বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠে কাজ করার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে গিয়ে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) এক কর্মী মারা গেছেন। তাঁর নাম রেজাউল ইসলাম। এ ঘটনায় দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

অভিযোগ উঠেছে, ৩৩ কেভি লাইন বন্ধ ছিল বলে জানানো হলেও, সেটি বন্ধ ছিল না। রেজাউল ওপরে উঠে লাইনে আটকে থাকা অতিরিক্ত তারটি ধরলেই বিদ্যুতায়িত হয়ে ২০ ফুট ওপর থেকে পড়ে যান।

সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার সকালে মারা যান রেজাউল ইসলাম (৩৮)। তিনি হেলপার পদে চাকরি করতেন। আগের দিন রোববার দুপুরে শহরের পাঠানপাড়া এলাকায় নেসকোর একটি সিটি সাবস্টেশনের পাশের একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে কাজ করার সময় তিনি বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে যান। ঘটনার পর তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

ভর্তির কিছুক্ষণ পর একটি আইসিইউ সুবিধাসম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সিরাজগঞ্জে যাওয়ার পর রেজাউলের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়। তখন তাঁকে খাজা ইউনুস আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন সকাল ১০টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। রেজাউল শহরের চন্দ্রিমা থানার মুসরইল এলাকার বাসিন্দা।

রেজাউলের মৃত্যুর ঘটনায় নেসকোর সাধারণ কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন, রেজাউল ১১ কেভি বিদ্যুৎ লাইনে কাজ করতে বাঁশের মইয়ে করে উঠেছিলেন। কাজ শেষ করে তিনি নিচে নেমে আসছিলেন। তখন তাঁকে আরও ওপরের ৩৩ কেভি লাইনে আটকে থাকা একটি তার সরিয়ে ফেলার জন্য বলা হয়। রেজাউল ওপর থেকেই জানতে চান, ৩৩ কেভি লাইন বন্ধ আছে কি না। নিচ থেকে জানানো হয়, লাইন বন্ধ।

এদিকে গতকাল সোমবার রেজাউলের মৃত্যুর খবর এলে নেসকোর সাধারণ কর্মীরা নগরীর রেলগেট এলাকায় নেসকো কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। তাঁদের শান্ত রাখতে তাৎক্ষণিকভাবে সহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক ও সাবস্টেশন সহকারী ফুয়াদ মজুমদারকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়। তবে নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী অনিত কুমার রায় ঘটনার সময় উপস্থিত থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অনিত কুমার রায় বলেন, ‘ভুল থেকেই তো দুর্ঘটনা ঘটে। এটাও একটা ভুল হয়েছে।’ নেসকো শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সোহেল বলেন, ‘অবহেলায় এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।’

নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নেসকোর রাজশাহী বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশিদ বলেন, একটা ফিডারের দায়িত্ব থাকে সহকারী প্রকৌশলী। তাই প্রাথমিকভাবে তাঁকেসহ দুজনকে প্রশাসন বিভাগ সাময়িক বরখাস্ত করেছে। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসবে। যদি নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পায় তাহলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।