হাসান মামুন
এই নিবন্ধ প্রকাশ পেতে পেতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পেরিয়ে যাবে। ৭ জানুয়ারির ভোটে অংশ নিতে যেসব দল এগিয়ে এসেছে, সেগুলোর অংশগ্রহণের চিত্রটি স্পষ্ট হবে এরই মধ্যে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গী, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা), নবগঠিত কিছু দল ও কয়েকটি ইসলামপন্থী দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দলগুলো বলতে গেলে একপক্ষীয়। নির্বাচনে এমন কোনো দল নেই, যেসব দলের নেতারা ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত। তাঁদের প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনে এসেছেন। ফলে ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেও তাঁরা রাজি নন। আসন ভাগাভাগি পাকা করে নির্বিঘ্নে জিততে চাইছেন তাঁরা। প্রতিপক্ষহীন নির্বাচনে সবাই চাইছেন জয়ের নিশ্চয়তা। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও অনানুষ্ঠানিকভাবে এটা সম্পন্নের প্রক্রিয়া চলবে মনে হয়।
এ অবস্থায় কারও বুঝতে বাকি নেই, কী ধরনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ২০১৪ সালেও সমমনাদের নিয়ে একটা একতরফা নির্বাচন করেছিল সরকার। তখন থেকে নতুন করে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হতে শুরু করে। এই ইস্যুতে নির্বাচন প্রতিহতকরণও শুরু করে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এবারও সেই চেষ্টা চলছে; তবে ২০১৪ সালের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে মনে হয় না। সমমনাদের নিয়ে সরকার মোটামুটি নির্বিঘ্নেই ভোট সেরে ফেলতে পারবে বলে মনে হচ্ছে। এর ভেতর দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আরেকটি মেয়াদ লাভ করবে, এটা ধরেই নিচ্ছে সবাই।
যেহেতু নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির নির্বাচন, তাই এটাও মোটামুটি বলে দেওয়া সম্ভব—কোন দল কত আসন পাবে! তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যতিক্রমী সুযোগ পাওয়া ক্ষমতাসীন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কিছুটা অনিশ্চয়তার উপাদান যুক্ত করেছেন এবার। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতে আসবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তবে এতে সরকারের কোনো ঝুঁকি নেই। স্বতন্ত্ররা তো মূলত ক্ষমতাসীন দলেরই মানুষ। এমনটিও মনে করা হচ্ছে, নির্বাচনে তাঁরা দ্বিতীয় বৃহৎ গ্রুপ হিসেবে বেরিয়ে আসতে পারেন। তখন তাঁরাই সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন কি না, এমন প্রশ্নও এরই মধ্যে উঠেছে।
জোটসঙ্গী ও সমমনা দলের যেসব প্রার্থীকে জেতাতে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রাপ্তদের বসিয়ে দেবে বলে শোনা গেছে, তাঁরা অতঃপর নিজ নিজ এলাকায় কী ভূমিকা নেবেন, বলা মুশকিল। ওই সব আসনে ক্ষমতাসীন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেহেতু থাকছেন—তাতে সমমনা দলের প্রার্থীরা ফাঁকা মাঠ পাবেন না। এমন নির্বাচনে প্রশাসনের সহায়তা একটি বড় ফ্যাক্টর। সেটি কোথায় কোন প্রার্থী পাবেন আর কে পাবেন না, বলা কঠিন। সরকার ও প্রশাসনের মিলিত সিদ্ধান্তই এ ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। কথিত আছে, ২০১৮ সালে খোদ বিএনপিও একধরনের আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে এসেছিল। কিন্তু মাঠপর্যায়ে সেটা কার্যকর করা যায়নি বলেই তারা অবিশ্বাস্যভাবে মাত্র ৭টি আসন পায়। আর জাপা উঠে আসে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে। এতে করে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে, বিশেষ করে যখন বিএনপির সদস্যরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। জোটসঙ্গী ও সমমনা দলগুলোর ক্ষেত্রে এবার একই ঘটনা ঘটলে অবাক হওয়া যাবে কি?
এমন যদি হয়—তারা আসায় নির্বাচনটি ‘অংশগ্রহণমূলক’ দেখালেও ভোটে সিংহভাগই পরাস্ত হলেন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে? নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সত্যিকারের ভোট হলে কিন্তু এমনটাই হওয়ার কথা। কারণ জাপাসহ সরকারের সহযোগীদের উল্লেখযোগ্য ভোট নেই বা থাকলেও গত দুই মেয়াদে অনেক কমে এসেছে। স্থানীয় নির্বাচনে কিন্তু বারবার দেখা গেছে, সংসদে বিরোধী দল হিসেবে থাকলেও জাপার ভোট অনেক ক্ষেত্রে চরমোনাইভিত্তিক ইসলামী আন্দোলনের চেয়েও কম। গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে জাপার প্রার্থীরা প্রধানত ক্ষমতাসীনদের ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে জিতে এসেছেন। এবার সেই আসন সমঝোতা যদি আগের মতো কাজ না করে? জোটসঙ্গীদের বেলায় এটা আরও বেশি করে প্রযোজ্য।
সরকার এবার ভোটারের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দেখাতে চায়, প্রতিপক্ষ না এলেও দেশের মানুষ সেভাবে বর্জন করেনি নির্বাচন। ৫০ শতাংশের বেশি ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিতের একটি পরিকল্পনা নাকি রয়েছে। বিরোধী দলের অংশগ্রহণবিহীন নির্বাচন—যেখানে ক্ষমতাসীনদের বিজয় নিশ্চিত, সেখানে এত ভোট পড়ার প্রত্যাশাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। এটাও ঠিক, নিজ দল থেকে স্বতন্ত্রদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রাপ্তদেরও অনেকে এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মোকাবিলা করবেন। কোথাও কোথাও রয়েছেন একাধিক স্বতন্ত্র। তাঁরা সবাই নিজ নিজ সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসবেন, এমনটাই প্রত্যাশা সরকারের। তবে এটা ঘিরে ভোটারের ওপর জবরদস্তি হলে তা হবে হিতে বিপরীত। আজকের দিনে এসব গোপন করা যাবে না। এটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যাপক সংঘাত হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। শেষে হয়তো দেখা যাবে, একপক্ষীয় নির্বাচনটাও ‘শান্তিপূর্ণ’ থাকল না। সরকার থেকে বলা হচ্ছে, আন্দোলনকারীরা নির্বাচন বানচাল করতে চাইছে। এমনও তো হতে পারে, আন্দোলনকারীদের বদলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের দিক থেকেই অশান্ত হয়ে উঠল পরিস্থিতি!
সেটি হতে না দেওয়া সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয়ের কোনো শঙ্কা নেই; তবে প্রধানত স্বতন্ত্রদের জোর তৎপরতায় নির্বাচনটা হয়ে উঠতে পারে অশান্তিপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে দক্ষভাবে। তাঁদের কাজ হবে প্রধানত ভোটার টানা, নিজেদের মধ্যে হলেও একটা ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা’র আবহ আনা। তবে যে নির্বাচনে রয়েছে এমপি হওয়ার তুলনামূলক সহজ সুযোগ, সেখানে কতজন কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে চলবেন? এ অবস্থায় অনেকে বলছেন, ক্ষমতাসীন দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তবে এটা ঘিরে সরকারের নতুন কোনো পরিকল্পনা থাকলে ভিন্ন কথা।
২০১৪ থেকে যে ধরনের নির্বাচন হচ্ছে, তাতে সরকারের প্রতিপক্ষ দল অংশ নিলেও দেখা যাচ্ছে—তারা স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারছে না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সেটা ভালোভাবে দেখা গেছে। তারা যে এবারও নির্বাচন বর্জন করল, এর একটি বড় কারণ নিহিত রয়েছে সেই তিক্ত অভিজ্ঞতায়। বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচনে না আসায় সরকার যে অখুশি হয়েছে, তা-ও মনে হয় না। অনেকে মনে করেন, সরকার কৌশলে সেটা বরং নিশ্চিত করেছে। জোটসঙ্গী ও সমমনাদের নিয়েই তারা নির্বাচন সারতে চায়, যাতে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকবে নিশ্চিত। ‘উন্নয়নের ধারা’ বহাল রাখতে এটা প্রয়োজন, এই হলো বয়ান। সমমনারাও এমনটাই মনে করে। এর বিনিময়ে তারা চায় মন্ত্রিত্ব না হলেও নিদেনপক্ষে এমপি পদ।
তবে সরকার এবার চাইতে পারে, ‘নিজেদের মধ্যে’ হলেও একটা সত্যিকারের ভোট হোক। এ অবস্থায় সরকারপক্ষীয় জনসাধারণের ভোট টানারও ক্ষমতা যাদের নেই, তারা পরাস্ত হয়ে মাঠ ছাড়ুক।
এ ধরনের ভোটাভুটির সুযোগও না থাকলে ৭ জানুয়ারি হবে কেবল ফল ঘোষণার দিন। কে কোন আসনে জিতবেন, সেটা মোটামুটি স্থির করা থাকবে। এটা হবে পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন। পরবর্তী সংসদকে ‘বহুদলীয়’ দেখাতে চাইলে এমন নির্বাচন করার প্রয়োজন রয়েছে বৈকি। কেননা জোটসঙ্গী ও সমমনাদের নিজ ক্ষমতায় জিতে আসার সুযোগ নেই বললেই চলে।
এখানে কথা হলো, বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের জিতিয়ে এনে কাকে কী দেখাবে সরকার? দেশ-বিদেশের সবাই জানে, এখানে কীভাবে কী হচ্ছে! তার বদলে নিজেদের মধ্যে একটা সত্যিকারের ভোট করলে কি সেটা ভালো দেখাবে না? আর এ ক্ষেত্রে ভোটার উপস্থিতি যা হয় হবে। সেটা বাড়িয়ে দেখানোরও প্রয়োজন নেই। আইনগত বৈধতায় ভোটের হার কোনো বাধা হবে না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তো সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থী বিনা ভোটে জিতেছিলেন। তাতেও সরকার পরিচালনায় কোনো চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হয়নি। এবারও কোনো সমস্যা হবে না—এমনকি ২০ শতাংশ ভোট পড়লে। নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে বরং সমস্যা।
সরকারকে ঠান্ডা মাথায় তার প্রত্যাশিত নির্বাচনটা সারতে হবে। সঙ্গে প্রস্তুতি রাখতে হবে এ ধরনের নির্বাচন ঘিরে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে নিষেধাজ্ঞা এলে সেটা মোকাবিলার। প্রধান কিছু সূচক বলছে, সামনে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলাও বেশ কঠিন হবে। পশ্চিমাদের পদক্ষেপ এতে দিতে পারে ঘৃতাহুতি। অর্থনীতির বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তেও থাকতে পারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন ঘিরে আলাদা করে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথাও তো তারা বলে রেখেছে। এতে একপক্ষীয় নির্বাচনের ভেতর দিয়ে অঙ্কিত রাজনৈতিক ছকটি অনুসরণ করা সহজ না-ও হতে পারে।
এই নিবন্ধ প্রকাশ পেতে পেতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পেরিয়ে যাবে। ৭ জানুয়ারির ভোটে অংশ নিতে যেসব দল এগিয়ে এসেছে, সেগুলোর অংশগ্রহণের চিত্রটি স্পষ্ট হবে এরই মধ্যে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গী, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা), নবগঠিত কিছু দল ও কয়েকটি ইসলামপন্থী দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দলগুলো বলতে গেলে একপক্ষীয়। নির্বাচনে এমন কোনো দল নেই, যেসব দলের নেতারা ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত। তাঁদের প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনে এসেছেন। ফলে ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেও তাঁরা রাজি নন। আসন ভাগাভাগি পাকা করে নির্বিঘ্নে জিততে চাইছেন তাঁরা। প্রতিপক্ষহীন নির্বাচনে সবাই চাইছেন জয়ের নিশ্চয়তা। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও অনানুষ্ঠানিকভাবে এটা সম্পন্নের প্রক্রিয়া চলবে মনে হয়।
এ অবস্থায় কারও বুঝতে বাকি নেই, কী ধরনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ২০১৪ সালেও সমমনাদের নিয়ে একটা একতরফা নির্বাচন করেছিল সরকার। তখন থেকে নতুন করে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হতে শুরু করে। এই ইস্যুতে নির্বাচন প্রতিহতকরণও শুরু করে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এবারও সেই চেষ্টা চলছে; তবে ২০১৪ সালের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে মনে হয় না। সমমনাদের নিয়ে সরকার মোটামুটি নির্বিঘ্নেই ভোট সেরে ফেলতে পারবে বলে মনে হচ্ছে। এর ভেতর দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আরেকটি মেয়াদ লাভ করবে, এটা ধরেই নিচ্ছে সবাই।
যেহেতু নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির নির্বাচন, তাই এটাও মোটামুটি বলে দেওয়া সম্ভব—কোন দল কত আসন পাবে! তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যতিক্রমী সুযোগ পাওয়া ক্ষমতাসীন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কিছুটা অনিশ্চয়তার উপাদান যুক্ত করেছেন এবার। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতে আসবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তবে এতে সরকারের কোনো ঝুঁকি নেই। স্বতন্ত্ররা তো মূলত ক্ষমতাসীন দলেরই মানুষ। এমনটিও মনে করা হচ্ছে, নির্বাচনে তাঁরা দ্বিতীয় বৃহৎ গ্রুপ হিসেবে বেরিয়ে আসতে পারেন। তখন তাঁরাই সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন কি না, এমন প্রশ্নও এরই মধ্যে উঠেছে।
জোটসঙ্গী ও সমমনা দলের যেসব প্রার্থীকে জেতাতে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রাপ্তদের বসিয়ে দেবে বলে শোনা গেছে, তাঁরা অতঃপর নিজ নিজ এলাকায় কী ভূমিকা নেবেন, বলা মুশকিল। ওই সব আসনে ক্ষমতাসীন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেহেতু থাকছেন—তাতে সমমনা দলের প্রার্থীরা ফাঁকা মাঠ পাবেন না। এমন নির্বাচনে প্রশাসনের সহায়তা একটি বড় ফ্যাক্টর। সেটি কোথায় কোন প্রার্থী পাবেন আর কে পাবেন না, বলা কঠিন। সরকার ও প্রশাসনের মিলিত সিদ্ধান্তই এ ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। কথিত আছে, ২০১৮ সালে খোদ বিএনপিও একধরনের আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে এসেছিল। কিন্তু মাঠপর্যায়ে সেটা কার্যকর করা যায়নি বলেই তারা অবিশ্বাস্যভাবে মাত্র ৭টি আসন পায়। আর জাপা উঠে আসে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে। এতে করে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে, বিশেষ করে যখন বিএনপির সদস্যরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। জোটসঙ্গী ও সমমনা দলগুলোর ক্ষেত্রে এবার একই ঘটনা ঘটলে অবাক হওয়া যাবে কি?
এমন যদি হয়—তারা আসায় নির্বাচনটি ‘অংশগ্রহণমূলক’ দেখালেও ভোটে সিংহভাগই পরাস্ত হলেন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে? নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সত্যিকারের ভোট হলে কিন্তু এমনটাই হওয়ার কথা। কারণ জাপাসহ সরকারের সহযোগীদের উল্লেখযোগ্য ভোট নেই বা থাকলেও গত দুই মেয়াদে অনেক কমে এসেছে। স্থানীয় নির্বাচনে কিন্তু বারবার দেখা গেছে, সংসদে বিরোধী দল হিসেবে থাকলেও জাপার ভোট অনেক ক্ষেত্রে চরমোনাইভিত্তিক ইসলামী আন্দোলনের চেয়েও কম। গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে জাপার প্রার্থীরা প্রধানত ক্ষমতাসীনদের ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে জিতে এসেছেন। এবার সেই আসন সমঝোতা যদি আগের মতো কাজ না করে? জোটসঙ্গীদের বেলায় এটা আরও বেশি করে প্রযোজ্য।
সরকার এবার ভোটারের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দেখাতে চায়, প্রতিপক্ষ না এলেও দেশের মানুষ সেভাবে বর্জন করেনি নির্বাচন। ৫০ শতাংশের বেশি ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিতের একটি পরিকল্পনা নাকি রয়েছে। বিরোধী দলের অংশগ্রহণবিহীন নির্বাচন—যেখানে ক্ষমতাসীনদের বিজয় নিশ্চিত, সেখানে এত ভোট পড়ার প্রত্যাশাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। এটাও ঠিক, নিজ দল থেকে স্বতন্ত্রদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রাপ্তদেরও অনেকে এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মোকাবিলা করবেন। কোথাও কোথাও রয়েছেন একাধিক স্বতন্ত্র। তাঁরা সবাই নিজ নিজ সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসবেন, এমনটাই প্রত্যাশা সরকারের। তবে এটা ঘিরে ভোটারের ওপর জবরদস্তি হলে তা হবে হিতে বিপরীত। আজকের দিনে এসব গোপন করা যাবে না। এটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যাপক সংঘাত হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। শেষে হয়তো দেখা যাবে, একপক্ষীয় নির্বাচনটাও ‘শান্তিপূর্ণ’ থাকল না। সরকার থেকে বলা হচ্ছে, আন্দোলনকারীরা নির্বাচন বানচাল করতে চাইছে। এমনও তো হতে পারে, আন্দোলনকারীদের বদলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের দিক থেকেই অশান্ত হয়ে উঠল পরিস্থিতি!
সেটি হতে না দেওয়া সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয়ের কোনো শঙ্কা নেই; তবে প্রধানত স্বতন্ত্রদের জোর তৎপরতায় নির্বাচনটা হয়ে উঠতে পারে অশান্তিপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে দক্ষভাবে। তাঁদের কাজ হবে প্রধানত ভোটার টানা, নিজেদের মধ্যে হলেও একটা ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা’র আবহ আনা। তবে যে নির্বাচনে রয়েছে এমপি হওয়ার তুলনামূলক সহজ সুযোগ, সেখানে কতজন কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে চলবেন? এ অবস্থায় অনেকে বলছেন, ক্ষমতাসীন দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তবে এটা ঘিরে সরকারের নতুন কোনো পরিকল্পনা থাকলে ভিন্ন কথা।
২০১৪ থেকে যে ধরনের নির্বাচন হচ্ছে, তাতে সরকারের প্রতিপক্ষ দল অংশ নিলেও দেখা যাচ্ছে—তারা স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারছে না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সেটা ভালোভাবে দেখা গেছে। তারা যে এবারও নির্বাচন বর্জন করল, এর একটি বড় কারণ নিহিত রয়েছে সেই তিক্ত অভিজ্ঞতায়। বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচনে না আসায় সরকার যে অখুশি হয়েছে, তা-ও মনে হয় না। অনেকে মনে করেন, সরকার কৌশলে সেটা বরং নিশ্চিত করেছে। জোটসঙ্গী ও সমমনাদের নিয়েই তারা নির্বাচন সারতে চায়, যাতে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকবে নিশ্চিত। ‘উন্নয়নের ধারা’ বহাল রাখতে এটা প্রয়োজন, এই হলো বয়ান। সমমনারাও এমনটাই মনে করে। এর বিনিময়ে তারা চায় মন্ত্রিত্ব না হলেও নিদেনপক্ষে এমপি পদ।
তবে সরকার এবার চাইতে পারে, ‘নিজেদের মধ্যে’ হলেও একটা সত্যিকারের ভোট হোক। এ অবস্থায় সরকারপক্ষীয় জনসাধারণের ভোট টানারও ক্ষমতা যাদের নেই, তারা পরাস্ত হয়ে মাঠ ছাড়ুক।
এ ধরনের ভোটাভুটির সুযোগও না থাকলে ৭ জানুয়ারি হবে কেবল ফল ঘোষণার দিন। কে কোন আসনে জিতবেন, সেটা মোটামুটি স্থির করা থাকবে। এটা হবে পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন। পরবর্তী সংসদকে ‘বহুদলীয়’ দেখাতে চাইলে এমন নির্বাচন করার প্রয়োজন রয়েছে বৈকি। কেননা জোটসঙ্গী ও সমমনাদের নিজ ক্ষমতায় জিতে আসার সুযোগ নেই বললেই চলে।
এখানে কথা হলো, বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের জিতিয়ে এনে কাকে কী দেখাবে সরকার? দেশ-বিদেশের সবাই জানে, এখানে কীভাবে কী হচ্ছে! তার বদলে নিজেদের মধ্যে একটা সত্যিকারের ভোট করলে কি সেটা ভালো দেখাবে না? আর এ ক্ষেত্রে ভোটার উপস্থিতি যা হয় হবে। সেটা বাড়িয়ে দেখানোরও প্রয়োজন নেই। আইনগত বৈধতায় ভোটের হার কোনো বাধা হবে না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তো সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থী বিনা ভোটে জিতেছিলেন। তাতেও সরকার পরিচালনায় কোনো চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হয়নি। এবারও কোনো সমস্যা হবে না—এমনকি ২০ শতাংশ ভোট পড়লে। নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে বরং সমস্যা।
সরকারকে ঠান্ডা মাথায় তার প্রত্যাশিত নির্বাচনটা সারতে হবে। সঙ্গে প্রস্তুতি রাখতে হবে এ ধরনের নির্বাচন ঘিরে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে নিষেধাজ্ঞা এলে সেটা মোকাবিলার। প্রধান কিছু সূচক বলছে, সামনে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলাও বেশ কঠিন হবে। পশ্চিমাদের পদক্ষেপ এতে দিতে পারে ঘৃতাহুতি। অর্থনীতির বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তেও থাকতে পারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন ঘিরে আলাদা করে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথাও তো তারা বলে রেখেছে। এতে একপক্ষীয় নির্বাচনের ভেতর দিয়ে অঙ্কিত রাজনৈতিক ছকটি অনুসরণ করা সহজ না-ও হতে পারে।
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
২ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৬ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে