপমহাদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় একই রকম বলে দুই দেশেই একই সময়ে, একই রকম ঘটনা ঘটে।
ব্রততী বা রেণু দুজনই নার্সের চাকরি করতে চাইলে তাঁদের বর বাধা দিয়েছিলেন, কারণ তাঁরা মনে করেছিলেন তাঁদের বউরা তাঁদের থেকে বেশি রোজগার করলে হয় তাঁদের ছেড়ে দেবে, নাহয় আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষমতায়িত হয়ে তাঁদের পাত্তা দেবে না। জুঁইয়ের বর রফিকুলও ভেবেছেন এমনিতেই তিনি তেমন লেখাপড়া জানেন না, তার ওপর দিয়ে বউ আরও বেশি শিক্ষিত কেন হবে! বরের থেকে বউ বিদ্যাবুদ্ধিতে এগিয়ে থাকবে, আমাদের সমাজ সেটা এখনো মেনে নিতে পারে না। বউ অর্থ রোজগার করে স্বাবলম্বী হয়ে গেলে বরকে মান্যতা দেবে না—এটাও তাঁদের আতঙ্কের বিষয়। সে জন্য তাঁরা বন্ধ করে দেন বউয়ের পড়াশোনা। কেউ যদি তারপরও পড়তে চায়, শুরু হয় গালমন্দ, অপমান ও অত্যাচার। এই গালমন্দ ও অপমানের ভয়ে অধিকাংশ মেয়েই দমে যায়। কিন্তু জুঁইয়ের মতো যারা অদম্য, তাদের কবজি কাটা যায়।
কথা হচ্ছে, বউ উচ্চশিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হলে তাঁদের কেন এত ভয়? কারণ ক্ষমতা হারানোর ভয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় অধিকাংশ পুরুষ মনে করেন, নারী উচ্চশিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হলে তাঁদের ক্ষমতা কমে যাবে। তাকে পায়ের তলে রাখা যাবে না। সুতরাং তাকে ঘরে আটকে রাখো। ফেরদৌস এখানেই অনন্য। তিনি স্ত্রীর অদম্য আকাঙ্ক্ষাকে না দমিয়ে পড়াশোনায় সহযোগিতা করেছেন। শুধু তা-ই নয়, চাকরির জন্য তদবির করে শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছেন। আসলে সবকিছুর মূলে হলো মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। কোনো মানুষ যখন মানবিক হয়ে ওঠে, তখন তাঁর শিক্ষা ও পেশাগত পরিচয় কী, সেটা গৌণ হয়ে পড়ে। তাই যাঁর দৃষ্টিভঙ্গি যত স্বচ্ছ, তিনি সবকিছু তত সহজ করে ভাবতে পারেন এবং প্রকাশও করতে পারেন।
এ রকম কারও মনে কোনো জড়তা থাকে না। তাই কে কী ভাবল, কে কী বলল, সেটা তিনি ভাবেন না। লক্ষ্য পূরণে সামনের দিকে এগিয়ে যান। তাই তো ফেরদৌস একজন রিকশাচালক হয়েও যা সহজ করে ভাবতে ও করতে পেরেছেন, আমাদের সমাজের অনেক তথাকথিত শিক্ষিতজনেরাও তা পারেন না। ফেরদৌসকে তাই স্যালুট জানাই। অপেক্ষায় আছি তাঁর মতো স্বচ্ছ মনের মানুষে একদিন আমাদের দেশ ভরে উঠবে আর রফিকুলেরা নিপাত যাবে।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
পত্রিকার প্রতিবেদনে দেখলাম একজন ফেরদৌস মণ্ডল, যিনি পেশায় রিকশাচালক। ফেরদৌস তাঁর বউকে এমএ পাস করিয়েছেন। বিয়ের সময় ফেরদৌসের বউ সীমানুর দাখিল মাদ্রাসায় পড়তেন। কিন্তু বিয়ে, সন্তানের জন্ম সীমানুরের পড়াশোনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
আমরা তো অহরহ দেখতে পাই শুধু বিয়ের কারণে কত মেধাবী মেয়ের পড়ালেখার স্বপ্ন চিরতরে ভেঙে গিয়ে সারা জীবনের জন্য তাঁদের বুকে হাহাকার জাগিয়ে রেখেছে—এর কোনো হিসাব নেই। সেখানে একজন ফেরদৌস যে নিজের স্ত্রীর স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, এটা সত্যিই আনন্দের বিষয় এবং এই হতাশামগ্ন সময়ে যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক আর প্রেরণাদায়কও বটে।
ফেরদৌস বলেছেন, অভাবের কারণে তিনি নিজে লেখাপড়া করতে পারেননি বলে খুব দুঃখ ছিল। তাই বিয়ের পর যখন দেখলেন স্ত্রী আরও পড়তে চান, তিনি বাধা দেননি; বরং পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। এ ছাড়া নিজের রিকশায় বউকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে আবার কলেজ শেষে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। ভালো কাজের ভালো ফলাফল কোনো না কোনোভাবে একসময় পাওয়াই যায়। ফেরদৌসও পেয়েছেন।
লেখাপড়া নিয়ে তাঁর এবং স্ত্রীর লড়াই-সংগ্রামের কথা জানতে পেরে প্রেসক্লাবের সভাপতি তা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন। সে খবর প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে তাঁর নির্দেশে বগুড়ার জেলা প্রশাসক একটি চাকরি ও একটি ল্যাপটপ দিয়েছেন ফেরদৌসের স্ত্রীকে। সেই সঙ্গে দিয়েছেন ঋণশোধের জন্য ২৫ হাজার এবং ঘর মেরামতের জন্য ৬ হাজার টাকাসহ কিছু ঢেউটিন। ভালো কাজের পুরস্কার পেয়ে ফেরদৌস দম্পতি খুব খুশি। তাঁরা স্বপ্ন দেখছেন ছেলেমেয়েদের ভালো স্কুলে পড়িয়ে মানুষের মতো মানুষ করার।
প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় অনেক মন্দ খবরের মাঝে এ রকম একটা ভালো খবর আমাদের মনেও ভালো লাগা তৈরি করে। তবে পত্রিকার প্রতিবেদন ছাড়াও মাঝে মাঝে এমন কিছু ইতিবাচক ঘটনা আমাদের চোখের সামনেও ঘটে। বছর ত্রিশেক আগের ঘটনা—আমি তখন ধর্মপাশা উপজেলায় চাকরি করি। এসএসসি পরীক্ষার সময় আমার লজিং বাসায় ঘরভাড়া করে থাকতে এল এক পরীক্ষার্থী। সঙ্গে তার শ্বশুর-শাশুড়ি। শ্বশুর বাজার সদাই করেন আর শাশুড়ি রান্না করে খাইয়ে বউকে পরীক্ষা দিতে পাঠান। অজপাড়া গ্রামের মেয়ে পথঘাট চেনে না, তাই শ্বশুর পরীক্ষাকেন্দ্রেও নিয়ে যান বউমাকে।
মাঝে মাঝে তাঁর অষ্টম শ্রেণি পাস কৃষক বর এসে বউয়ের পরীক্ষা কেমন হলো খোঁজখবর নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি চলে যান। বউ পরীক্ষা দিচ্ছে, শ্বশুর, শাশুড়ি, বর সবাই খুব খুশি। শাশুড়ি গর্ব করে বলে বেড়ান, তাঁর বউ খুব ভালো ছাত্রী। মন দিয়ে পড়াশোনা করে। তাঁরা আশা করছেন বউমা ফার্স্ট ডিভিশনে পাস করবে, কলেজে পড়বে, তারপর পড়া শেষে প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার হবে। একজন রসিকতা করে বলেছিল, ‘মাসি, বউ মাস্টার হলে আপনার কী? বউ তো রান্নাবান্না করবে না, উল্টো আপনাকেই বউকে রান্না করে খাওয়াতে হবে।’ শাশুড়ি হেসে বলেছিলেন, ‘তাতে কী? যত দিন তনু তনাই চলে, বউকে রান্না করে খাওয়াব।
বউ তো আর বসে থাকবে না। মাগো, রান্নাবান্না তো সবার ঘরের বউ-ঝিরাই করে, কিন্তু আমার বউ মাস্টারি করলে সেটা হবে গৌরবের।’
তবে ফেরদৌসের খবরের বিপরীতে মনে পড়ল, কয়েক বছর আগে বরের নিষেধ না মেনে পড়াশোনা করার অপরাধে নরসিংদী সরকারি কলেজের ছাত্রী জুঁইয়ের ডান হাতের কবজি কেটে ফেলার কথা। এসএসসি পাস জুঁই বিয়ের পর আরও পড়তে চাইলে নিষেধ করেছিলেন প্রবাসী বর রফিকুল ইসলাম। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি অদম্য আগ্রহের কারণে নিষেধ না মেনে কলেজে ভর্তি হয়েছিল জুঁই। বাপের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে উচ্চমাধ্যমিক ফাইনাল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই সময় রফিকুল দেশে ফিরে জুঁইকে স্বর্ণালংকার দেওয়ার নাম করে ঢাকায় নিজের বোনের বাসায় নিয়ে যান। এরপর জুঁইয়ের চোখ বেঁধে চাপাতির এক কোপে ডান হাতের কবজি কেটে ফেলেন।
জুঁইয়ের কবজি কাটার ঘটনার কাছাকাছি সময়ে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের রেণু খাতুন ও শক্তিগড় থানার ব্রততী মিশ্র সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি পেলে তাঁদের বরেরা সেটা মেনে নিতে পারেননি। নিষেধ অমান্য করার অপরাধে রেণুর বর শরিফুল তাঁর ডান হাতের কবজি কেটে ফেলেন আর ব্রততীর বর রাহুল তাঁকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করেন। আসলে নারীর স্বাবলম্বী হওয়া বা শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতায় বরের থেকে বউয়ের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত, বাংলাদেশ বা এই উপমহাদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় একই রকম বলে দুই দেশেই একই সময়ে, একই রকম ঘটনা ঘটে।
ব্রততী বা রেণু দুজনই নার্সের চাকরি করতে চাইলে তাঁদের বর বাধা দিয়েছিলেন, কারণ তাঁরা মনে করেছিলেন তাঁদের বউরা তাঁদের থেকে বেশি রোজগার করলে হয় তাঁদের ছেড়ে দেবে, নাহয় আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষমতায়িত হয়ে তাঁদের পাত্তা দেবে না। জুঁইয়ের বর রফিকুলও ভেবেছেন এমনিতেই তিনি তেমন লেখাপড়া জানেন না, তার ওপর দিয়ে বউ আরও বেশি শিক্ষিত কেন হবে! বরের থেকে বউ বিদ্যাবুদ্ধিতে এগিয়ে থাকবে, আমাদের সমাজ সেটা এখনো মেনে নিতে পারে না। বউ অর্থ রোজগার করে স্বাবলম্বী হয়ে গেলে বরকে মান্যতা দেবে না—এটাও তাঁদের আতঙ্কের বিষয়। সে জন্য তাঁরা বন্ধ করে দেন বউয়ের পড়াশোনা। কেউ যদি তারপরও পড়তে চায়, শুরু হয় গালমন্দ, অপমান ও অত্যাচার। এই গালমন্দ ও অপমানের ভয়ে অধিকাংশ মেয়েই দমে যায়। কিন্তু জুঁইয়ের মতো যারা অদম্য, তাদের কবজি কাটা যায়।
কথা হচ্ছে, বউ উচ্চশিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হলে তাঁদের কেন এত ভয়? কারণ ক্ষমতা হারানোর ভয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় অধিকাংশ পুরুষ মনে করেন, নারী উচ্চশিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হলে তাঁদের ক্ষমতা কমে যাবে। তাকে পায়ের তলে রাখা যাবে না। সুতরাং তাকে ঘরে আটকে রাখো। ফেরদৌস এখানেই অনন্য। তিনি স্ত্রীর অদম্য আকাঙ্ক্ষাকে না দমিয়ে পড়াশোনায় সহযোগিতা করেছেন। শুধু তা-ই নয়, চাকরির জন্য তদবির করে শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছেন। আসলে সবকিছুর মূলে হলো মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। কোনো মানুষ যখন মানবিক হয়ে ওঠে, তখন তাঁর শিক্ষা ও পেশাগত পরিচয় কী, সেটা গৌণ হয়ে পড়ে। তাই যাঁর দৃষ্টিভঙ্গি যত স্বচ্ছ, তিনি সবকিছু তত সহজ করে ভাবতে পারেন এবং প্রকাশও করতে পারেন।
এ রকম কারও মনে কোনো জড়তা থাকে না। তাই কে কী ভাবল, কে কী বলল, সেটা তিনি ভাবেন না। লক্ষ্য পূরণে সামনের দিকে এগিয়ে যান। তাই তো ফেরদৌস একজন রিকশাচালক হয়েও যা সহজ করে ভাবতে ও করতে পেরেছেন, আমাদের সমাজের অনেক তথাকথিত শিক্ষিতজনেরাও তা পারেন না। ফেরদৌসকে তাই স্যালুট জানাই। অপেক্ষায় আছি তাঁর মতো স্বচ্ছ মনের মানুষে একদিন আমাদের দেশ ভরে উঠবে আর রফিকুলেরা নিপাত যাবে।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে