বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) প্রত্যেকবারই সুশৃঙ্খল দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবারও তা-ই হলো। সেরা দুই দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও সিলেট স্ট্রাইকার্স ফাইনাল খেলেছে। আর সিলেটকে হারিয়ে বিপিএলের চতুর্থ ট্রফি জিতল কুমিল্লা। শুধু কুমিল্লাই নয়, এই চারটি শিরোপা জিতেছেন দলটির কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও। কুমিল্লা যতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, ততবারই দলের কান্ডারি ছিলেন তর্ক সাপেক্ষে দেশসেরা এই কোচ।

শিরোপা জয়ে কেবল খেলোয়াড়দের ভূমিকাই মুখ্য নয়। তাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে শিরোপার পথে চালিত করার নেপথ্যের নায়কও কোচ। বিপিএলে কুমিল্লার সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের নায়কও এ ‘জাদুকর’ কোচ সালাউদ্দিনই! অলৌকিক কিছু না থাকলেও নিজের বুদ্ধিমত্তা আর শিষ্যদের কৌশল শিখিয়ে জয় আর বারবার ট্রফি ছিনিয়ে যিনি আনতে পারেন, তাঁর সঙ্গে ‘জাদুকর’ শব্দই মানায়।

গতকাল ফাইনালে শেষ চার ওভারে কুমিল্লার প্রয়োজন ছিল ৫২ রান। ২৪ বলে এ রান তোলা খুব সহজ হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু এ রান হেসেখেলেই যেন তুলে নিলেন মইন আলি ও জনসন চার্লসরা। অথচ এর আগের ওভারেও রান তুলতে সংগ্রাম করছিলেন তাঁরা। এখানেও ছিল কোচ সালাউদ্দিনের ক্ষুরধার মস্তিষ্কের খেলা। মূলত, ১৬ ওভার শেষে আড়াই মিনিটের বিরতি দেওয়া হয়। ফাইনালেও একই রকম। কিন্তু ওই সময়ে মইন আর চার্লসকে সালাউদ্দিন এটাই বার্তা দিয়েছেন সিলেটের পরবর্তী ওভার কারা করতে পারেন এবং তাঁদের কীভাবে খেলা উচিত।

বিরতির পর ১৭তম ওভার করতে আসেন আগের তিন ওভারে মাত্র ১৬ রান ও ২ উইকেট নেওয়া রুবেল হোসেন। কিন্তু রুবেলের ওই ওভারে ২৩ রান তুলে ম্যাচ নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেয় কুমিল্লা। আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারাইন, চার্লস ও মঈনদের মতো বড় বড় টি-টোয়েন্টি ফেরিওয়ালাদের থেকে সেরাটাও বের করে আনাও চাট্টিখানি কথা নয়। তবে সালাউদ্দিন তা অবলীলায় করে দেখিয়ে চলছেন বারবার।

প্রথমবার বিপিএলের কোনো দলের কোচ হয়ে দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছেন রাজিন সালেহও। সিলেট তাঁর অধীনে খেলেই ফাইনালে উঠেছে। কোচ সালাউদ্দিন অবশ্য নিজেকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত নন। ফাইনালের আগেই বলেছেন, ‘মাঠে খেলোয়াড়রা ভালো খেললে কাজটা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু আগে এই টুর্নামেন্টে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে, এটা সহযোগিতা করবে। তবে হারলে বিভিন্ন কথা না বলে, সংশোধন করে দেওয়াই ভালো। টুর্নামেন্টের আগে আমাদের একটাই পরিকল্পনা থাকে— চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সেভাবেই এগোই, আল্লাহ বাকিটা করে দেন।’

জয়েরও একটা শেষ আছে, সেটাই ফাইনালের আগে বলেছিলেন। তবে তিনি হারেননি, দেখিয়েছেন ম্যাজিক।

২০১৫ সালে বিপিএলে অভিষেক হয় কুমিল্লার। সূচনালগ্ন থেকে দলটির কোচের দায়িত্বে আছেন তিনি। ২০১৫ বিপিএলে বরিশাল বুলসকে হারিয়ে প্রথম বিপিএল ট্রফি জেতে কুমিল্লা। ২০১৮-তে ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারিয়ে দ্বিতীয়, ২০২২-এ ফরচুন বরিশালকে হারিয়ে তৃতীয় এবার সিলেটে হারিয়ে চতুর্থ শিরোপা জিতল কুমিল্লা। প্রত্যেকটি শিরোপা এসেছে সালাউদ্দিনের প্রশিক্ষণ আর কৌশলে।

কোচ সালাউদ্দিনের সঙ্গে কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েসেরও হলো চারটি ট্রফি। সবগুলোই কুমিল্লার হয়ে। বিপিএলে অনেক প্রমাণিত কোচই বিভিন্ন দলকে কোচিং করিয়েছেন। তবে এই টুর্নামেন্টের ডাগআউটে সালাউদ্দিনের শ্রেষ্ঠত্ব বলাই যায়।