অরুণ কর্মকার
হঠাৎ করেই দেশটার যেন এক অনিশ্চিত যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। আগে থেকেই অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। রাজনীতিতে সংঘাতময় বিভেদ-বিসংবাদ তো পুরোনো বিষয়। অর্থনীতিতে টানাপোড়েনও দু-তিন বছর ধরে চলছে এবং তা ক্রমাগতভাবে ঘনীভূত হয়েছে। আইনের শাসনের শৈথিল্য এবং সরকারি নজরদারির দুর্বলতার সুযোগে সৃষ্টি হয়েছে সর্বব্যাপী দুর্নীতি। খেলাপি ঋণের নামে ফতুর করে দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ ব্যাংক। বিদেশে অর্থ পাচার দেশের মেরুদণ্ড বাঁকা করে ফেলেছে।
এই সব অনাচারই চলেছে প্রতিকারহীন ও অব্যাহতভাবে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অসীম হতাশা ও ক্ষোভ। এত কিছু সত্ত্বেও অনেক রকম জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা সরকার করে যাচ্ছে। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে যৌক্তিক ও অরাজনৈতিক একটি ছাত্র আন্দোলন রাজনীতির গতিপথ এবং দেশের যাত্রাপথ পাল্টে দিয়েছে। সে পথের শেষ যে কোথায় এবং সে পথের শেষে কী আছে, তার কোনো কিছুই এখন পর্যন্ত অনুমানযোগ্যও নয়।
তবে নিজ নিজ দলের অবস্থান থেকে রাজনৈতিক দলগুলো নিঃসন্দেহে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দুটি নতুন দৃশ্যপট জনসমক্ষে প্রকট হয়েছে। এর প্রথমটি হচ্ছে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আপাতনির্বিরোধী একটি ছাত্র আন্দোলনের ভয়ংকরভাবে নৃশংস ও ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ তাদের সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং ভবিষ্যতে নতুন মেরুকরণও সৃষ্টি করবে। এই পটভূমিতে দেশে রাজনীতির গতিপথ কোন অভিমুখে ধাবিত হবে, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনের ভয়ংকর নৃশংস ও ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠার জন্য সরকার ও সরকারি দলের দায় আছে বলে মনে করা হয়। কারণ এই ছাত্র আন্দোলনের শুরুতে সরকারের তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। হলে পরিস্থিতি অবশ্যই অন্য রকম হতে পারত। এর পরের কথা হলো, সরকারি দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগকে আন্দোলনরত ছাত্রদের প্রতিপক্ষ করে রাস্তায় নামানো। মূলত এ কারণেই আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠী নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সুযোগ পেয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞ এবং সরকারের পক্ষের লোকদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে, এসব কাজের পদ্ধতির মধ্যে। যেমন কাউকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা জঙ্গিদের একটি ‘ট্রেডমার্ক সিম্বল’। এটা আফগানিস্তানে দেখা যায়। অতীতে বাংলা ভাইয়েরা এটা করেছেন। এখন আবার দেখা যাচ্ছে। কোনো অবকাঠামো পোড়ানো বা তছনছ করার ক্ষেত্রেও জঙ্গিদের আলাদা স্টাইল আছে, যা এবারের ঘটনাবলিতেও দেখা গেছে।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। আমরা সবাই, মানে সরকার, বিরোধী দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সবাই বলছি যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জড়িত নয়। সাধারণভাবে কথাটি সঠিক হতে পারে। কিন্তু মাঠে যখন ছাত্রলীগ প্রবেশ করল, তখন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গোষ্ঠীর সঙ্গে বুঝে হোক কিংবা না বুঝে, আন্দোলনরত অনেক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ছিল। গণমাধ্যমকর্মীরা কাছে থেকে তা দেখেছেন। হয়তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিসিটিভি ফুটেজগুলোয় তার প্রমাণ পাবে।
তা ছাড়া আন্দোলনরত সবাই কি সাধারণ শিক্ষার্থী? বিশেষ করে যাঁরা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন? তাঁদের কি অতীত কিংবা বর্তমান কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই? গণমাধ্যমে তাঁদের যে পরিচয় বেরিয়েছে, সে অনুযায়ী তাঁরা তো প্রায় সবাই নুরুল হক নুরের অধিকার আন্দোলনের বিভিন্ন সারির নেতা ছিলেন। পরে অবশ্য তাঁরা দ্বিধাবিভক্ত হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা যখন একত্রে ছিলেন, তখন যে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে অর্থ পেতেন, সে কথা তো তাঁদের দলের শীর্ষ নেতারাই দ্বিধাবিভক্তির পর প্রকাশ করেছেন। তা ছাড়া এখনো তাঁরা প্রত্যেকে দ্বিধাবিভক্ত অধিকার আন্দোলনের একাংশের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের প্রথম সারির নেতা।
আমি বলছি না যে তাঁদের এই সাংগঠনিক পরিচয়ের কারণে কোনো সমস্যা হয়েছে; বরং আমি তাঁদের ধন্যবাদ ও অভিবাদন জানাই এই জন্য যে তাঁরা সাধারণ ছাত্রদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থসংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ে বিরাট ছাত্র-গণ-আন্দোলন সংগঠিত করে সাফল্য এনেছেন, প্রচলিত ধারার কোনো ছাত্রসংগঠন যার ধারেকাছেও যেতে পারেনি। এমনকি তাদের ভাবনায়ও বোধ হয় বিষয়টি কখনো আসেনি। পাশাপাশি আমি এ কথাও বলব যে তাঁদের যে রাজনৈতিক অতীত তা কিন্তু গণতন্ত্র কিংবা নিয়ম-নীতির সঙ্গে খুব একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে অর্থ নেওয়া যার প্রমাণ। আমি জানি না, বর্তমানে তাঁদের সাংগঠনিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী? কিছু একটা তো নিশ্চয়ই আছে।
লক্ষণীয় যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টির যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সমাধান হওয়ার পরও আন্দোলন থামেনি। অবশ্য আপিল বিভাগের রায়ের আগেই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এবং দুই শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে এবং হত্যাকাণ্ডের বিচার, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াসহ যে দাবিগুলো তোলা হয়েছে, সেগুলোর যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে এটাও লক্ষণীয়, আন্দোলনের নেতারা যে ভাষায় বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন, তাতে সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর স্পষ্ট উপাদান বিদ্যমান। সুতরাং ধারণা করা যায়, শিগগিরই সব সমস্যার সমাধান না-ও হতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের এই সব দাবি রাজনীতিকেও প্রভাবিত করে যেতে পারে আরও অনেক দিন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যে প্রভাব ইতিমধ্যে দেশের রাজনীতিতে পড়েছে তার পরিণতি হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বেআইনি ঘোষণা করা। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি এ দেশের গণতান্ত্রিক মহল দীর্ঘদিন থেকেই করে এসেছে। সরকারও যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন সময় কিছু কিছু গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে রেখেছে। সে হিসেবে বিষয়টি হঠাৎ করে একেবারে নতুন হিসেবে সামনে আসেনি। তবে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকার যে সময়টা বেছে নিয়েছে, সেটি নিয়ে কিছু কথা বলা যায়, কিছু প্রশ্নও তোলা যায়, যা অনেকেই বলছেন, করছেন।
যেমন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে সরকার কি তা থেকে জনসাধারণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কৌশল হিসেবে এ সময় জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করল? এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান অবশ্য স্পষ্ট। সরকার মনে করে, কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে যেসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তাতে অন্যান্য নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের জঙ্গিরাও অংশ নিয়েছে। সুতরাং তাদের বৈধ রাজনীতির অধিকার থাকা আর নিষিদ্ধ থাকার মধ্যে নীতিগত কোনো তফাত হবে না। তাই সন্ত্রাসী দল ও সংগঠন হিসেবে তাদের নিষিদ্ধ করে দেওয়াই ভালো।
এ-সংক্রান্ত আরও যে প্রশ্নটি আলোচিত হচ্ছে তা হলো, নিষিদ্ধ করে জামায়াত-শিবিরকে দমিয়ে রাখা সরকারের জন্য সহজ হবে, নাকি আরও কঠিন হবে? এ বিষয়ে সরকারের ভাবনা কিংবা কৌশলের কথা আমরা জানি না। তবে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত-শিবির যদি নতুন নামে দল গঠন করে রাজনীতি করে, তাহলে বিষয়টি হবে এক রকম। আর যদি জামায়াত-শিবির নাম বহাল রেখে আন্ডারগ্রাউন্ড দল হিসেবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে চায়, তাহলে বিষয়টি হবে অন্য রকম।
তা সে যে পরিস্থিতিতে যেমনই হোক না কেন, মূলত শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে যে নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার গতিপথ কোন অভিমুখে ধাবিত হবে—সেটাই এখন পর্যবেক্ষণের বিষয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
হঠাৎ করেই দেশটার যেন এক অনিশ্চিত যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। আগে থেকেই অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। রাজনীতিতে সংঘাতময় বিভেদ-বিসংবাদ তো পুরোনো বিষয়। অর্থনীতিতে টানাপোড়েনও দু-তিন বছর ধরে চলছে এবং তা ক্রমাগতভাবে ঘনীভূত হয়েছে। আইনের শাসনের শৈথিল্য এবং সরকারি নজরদারির দুর্বলতার সুযোগে সৃষ্টি হয়েছে সর্বব্যাপী দুর্নীতি। খেলাপি ঋণের নামে ফতুর করে দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ ব্যাংক। বিদেশে অর্থ পাচার দেশের মেরুদণ্ড বাঁকা করে ফেলেছে।
এই সব অনাচারই চলেছে প্রতিকারহীন ও অব্যাহতভাবে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অসীম হতাশা ও ক্ষোভ। এত কিছু সত্ত্বেও অনেক রকম জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা সরকার করে যাচ্ছে। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে যৌক্তিক ও অরাজনৈতিক একটি ছাত্র আন্দোলন রাজনীতির গতিপথ এবং দেশের যাত্রাপথ পাল্টে দিয়েছে। সে পথের শেষ যে কোথায় এবং সে পথের শেষে কী আছে, তার কোনো কিছুই এখন পর্যন্ত অনুমানযোগ্যও নয়।
তবে নিজ নিজ দলের অবস্থান থেকে রাজনৈতিক দলগুলো নিঃসন্দেহে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দুটি নতুন দৃশ্যপট জনসমক্ষে প্রকট হয়েছে। এর প্রথমটি হচ্ছে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আপাতনির্বিরোধী একটি ছাত্র আন্দোলনের ভয়ংকরভাবে নৃশংস ও ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ তাদের সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং ভবিষ্যতে নতুন মেরুকরণও সৃষ্টি করবে। এই পটভূমিতে দেশে রাজনীতির গতিপথ কোন অভিমুখে ধাবিত হবে, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনের ভয়ংকর নৃশংস ও ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠার জন্য সরকার ও সরকারি দলের দায় আছে বলে মনে করা হয়। কারণ এই ছাত্র আন্দোলনের শুরুতে সরকারের তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। হলে পরিস্থিতি অবশ্যই অন্য রকম হতে পারত। এর পরের কথা হলো, সরকারি দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগকে আন্দোলনরত ছাত্রদের প্রতিপক্ষ করে রাস্তায় নামানো। মূলত এ কারণেই আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠী নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সুযোগ পেয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞ এবং সরকারের পক্ষের লোকদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে, এসব কাজের পদ্ধতির মধ্যে। যেমন কাউকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা জঙ্গিদের একটি ‘ট্রেডমার্ক সিম্বল’। এটা আফগানিস্তানে দেখা যায়। অতীতে বাংলা ভাইয়েরা এটা করেছেন। এখন আবার দেখা যাচ্ছে। কোনো অবকাঠামো পোড়ানো বা তছনছ করার ক্ষেত্রেও জঙ্গিদের আলাদা স্টাইল আছে, যা এবারের ঘটনাবলিতেও দেখা গেছে।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। আমরা সবাই, মানে সরকার, বিরোধী দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সবাই বলছি যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জড়িত নয়। সাধারণভাবে কথাটি সঠিক হতে পারে। কিন্তু মাঠে যখন ছাত্রলীগ প্রবেশ করল, তখন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গোষ্ঠীর সঙ্গে বুঝে হোক কিংবা না বুঝে, আন্দোলনরত অনেক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ছিল। গণমাধ্যমকর্মীরা কাছে থেকে তা দেখেছেন। হয়তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিসিটিভি ফুটেজগুলোয় তার প্রমাণ পাবে।
তা ছাড়া আন্দোলনরত সবাই কি সাধারণ শিক্ষার্থী? বিশেষ করে যাঁরা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন? তাঁদের কি অতীত কিংবা বর্তমান কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই? গণমাধ্যমে তাঁদের যে পরিচয় বেরিয়েছে, সে অনুযায়ী তাঁরা তো প্রায় সবাই নুরুল হক নুরের অধিকার আন্দোলনের বিভিন্ন সারির নেতা ছিলেন। পরে অবশ্য তাঁরা দ্বিধাবিভক্ত হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা যখন একত্রে ছিলেন, তখন যে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে অর্থ পেতেন, সে কথা তো তাঁদের দলের শীর্ষ নেতারাই দ্বিধাবিভক্তির পর প্রকাশ করেছেন। তা ছাড়া এখনো তাঁরা প্রত্যেকে দ্বিধাবিভক্ত অধিকার আন্দোলনের একাংশের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের প্রথম সারির নেতা।
আমি বলছি না যে তাঁদের এই সাংগঠনিক পরিচয়ের কারণে কোনো সমস্যা হয়েছে; বরং আমি তাঁদের ধন্যবাদ ও অভিবাদন জানাই এই জন্য যে তাঁরা সাধারণ ছাত্রদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থসংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ে বিরাট ছাত্র-গণ-আন্দোলন সংগঠিত করে সাফল্য এনেছেন, প্রচলিত ধারার কোনো ছাত্রসংগঠন যার ধারেকাছেও যেতে পারেনি। এমনকি তাদের ভাবনায়ও বোধ হয় বিষয়টি কখনো আসেনি। পাশাপাশি আমি এ কথাও বলব যে তাঁদের যে রাজনৈতিক অতীত তা কিন্তু গণতন্ত্র কিংবা নিয়ম-নীতির সঙ্গে খুব একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে অর্থ নেওয়া যার প্রমাণ। আমি জানি না, বর্তমানে তাঁদের সাংগঠনিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী? কিছু একটা তো নিশ্চয়ই আছে।
লক্ষণীয় যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টির যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সমাধান হওয়ার পরও আন্দোলন থামেনি। অবশ্য আপিল বিভাগের রায়ের আগেই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এবং দুই শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে এবং হত্যাকাণ্ডের বিচার, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াসহ যে দাবিগুলো তোলা হয়েছে, সেগুলোর যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে এটাও লক্ষণীয়, আন্দোলনের নেতারা যে ভাষায় বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন, তাতে সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর স্পষ্ট উপাদান বিদ্যমান। সুতরাং ধারণা করা যায়, শিগগিরই সব সমস্যার সমাধান না-ও হতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের এই সব দাবি রাজনীতিকেও প্রভাবিত করে যেতে পারে আরও অনেক দিন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যে প্রভাব ইতিমধ্যে দেশের রাজনীতিতে পড়েছে তার পরিণতি হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বেআইনি ঘোষণা করা। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি এ দেশের গণতান্ত্রিক মহল দীর্ঘদিন থেকেই করে এসেছে। সরকারও যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন সময় কিছু কিছু গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে রেখেছে। সে হিসেবে বিষয়টি হঠাৎ করে একেবারে নতুন হিসেবে সামনে আসেনি। তবে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকার যে সময়টা বেছে নিয়েছে, সেটি নিয়ে কিছু কথা বলা যায়, কিছু প্রশ্নও তোলা যায়, যা অনেকেই বলছেন, করছেন।
যেমন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে সরকার কি তা থেকে জনসাধারণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কৌশল হিসেবে এ সময় জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করল? এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান অবশ্য স্পষ্ট। সরকার মনে করে, কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে যেসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তাতে অন্যান্য নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের জঙ্গিরাও অংশ নিয়েছে। সুতরাং তাদের বৈধ রাজনীতির অধিকার থাকা আর নিষিদ্ধ থাকার মধ্যে নীতিগত কোনো তফাত হবে না। তাই সন্ত্রাসী দল ও সংগঠন হিসেবে তাদের নিষিদ্ধ করে দেওয়াই ভালো।
এ-সংক্রান্ত আরও যে প্রশ্নটি আলোচিত হচ্ছে তা হলো, নিষিদ্ধ করে জামায়াত-শিবিরকে দমিয়ে রাখা সরকারের জন্য সহজ হবে, নাকি আরও কঠিন হবে? এ বিষয়ে সরকারের ভাবনা কিংবা কৌশলের কথা আমরা জানি না। তবে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত-শিবির যদি নতুন নামে দল গঠন করে রাজনীতি করে, তাহলে বিষয়টি হবে এক রকম। আর যদি জামায়াত-শিবির নাম বহাল রেখে আন্ডারগ্রাউন্ড দল হিসেবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে চায়, তাহলে বিষয়টি হবে অন্য রকম।
তা সে যে পরিস্থিতিতে যেমনই হোক না কেন, মূলত শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে যে নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার গতিপথ কোন অভিমুখে ধাবিত হবে—সেটাই এখন পর্যবেক্ষণের বিষয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে