জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ যে চুক্তিটি করেছিলেন তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন, তাতে কি কোনো দুরভিসন্ধি লুকিয়ে ছিল? পরবর্তীকালের ঘটনাপ্রবাহ কিন্তু সে ইঙ্গিতই দেয়। কারণ এর কয়েক দিন পরই পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসেছিলেন।
জিন্নাহর ঢাকা সফর যেন নির্বিঘ্ন হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্যই নাজিমুদ্দিন সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে তড়িঘড়ি চুক্তি করেছিলেন বলেই মনে হয়। ১৬ মার্চ দৈনিক আজাদে প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ছিল: ‘বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি স্বীকৃত/ চার দিনব্যাপী আন্দোলনের ফলে ভাষা সংকটের সমাধান/ পূর্ববঙ্গ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী জনাব নাজিমুদ্দীনের ঘোষণা: বাংলা প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষা হইবে/ তিনটি সংবাদপত্রের উপর হইতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার/ ধৃত ছাত্রগণকে মুক্তিদান/ পরিষদে মহাত্মা গান্ধীর হত্যায় শোক প্রস্তাব গ্রহণ।’ আজাদের শিরোনামে অনেক কথাই ছিল। কিন্তু শুরুতেই ‘বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি স্বীকৃত’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
১১ মার্চের পুলিশি নির্যাতন, ছাত্র গ্রেপ্তার ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নঈমুদ্দিন আহমদ একটি বিবৃতি দেন ১২ মার্চ। তিনি ১১ মার্চের ধর্মঘটের সময় ছাত্রদের ওপর সরকারি নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন। ১২ মার্চ জগন্নাথ কলেজে ছাত্রসভা শুরু হলে সেখানে আক্রমণ করে বহিরাগতরা। কমিউনিস্ট সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়।
১৩ মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্মঘট পালন করতে শুরু করেন। একই কর্মসূচি নেওয়া হয় চট্টগ্রাম, খুলনাসহ ঢাকার বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও।
পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক সভার সদস্য বগুড়ার মোহাম্মদ আলী ও খাজা নাজিমুদ্দিনের প্রাইভেট সেক্রেটারি খাজা নসরুল্লাহ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা কামরুদ্দীন আহমদের বাড়িতে যান ১৫ মার্চ সকালে। তাঁরা জানান, বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে সংগ্রাম পরিষদের এক জরুরি সভায় খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আলোচনার একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছিলেন কামরুদ্দীন আহমদ। সেদিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন কামরুদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আবুল কাশেম, নঈমুদ্দীন আহমদ, আবদুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ। বর্ধমান হাউসে সেই সভায় তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। সংগ্রাম পরিষদ চুক্তির যে খসড়া নিয়ে গিয়েছিল, তার কিছু মেনে নেন প্রধানমন্ত্রী, কিছু মানতে অস্বীকার করেন। কিন্তু সংগ্রাম পরিষদ তাদের দাবিতে অনড় থাকায় শেষ পর্যন্ত সব দাবিই মেনে নেওয়া হয়।
পরে চুক্তিপত্রে সই করেন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ও কামরুদ্দীন আহমদ। তাতে ছিল:
১. ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলা ভাষার প্রশ্নে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
২. পুলিশি অত্যাচারের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে বিবৃতি দেবেন।
৩. ১৯৪৮ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক সভায় বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ও পাকিস্তান গণপরিষদে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পরীক্ষা দিতে উর্দুর সমমর্যাদা দানের জন্য একটি বিশেষ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।
৪. ব্যবস্থাপক সভায় এপ্রিল মাসে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে যে প্রদেশের সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজি উঠে যাওয়ার পর বাংলা তার স্থলে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হবে।
৫. আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
৬. সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
৭. ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে যেসব এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল, সেসব এলাকা থেকে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
৮. স্বীকার করতে হবে, এই আন্দোলন রাষ্ট্রের দুশমনদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়নি। এরপর যা ঘটল, সে আলোচনা খুবই কৌতূহলোদ্দীপক।
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ যে চুক্তিটি করেছিলেন তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন, তাতে কি কোনো দুরভিসন্ধি লুকিয়ে ছিল? পরবর্তীকালের ঘটনাপ্রবাহ কিন্তু সে ইঙ্গিতই দেয়। কারণ এর কয়েক দিন পরই পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসেছিলেন।
জিন্নাহর ঢাকা সফর যেন নির্বিঘ্ন হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্যই নাজিমুদ্দিন সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে তড়িঘড়ি চুক্তি করেছিলেন বলেই মনে হয়। ১৬ মার্চ দৈনিক আজাদে প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ছিল: ‘বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি স্বীকৃত/ চার দিনব্যাপী আন্দোলনের ফলে ভাষা সংকটের সমাধান/ পূর্ববঙ্গ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী জনাব নাজিমুদ্দীনের ঘোষণা: বাংলা প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষা হইবে/ তিনটি সংবাদপত্রের উপর হইতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার/ ধৃত ছাত্রগণকে মুক্তিদান/ পরিষদে মহাত্মা গান্ধীর হত্যায় শোক প্রস্তাব গ্রহণ।’ আজাদের শিরোনামে অনেক কথাই ছিল। কিন্তু শুরুতেই ‘বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি স্বীকৃত’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
১১ মার্চের পুলিশি নির্যাতন, ছাত্র গ্রেপ্তার ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নঈমুদ্দিন আহমদ একটি বিবৃতি দেন ১২ মার্চ। তিনি ১১ মার্চের ধর্মঘটের সময় ছাত্রদের ওপর সরকারি নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন। ১২ মার্চ জগন্নাথ কলেজে ছাত্রসভা শুরু হলে সেখানে আক্রমণ করে বহিরাগতরা। কমিউনিস্ট সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়।
১৩ মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্মঘট পালন করতে শুরু করেন। একই কর্মসূচি নেওয়া হয় চট্টগ্রাম, খুলনাসহ ঢাকার বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও।
পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক সভার সদস্য বগুড়ার মোহাম্মদ আলী ও খাজা নাজিমুদ্দিনের প্রাইভেট সেক্রেটারি খাজা নসরুল্লাহ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা কামরুদ্দীন আহমদের বাড়িতে যান ১৫ মার্চ সকালে। তাঁরা জানান, বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে সংগ্রাম পরিষদের এক জরুরি সভায় খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আলোচনার একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছিলেন কামরুদ্দীন আহমদ। সেদিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন কামরুদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আবুল কাশেম, নঈমুদ্দীন আহমদ, আবদুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ। বর্ধমান হাউসে সেই সভায় তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। সংগ্রাম পরিষদ চুক্তির যে খসড়া নিয়ে গিয়েছিল, তার কিছু মেনে নেন প্রধানমন্ত্রী, কিছু মানতে অস্বীকার করেন। কিন্তু সংগ্রাম পরিষদ তাদের দাবিতে অনড় থাকায় শেষ পর্যন্ত সব দাবিই মেনে নেওয়া হয়।
পরে চুক্তিপত্রে সই করেন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ও কামরুদ্দীন আহমদ। তাতে ছিল:
১. ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলা ভাষার প্রশ্নে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
২. পুলিশি অত্যাচারের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে বিবৃতি দেবেন।
৩. ১৯৪৮ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক সভায় বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ও পাকিস্তান গণপরিষদে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পরীক্ষা দিতে উর্দুর সমমর্যাদা দানের জন্য একটি বিশেষ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।
৪. ব্যবস্থাপক সভায় এপ্রিল মাসে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে যে প্রদেশের সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজি উঠে যাওয়ার পর বাংলা তার স্থলে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হবে।
৫. আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
৬. সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
৭. ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে যেসব এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল, সেসব এলাকা থেকে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
৮. স্বীকার করতে হবে, এই আন্দোলন রাষ্ট্রের দুশমনদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়নি। এরপর যা ঘটল, সে আলোচনা খুবই কৌতূহলোদ্দীপক।
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে