হাসান মামুন
ভালো হতো কখনোই দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী হলে। সেটা তো আর হয়নি। হয়নি বলেই একটা পর্যায়ে এসে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে এমনকি সংবিধানের বাইরে গিয়ে পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোকে।
একটা ঐতিহাসিক সমঝোতার আওতায় সেটি ঘটানো হয়। পরে আবারও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বানচাল হচ্ছে দেখে আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং তার চাপে একটি নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেওয়া হয় খোদ সংবিধানে। এভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটা নির্ভরযোগ্য বন্দোবস্ত আমরা পাই।
এর আওতায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরও ঘটে ২০০১ সালে। তবে সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকার পুনরায় নির্বাচনের নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থাটি নিজেদের পক্ষে ব্যবহারে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাতে আবারও দানা বেঁধে ওঠে আন্দোলন এবং এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে আমরা আবার ফিরে আসি নির্বাচিত সরকারের আমলে।
এই প্রেক্ষাপটেই নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করে এটিকে ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যাঁরা এ সংস্কারে নিয়োজিত ছিলেন, তাঁরা অবশ্য ভাবতেই পারেননি—সরকারের উচ্চপর্যায়ের ইচ্ছায় ব্যবস্থাটি বাতিল হয়ে যাবে। ভালো হতো এটি একেবারে বাতিল না হয়ে সংস্কারের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হয়ে জাতিকে সেবা জুগিয়ে যেতে পারলে।
তা হয়নি বলেই আবারও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নামের নাজুক পরিস্থিতিতে আমরা গিয়ে পড়েছি। এর ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। বিগত দুটি নির্বাচনের একটিও জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এ প্রেক্ষাপটেই সরকারের পক্ষ থেকে অঙ্গীকার করে বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু যাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা, সেই মাঠের বিরোধী দলের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে না। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন বর্জন করলেও পরেরটিতে তারা অংশ নিয়েছিল এবং ‘ঠকেছিল’ বলে মনে করে।
বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা তো তাদের রয়েছে আর রয়েছে বলেই দ্বিতীয়বার এর ভেতর দিয়ে যেতে চাইছে না। তারা বলছে, নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থাটি বাতিল করা হয়েছিল মেয়াদের পর মেয়াদ দেশ পরিচালনা করা বিএনপিকে একটি স্থায়ী বিরোধী দলে পরিণত করে প্রান্তিক বানানোর জন্যই। তাই তারা চাইছে আগেকার মতো একটি গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থাপনায় নির্বাচনে যেতে। এমন একটি দাবি আদায়ে আন্দোলনের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করে তারা অবশ্য আজও সফল হতে পারেনি। এর আগে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে সহিংস আন্দোলন গড়ে তুলেও সফল হয়নি তারা।
এখন অবশ্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই আছে এবং বলছে, এ ধরনের আন্দোলনের মাধ্যমেই তারা দাবি আদায় করবে। লক্ষ করার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তার মিত্র প্রভাবশালী দেশগুলোও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার বিষয়ে সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এর আগের দুটি নির্বাচনে তেমন আগ্রহ না দেখালেও তারা কিন্তু অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনটিতে অতুলনীয় আগ্রহ দেখাচ্ছে; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের বেশ কয়েক মাস আগেই বাংলাদেশের জন্য নিয়েছে ভিসা নীতি এবং তাতে বলা হচ্ছে, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া’য় বাধাদানকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হবে।
এর বেশ কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে এলিট ফোর্স র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বলতে গেলে তখন থেকেই সরকারের ওপর আনুষ্ঠানিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। নির্বাচনের মাস তিনেক আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আবার জানানো হলো, তারা ভিসা নীতির প্রয়োগও শুরু করেছে।
সরকারের এমন একটা প্রত্যাশা বোধ হয় ছিল যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে এটা প্রয়োগ করা হবে না। বাস্তবে সেটাই ঘটেছে দেখে এখন মনে করা হচ্ছে, ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচনের ‘তথ্য-উপাত্ত’ কাজে লাগিয়েই হয়তো নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করেছে দেশটি।
এ ক্ষেত্রে অনেকটা নজিরবিহীনভাবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ও সংবাদমাধ্যমকে এর আওতায় আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে এটা পরিষ্কার, তারা বাংলাদেশের নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকায় সন্দিহান। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) একই ধারায় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বললে ভুল হবে না। তাদের একটি প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী দল দীর্ঘদিন এখানে অবস্থান করে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ফিরে গিয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ। তহবিলের সংকট হয়তো কিছুটা রয়েছে; তবে আসল সংকট দেখা দিয়েছে আস্থায়। বাংলাদেশে পর্যবেক্ষণ করার মতো কোনো নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে তারা মনে করতে পারছে না।
এরই মধ্যে ইইউ পার্লামেন্ট থেকে আমাদের মানবাধিকার, নির্বাচন ও গণতন্ত্র বিষয়ে যে বিবৃতি এসেছে এবং এর সঙ্গে যেভাবে বাংলাদেশের জিএসপি-সুবিধা অব্যাহত রাখা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেটা বাড়তি দুশ্চিন্তার বিষয়। ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের’ পরও আমাদের ওই বাজারে জিএসপি পাওয়ার কথা। এ অধ্যায় শেষে জিএসপি-প্লাস সুবিধা পাব কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। ইইউ আমাদের মূল রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক পণ্যের প্রধান বাজার এবং সেখানে আমরা অবশ্যই বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে চাই না।
সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের নতুন জিএসপি-সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ারও প্রস্তাব রেখেছি। যুক্তরাষ্ট্রে এখন অন্যদের মতো ১৫ শতাংশের বেশি কর-শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করতে হয়। এটা কিছুটা কমিয়ে আনা গেলেও ওই বাজারে রপ্তানি আমরা বাড়াতে পারব।
সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মতো বড় আমদানিকারক দেশে আমাদের রপ্তানি কমে যাওয়ার খবর মিলছে।
এটা আরও উদ্বেগজনক এ জন্য যে, আমরা এই মুহূর্তে ফরেন রিজার্ভের সংকটে আছি। এ অবস্থায় আমদানি কঠিন হয়ে মূল্যস্ফীতি সামলানোর জায়গাটাও খুব জটিল হয়ে পড়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে দিয়ে এটি সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জও বটে। এ অবস্থায় আবার ভিসা নীতির প্রয়োগ শুরু হয়ে যাওয়ায় সেটা কেবল নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের মধ্যে নয়, এমনকি ব্যবসায়ী মহলে অস্থিরতা ছড়িয়ে দেবে। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একাংশ তো এরই মধ্যে অতি উৎসাহী হয়ে বর্তমান সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার ব্যাপারে সমর্থন ঘোষণা করে স্লোগান দিয়েছিল। তাঁদের অনেককে আবার সরকারের মদদপুষ্ট ‘অলিগার্ক’ বলে মনে করা হয়। এমন প্রচারও আছে, ক্ষমতাসীন দলের নামে কিছুসংখ্যক আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের একটি চক্র দেশ চালাচ্ছে এবং এটিই তীব্র হয়ে ওঠা রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক সংকটের মূল কারণ।
এ অবস্থায় এমনটিও বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের দুর্নীতি ও অর্থ পাচার ইস্যুতে কিছু শীর্ষ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ‘ম্যাগনেটস্কি অ্যাক্টের’ আওতায় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে সে দেশে অর্থসম্পদ জব্দের ঘটনা কিন্তু রয়েছে। ভিসা নীতি প্রয়োগের পাশাপাশি নির্বাচন ও দুর্নীতিকে ইস্যু করে সম্পদ জব্দের ঘটনা ঘটলে তা ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় বিব্রতকর হবে। বিএনপির একশ্রেণির নেতাও এর আওতায় পড়তে পারেন না, তা নয়।
তবে মূল কোপটি পড়বে সরকার ও তার মিত্রদের ওপর। ভিসা নীতি ও সম্পদ জব্দের ঝুঁকি ব্যাপক মানুষের ভাবনার বিষয় না হলেও এটি ক্ষমতাধরদের জন্য আতঙ্কের বটে। এমন পদক্ষেপ গৃহীত হলে সেটা কেবল যুক্তরাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ না থেকে তার মিত্র দেশগুলোয় ছড়িয়ে পড়ারও শঙ্কা রয়েছে। আর এ দেশগুলোই তো আমাদের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার ও উন্নয়ন-সহযোগী।
এদের কাছ থেকে দ্রুত সরে গিয়ে অন্য বলয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে স্বস্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে থাকা কিন্তু কঠিন। সত্যি বলতে, এ ধরনের প্রয়াস লক্ষ করেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন মহল মানবাধিকার, নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে ইস্যু করে সরকারের ওপর নজিরবিহীন চাপ সৃষ্টি করছে বলে কিছু বিদগ্ধজনের ধারণা। দুনিয়ার অনেক দেশে অতীত ও বর্তমানে পশ্চিমাদের ভূমিকা ভিন্ন হলেও বাংলাদেশে এ ধরনের ভূমিকা আন্দোলনরতদের সঙ্গে একাকার হয়ে তাদের জন্য লাভজনক হয়ে উঠেছে বৈকি। সরকারের ওপর পশ্চিমাদের চাপকে স্বভাবতই স্বাগত জানাচ্ছে তারা। সরকারের মধ্যেও কি কৌশলে চাপ মোকাবিলা কিংবা তা এড়ানোর চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে না? এখন পরিস্থিতি যা-ই হোক, বিরোধীদের দাবি ও পশ্চিমা প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকার অনিচ্ছুক।
সরকার সম্ভবত মনে করছে, সেটা তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনে পরাজয়ের পথ প্রশস্ত করবে। এ অবস্থায় মাঠের বিরোধী দল বিএনপিকে বাইরে রেখে অন্যদের নিয়ে একটি ‘পরিকল্পিত নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের দিকেই তারা এগোচ্ছে। কিন্তু এর ভেতর দিয়ে দীর্ঘদিন সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়া ঘিরে উদ্ভূত সংকটের অবসান ঘটবে না। সে ক্ষেত্রে মনে হয় সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন অব্যাহত রাখবে পশ্চিমারা। বিরোধী দলও তাদের কাজ করে যাবে। এ অবস্থায় সংকটগ্রস্ত হয়ে ওঠা অর্থনীতিতেও পড়তে থাকবে এর নেতিবাচক প্রভাব।
হাসান মামুন, সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ভালো হতো কখনোই দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী হলে। সেটা তো আর হয়নি। হয়নি বলেই একটা পর্যায়ে এসে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে এমনকি সংবিধানের বাইরে গিয়ে পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোকে।
একটা ঐতিহাসিক সমঝোতার আওতায় সেটি ঘটানো হয়। পরে আবারও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বানচাল হচ্ছে দেখে আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং তার চাপে একটি নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেওয়া হয় খোদ সংবিধানে। এভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটা নির্ভরযোগ্য বন্দোবস্ত আমরা পাই।
এর আওতায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরও ঘটে ২০০১ সালে। তবে সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকার পুনরায় নির্বাচনের নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থাটি নিজেদের পক্ষে ব্যবহারে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাতে আবারও দানা বেঁধে ওঠে আন্দোলন এবং এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে আমরা আবার ফিরে আসি নির্বাচিত সরকারের আমলে।
এই প্রেক্ষাপটেই নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করে এটিকে ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যাঁরা এ সংস্কারে নিয়োজিত ছিলেন, তাঁরা অবশ্য ভাবতেই পারেননি—সরকারের উচ্চপর্যায়ের ইচ্ছায় ব্যবস্থাটি বাতিল হয়ে যাবে। ভালো হতো এটি একেবারে বাতিল না হয়ে সংস্কারের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হয়ে জাতিকে সেবা জুগিয়ে যেতে পারলে।
তা হয়নি বলেই আবারও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নামের নাজুক পরিস্থিতিতে আমরা গিয়ে পড়েছি। এর ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। বিগত দুটি নির্বাচনের একটিও জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এ প্রেক্ষাপটেই সরকারের পক্ষ থেকে অঙ্গীকার করে বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু যাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা, সেই মাঠের বিরোধী দলের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে না। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন বর্জন করলেও পরেরটিতে তারা অংশ নিয়েছিল এবং ‘ঠকেছিল’ বলে মনে করে।
বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা তো তাদের রয়েছে আর রয়েছে বলেই দ্বিতীয়বার এর ভেতর দিয়ে যেতে চাইছে না। তারা বলছে, নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থাটি বাতিল করা হয়েছিল মেয়াদের পর মেয়াদ দেশ পরিচালনা করা বিএনপিকে একটি স্থায়ী বিরোধী দলে পরিণত করে প্রান্তিক বানানোর জন্যই। তাই তারা চাইছে আগেকার মতো একটি গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থাপনায় নির্বাচনে যেতে। এমন একটি দাবি আদায়ে আন্দোলনের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করে তারা অবশ্য আজও সফল হতে পারেনি। এর আগে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে সহিংস আন্দোলন গড়ে তুলেও সফল হয়নি তারা।
এখন অবশ্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই আছে এবং বলছে, এ ধরনের আন্দোলনের মাধ্যমেই তারা দাবি আদায় করবে। লক্ষ করার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তার মিত্র প্রভাবশালী দেশগুলোও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার বিষয়ে সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এর আগের দুটি নির্বাচনে তেমন আগ্রহ না দেখালেও তারা কিন্তু অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনটিতে অতুলনীয় আগ্রহ দেখাচ্ছে; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের বেশ কয়েক মাস আগেই বাংলাদেশের জন্য নিয়েছে ভিসা নীতি এবং তাতে বলা হচ্ছে, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া’য় বাধাদানকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হবে।
এর বেশ কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে এলিট ফোর্স র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বলতে গেলে তখন থেকেই সরকারের ওপর আনুষ্ঠানিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। নির্বাচনের মাস তিনেক আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আবার জানানো হলো, তারা ভিসা নীতির প্রয়োগও শুরু করেছে।
সরকারের এমন একটা প্রত্যাশা বোধ হয় ছিল যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে এটা প্রয়োগ করা হবে না। বাস্তবে সেটাই ঘটেছে দেখে এখন মনে করা হচ্ছে, ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচনের ‘তথ্য-উপাত্ত’ কাজে লাগিয়েই হয়তো নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করেছে দেশটি।
এ ক্ষেত্রে অনেকটা নজিরবিহীনভাবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ও সংবাদমাধ্যমকে এর আওতায় আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে এটা পরিষ্কার, তারা বাংলাদেশের নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকায় সন্দিহান। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) একই ধারায় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বললে ভুল হবে না। তাদের একটি প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী দল দীর্ঘদিন এখানে অবস্থান করে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ফিরে গিয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ। তহবিলের সংকট হয়তো কিছুটা রয়েছে; তবে আসল সংকট দেখা দিয়েছে আস্থায়। বাংলাদেশে পর্যবেক্ষণ করার মতো কোনো নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে তারা মনে করতে পারছে না।
এরই মধ্যে ইইউ পার্লামেন্ট থেকে আমাদের মানবাধিকার, নির্বাচন ও গণতন্ত্র বিষয়ে যে বিবৃতি এসেছে এবং এর সঙ্গে যেভাবে বাংলাদেশের জিএসপি-সুবিধা অব্যাহত রাখা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেটা বাড়তি দুশ্চিন্তার বিষয়। ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের’ পরও আমাদের ওই বাজারে জিএসপি পাওয়ার কথা। এ অধ্যায় শেষে জিএসপি-প্লাস সুবিধা পাব কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। ইইউ আমাদের মূল রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক পণ্যের প্রধান বাজার এবং সেখানে আমরা অবশ্যই বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে চাই না।
সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের নতুন জিএসপি-সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ারও প্রস্তাব রেখেছি। যুক্তরাষ্ট্রে এখন অন্যদের মতো ১৫ শতাংশের বেশি কর-শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করতে হয়। এটা কিছুটা কমিয়ে আনা গেলেও ওই বাজারে রপ্তানি আমরা বাড়াতে পারব।
সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মতো বড় আমদানিকারক দেশে আমাদের রপ্তানি কমে যাওয়ার খবর মিলছে।
এটা আরও উদ্বেগজনক এ জন্য যে, আমরা এই মুহূর্তে ফরেন রিজার্ভের সংকটে আছি। এ অবস্থায় আমদানি কঠিন হয়ে মূল্যস্ফীতি সামলানোর জায়গাটাও খুব জটিল হয়ে পড়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে দিয়ে এটি সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জও বটে। এ অবস্থায় আবার ভিসা নীতির প্রয়োগ শুরু হয়ে যাওয়ায় সেটা কেবল নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের মধ্যে নয়, এমনকি ব্যবসায়ী মহলে অস্থিরতা ছড়িয়ে দেবে। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একাংশ তো এরই মধ্যে অতি উৎসাহী হয়ে বর্তমান সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার ব্যাপারে সমর্থন ঘোষণা করে স্লোগান দিয়েছিল। তাঁদের অনেককে আবার সরকারের মদদপুষ্ট ‘অলিগার্ক’ বলে মনে করা হয়। এমন প্রচারও আছে, ক্ষমতাসীন দলের নামে কিছুসংখ্যক আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের একটি চক্র দেশ চালাচ্ছে এবং এটিই তীব্র হয়ে ওঠা রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক সংকটের মূল কারণ।
এ অবস্থায় এমনটিও বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের দুর্নীতি ও অর্থ পাচার ইস্যুতে কিছু শীর্ষ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ‘ম্যাগনেটস্কি অ্যাক্টের’ আওতায় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে সে দেশে অর্থসম্পদ জব্দের ঘটনা কিন্তু রয়েছে। ভিসা নীতি প্রয়োগের পাশাপাশি নির্বাচন ও দুর্নীতিকে ইস্যু করে সম্পদ জব্দের ঘটনা ঘটলে তা ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় বিব্রতকর হবে। বিএনপির একশ্রেণির নেতাও এর আওতায় পড়তে পারেন না, তা নয়।
তবে মূল কোপটি পড়বে সরকার ও তার মিত্রদের ওপর। ভিসা নীতি ও সম্পদ জব্দের ঝুঁকি ব্যাপক মানুষের ভাবনার বিষয় না হলেও এটি ক্ষমতাধরদের জন্য আতঙ্কের বটে। এমন পদক্ষেপ গৃহীত হলে সেটা কেবল যুক্তরাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ না থেকে তার মিত্র দেশগুলোয় ছড়িয়ে পড়ারও শঙ্কা রয়েছে। আর এ দেশগুলোই তো আমাদের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার ও উন্নয়ন-সহযোগী।
এদের কাছ থেকে দ্রুত সরে গিয়ে অন্য বলয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে স্বস্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে থাকা কিন্তু কঠিন। সত্যি বলতে, এ ধরনের প্রয়াস লক্ষ করেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন মহল মানবাধিকার, নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে ইস্যু করে সরকারের ওপর নজিরবিহীন চাপ সৃষ্টি করছে বলে কিছু বিদগ্ধজনের ধারণা। দুনিয়ার অনেক দেশে অতীত ও বর্তমানে পশ্চিমাদের ভূমিকা ভিন্ন হলেও বাংলাদেশে এ ধরনের ভূমিকা আন্দোলনরতদের সঙ্গে একাকার হয়ে তাদের জন্য লাভজনক হয়ে উঠেছে বৈকি। সরকারের ওপর পশ্চিমাদের চাপকে স্বভাবতই স্বাগত জানাচ্ছে তারা। সরকারের মধ্যেও কি কৌশলে চাপ মোকাবিলা কিংবা তা এড়ানোর চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে না? এখন পরিস্থিতি যা-ই হোক, বিরোধীদের দাবি ও পশ্চিমা প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকার অনিচ্ছুক।
সরকার সম্ভবত মনে করছে, সেটা তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনে পরাজয়ের পথ প্রশস্ত করবে। এ অবস্থায় মাঠের বিরোধী দল বিএনপিকে বাইরে রেখে অন্যদের নিয়ে একটি ‘পরিকল্পিত নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের দিকেই তারা এগোচ্ছে। কিন্তু এর ভেতর দিয়ে দীর্ঘদিন সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়া ঘিরে উদ্ভূত সংকটের অবসান ঘটবে না। সে ক্ষেত্রে মনে হয় সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন অব্যাহত রাখবে পশ্চিমারা। বিরোধী দলও তাদের কাজ করে যাবে। এ অবস্থায় সংকটগ্রস্ত হয়ে ওঠা অর্থনীতিতেও পড়তে থাকবে এর নেতিবাচক প্রভাব।
হাসান মামুন, সাংবাদিক, বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে