রুশা চৌধুরী
‘খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি আমার মনের ভিতরে’—এমন করে মনের ভেতরে ঘর বানাতে বাঙালির থেকে ওস্তাদ আর কোনো জাতি কি আছে? আমাদের বাঙালিদের জীবনে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টা বারবার ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়, তার নাম যদি বলতে চাই, তবে নামের আগেই আমরা যে ভাবনায় ডুবে যাব, তার নাম আমাদের ‘স্মৃতিকাতরতা’।
‘মানুষ স্মৃতিতে বাঁচে’ কথাটি আমাদের বাঙালিদের মতো আর কোন জাতির জীবনে কতটা প্রকট, তা ভাবনার বিষয় হতে পারে। হলফ করে বলতে পারব, যেকোনো বয়সের বাঙালির গল্পেই একসময় না একসময় যে কথাটি উঠে আসবে, তা ‘যায় দিন ভালো’ থেকে ‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না’তে এসেই শেষ হবে।
শেষ হবেই-বা বলি কেমন করে? ‘স্মৃতির মণিমালা’ আমাদের বাঙালির জীবনে এতটাই দামি যে যাপিত জীবনের খোল-নলচে নাড়িয়ে দিতে পারে তাদের মনের ভেতরের স্মৃতির বসতবাড়ি। মাঝবয়সী বাঙালির আড্ডায় কান পাতলে দেখা যাবে জীবনচর্চা, রূপচর্চা, পরচর্চা, ধর্মচর্চা থেকে একসময় তা ঠিক ‘অতীত চর্চায়’ এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে গল্পের প্রতিটা পাত্র-পাত্রী একবার না একবার বলে উঠবেই, ‘তুই ফেলে এসেছিস কারে মোর মন রে আমার’।
কাকে ফেলে এসেছে বা কী ফেলে এসেছে তার খবর প্রতিটা বাঙালির বড্ড গোপন কথা, যা রবিঠাকুরের ভাষায়, ‘সে আমার গোপন কথা’...‘প্রাণ চাইলেও চক্ষু তা লুকিয়েই রাখে’!
এ কারণেই হয়তো দূরগ্রাম থেকে ঢাকা শহরের ফুটপাতে এসে ওঠা ছিন্নমূল মানুষটি যেমন স্বপ্ন দেখে একদিন গ্রামে ফিরে যাবে, তেমনি বহু দূরের দেশে গিয়ে মিলিয়নিয়ার বনে যাওয়া এককালের বাঙালিটির মনের কোণেও স্বপ্নেরা জাল বুনে যায়—ছেলেমেয়েদের থিতু করে দিয়ে একদিন সে তার দেশের কোলে ফিরে যাবে! কিসের এই টান, কার জন্য এই মায়া তার গভীরে যাওয়ার চেয়ে রোমান্টিক বাঙালি ‘বেদনা মধুর হয়ে যায়’ যেমন গাইবে, তেমনি মন খারাপ চেপে রেখে, চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে গুনগুন করবে, ‘বিরহ বড় ভালো লাগে’!
আসলে এই ‘রোমান্টিসিজম’ বাঙালির মজ্জায় মিশে আছে, যেমন মিশে আছে তাদের ‘স্মৃতিকাতরতা’। ‘অভিমান’ কথাটিও তাই বাঙালিরই একচেটিয়া! এতে বিলেত-আমেরিকা-চীন-জাপান কারও কোনো ভাগ নেই। অভিমানী বাঙালি মন তাই ‘চন্দ্রে নয় জ্যোৎস্নায় সামান্য ঠাঁই’ নিয়েই সুখী থাকে। এই ‘অভিমান’, ‘অনুরাগ’, ‘বিচ্ছেদ’, ‘ভালোবাসার’ রং-রূপ-মাধুর্য—সবটাই যেন বাঙালির ‘স্মৃতিকাতরতার’ অন্য নাম।
মাইকেল থেকে রবীন্দ্রনাথ প্রত্যেকে তাই বারবার ফিরে যায় কপোতাক্ষ বা পদ্মার পাড়ে। কী আছে সেখানে? সতত নদীর ঢেউ হয়ে কোন সাগরের ডাক ডেকে নেয় তাদের! যা আছে তার ষোলো আনা যদি রূপ আর রং হয়, তবে তার সঙ্গে ‘কল্পনাপ্রবণ’ বাঙালি দুই আনা যোগ করে নিতে সাগর পাড়ি দিতেও দ্বিধা করে না।
মা, বোন, ভাই, প্রেমিক, প্রেমিকা এমনকি দেশের মাটির জন্যও বাঙালি তার জীবন বাজি ধরতে পারে। এই বাজি ধরতে পারাটাই যেন আমাদের ‘প্রাণের’ পরে চলে যাওয়া বসন্তের বাতাসের মতো কেউ’, যার কথা গুরুদেব বারবার বলে গেছেন—‘মোরে বারেবারে ফিরালে, পূজা ফুল না ফুটিল দুখনিশা না ছুটিল’...বাণীর মধ্য দিয়ে। এমন করে স্মৃতিকাতর-রোমান্টিক বাঙালি নারী বা পুরুষ ছাড়া আর কে গাইতে পারে!
এই স্মৃতিকাতরতার ঘোর আছে বলেই দেউলিয়া হতে হতেও নিঃস্ব হয়ে যায় না বাঙালি। কালিদাস যেমন যক্ষের কাছে হাত পেতেছিলেন, বাঙালিও হাত পাতে তার মনের গভীরে। কার কাছে? এই উত্তর আমার অজানা। আমি শুধু আমার এই কয়েক দশকের ঘোর লাগা জীবনে বুঝেছি—‘কেউ কখনো খুঁজে কি পায় স্বপ্নলোকের চাবি’! এই জিজ্ঞাসা যে অসীমের কাছে, সেই অসীমের মাঝেই বাঙালি মনের সীমারেখা। সেখানে সে মধুর সুরে জীবনের সুর মেলাতে চেষ্টা করে যায়। আসলে এক স্বপ্নবাজ জাতির নগণ্য অংশ আমি বারবার এক অলস মায়ায় জড়িয়ে যাই। গুরুর কথা মাথায় নয় হৃদয়ে রাখি—‘এ শুধু মনের সাধ বাতাসেতে বিসর্জন, এ শুধু আপনমনে মালা গেঁথে ছিঁড়ে ফেলা!’
যে কুহকের দেশে সাধ করে পথ হারায় বাঙালি পথিক, তাকে তার সুহৃদ আজও কোমল স্বরে ডাক দিয়ে যায়, ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ’! ‘পথ হারানো’ বাঙালি তাই ফেলে আসা পথের ধুলো শরীরে নয়, মনেও মাখতে পারে। এই ধুলো সেই ‘ভাঙা পথের’, যার প্রতিটা কণায় কণায় স্মৃতির আদর, স্মৃতির মায়া।
‘তেপান্তরের মাঠের’ সেই ‘বধূ’ আজও বসে থাকে...‘সেই পথের ধুলো গায়ে মাখে’ যেই পথ দিয়ে ‘সে’ চলে গেছিল। চিরকালের রোমান্টিক বাঙালি এই আকালেও তাই স্মৃতির কাছে ফিরে যায় বারবার...‘কে তুমি দূরের সাথী এলে ফুল ঝরার বেলায়?’ এই আকুতি সেই অরুণকান্তি যোগীর জন্য, যার বাস প্রতিটা বাঙালির হৃদয়ে।
লেখক: আবৃত্তিশিল্পী
‘খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি আমার মনের ভিতরে’—এমন করে মনের ভেতরে ঘর বানাতে বাঙালির থেকে ওস্তাদ আর কোনো জাতি কি আছে? আমাদের বাঙালিদের জীবনে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টা বারবার ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়, তার নাম যদি বলতে চাই, তবে নামের আগেই আমরা যে ভাবনায় ডুবে যাব, তার নাম আমাদের ‘স্মৃতিকাতরতা’।
‘মানুষ স্মৃতিতে বাঁচে’ কথাটি আমাদের বাঙালিদের মতো আর কোন জাতির জীবনে কতটা প্রকট, তা ভাবনার বিষয় হতে পারে। হলফ করে বলতে পারব, যেকোনো বয়সের বাঙালির গল্পেই একসময় না একসময় যে কথাটি উঠে আসবে, তা ‘যায় দিন ভালো’ থেকে ‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না’তে এসেই শেষ হবে।
শেষ হবেই-বা বলি কেমন করে? ‘স্মৃতির মণিমালা’ আমাদের বাঙালির জীবনে এতটাই দামি যে যাপিত জীবনের খোল-নলচে নাড়িয়ে দিতে পারে তাদের মনের ভেতরের স্মৃতির বসতবাড়ি। মাঝবয়সী বাঙালির আড্ডায় কান পাতলে দেখা যাবে জীবনচর্চা, রূপচর্চা, পরচর্চা, ধর্মচর্চা থেকে একসময় তা ঠিক ‘অতীত চর্চায়’ এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে গল্পের প্রতিটা পাত্র-পাত্রী একবার না একবার বলে উঠবেই, ‘তুই ফেলে এসেছিস কারে মোর মন রে আমার’।
কাকে ফেলে এসেছে বা কী ফেলে এসেছে তার খবর প্রতিটা বাঙালির বড্ড গোপন কথা, যা রবিঠাকুরের ভাষায়, ‘সে আমার গোপন কথা’...‘প্রাণ চাইলেও চক্ষু তা লুকিয়েই রাখে’!
এ কারণেই হয়তো দূরগ্রাম থেকে ঢাকা শহরের ফুটপাতে এসে ওঠা ছিন্নমূল মানুষটি যেমন স্বপ্ন দেখে একদিন গ্রামে ফিরে যাবে, তেমনি বহু দূরের দেশে গিয়ে মিলিয়নিয়ার বনে যাওয়া এককালের বাঙালিটির মনের কোণেও স্বপ্নেরা জাল বুনে যায়—ছেলেমেয়েদের থিতু করে দিয়ে একদিন সে তার দেশের কোলে ফিরে যাবে! কিসের এই টান, কার জন্য এই মায়া তার গভীরে যাওয়ার চেয়ে রোমান্টিক বাঙালি ‘বেদনা মধুর হয়ে যায়’ যেমন গাইবে, তেমনি মন খারাপ চেপে রেখে, চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে গুনগুন করবে, ‘বিরহ বড় ভালো লাগে’!
আসলে এই ‘রোমান্টিসিজম’ বাঙালির মজ্জায় মিশে আছে, যেমন মিশে আছে তাদের ‘স্মৃতিকাতরতা’। ‘অভিমান’ কথাটিও তাই বাঙালিরই একচেটিয়া! এতে বিলেত-আমেরিকা-চীন-জাপান কারও কোনো ভাগ নেই। অভিমানী বাঙালি মন তাই ‘চন্দ্রে নয় জ্যোৎস্নায় সামান্য ঠাঁই’ নিয়েই সুখী থাকে। এই ‘অভিমান’, ‘অনুরাগ’, ‘বিচ্ছেদ’, ‘ভালোবাসার’ রং-রূপ-মাধুর্য—সবটাই যেন বাঙালির ‘স্মৃতিকাতরতার’ অন্য নাম।
মাইকেল থেকে রবীন্দ্রনাথ প্রত্যেকে তাই বারবার ফিরে যায় কপোতাক্ষ বা পদ্মার পাড়ে। কী আছে সেখানে? সতত নদীর ঢেউ হয়ে কোন সাগরের ডাক ডেকে নেয় তাদের! যা আছে তার ষোলো আনা যদি রূপ আর রং হয়, তবে তার সঙ্গে ‘কল্পনাপ্রবণ’ বাঙালি দুই আনা যোগ করে নিতে সাগর পাড়ি দিতেও দ্বিধা করে না।
মা, বোন, ভাই, প্রেমিক, প্রেমিকা এমনকি দেশের মাটির জন্যও বাঙালি তার জীবন বাজি ধরতে পারে। এই বাজি ধরতে পারাটাই যেন আমাদের ‘প্রাণের’ পরে চলে যাওয়া বসন্তের বাতাসের মতো কেউ’, যার কথা গুরুদেব বারবার বলে গেছেন—‘মোরে বারেবারে ফিরালে, পূজা ফুল না ফুটিল দুখনিশা না ছুটিল’...বাণীর মধ্য দিয়ে। এমন করে স্মৃতিকাতর-রোমান্টিক বাঙালি নারী বা পুরুষ ছাড়া আর কে গাইতে পারে!
এই স্মৃতিকাতরতার ঘোর আছে বলেই দেউলিয়া হতে হতেও নিঃস্ব হয়ে যায় না বাঙালি। কালিদাস যেমন যক্ষের কাছে হাত পেতেছিলেন, বাঙালিও হাত পাতে তার মনের গভীরে। কার কাছে? এই উত্তর আমার অজানা। আমি শুধু আমার এই কয়েক দশকের ঘোর লাগা জীবনে বুঝেছি—‘কেউ কখনো খুঁজে কি পায় স্বপ্নলোকের চাবি’! এই জিজ্ঞাসা যে অসীমের কাছে, সেই অসীমের মাঝেই বাঙালি মনের সীমারেখা। সেখানে সে মধুর সুরে জীবনের সুর মেলাতে চেষ্টা করে যায়। আসলে এক স্বপ্নবাজ জাতির নগণ্য অংশ আমি বারবার এক অলস মায়ায় জড়িয়ে যাই। গুরুর কথা মাথায় নয় হৃদয়ে রাখি—‘এ শুধু মনের সাধ বাতাসেতে বিসর্জন, এ শুধু আপনমনে মালা গেঁথে ছিঁড়ে ফেলা!’
যে কুহকের দেশে সাধ করে পথ হারায় বাঙালি পথিক, তাকে তার সুহৃদ আজও কোমল স্বরে ডাক দিয়ে যায়, ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ’! ‘পথ হারানো’ বাঙালি তাই ফেলে আসা পথের ধুলো শরীরে নয়, মনেও মাখতে পারে। এই ধুলো সেই ‘ভাঙা পথের’, যার প্রতিটা কণায় কণায় স্মৃতির আদর, স্মৃতির মায়া।
‘তেপান্তরের মাঠের’ সেই ‘বধূ’ আজও বসে থাকে...‘সেই পথের ধুলো গায়ে মাখে’ যেই পথ দিয়ে ‘সে’ চলে গেছিল। চিরকালের রোমান্টিক বাঙালি এই আকালেও তাই স্মৃতির কাছে ফিরে যায় বারবার...‘কে তুমি দূরের সাথী এলে ফুল ঝরার বেলায়?’ এই আকুতি সেই অরুণকান্তি যোগীর জন্য, যার বাস প্রতিটা বাঙালির হৃদয়ে।
লেখক: আবৃত্তিশিল্পী
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে