রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় একটি বহুল পরিচিত শব্দ হলো রসাতল। যাপিত জীবনে পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে আমরা কমবেশি সবাই শব্দটি নেতিবাচক অর্থেই ব্যবহার করেছি। সাধারণভাবে মনে হতে পারে রসাতল বোধ হয় ‘রসের অতল’, যদিও প্রকৃত অর্থ কিন্তু তা নয়।
আবার অন্যভাবে চিন্তা করলে রস কিন্তু মোটেও নিকৃষ্ট কোনো বিষয় নয়। যেমন আখ বা তালের রস, খেজুরের রস এমনকি রসগোল্লার রসও সুস্বাদু ও মজাদার। তাহলে চিন্তার বিষয়, রসাতল কেন এবং কীভাবে নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়? কিংবা রসাতল শব্দের নেতিবাচক অর্থটি বাংলা ভাষায় কীভাবে প্রবেশ করল? আজ জানব রসাতলের আদ্যোপান্ত।
রসাতল সংস্কৃত [রসা+তল] শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। এটি বিশেষ্য পদ। সংস্কৃত রসাতল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে, যথা: পুরাণে কল্পিত সপ্তম পাতাল; ভূতল; অধঃপাত বা ধ্বংস, অধোগতি প্রভৃতি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে আক্ষরিকভাবে রসাতল শব্দটি এসেছে ভারতীয় পুরাণ থেকে; অর্থাৎ ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত ত্রিভুবনের একটি অংশ হিসেবে। অপরদিকে আমাদের যাপিত জীবনে রসাতলে যাওয়া অর্থে
যা বোঝায় তা হলো, এর আলংকারিক অর্থ। রসাতলের আলংকারিক অর্থ হলো অধঃপাত, ধ্বংস, বিনাশ বা অধোগতি প্রভৃতি। সুতরাং রসাতলে যাওয়া মানে অধঃপাতের চূড়ান্ত সীমায় উপনীত হওয়া। মূলত ধ্বংস বা অধঃপতনের ব্যাপকতা বোঝাতে আমরা রসাতল শব্দটির প্রয়োগ করি।
পৌরাণিক বর্ণনায় ‘চতুদর্শ-ভুবন’ শিরোনামে একটি ভুক্তি রয়েছে। সপ্তলোক বা সপ্তস্বর্গ এবং সপ্তপাতালের সমন্বয়ে চতুর্দশ-ভুবন গঠিত। সপ্তলোক বা সপ্তস্বর্গ হচ্ছে ভূঃ, ভুবঃ, স্বঃ, জনঃ, মহঃ, তপঃ এবং সত্য। অপরদিকে সপ্তপাতালের একটি হলো রসাতল। রসাতল শব্দটি এসেছে ভারতীয় পুরাণ থেকে। ভারতীয় পুরাণে ত্রিভুবন গঠিত হয়েছে স্বর্গ, মর্ত্য এবং পাতাল নিয়ে।
পাতালের রয়েছে আবার সাতটি অধোভুবন। ক্রম অনুযায়ী এই সাতটি অধোভুবন হলো—অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, মহাতল, রসাতল ও পাতাল। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, আলংকারিক ব্যবহারে আমরা অধঃপতনের চূড়ান্ত সীমা নির্দেশ করতে রসাতল শব্দটিকে ব্যবহার করছি, যদিও পৌরাণিক বর্ণনায় আমরা ক্রম অনুসারে পাতালকে সর্বশেষ অধোভুবন হিসেবে পাই।
পাতাল যেখানে রসাতল থেকেও গভীর, সেখানে কেন রসাতলকেই অধঃপতনের চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে—এরও নিশ্চয় কোনো ব্যাখ্যা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ‘আল-বেরুনীর ভারততত্ত্ব’ গ্রন্থে সপ্তপাতালের যে বর্ণনা পাওয়া যায়, সেখানে কিন্তু রসাতলকেই সবচেয়ে গভীর ও অধোগামী হিসেবে দেখানো হয়েছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বাংলা সাহিত্যের অনেক কবি-সাহিত্যিকই তাঁদের রচনায় রসাতলে যাওয়া প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন যুগপৎ আক্ষরিক এবং আলংকারিক অর্থে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলীর ‘শিল্পে অনধিকার’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘আকাশে আলো নেই, অন্তরে তেজ নেই, আশা নেই, আনন্দ নেই, শুকনো জীবন ঝুঁকে রয়েছে রসাতলের দিকে!’ ভাষার কী অনিন্দ্য ব্যবহার! তবে আমরা যখন রসাতলে যাই বা কাউকে পাঠাই, আমরা তাকে সশরীরে পাঠিয়ে দিই না অথবা আমরাও সশরীরে রসাতলে যাই না। আমরা রসাতলে বা অধঃপতনের চূড়ান্ত সীমায় যাই ভাষার ওপর আশ্রয় করে, অর্থাৎ রূপকভাবে।
সমাজ-সংসার-দেশ থেকে শুরু করে ধরাতল পর্যন্ত রসাতলে যেতে পারে। কেননা সময় একান্তই রহস্যময়। আমরা যাপিত জীবনের নানামুখী অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার দেখে বড় দুঃখে বলি, ‘সবকিছু রসাতলে গেল’। যদিও রসাতলের মতো ষষ্ঠ গভীর পাতালে যে নিপতিত হয়, তার উদ্ধারের সম্ভাবনা স্পষ্টতই ক্ষীণ। তবুও তার প্রত্যাবর্তনের ক্ষীণ আশা রয়েছে; কেননা আত্মশুদ্ধির শেষ সুযোগটি দিতেই হয়তোবা তাকে সর্বনিম্নগামী স্তর পাতাল থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় একটি বহুল পরিচিত শব্দ হলো রসাতল। যাপিত জীবনে পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে আমরা কমবেশি সবাই শব্দটি নেতিবাচক অর্থেই ব্যবহার করেছি। সাধারণভাবে মনে হতে পারে রসাতল বোধ হয় ‘রসের অতল’, যদিও প্রকৃত অর্থ কিন্তু তা নয়।
আবার অন্যভাবে চিন্তা করলে রস কিন্তু মোটেও নিকৃষ্ট কোনো বিষয় নয়। যেমন আখ বা তালের রস, খেজুরের রস এমনকি রসগোল্লার রসও সুস্বাদু ও মজাদার। তাহলে চিন্তার বিষয়, রসাতল কেন এবং কীভাবে নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়? কিংবা রসাতল শব্দের নেতিবাচক অর্থটি বাংলা ভাষায় কীভাবে প্রবেশ করল? আজ জানব রসাতলের আদ্যোপান্ত।
রসাতল সংস্কৃত [রসা+তল] শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। এটি বিশেষ্য পদ। সংস্কৃত রসাতল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে, যথা: পুরাণে কল্পিত সপ্তম পাতাল; ভূতল; অধঃপাত বা ধ্বংস, অধোগতি প্রভৃতি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে আক্ষরিকভাবে রসাতল শব্দটি এসেছে ভারতীয় পুরাণ থেকে; অর্থাৎ ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত ত্রিভুবনের একটি অংশ হিসেবে। অপরদিকে আমাদের যাপিত জীবনে রসাতলে যাওয়া অর্থে
যা বোঝায় তা হলো, এর আলংকারিক অর্থ। রসাতলের আলংকারিক অর্থ হলো অধঃপাত, ধ্বংস, বিনাশ বা অধোগতি প্রভৃতি। সুতরাং রসাতলে যাওয়া মানে অধঃপাতের চূড়ান্ত সীমায় উপনীত হওয়া। মূলত ধ্বংস বা অধঃপতনের ব্যাপকতা বোঝাতে আমরা রসাতল শব্দটির প্রয়োগ করি।
পৌরাণিক বর্ণনায় ‘চতুদর্শ-ভুবন’ শিরোনামে একটি ভুক্তি রয়েছে। সপ্তলোক বা সপ্তস্বর্গ এবং সপ্তপাতালের সমন্বয়ে চতুর্দশ-ভুবন গঠিত। সপ্তলোক বা সপ্তস্বর্গ হচ্ছে ভূঃ, ভুবঃ, স্বঃ, জনঃ, মহঃ, তপঃ এবং সত্য। অপরদিকে সপ্তপাতালের একটি হলো রসাতল। রসাতল শব্দটি এসেছে ভারতীয় পুরাণ থেকে। ভারতীয় পুরাণে ত্রিভুবন গঠিত হয়েছে স্বর্গ, মর্ত্য এবং পাতাল নিয়ে।
পাতালের রয়েছে আবার সাতটি অধোভুবন। ক্রম অনুযায়ী এই সাতটি অধোভুবন হলো—অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, মহাতল, রসাতল ও পাতাল। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, আলংকারিক ব্যবহারে আমরা অধঃপতনের চূড়ান্ত সীমা নির্দেশ করতে রসাতল শব্দটিকে ব্যবহার করছি, যদিও পৌরাণিক বর্ণনায় আমরা ক্রম অনুসারে পাতালকে সর্বশেষ অধোভুবন হিসেবে পাই।
পাতাল যেখানে রসাতল থেকেও গভীর, সেখানে কেন রসাতলকেই অধঃপতনের চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে—এরও নিশ্চয় কোনো ব্যাখ্যা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ‘আল-বেরুনীর ভারততত্ত্ব’ গ্রন্থে সপ্তপাতালের যে বর্ণনা পাওয়া যায়, সেখানে কিন্তু রসাতলকেই সবচেয়ে গভীর ও অধোগামী হিসেবে দেখানো হয়েছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বাংলা সাহিত্যের অনেক কবি-সাহিত্যিকই তাঁদের রচনায় রসাতলে যাওয়া প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন যুগপৎ আক্ষরিক এবং আলংকারিক অর্থে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলীর ‘শিল্পে অনধিকার’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘আকাশে আলো নেই, অন্তরে তেজ নেই, আশা নেই, আনন্দ নেই, শুকনো জীবন ঝুঁকে রয়েছে রসাতলের দিকে!’ ভাষার কী অনিন্দ্য ব্যবহার! তবে আমরা যখন রসাতলে যাই বা কাউকে পাঠাই, আমরা তাকে সশরীরে পাঠিয়ে দিই না অথবা আমরাও সশরীরে রসাতলে যাই না। আমরা রসাতলে বা অধঃপতনের চূড়ান্ত সীমায় যাই ভাষার ওপর আশ্রয় করে, অর্থাৎ রূপকভাবে।
সমাজ-সংসার-দেশ থেকে শুরু করে ধরাতল পর্যন্ত রসাতলে যেতে পারে। কেননা সময় একান্তই রহস্যময়। আমরা যাপিত জীবনের নানামুখী অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার দেখে বড় দুঃখে বলি, ‘সবকিছু রসাতলে গেল’। যদিও রসাতলের মতো ষষ্ঠ গভীর পাতালে যে নিপতিত হয়, তার উদ্ধারের সম্ভাবনা স্পষ্টতই ক্ষীণ। তবুও তার প্রত্যাবর্তনের ক্ষীণ আশা রয়েছে; কেননা আত্মশুদ্ধির শেষ সুযোগটি দিতেই হয়তোবা তাকে সর্বনিম্নগামী স্তর পাতাল থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে