মোনায়েম সরকার
নির্বাচনের আগে একটা ‘কী হয় কী হয়’ অবস্থা থাকলেও ৭ জানুয়ারি ঠিকঠাকমতোই ভোট হয়েছে। নতুন সরকার দেশ শাসনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। দেশের একটি অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়েছিল ভোট যাতে না হয়, সে রকম পরিস্থিতি তৈরি করতে। তারা সেটি পারেনি। আওয়ামী লীগ চেয়েছিল নির্ধারিত সময়ে ভোট সম্পন্ন করতে এবং টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে। আওয়ামী লীগ সেটা পেরেছে। বাংলাদেশকে বলা হয় আন্দোলন-সংগ্রামের দেশ। আওয়ামী লীগের ঝুলিতে আন্দোলনে সফল হওয়ার অনেক রেকর্ড আছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। বিএনপি জনপ্রিয় দল সন্দেহ নেই, কিন্তু তার ঝুলিতে আন্দোলনে সফল হওয়ার কোনো রেকর্ড নেই।
ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ কতিপয় পশ্চিমা দেশের ঢাকার কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ, র্যাবের ওপরে নিষেধাজ্ঞা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সবক এবং বিএনপির নানা হুমকি-ধমকিতে কারও কারও মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল, সরকার সামাল দিতে পারবে তো? সরকার যে কিছুটা চাপে ছিল, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। পশ্চিমাদের চাপ সামাল দিয়ে বাংলাদেশ ভোট করতে পারবে কি না, ভোট হলেও সরকার টিকে থাকতে পারবে কি না, ভোটের পর নতুন নিষেধাজ্ঞা আসবে কি না—এমন সব প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু সবকিছু পেছনে ফেলে বাংলাদেশে নির্ধারিত সময়ে যেমন ভোট হয়েছে, তেমনি সরকারও গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর আমরা কী দেখলাম? যে পশ্চিমারা কয়েক মাস ধরে নানা কথা বলে আসছিল, তারা নির্বাচনের পর নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে যেমন যোগ দিয়েছে, তেমনি সরকার গঠনের পর মন্ত্রীরা অফিস শুরু করলে সেখানে গিয়েও সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথাই বলেছে।
কূটনীতিকদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমি নির্বাচিত হয়েছি, আমার স্বজনেরা, বন্ধুরা অভিনন্দন জানাবে, এটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা (আওয়ামী লীগ) কারও অভিনন্দনের জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় বসে নেই। একটা নির্বাচিত সরকার এত দেউলিয়া অবস্থায় পড়েছে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।’
টানা চারবার নির্বাচিত হওয়ার পর বিদেশি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি কতটা জরুরি—এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্বীকৃতি, অভিনন্দন, এটা গণতন্ত্রের রীতিনীতিতে পরিণত হয়েছে। এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও বন্ধুরাষ্ট্রগুলো অভিনন্দন জানায়। এটা ভারত ও ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বেলায় যেমন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেলায়ও তেমনি।’
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছে, সে প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার অধিকার তাদের আছে। যদি কর্মসূচির নামে ২৮ অক্টোবরের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গাড়ি পোড়ানো, মানুষ পুড়িয়ে মারা ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আমরাও রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলা করব।’
অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘দেশের জনগণকে উপেক্ষিত রেখে সরকার যেকোনো উপায়ে বিদেশি রাষ্ট্রের সমর্থন জোগাড় করতে ব্যস্ত। দেশে দেশে ধরনা দিয়ে কাকুতি-মিনতি করছে।’ ডামি ভোটের নকল সরকার হীনম্মন্যতায় ভুগছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ধরনা দিয়ে অভিনন্দনবার্তা আনা দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। লুটের টাকায় ক্রয়কৃত অভিনন্দনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা বড় হাস্যকর।’
বিএনপির এই নেতা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগের এই একদলীয় পাতানো নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি, ভোটকেন্দ্রে না যাওয়াই তার প্রমাণ। আমরা আর মামুদের ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দ্বিতীয় বাকশাল সরকারের বৈধতা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। জনগণ এই নির্বাচন, এই অবৈধ সংসদ কখনো মেনে নেবে না। জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ডামি সরকারের পতন ঘটাবে।’
শেখ হাসিনার বৈধতা পাওয়ার চেষ্টাকে ‘হাস্যকর’ উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী যেসব কথা বলেছেন, তা-ও কম হাস্যকর নয়। নির্বাচনের পর সরকার ধরনা দিয়ে অভিনন্দনবার্তা সংগ্রহ করছে বলে মন্তব্য করে তিনি তাঁর আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীর কোনো দেশই খামোখা অন্য দেশের প্রতি আগ্রহ বা কৌতূহল দেখায় না। সবাই সবার গরজে বা স্বার্থচিন্তা থেকেই পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান বা কর্মসূচির প্রতি যদি বিদেশিদের সমর্থন থাকত, তাহলে পরিস্থিতি অন্য রকম হলেও হতে পারত।
আমেরিকা সেই ১৯৪৫ সাল থেকেই বিশ্বজুড়ে মোড়লিগিরি করে বেড়াচ্ছে। কোনো দেশে অপছন্দের সরকার হলে তাকে ফেলে দেওয়া ছিল আমেরিকার স্টাইল। তারপর নয়া সরকারের কাছ থেকে আমেরিকা যা চায়, তাই আদায় করে নিতে তৎপর হতো। নানা বিরূপ অভিজ্ঞতার কারণে মার্কিন ঘোড়েল কর্মকর্তারা সম্ভবত তাদের কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। এখন তারা সরকার বদলানোর চেয়ে সরকারকে চাপে রেখে সুবিধা আদায়ের জন্য বিরোধীদের সঙ্গে একধরনের কূটকৌশলের খেলা খেলে। সরকারকে চাপে রাখে, বিরোধীদের মদদ দেয়, কিন্তু বিরোধীরা নিজেদের মুরোদ বা সক্ষমতা দেখাতে না পারলে আমেরিকা সক্ষমের পক্ষেই দাঁড়ায়। বাংলাদেশের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা সক্ষমতা দেখাতে পারায় আমেরিকা বিএনপির নাম লিখেছে বাকির খাতায়। তা ছাড়া এটাও লক্ষণীয়, ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকে বাইডেন প্রশাসন যে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েই নাক গলাতে গেছে, সেখানেই সাফল্যের দেখা না পেয়ে বরং নাকানিচুবানি খেয়েছে। রাশিয়াকে ঘায়েল করার মতলবে ইউক্রেনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আমেরিকার এখন নাজেহাল অবস্থা। বাইডেন নিজের দেশে ট্রাম্পকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। নিজের ভোটে জেতা যেখানে সংশয়মুক্ত নয়, সেখানে তিনি বা তাঁর প্রশাসন বিএনপিকে কীভাবে ক্ষমতায় বসায়? বাংলাদেশে বাইডেন প্রশাসনের নতুন এক্সপেরিমেন্টের ফল বিএনপি ঘরে তুলতে পারেনি। এই কঠিন সত্যিটি বিএনপি বিশ্বাস করতে বা মানতে পারছে না। সত্যটা স্বীকার করলে দলের ভেতরে ব্যাপক হতাশা নেমে আসার আশঙ্কায় বিএনপির নেতারা ‘মানুষ ভোট দিতে যায়নি’ বা পশ্চিমারা নির্বাচন মেনে নেয়নি ইত্যাদি বলে সান্ত্বনা খুঁজছেন।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয়। এটা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ বা সরকারের সবলতার দিকগুলো জানার পরও বিএনপি কেন নির্বাচন বর্জনের রাজনীতি আঁকড়ে আছে, তা কোনো রাজনীতি বিশেষজ্ঞের কাছেই পরিষ্কার নয়।
বিএনপির হয়েছে মুখে মাটি ঢুকে যাওয়ার মতো অবস্থা! মাটি আমাদের খাদ্য না। তাই মুখে কোনো কারণে মাটি পড়লে থু থু করে ফেলা আর বারবার মুখ ধুয়ে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। বিএনপিকে এখন তা-ই করতে হবে। বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের কৌশল দেশের মানুষের ওপর নির্ভর করার চেয়ে আমেরিকানির্ভর করে সাজিয়ে চরম ভুল করেছে। একপেশে পশ্চিমা অতিনির্ভরতা তাদের খেয়ে ফেলেছে, সব শ্রম-ঘাম পানিতে মিশেছে।
বিএনপি বুঝতেই চায়নি যে বাইডেন প্রশাসন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়নি। চেয়েছে সুবিধা আদায় করে নিতে। আমেরিকার কিছু নিজস্ব স্বার্থ আছে, সেটাই তাদের প্রায়োরিটি বা প্রথম বিবেচনাই শুধু নয়; সেই স্বার্থই বাইডেনের কাছে তার সব তৎপরতার একমাত্র নির্ধারক উপাদান। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির চালিকাশক্তি বা ড্রাইভিং ফোর্স নয়। বাংলাদেশের ব্যাপারে আমেরিকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে চীন-ঠেকানোর কাজে কার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ তা থেকেই। ভারতকে উপেক্ষা করে বিএনপির স্বার্থ রক্ষা আমেরিকার কাছে বড় হতে পারে না, হয়ওনি। ভূরাজনৈতিক ঘটনা বিএনপির পক্ষে রাখার সুযোগ মূলত দলটির ছিল না।
বিএনপি ও বিএনপির প্রতি অনুগত বিশিষ্টজনেরা আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নেতিবাচক সব বিশেষণ ব্যবহার করে টক শো বা ইউটিউবে চ্যানেল খুলে আয়রোজগার বাড়াতে পারলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিএনপির অনুকূলে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। বিএনপিকে ভাঙা যায়নি, সেটা ঠিক। কিন্তু এই অক্ষত বিএনপি সরকারের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। বিএনপি এখন ভোটের বিশুদ্ধতা নিয়ে চর্চা করবে আর আওয়ামী লীগ সরকার চালাবে।২০১৮ সালের নির্বাচনে যখন বিএনপিকে সাতটি আসন দেওয়া হয়; তারপর দেশে কী হয়েছিল? সেবার যেমন কিছু হয়নি, এবারও হবে না।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান বিএফডিআর
নির্বাচনের আগে একটা ‘কী হয় কী হয়’ অবস্থা থাকলেও ৭ জানুয়ারি ঠিকঠাকমতোই ভোট হয়েছে। নতুন সরকার দেশ শাসনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। দেশের একটি অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়েছিল ভোট যাতে না হয়, সে রকম পরিস্থিতি তৈরি করতে। তারা সেটি পারেনি। আওয়ামী লীগ চেয়েছিল নির্ধারিত সময়ে ভোট সম্পন্ন করতে এবং টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে। আওয়ামী লীগ সেটা পেরেছে। বাংলাদেশকে বলা হয় আন্দোলন-সংগ্রামের দেশ। আওয়ামী লীগের ঝুলিতে আন্দোলনে সফল হওয়ার অনেক রেকর্ড আছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। বিএনপি জনপ্রিয় দল সন্দেহ নেই, কিন্তু তার ঝুলিতে আন্দোলনে সফল হওয়ার কোনো রেকর্ড নেই।
ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ কতিপয় পশ্চিমা দেশের ঢাকার কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ, র্যাবের ওপরে নিষেধাজ্ঞা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সবক এবং বিএনপির নানা হুমকি-ধমকিতে কারও কারও মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল, সরকার সামাল দিতে পারবে তো? সরকার যে কিছুটা চাপে ছিল, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। পশ্চিমাদের চাপ সামাল দিয়ে বাংলাদেশ ভোট করতে পারবে কি না, ভোট হলেও সরকার টিকে থাকতে পারবে কি না, ভোটের পর নতুন নিষেধাজ্ঞা আসবে কি না—এমন সব প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু সবকিছু পেছনে ফেলে বাংলাদেশে নির্ধারিত সময়ে যেমন ভোট হয়েছে, তেমনি সরকারও গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর আমরা কী দেখলাম? যে পশ্চিমারা কয়েক মাস ধরে নানা কথা বলে আসছিল, তারা নির্বাচনের পর নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে যেমন যোগ দিয়েছে, তেমনি সরকার গঠনের পর মন্ত্রীরা অফিস শুরু করলে সেখানে গিয়েও সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথাই বলেছে।
কূটনীতিকদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমি নির্বাচিত হয়েছি, আমার স্বজনেরা, বন্ধুরা অভিনন্দন জানাবে, এটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা (আওয়ামী লীগ) কারও অভিনন্দনের জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় বসে নেই। একটা নির্বাচিত সরকার এত দেউলিয়া অবস্থায় পড়েছে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।’
টানা চারবার নির্বাচিত হওয়ার পর বিদেশি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি কতটা জরুরি—এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্বীকৃতি, অভিনন্দন, এটা গণতন্ত্রের রীতিনীতিতে পরিণত হয়েছে। এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও বন্ধুরাষ্ট্রগুলো অভিনন্দন জানায়। এটা ভারত ও ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বেলায় যেমন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেলায়ও তেমনি।’
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছে, সে প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার অধিকার তাদের আছে। যদি কর্মসূচির নামে ২৮ অক্টোবরের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গাড়ি পোড়ানো, মানুষ পুড়িয়ে মারা ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আমরাও রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলা করব।’
অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘দেশের জনগণকে উপেক্ষিত রেখে সরকার যেকোনো উপায়ে বিদেশি রাষ্ট্রের সমর্থন জোগাড় করতে ব্যস্ত। দেশে দেশে ধরনা দিয়ে কাকুতি-মিনতি করছে।’ ডামি ভোটের নকল সরকার হীনম্মন্যতায় ভুগছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ধরনা দিয়ে অভিনন্দনবার্তা আনা দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। লুটের টাকায় ক্রয়কৃত অভিনন্দনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা বড় হাস্যকর।’
বিএনপির এই নেতা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগের এই একদলীয় পাতানো নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি, ভোটকেন্দ্রে না যাওয়াই তার প্রমাণ। আমরা আর মামুদের ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দ্বিতীয় বাকশাল সরকারের বৈধতা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। জনগণ এই নির্বাচন, এই অবৈধ সংসদ কখনো মেনে নেবে না। জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ডামি সরকারের পতন ঘটাবে।’
শেখ হাসিনার বৈধতা পাওয়ার চেষ্টাকে ‘হাস্যকর’ উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী যেসব কথা বলেছেন, তা-ও কম হাস্যকর নয়। নির্বাচনের পর সরকার ধরনা দিয়ে অভিনন্দনবার্তা সংগ্রহ করছে বলে মন্তব্য করে তিনি তাঁর আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীর কোনো দেশই খামোখা অন্য দেশের প্রতি আগ্রহ বা কৌতূহল দেখায় না। সবাই সবার গরজে বা স্বার্থচিন্তা থেকেই পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান বা কর্মসূচির প্রতি যদি বিদেশিদের সমর্থন থাকত, তাহলে পরিস্থিতি অন্য রকম হলেও হতে পারত।
আমেরিকা সেই ১৯৪৫ সাল থেকেই বিশ্বজুড়ে মোড়লিগিরি করে বেড়াচ্ছে। কোনো দেশে অপছন্দের সরকার হলে তাকে ফেলে দেওয়া ছিল আমেরিকার স্টাইল। তারপর নয়া সরকারের কাছ থেকে আমেরিকা যা চায়, তাই আদায় করে নিতে তৎপর হতো। নানা বিরূপ অভিজ্ঞতার কারণে মার্কিন ঘোড়েল কর্মকর্তারা সম্ভবত তাদের কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। এখন তারা সরকার বদলানোর চেয়ে সরকারকে চাপে রেখে সুবিধা আদায়ের জন্য বিরোধীদের সঙ্গে একধরনের কূটকৌশলের খেলা খেলে। সরকারকে চাপে রাখে, বিরোধীদের মদদ দেয়, কিন্তু বিরোধীরা নিজেদের মুরোদ বা সক্ষমতা দেখাতে না পারলে আমেরিকা সক্ষমের পক্ষেই দাঁড়ায়। বাংলাদেশের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা সক্ষমতা দেখাতে পারায় আমেরিকা বিএনপির নাম লিখেছে বাকির খাতায়। তা ছাড়া এটাও লক্ষণীয়, ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকে বাইডেন প্রশাসন যে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েই নাক গলাতে গেছে, সেখানেই সাফল্যের দেখা না পেয়ে বরং নাকানিচুবানি খেয়েছে। রাশিয়াকে ঘায়েল করার মতলবে ইউক্রেনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আমেরিকার এখন নাজেহাল অবস্থা। বাইডেন নিজের দেশে ট্রাম্পকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। নিজের ভোটে জেতা যেখানে সংশয়মুক্ত নয়, সেখানে তিনি বা তাঁর প্রশাসন বিএনপিকে কীভাবে ক্ষমতায় বসায়? বাংলাদেশে বাইডেন প্রশাসনের নতুন এক্সপেরিমেন্টের ফল বিএনপি ঘরে তুলতে পারেনি। এই কঠিন সত্যিটি বিএনপি বিশ্বাস করতে বা মানতে পারছে না। সত্যটা স্বীকার করলে দলের ভেতরে ব্যাপক হতাশা নেমে আসার আশঙ্কায় বিএনপির নেতারা ‘মানুষ ভোট দিতে যায়নি’ বা পশ্চিমারা নির্বাচন মেনে নেয়নি ইত্যাদি বলে সান্ত্বনা খুঁজছেন।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয়। এটা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ বা সরকারের সবলতার দিকগুলো জানার পরও বিএনপি কেন নির্বাচন বর্জনের রাজনীতি আঁকড়ে আছে, তা কোনো রাজনীতি বিশেষজ্ঞের কাছেই পরিষ্কার নয়।
বিএনপির হয়েছে মুখে মাটি ঢুকে যাওয়ার মতো অবস্থা! মাটি আমাদের খাদ্য না। তাই মুখে কোনো কারণে মাটি পড়লে থু থু করে ফেলা আর বারবার মুখ ধুয়ে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। বিএনপিকে এখন তা-ই করতে হবে। বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের কৌশল দেশের মানুষের ওপর নির্ভর করার চেয়ে আমেরিকানির্ভর করে সাজিয়ে চরম ভুল করেছে। একপেশে পশ্চিমা অতিনির্ভরতা তাদের খেয়ে ফেলেছে, সব শ্রম-ঘাম পানিতে মিশেছে।
বিএনপি বুঝতেই চায়নি যে বাইডেন প্রশাসন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়নি। চেয়েছে সুবিধা আদায় করে নিতে। আমেরিকার কিছু নিজস্ব স্বার্থ আছে, সেটাই তাদের প্রায়োরিটি বা প্রথম বিবেচনাই শুধু নয়; সেই স্বার্থই বাইডেনের কাছে তার সব তৎপরতার একমাত্র নির্ধারক উপাদান। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির চালিকাশক্তি বা ড্রাইভিং ফোর্স নয়। বাংলাদেশের ব্যাপারে আমেরিকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে চীন-ঠেকানোর কাজে কার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ তা থেকেই। ভারতকে উপেক্ষা করে বিএনপির স্বার্থ রক্ষা আমেরিকার কাছে বড় হতে পারে না, হয়ওনি। ভূরাজনৈতিক ঘটনা বিএনপির পক্ষে রাখার সুযোগ মূলত দলটির ছিল না।
বিএনপি ও বিএনপির প্রতি অনুগত বিশিষ্টজনেরা আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নেতিবাচক সব বিশেষণ ব্যবহার করে টক শো বা ইউটিউবে চ্যানেল খুলে আয়রোজগার বাড়াতে পারলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিএনপির অনুকূলে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। বিএনপিকে ভাঙা যায়নি, সেটা ঠিক। কিন্তু এই অক্ষত বিএনপি সরকারের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। বিএনপি এখন ভোটের বিশুদ্ধতা নিয়ে চর্চা করবে আর আওয়ামী লীগ সরকার চালাবে।২০১৮ সালের নির্বাচনে যখন বিএনপিকে সাতটি আসন দেওয়া হয়; তারপর দেশে কী হয়েছিল? সেবার যেমন কিছু হয়নি, এবারও হবে না।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান বিএফডিআর
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে