আবদুল্লাহ জোয়ারদার
বাংলাদেশে দুই দশক হলো মানুষের মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা চিন্তিত। কিন্তু যাঁরা এই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তাঁরা এটাকে স্বাভাবিক মনে করছেন। এ ধরনের কিছু প্রবণতা নিয়ে এই লেখা।
১. একজন সাধারণ মানুষ ৫ লাখ টাকা ঋণ নিতে গেলে অনেক ধরনের কাগজপত্র চায় ব্যাংক। একজন চাষি ৫ হাজার টাকা ঋণ নিতে চাইলে তাঁকেও অনেক ঝক্কিঝামেলায় পড়তে হয়। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু কেনার পর কোনো কারণে দু-এক কিস্তি দিতে না পারলে গরু বা ঘরের চালার টিন খুলে নিতে দেখা যায়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রায়ই সংবাদ ছাপা হয়। কিছু লোক শত শত কোটি টাকা ঋণ নিলেও তাঁদের কিছু হয় না। সমাজে তিনি সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পান। সবাই তাঁকে মান্য করেন। পাজেরো গাড়ি হাঁকান। যেমন সিলেটে এক উপজেলা চেয়ারম্যানের পাঁচ বছর আগে কোনো ঋণ না থাকলেও এখন তিনি ১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা ঋণী।
কীভাবে একজন পাঁচ বছরে এত টাকা ঋণ পেলেন? কার চেয়ে কে বেশি ঋণ নিতে পারেন, তারও প্রতিযোগিতা চলছে যেন। ফেনীর মফস্বল এলাকার এক স্বর্ণকার ব্যাংক থেকে ৮২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এমন ঘটনাও ঘটেছে যে অনেকের কোনো ঋণের দরকার নেই, তবু তাঁদের ডেকে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যাংকের পরিচিত লোকজন। কেউ কেউ নিলেও অনেকে নেননি তা পরিশোধের অক্ষমতার কারণে।
পাঁচ বছরে একজন উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সম্পদ বৃদ্ধির হার ৪,২০০ শতাংশ। আবার ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের নজরুল ইসলামের সম্পদের যে বিবরণ আজকের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, তা এলাকার মানুষকে বিস্মিত করেছে। তিনি ছিলেন অফিস সহকারী।
পরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রধান সহকারী হিসাবরক্ষক হন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে হন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাঁর সম্পদের মূল্য কয়েক কোটি টাকা। তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন! পৌর শহরে তাঁর ১৫ শতাংশ জমির ওপর বিলাসবহুল বাড়ি। শুধু ওই বাড়ির মূল্য দেড় কোটি টাকা। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়েছে ১০,৯০০ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিভাগের মালেক ড্রাইভারের সম্পদের কথা তো আমাদের জানা। এ রকম উদাহরণ ভূরি ভূরি।
২. রাজধানীবাসীর সন্তানদের ভালো স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য অভিভাবকদের মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা দেখা যায়; বিশেষ করে সন্তানদের মায়েদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা বেশি। সন্তানকে ভিকারুননিসা নূন বা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি করানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। কারণ, এসব স্কুলে ভর্তি করানো না গেলে সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখেন মা-বাবা! সব গেল গেল বলে জিগির তোলেন। তাঁদের কথা, সন্তানদের এই দুই স্কুলে অবশ্যই ভর্তি করাতে হবে। তা না হলে সমাজে ‘স্ট্যাটাস’ থাকে না। প্রতিবেশী ভাবির কাছে মুখরক্ষা হয় না। তাই অনেকে সন্তানকে ভর্তি করানোর জন্য ওই সব স্কুলের পরিচালনা কমিটির সদস্যদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করেন।
ওই সব স্কুলের শিক্ষকেরা যেসব জায়গায় কোচিং সেন্টার খুলেছেন, সেখানে কোচিং করান। থাকেন মিরপুরে, কিন্তু সন্তানকে পড়ান বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুলে। এবার বুঝুন, মিরপুর থেকে আসা-যাওয়ার জন্য কত অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয়। কিন্তু আমি এমন শিক্ষার্থীও দেখেছি, যাঁরা ‘ভালো স্কুলে’ না পড়েও বুয়েটসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। আবার এসব স্কুলে ভর্তির জন্য সন্তানের বয়স কম দেখানো হয়। মহল্লার স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়ে তারপর নতুন জন্মসনদ দিয়ে শিশুশ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। ভিকারুননিসা নূনে নকল জন্মসনদে ভর্তি নিয়ে বর্তমানে একটি মামলা
উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
৩. আমাদের মধ্যে এখন টাকায় বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যেভাবেই হোক ধনী হতে হবে। লোকলজ্জা, সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র—কোনো কিছুই তারা পরোয়া করছে না। আমার বাসায় মেঝেতে একদিন কিছুটা খেজুরের গুড় পড়েছিল। কিছুক্ষণ পর দেখি, হাজার হাজার পিঁপড়া তা খাওয়ার জন্য হাজির হয়েছে। পিঁপড়াগুলো প্রতিযোগিতা করছে, কার আগে কে কতটুকু খেতে এবং নিয়ে যেতে পারে।সমাজের একশ্রেণির লোকের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যেন দেশের সব সম্পদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই যে যতটুকু পারে লুটে নিচ্ছে। নীতিনৈতিকতার কোনো বালাই নেই তাদের। আবার রাষ্ট্রযন্ত্রও যেন তাদের পক্ষে।
৪. সিএনজিচালিত এক অটোরিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম তাঁর আয় কেমন। তিনি বললেন, ‘ভাই, আর বইলেন না। এক মহাফাঁপরে আছি।’ বললাম, ভাই, কী হয়েছে? তিনি যা বললেন, তা শুনে বিস্মিত। বললেন, ‘আগে এক সাহেবের প্রাইভেট কারের ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করতাম। বেশ ভালো ছিলাম। করোনার সময় সাহেব তাঁর গাড়িটি বিক্রি করে দেন। এরপর বেকার হয়ে গেলাম। তখন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুক্তিতে নিয়ে চালাতাম। কিন্তু তার লাইসেন্স ছিল না রাজধানীতে চলার।
রাস্তায় বের হলেই পুলিশ-সার্জেন্ট ধরত। পরে ওই এলাকার এক সার্জেন্টের সঙ্গে চুক্তি হয় এভাবে যে, মাসে ৫ হাজার টাকা দিলে ঢাকার রাস্তায় চলতে পারব। কয়েক মাস এভাবে চলল। মাঝেমধ্যে অন্য এলাকার সার্জেন্টরাও ধরত। একপর্যায়ে অটোরিকশাটি তার মালিককে দিয়ে দিই। পরে গ্রামে গিয়ে ১০ কাঠা জমি বিক্রি করে এবং সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে একটি অটোরিকশা কিনি। কিন্তু ওই এলাকার কর্তব্যরত সার্জেন্টকে এক মাস কোনো টাকা দিইনি। পরে একদিন আমাকে ধরে বললেন, “কিরে, তুই গত মাসে টাকা দিলি না কেন?”
আমি বললাম। স্যার, এটা আমার নিজের গাড়ি। আমার গাড়ির সব কাগজপত্র ঠিক আছে। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। বললেন, “বৈধ-অবৈধ বুঝি না, প্রতি মাসে আমাকে ৫ হাজার টাকা দিবি, নইলে সিএনজি চালাতে পারবি ন।” এবার বলেন ভাই, কীভাবে ঢাকায় সিএনজি চালিয়ে সংসার চালাব, আর ঋণ পরিশোধ করব?’
৫. সারা দেশে ভবনের উচ্চতা ক্রমেই বাড়ছে। আগে রাজধানীর যেসব এলাকায় পাঁচতলার বেশি করা যেত না, সেখানে এখন ১৫ তলা করা যাচ্ছে। আগে কেন করা যেত না বা এখন কেন করা যায়, তার ব্যাখ্যা পাওয়া কঠিন। বারিধারায় পাঁচতলা যেসব নতুন ভবন দেখেছি, এখন সেসব ভবন ভেঙে নতুন ডিজাইনে ঝকঝকা বহুতল ভবন করা হচ্ছে। এক ভবনের মালিক অন্য ভবনের মালিকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৈরি করছেন। জোয়ার সাহারায় আগে বিমান উড্ডয়ন এলাকা হিসেবে রাজউক এখানের অনেক ভবনের ছাদ ভেঙে দিত। এখন তা আর করা হচ্ছে না। এ ছাড়া সারা দেশে এখন কৃষিজমিতে নতুন নতুন বহুতল ভবন হচ্ছে।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পর যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন আমাদের অর্জন যেমন আছে, তেমনি ব্যর্থতাও কম নয়। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা—আমরা এখন নীতিনৈতিকতার ধার ধারছি না। সব সময় নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। সবখানে চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। যেভাবেই হোক, আমাকে টাকায় বড়লোক হতে হবে। ক্রমেই বাড়ছে আয়বৈষম্য।
গরিব আরও গরিব হচ্ছে, ধনীরা আরও ধনী। যে কল্যাণরাষ্ট্র গড়ার জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে; জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বর্তমান সমাজবাস্তবতায় ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে। এ থেকে উত্তরণের পথ কী?
বাংলাদেশে দুই দশক হলো মানুষের মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা চিন্তিত। কিন্তু যাঁরা এই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তাঁরা এটাকে স্বাভাবিক মনে করছেন। এ ধরনের কিছু প্রবণতা নিয়ে এই লেখা।
১. একজন সাধারণ মানুষ ৫ লাখ টাকা ঋণ নিতে গেলে অনেক ধরনের কাগজপত্র চায় ব্যাংক। একজন চাষি ৫ হাজার টাকা ঋণ নিতে চাইলে তাঁকেও অনেক ঝক্কিঝামেলায় পড়তে হয়। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু কেনার পর কোনো কারণে দু-এক কিস্তি দিতে না পারলে গরু বা ঘরের চালার টিন খুলে নিতে দেখা যায়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রায়ই সংবাদ ছাপা হয়। কিছু লোক শত শত কোটি টাকা ঋণ নিলেও তাঁদের কিছু হয় না। সমাজে তিনি সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পান। সবাই তাঁকে মান্য করেন। পাজেরো গাড়ি হাঁকান। যেমন সিলেটে এক উপজেলা চেয়ারম্যানের পাঁচ বছর আগে কোনো ঋণ না থাকলেও এখন তিনি ১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা ঋণী।
কীভাবে একজন পাঁচ বছরে এত টাকা ঋণ পেলেন? কার চেয়ে কে বেশি ঋণ নিতে পারেন, তারও প্রতিযোগিতা চলছে যেন। ফেনীর মফস্বল এলাকার এক স্বর্ণকার ব্যাংক থেকে ৮২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এমন ঘটনাও ঘটেছে যে অনেকের কোনো ঋণের দরকার নেই, তবু তাঁদের ডেকে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যাংকের পরিচিত লোকজন। কেউ কেউ নিলেও অনেকে নেননি তা পরিশোধের অক্ষমতার কারণে।
পাঁচ বছরে একজন উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সম্পদ বৃদ্ধির হার ৪,২০০ শতাংশ। আবার ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের নজরুল ইসলামের সম্পদের যে বিবরণ আজকের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, তা এলাকার মানুষকে বিস্মিত করেছে। তিনি ছিলেন অফিস সহকারী।
পরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রধান সহকারী হিসাবরক্ষক হন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে হন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাঁর সম্পদের মূল্য কয়েক কোটি টাকা। তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন! পৌর শহরে তাঁর ১৫ শতাংশ জমির ওপর বিলাসবহুল বাড়ি। শুধু ওই বাড়ির মূল্য দেড় কোটি টাকা। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়েছে ১০,৯০০ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিভাগের মালেক ড্রাইভারের সম্পদের কথা তো আমাদের জানা। এ রকম উদাহরণ ভূরি ভূরি।
২. রাজধানীবাসীর সন্তানদের ভালো স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য অভিভাবকদের মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা দেখা যায়; বিশেষ করে সন্তানদের মায়েদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা বেশি। সন্তানকে ভিকারুননিসা নূন বা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি করানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। কারণ, এসব স্কুলে ভর্তি করানো না গেলে সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখেন মা-বাবা! সব গেল গেল বলে জিগির তোলেন। তাঁদের কথা, সন্তানদের এই দুই স্কুলে অবশ্যই ভর্তি করাতে হবে। তা না হলে সমাজে ‘স্ট্যাটাস’ থাকে না। প্রতিবেশী ভাবির কাছে মুখরক্ষা হয় না। তাই অনেকে সন্তানকে ভর্তি করানোর জন্য ওই সব স্কুলের পরিচালনা কমিটির সদস্যদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করেন।
ওই সব স্কুলের শিক্ষকেরা যেসব জায়গায় কোচিং সেন্টার খুলেছেন, সেখানে কোচিং করান। থাকেন মিরপুরে, কিন্তু সন্তানকে পড়ান বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুলে। এবার বুঝুন, মিরপুর থেকে আসা-যাওয়ার জন্য কত অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয়। কিন্তু আমি এমন শিক্ষার্থীও দেখেছি, যাঁরা ‘ভালো স্কুলে’ না পড়েও বুয়েটসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। আবার এসব স্কুলে ভর্তির জন্য সন্তানের বয়স কম দেখানো হয়। মহল্লার স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়ে তারপর নতুন জন্মসনদ দিয়ে শিশুশ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। ভিকারুননিসা নূনে নকল জন্মসনদে ভর্তি নিয়ে বর্তমানে একটি মামলা
উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
৩. আমাদের মধ্যে এখন টাকায় বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যেভাবেই হোক ধনী হতে হবে। লোকলজ্জা, সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র—কোনো কিছুই তারা পরোয়া করছে না। আমার বাসায় মেঝেতে একদিন কিছুটা খেজুরের গুড় পড়েছিল। কিছুক্ষণ পর দেখি, হাজার হাজার পিঁপড়া তা খাওয়ার জন্য হাজির হয়েছে। পিঁপড়াগুলো প্রতিযোগিতা করছে, কার আগে কে কতটুকু খেতে এবং নিয়ে যেতে পারে।সমাজের একশ্রেণির লোকের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যেন দেশের সব সম্পদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই যে যতটুকু পারে লুটে নিচ্ছে। নীতিনৈতিকতার কোনো বালাই নেই তাদের। আবার রাষ্ট্রযন্ত্রও যেন তাদের পক্ষে।
৪. সিএনজিচালিত এক অটোরিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম তাঁর আয় কেমন। তিনি বললেন, ‘ভাই, আর বইলেন না। এক মহাফাঁপরে আছি।’ বললাম, ভাই, কী হয়েছে? তিনি যা বললেন, তা শুনে বিস্মিত। বললেন, ‘আগে এক সাহেবের প্রাইভেট কারের ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করতাম। বেশ ভালো ছিলাম। করোনার সময় সাহেব তাঁর গাড়িটি বিক্রি করে দেন। এরপর বেকার হয়ে গেলাম। তখন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুক্তিতে নিয়ে চালাতাম। কিন্তু তার লাইসেন্স ছিল না রাজধানীতে চলার।
রাস্তায় বের হলেই পুলিশ-সার্জেন্ট ধরত। পরে ওই এলাকার এক সার্জেন্টের সঙ্গে চুক্তি হয় এভাবে যে, মাসে ৫ হাজার টাকা দিলে ঢাকার রাস্তায় চলতে পারব। কয়েক মাস এভাবে চলল। মাঝেমধ্যে অন্য এলাকার সার্জেন্টরাও ধরত। একপর্যায়ে অটোরিকশাটি তার মালিককে দিয়ে দিই। পরে গ্রামে গিয়ে ১০ কাঠা জমি বিক্রি করে এবং সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে একটি অটোরিকশা কিনি। কিন্তু ওই এলাকার কর্তব্যরত সার্জেন্টকে এক মাস কোনো টাকা দিইনি। পরে একদিন আমাকে ধরে বললেন, “কিরে, তুই গত মাসে টাকা দিলি না কেন?”
আমি বললাম। স্যার, এটা আমার নিজের গাড়ি। আমার গাড়ির সব কাগজপত্র ঠিক আছে। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। বললেন, “বৈধ-অবৈধ বুঝি না, প্রতি মাসে আমাকে ৫ হাজার টাকা দিবি, নইলে সিএনজি চালাতে পারবি ন।” এবার বলেন ভাই, কীভাবে ঢাকায় সিএনজি চালিয়ে সংসার চালাব, আর ঋণ পরিশোধ করব?’
৫. সারা দেশে ভবনের উচ্চতা ক্রমেই বাড়ছে। আগে রাজধানীর যেসব এলাকায় পাঁচতলার বেশি করা যেত না, সেখানে এখন ১৫ তলা করা যাচ্ছে। আগে কেন করা যেত না বা এখন কেন করা যায়, তার ব্যাখ্যা পাওয়া কঠিন। বারিধারায় পাঁচতলা যেসব নতুন ভবন দেখেছি, এখন সেসব ভবন ভেঙে নতুন ডিজাইনে ঝকঝকা বহুতল ভবন করা হচ্ছে। এক ভবনের মালিক অন্য ভবনের মালিকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৈরি করছেন। জোয়ার সাহারায় আগে বিমান উড্ডয়ন এলাকা হিসেবে রাজউক এখানের অনেক ভবনের ছাদ ভেঙে দিত। এখন তা আর করা হচ্ছে না। এ ছাড়া সারা দেশে এখন কৃষিজমিতে নতুন নতুন বহুতল ভবন হচ্ছে।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পর যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন আমাদের অর্জন যেমন আছে, তেমনি ব্যর্থতাও কম নয়। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা—আমরা এখন নীতিনৈতিকতার ধার ধারছি না। সব সময় নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। সবখানে চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। যেভাবেই হোক, আমাকে টাকায় বড়লোক হতে হবে। ক্রমেই বাড়ছে আয়বৈষম্য।
গরিব আরও গরিব হচ্ছে, ধনীরা আরও ধনী। যে কল্যাণরাষ্ট্র গড়ার জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে; জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বর্তমান সমাজবাস্তবতায় ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে। এ থেকে উত্তরণের পথ কী?
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে