এ কে এম শামসুদ্দিন
দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে আলাপকালে আমার এক বন্ধু বলছিলেন, ‘রাজনীতি এখন একজনকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে, জনগণকে ঘিরে নয়। তিনি যেভাবে চান, বাংলাদেশের রাজনীতি সেভাবেই চলে। রাজনীতিতে তাঁর কথাই শেষ কথা। অতএব আমাদের দেশে রাজার নীতিই রাজনীতি।’
এই নির্বাচনে সংসদের বিরোধী দল ও শরিক দলের নেতা-নেত্রীরা আসন ভাগাভাগির জন্য যেভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কৃপা পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন, তা দেখে মনে হয়েছে, নির্বাচনে জনগণের যে একটা বিশেষ ভূমিকা থাকে, তা সচেতনভাবেই অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। এই দৌড়ঝাঁপ না করে এসব দলের কোনো উপায়ও নেই। ক্ষমতার লোভ এমনই জিনিস, এর স্বাদ একবার পেলে তা সামলানো ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। তাতে যদি নিজের মানসম্মানও বিসর্জন দিতে হয়, তাতেও আপত্তি নেই। দলের আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিলীন হয়ে যেতে এসব কক্ষচ্যুত রাজনীতিবিদের বিবেকে একবিন্দুও বাধে না। সারা জীবন বাম রাজনীতি করে রাশেদ খান মেনন যখন বলেন, ‘নৌকা তো জোটের প্রতীক হয়ে উঠেছে’, তখন বাকি সবকিছুর অর্থ বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না।
এবারের নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিপাকে পড়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন সামাল দিতে যে ঝামেলা মোকাবিলা করতে হয়েছে, এবার যেন আরও বাড়তি কিছু চাপ তাদের সহ্য করতে হচ্ছে। বিগত নির্বাচনে পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো চাপ ছিল না। যতটুকুই যা ছিল তা ভারতই সামাল দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা যেভাবে ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে, তাতে সরকারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে বৈকি। তবে এবার যে অভিনব কায়দায় নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে, তা গণতন্ত্রের ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে থাকবে। বৃহৎ বিরোধী দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য যে কৌশল নেওয়া হচ্ছে, তা গণতন্ত্রের কোন ভাষায় সংজ্ঞায়িত করা যায়, তা ভাবনার বিষয়। নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী, শরিক দল, সরকারনির্ধারিত বিরোধী দল মিলেমিশে যে নির্বাচন করতে যাচ্ছে, তাকে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ছাড়া আর কী বলা যায়।
শরিক দলগুলো আগের মতো এবারও আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে নির্বাচনের বৈতরণি পার হওয়ার চেষ্টা করছে। ১৪ দলের জোট হলেও, শরিকদের ছয়টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই ছয়টি আসন আবার মাত্র তিনটি দলের মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়েছে।
রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, হাসানুল হক ইনুর জাসদ তিনটি এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপিকে একটি। শরিক দলের কেউ কেউ মেনে নিলেও অনেকেই আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। মেনে না নিলে কী হবে? এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করার সাহসও তো তাঁদের নেই। কাজেই যা পেয়েছেন, তাই নিয়েই তাঁদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কারণ তাঁরা জানেন, এ নিয়ে শোরগোল করেও কোনো লাভ নেই। আওয়ামী লীগের প্রধান যা বলবেন, তাই-ই হবে। তবে দুঃখ হয় জোটের অন্য শরিকদের জন্য। তাদের ভাগ্যের শিকেয় একটি আসনও জোটেনি। সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া তো বলেই ফেললেন, ‘জোটের তো আমরা কোনো ফ্যাক্টরই না। ফ্যাক্টর তো ওয়ার্কার্স পার্টি আর জাসদ। এদের সঙ্গে আলোচনা করলেই সব হয়ে যায়। তাঁরা তো আমাদের কথা চিন্তা করেন না।’ দিলীপ বড়ুয়ার দুঃখ আমরা বুঝি। মন্ত্রিত্বের ক্ষমতাভোগী যে কেউ এমন প্রক্রিয়া দেখাতেই পারেন। এমপি হওয়ার সাধ কার না জাগে। এতে দোষের কিছু নেই। এবার আওয়ামী লীগের দেওয়া ২৬টি আসন নিয়েই জাতীয় পার্টিকে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। এর চেয়ে কম আসন পেলেও এই দলটি যে নির্বাচনে যেত, তা বোঝাই যাচ্ছিল। এ ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর ছিল না। আসন বাড়ানো নিয়ে যা হয়েছে, তা ছিল তাদের বাড়তি কিছু আদায় করার চেষ্টা মাত্র। জাতীয় পার্টি কখনো আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দিল্লি সফরেই এ বিষয়ে ফয়সালা হয়ে গিয়েছিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন। তাঁদের ধারণা, এ জন্যই এবার জাতীয় পার্টিকে রাজি করানোর জন্য ভারতের কোনো কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরের প্রয়োজন হয়নি।
এবার ‘গ্যারান্টি ক্লোজ’ ছাড়াই আসন ভাগাভাগির সমঝোতা হয়েছে; অর্থাৎ গত দুবারের নির্বাচনের মতো শরিক দলের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ নেয়নি। তবে শরিক দলের নেতাদের এবারও পাস করিয়ে আনার আবদার আছে। হাসানুল হক ইনুর কথায় অন্তত তা-ই বোঝা যায়। তিনি অনুরোধ করে বলেছেন, যেসব আসনে নির্বাচনের জন্য তাঁরা দাঁড়াবেন, সেই সব আসন থেকে যেন আওয়ামী লীগ মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থীকে তুলে নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ তার এই আবদারে কর্ণপাত করেনি। তবে বিশ্লেষকদের অনুমান, রাজনৈতিক প্রয়োজনেই শরিক দলের হেভিওয়েট নেতাদের যে করেই হোক পাস করিয়ে আনা হবে। বাজারে এমন কথাও চালু আছে, কোন কোন প্রার্থীকে পাস করিয়ে আনতে হবে, তার একটি তালিকা ইতিমধ্যেই বিশেষ সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, একতরফা এই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আওয়ামী লীগের, স্বতন্ত্র প্রার্থীও আওয়ামী লীগের। জোট এবং অনুগত বিরোধী দল তো আছেই। অতএব কারও পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। যে কেউ জিতলেই নিজেদের জেতা হয়ে যাবে। তবে এই অদ্ভুত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট কিংবা ভোটার টানাটানি, মারামারি-হানাহানি কিংবা খুনোখুনি যা-ই হোক না কেন, তা নিজেদের মধ্যেই হবে। এর আলামত ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। অর্থবল কিংবা পেশিবল সব দিক দিয়েই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পাল্লাই ভারী। কাজেই শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী না থাকলেও, ভোটের ময়দানে স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে যাওয়ায়, নির্বাচনে যে শোরগোল হবে তা বলাই বাহুল্য। যে আসনে নিজ দলের প্রার্থী নেই, সেই আসনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামবেন—এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বক্তব্যও স্পষ্ট, ‘ছেড়ে দেওয়া আসনে যিনিই শরিক দলের প্রার্থী হোন না কেন, তিনি তো আওয়ামী লীগের লোক নন। যেহেতু দলের নেত্রী বলেছেন, দলীয় লোক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। কাজেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাজ করতে আর বাধা থাকল না। তাহলে কেন আমরা অন্য দলের প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করব?’ শুধু স্বতন্ত্র প্রার্থীই নন, নৌকার প্রার্থীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে আছেন। কারণ এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে অর্ধশতাধিক বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা রয়েছেন।
এই লেখা যখন লিখছি, তখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের একজনের মৃত্যু এবং বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এটা তো মাত্র শুরু। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে, প্রায় প্রতিদিনই আমরা এমন সহিংসতার খবর পেতে থাকব। মজার বিষয় হলো, এত দিন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নানাবিধ দুর্নীতির কথা বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে আমরা জেনেছি। নির্বাচন উপলক্ষে এখন খোদ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মুখেই একে অপরের দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের খবর জানতে পারছি। ‘হাটে হাঁড়ি ভাঙা’র মতো এসব ঘটনার কথা আমরা ভবিষ্যতেও জানতে পারব। তাতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা কতটুকু লজ্জা পাবেন জানি না। তবে তাঁদের এই কাদা-ছোড়াছুড়ি দেখে সাধারণ মানুষের ভেতর বিশেষ প্রতিক্রিয়া হবে সন্দেহ নেই।
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখাতে এবং অধিকসংখ্যক ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটে দাঁড়া করানোর এই কৌশল নির্বাচনের মাঠকে গরম করে তুলেছে সন্দেহ নেই। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভোটে না এলেও বিরোধী জোটের আরও অনেক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করেছিল ক্ষমতাসীন দল। এ ছাড়া বিএনপির অনেক নেতাকেই দল থেকে ভাগিয়ে ভোটে অংশগ্রহণ করানোর চেষ্টাও ফলপ্রসূ হয়নি। যে কারণে এবারের নির্বাচন অনেকটাই আকর্ষণ হারিয়েছে। সরকারের চেষ্টা থাকবে নির্বাচনে অন্তত ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি দেখানো, যাতে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলা যায়। তবে যে কৌশলই নেওয়া হোক না কেন, প্রধান বিরোধী দল ছাড়া আসন্ন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে, বলা যাবে না। এ কথা সবারই জানা, জাতীয় নির্বাচনে দেশের প্রধান দুই দল—আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যেকোনো একটি দলের অবর্তমানে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। অতএব ২০২৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচন, দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তা এখন থেকেই অনুমান করা যায়।
এ কে এম শামসুদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, কলাম লেখক
দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে আলাপকালে আমার এক বন্ধু বলছিলেন, ‘রাজনীতি এখন একজনকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে, জনগণকে ঘিরে নয়। তিনি যেভাবে চান, বাংলাদেশের রাজনীতি সেভাবেই চলে। রাজনীতিতে তাঁর কথাই শেষ কথা। অতএব আমাদের দেশে রাজার নীতিই রাজনীতি।’
এই নির্বাচনে সংসদের বিরোধী দল ও শরিক দলের নেতা-নেত্রীরা আসন ভাগাভাগির জন্য যেভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কৃপা পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন, তা দেখে মনে হয়েছে, নির্বাচনে জনগণের যে একটা বিশেষ ভূমিকা থাকে, তা সচেতনভাবেই অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। এই দৌড়ঝাঁপ না করে এসব দলের কোনো উপায়ও নেই। ক্ষমতার লোভ এমনই জিনিস, এর স্বাদ একবার পেলে তা সামলানো ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। তাতে যদি নিজের মানসম্মানও বিসর্জন দিতে হয়, তাতেও আপত্তি নেই। দলের আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিলীন হয়ে যেতে এসব কক্ষচ্যুত রাজনীতিবিদের বিবেকে একবিন্দুও বাধে না। সারা জীবন বাম রাজনীতি করে রাশেদ খান মেনন যখন বলেন, ‘নৌকা তো জোটের প্রতীক হয়ে উঠেছে’, তখন বাকি সবকিছুর অর্থ বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না।
এবারের নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিপাকে পড়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন সামাল দিতে যে ঝামেলা মোকাবিলা করতে হয়েছে, এবার যেন আরও বাড়তি কিছু চাপ তাদের সহ্য করতে হচ্ছে। বিগত নির্বাচনে পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো চাপ ছিল না। যতটুকুই যা ছিল তা ভারতই সামাল দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা যেভাবে ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে, তাতে সরকারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে বৈকি। তবে এবার যে অভিনব কায়দায় নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে, তা গণতন্ত্রের ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে থাকবে। বৃহৎ বিরোধী দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য যে কৌশল নেওয়া হচ্ছে, তা গণতন্ত্রের কোন ভাষায় সংজ্ঞায়িত করা যায়, তা ভাবনার বিষয়। নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী, শরিক দল, সরকারনির্ধারিত বিরোধী দল মিলেমিশে যে নির্বাচন করতে যাচ্ছে, তাকে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ছাড়া আর কী বলা যায়।
শরিক দলগুলো আগের মতো এবারও আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে নির্বাচনের বৈতরণি পার হওয়ার চেষ্টা করছে। ১৪ দলের জোট হলেও, শরিকদের ছয়টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই ছয়টি আসন আবার মাত্র তিনটি দলের মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়েছে।
রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, হাসানুল হক ইনুর জাসদ তিনটি এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপিকে একটি। শরিক দলের কেউ কেউ মেনে নিলেও অনেকেই আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। মেনে না নিলে কী হবে? এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করার সাহসও তো তাঁদের নেই। কাজেই যা পেয়েছেন, তাই নিয়েই তাঁদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কারণ তাঁরা জানেন, এ নিয়ে শোরগোল করেও কোনো লাভ নেই। আওয়ামী লীগের প্রধান যা বলবেন, তাই-ই হবে। তবে দুঃখ হয় জোটের অন্য শরিকদের জন্য। তাদের ভাগ্যের শিকেয় একটি আসনও জোটেনি। সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া তো বলেই ফেললেন, ‘জোটের তো আমরা কোনো ফ্যাক্টরই না। ফ্যাক্টর তো ওয়ার্কার্স পার্টি আর জাসদ। এদের সঙ্গে আলোচনা করলেই সব হয়ে যায়। তাঁরা তো আমাদের কথা চিন্তা করেন না।’ দিলীপ বড়ুয়ার দুঃখ আমরা বুঝি। মন্ত্রিত্বের ক্ষমতাভোগী যে কেউ এমন প্রক্রিয়া দেখাতেই পারেন। এমপি হওয়ার সাধ কার না জাগে। এতে দোষের কিছু নেই। এবার আওয়ামী লীগের দেওয়া ২৬টি আসন নিয়েই জাতীয় পার্টিকে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। এর চেয়ে কম আসন পেলেও এই দলটি যে নির্বাচনে যেত, তা বোঝাই যাচ্ছিল। এ ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর ছিল না। আসন বাড়ানো নিয়ে যা হয়েছে, তা ছিল তাদের বাড়তি কিছু আদায় করার চেষ্টা মাত্র। জাতীয় পার্টি কখনো আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দিল্লি সফরেই এ বিষয়ে ফয়সালা হয়ে গিয়েছিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন। তাঁদের ধারণা, এ জন্যই এবার জাতীয় পার্টিকে রাজি করানোর জন্য ভারতের কোনো কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরের প্রয়োজন হয়নি।
এবার ‘গ্যারান্টি ক্লোজ’ ছাড়াই আসন ভাগাভাগির সমঝোতা হয়েছে; অর্থাৎ গত দুবারের নির্বাচনের মতো শরিক দলের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ নেয়নি। তবে শরিক দলের নেতাদের এবারও পাস করিয়ে আনার আবদার আছে। হাসানুল হক ইনুর কথায় অন্তত তা-ই বোঝা যায়। তিনি অনুরোধ করে বলেছেন, যেসব আসনে নির্বাচনের জন্য তাঁরা দাঁড়াবেন, সেই সব আসন থেকে যেন আওয়ামী লীগ মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থীকে তুলে নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ তার এই আবদারে কর্ণপাত করেনি। তবে বিশ্লেষকদের অনুমান, রাজনৈতিক প্রয়োজনেই শরিক দলের হেভিওয়েট নেতাদের যে করেই হোক পাস করিয়ে আনা হবে। বাজারে এমন কথাও চালু আছে, কোন কোন প্রার্থীকে পাস করিয়ে আনতে হবে, তার একটি তালিকা ইতিমধ্যেই বিশেষ সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, একতরফা এই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আওয়ামী লীগের, স্বতন্ত্র প্রার্থীও আওয়ামী লীগের। জোট এবং অনুগত বিরোধী দল তো আছেই। অতএব কারও পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। যে কেউ জিতলেই নিজেদের জেতা হয়ে যাবে। তবে এই অদ্ভুত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট কিংবা ভোটার টানাটানি, মারামারি-হানাহানি কিংবা খুনোখুনি যা-ই হোক না কেন, তা নিজেদের মধ্যেই হবে। এর আলামত ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। অর্থবল কিংবা পেশিবল সব দিক দিয়েই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পাল্লাই ভারী। কাজেই শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী না থাকলেও, ভোটের ময়দানে স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে যাওয়ায়, নির্বাচনে যে শোরগোল হবে তা বলাই বাহুল্য। যে আসনে নিজ দলের প্রার্থী নেই, সেই আসনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামবেন—এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বক্তব্যও স্পষ্ট, ‘ছেড়ে দেওয়া আসনে যিনিই শরিক দলের প্রার্থী হোন না কেন, তিনি তো আওয়ামী লীগের লোক নন। যেহেতু দলের নেত্রী বলেছেন, দলীয় লোক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। কাজেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাজ করতে আর বাধা থাকল না। তাহলে কেন আমরা অন্য দলের প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করব?’ শুধু স্বতন্ত্র প্রার্থীই নন, নৌকার প্রার্থীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে আছেন। কারণ এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে অর্ধশতাধিক বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা রয়েছেন।
এই লেখা যখন লিখছি, তখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের একজনের মৃত্যু এবং বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এটা তো মাত্র শুরু। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে, প্রায় প্রতিদিনই আমরা এমন সহিংসতার খবর পেতে থাকব। মজার বিষয় হলো, এত দিন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নানাবিধ দুর্নীতির কথা বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে আমরা জেনেছি। নির্বাচন উপলক্ষে এখন খোদ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মুখেই একে অপরের দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের খবর জানতে পারছি। ‘হাটে হাঁড়ি ভাঙা’র মতো এসব ঘটনার কথা আমরা ভবিষ্যতেও জানতে পারব। তাতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা কতটুকু লজ্জা পাবেন জানি না। তবে তাঁদের এই কাদা-ছোড়াছুড়ি দেখে সাধারণ মানুষের ভেতর বিশেষ প্রতিক্রিয়া হবে সন্দেহ নেই।
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখাতে এবং অধিকসংখ্যক ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটে দাঁড়া করানোর এই কৌশল নির্বাচনের মাঠকে গরম করে তুলেছে সন্দেহ নেই। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভোটে না এলেও বিরোধী জোটের আরও অনেক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করেছিল ক্ষমতাসীন দল। এ ছাড়া বিএনপির অনেক নেতাকেই দল থেকে ভাগিয়ে ভোটে অংশগ্রহণ করানোর চেষ্টাও ফলপ্রসূ হয়নি। যে কারণে এবারের নির্বাচন অনেকটাই আকর্ষণ হারিয়েছে। সরকারের চেষ্টা থাকবে নির্বাচনে অন্তত ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি দেখানো, যাতে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলা যায়। তবে যে কৌশলই নেওয়া হোক না কেন, প্রধান বিরোধী দল ছাড়া আসন্ন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে, বলা যাবে না। এ কথা সবারই জানা, জাতীয় নির্বাচনে দেশের প্রধান দুই দল—আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যেকোনো একটি দলের অবর্তমানে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। অতএব ২০২৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচন, দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তা এখন থেকেই অনুমান করা যায়।
এ কে এম শামসুদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, কলাম লেখক
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
২ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৬ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে