স্বপ্না রেজা
মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, দেশের স্বাস্থ্যসেবা ও এর গুণগত মান নিয়ে জনমনে অসন্তোষ রয়েছে। রয়েছে হতাশা। চিকিৎসাসেবা এখন আর সেবা নয়, শীর্ষ বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, সাধারণ জনগণ তার ভিটেমাটি বিক্রি করে বেঁচে থাকার অভিপ্রায়ে চিকিৎসা-বাণিজ্যে নিজেদের সমর্পিত করে। এর ওপর রয়েছে চিকিৎসকদের অবহেলা, ভুল চিকিৎসা। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দুর্নীতির কথা ঘুরেফিরে আসে। আজ আপনার সমীপে, দুটি কথা বলছি।
অতিমারি করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছিল এবং বলতেই হয় সেটা সম্ভব হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তিনি যেভাবে করোনা মোকাবিলার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ, পরামর্শ ও দেখভাল করেছেন, তাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ দিকে যেতে পারেনি বলে অনেকেই তা মনে করেন। একে তো বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ এবং সেই দেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নত দেশের মতো নয়। এতে অতিমারি করোনা নিয়ে সব স্তরের জনগণের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক কাজ করেছিল; বিশেষ করে যেখানে করোনা মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলো রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল, নিরুপায় হয়ে পড়েছিল। করোনাকে প্রতিহত করার মতো কোনো শক্তি, সামর্থ্য, আবিষ্কার ছিল না উন্নত দেশগুলোয়, এমন এক ভয়াবহ বৈশ্বিক বিপর্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশের পরিণতি কী হতে পারে, তা নিয়ে ছিল নানান আতঙ্ক আর আশঙ্কা। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাস্তবধর্মী উপযুক্ত দিকনির্দেশনা ও হস্তক্ষেপে অতিমারি করোনার ছোবল এ দেশের জনগণের ওপর তেমন প্রবলভাবে পড়েনি। সরকারপ্রধান যেভাবে দেশের প্রতিটি নাগরিককে বিনা মূল্যে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, সেটাও ছিল তাঁর যুগান্তকারী দায়িত্ববোধ ও মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। উন্নয়নশীল দেশে করোনা প্রতিহত করার এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয় এবং সাহসের তো বটেই।
আবার এটাও না বললেই নয়, অতিমারি করোনার মতো এক ভয়ংকর পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় কতিপয় অসাধু ব্যক্তির কারণে দুর্নীতি দেখা গেছে, তাদের দুর্নীতির বিষয়টি জনসম্মুখে এসেছে। দুর্নীতিগ্রস্তদের অতিমারি করোনাও পারেনি দুর্নীতি থেকে বিরত রাখতে। সেই সময়ে যদিও তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে, শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং কেউ কেউ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিও পেয়েছে। বলা বাহুল্য, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় মহা দুর্নীতি—এমন আলোচনা, সমালোচনা, অসন্তোষ বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। প্রতিবছর স্বাস্থ্য খাতে সরকারের উপযুক্ত বরাদ্দ, পরিকল্পনা, জনবল নিয়োগ এবং প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা থাকলেও দুর্নীতিগ্রস্ত কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্টদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা জনগণের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠছে না। জনগণের জন্য নিরাপদ যেমন হতে পারছে না, তেমনি চিকিৎসাসেবা জনগণের আয়-সক্ষমতার মাঝে সহনীয় থাকছে না।
এটা সত্য, স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে। হয়েছে অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন। রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। কোনো কোনো জেলা হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ স্থাপন করা এবং সেই উপযোগী দামি ও ভারী যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয় বলেও জানা যায়। কিন্তু কোনোভাবেই জানা সম্ভব হয় না, এত আয়োজনের পর চিকিৎসাসেবার গুণগত মান কেমন এবং এই সেবা নিয়মিত ও সবাই সন্তুষ্টিসহকারে পাচ্ছে কি না, তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববানেরা আদতে জানেন কি না, কিংবা জানার চেষ্টা করেন কি না। প্রচারমাধ্যমে প্রায়ই সংবাদ হয়ে এসেছে, কোনো কোনো জেলা হাসপাতালের আইসিইউ বা সিসিইউর সব যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে শুধু সেগুলো অব্যবহৃত থাকার কারণে। করোনার সময়ে এই অব্যবস্থাপনার বিষয়টি জনসম্মুখে আসে। অব্যবহৃত থাকার কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, উপযুক্ত লোকবলের অভাব। কী অপরিণত, অপরিপক্ব আর দায়িত্বহীন অজুহাত দিনের পর দিন, তা ভাবতেই হতাশ হতে হয়। এমন মাথা ও মেধা দিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রতিষ্ঠান চললে রোগ নিরাময়ের ফলাফল কখনোই ভালো হয় না। আবার উপজেলা ও জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসকদের রয়েছে অবস্থান ও কাজ করার প্রবল অনীহা। এমনও দেখা যায়, তাঁদের কেউ কেউ সপ্তাহের এক-দুদিন কর্মক্ষেত্রে কোনো রকম হাজিরা দিয়ে শহর বা রাজধানীতে চলে আসেন। সেখানে তাঁরা বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা-বাণিজ্যে যুক্ত হন।
স্বাস্থ্যব্যবস্থায় স্থাপনা নির্মাণ, যন্ত্রপাতি ও ওষুধ ক্রয়, বিদেশ ভ্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে যতটা আগ্রহ ও মনোযোগী হতে দেখা যায়, চিকিৎসাসেবাকে পরিপূর্ণভাবে পরিচালনা, নিয়মিতকরণ ও এর গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখার জন্য তেমন একনিষ্ঠ উদ্যোগ বা তৎপরতা দেখা যায় না। বলা বাহুল্য, অনেকে মনে করেন যে উল্লিখিত সব কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা ও লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে বেশি। একজন রসিকতা করে বলছিলেন, সমাজে একটা সময়ে এমন ধারণার প্রচলন ছিল—পুলিশের অবৈধ আয়ের সুযোগ বেশি। এখন সেই ধারণার সঙ্গে নতুন ধারণা ও বিশ্বাস যুক্ত হয়েছে—যাঁরা চিকিৎসাব্যবস্থা ও সেবার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের অবৈধ, অনৈতিক আয়ের সুযোগ বেশি। তাঁদের ধনসম্পদের পরিমাণ ও উৎস খতিয়ে দেখলে এর বাস্তব অবস্থা অনুধাবন করা সহজ হবে। দেখা যায়, সাধারণ জনগণ যে বিষয়গুলোর প্রতি অতিমাত্রায় দুর্বল ও সংবেদনশীল থাকে, থাকে তাদের নির্ভরশীলতা—যেমন খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা। এ বিষয়গুলোতেই তাদের জিম্মি করে ফেলে কতিপয় অসাধু ও অসৎ ব্যক্তি, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। বলতে দ্বিধা নেই, সেবাদানকারী বিভাগের কাছেই সাধারণ জনগণের অসহায়ত্ব বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে যোগ্যতা, সক্ষমতা ও উপযুক্ততা নেই এমন অনেক অবৈধ হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। রেজিস্ট্রেশনবিহীন ক্লিনিক ভূরি ভূরি। চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রি নেই অথচ এমন ব্যক্তি চিকিৎসাসেবা দেন, অস্ত্রোপচার করেন এবং সেটা প্রকাশ্যে। জেলা পর্যায়ে এমন নজির অজস্র। অথচ সেখানে একজন সিভিল সার্জন থাকেন জেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা দেখভাল ও এর গুণগত মান সুরক্ষার জন্য। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁদের কেউ কেউ বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন দ্রুত। দুর্ঘটনা ঘটার আগে সিভিল সার্জনের কাজটা কী তবে?
দেশের চিকিৎসাসেবার প্রতি আস্থা হারিয়ে অনেক রোগী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যান। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশের রোগীর সংখ্যা ৬০ ভাগের বেশি। কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু ইত্যাদি শহরে হোটেল ও অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য যেমন সচল থাকছে, তেমনি সেখানকার হাসপাতালগুলো সচল থাকছে বাংলাদেশের রোগীদের জন্য। চিকিৎসার কারণে যে পরিমাণ অর্থ রোগীদের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ভারতে যায়, এর হিসাব করা হলে বড় ধরনের টাকার অঙ্ক বেরিয়ে আসবে। এটা তো নিশ্চিত, এই পরিমাণ অর্থ দেশে থাকলে লাভটা দেশেরই হয়।
মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, দেশে ভালো ও মানবিক চিকিৎসকও আছেন। আছেন নির্লোভ চিকিৎসক, যাঁরা আর্তমানবতার মানসিকতা নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসাসেবার মধ্য দিয়ে তাঁদের দেশপ্রেম ও দেশের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা প্রতীয়মান হয়। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ভালো কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন, যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত নন। এমন ভালো ব্যক্তিদের নিয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঢেলে সাজান। প্রতিটি কাজের জবাবদিহির পথ খোলা রাখুন। কাজের গুণগত মনিটরিং ও প্রত্যেকের নিরপেক্ষ মূল্যায়নের ব্যবস্থা নিন এবং সেবাগ্রহণকারীরাই হোক প্রকৃত মূল্যায়নকারী। আমি বিশ্বাস করি, স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সাধারণ জনমনে যে দাহ, তা আপনিই নেভাতে পারবেন।
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, দেশের স্বাস্থ্যসেবা ও এর গুণগত মান নিয়ে জনমনে অসন্তোষ রয়েছে। রয়েছে হতাশা। চিকিৎসাসেবা এখন আর সেবা নয়, শীর্ষ বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, সাধারণ জনগণ তার ভিটেমাটি বিক্রি করে বেঁচে থাকার অভিপ্রায়ে চিকিৎসা-বাণিজ্যে নিজেদের সমর্পিত করে। এর ওপর রয়েছে চিকিৎসকদের অবহেলা, ভুল চিকিৎসা। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দুর্নীতির কথা ঘুরেফিরে আসে। আজ আপনার সমীপে, দুটি কথা বলছি।
অতিমারি করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছিল এবং বলতেই হয় সেটা সম্ভব হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তিনি যেভাবে করোনা মোকাবিলার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ, পরামর্শ ও দেখভাল করেছেন, তাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ দিকে যেতে পারেনি বলে অনেকেই তা মনে করেন। একে তো বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ এবং সেই দেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নত দেশের মতো নয়। এতে অতিমারি করোনা নিয়ে সব স্তরের জনগণের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক কাজ করেছিল; বিশেষ করে যেখানে করোনা মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলো রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল, নিরুপায় হয়ে পড়েছিল। করোনাকে প্রতিহত করার মতো কোনো শক্তি, সামর্থ্য, আবিষ্কার ছিল না উন্নত দেশগুলোয়, এমন এক ভয়াবহ বৈশ্বিক বিপর্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশের পরিণতি কী হতে পারে, তা নিয়ে ছিল নানান আতঙ্ক আর আশঙ্কা। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাস্তবধর্মী উপযুক্ত দিকনির্দেশনা ও হস্তক্ষেপে অতিমারি করোনার ছোবল এ দেশের জনগণের ওপর তেমন প্রবলভাবে পড়েনি। সরকারপ্রধান যেভাবে দেশের প্রতিটি নাগরিককে বিনা মূল্যে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, সেটাও ছিল তাঁর যুগান্তকারী দায়িত্ববোধ ও মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। উন্নয়নশীল দেশে করোনা প্রতিহত করার এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয় এবং সাহসের তো বটেই।
আবার এটাও না বললেই নয়, অতিমারি করোনার মতো এক ভয়ংকর পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় কতিপয় অসাধু ব্যক্তির কারণে দুর্নীতি দেখা গেছে, তাদের দুর্নীতির বিষয়টি জনসম্মুখে এসেছে। দুর্নীতিগ্রস্তদের অতিমারি করোনাও পারেনি দুর্নীতি থেকে বিরত রাখতে। সেই সময়ে যদিও তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে, শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং কেউ কেউ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিও পেয়েছে। বলা বাহুল্য, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় মহা দুর্নীতি—এমন আলোচনা, সমালোচনা, অসন্তোষ বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। প্রতিবছর স্বাস্থ্য খাতে সরকারের উপযুক্ত বরাদ্দ, পরিকল্পনা, জনবল নিয়োগ এবং প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা থাকলেও দুর্নীতিগ্রস্ত কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্টদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা জনগণের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠছে না। জনগণের জন্য নিরাপদ যেমন হতে পারছে না, তেমনি চিকিৎসাসেবা জনগণের আয়-সক্ষমতার মাঝে সহনীয় থাকছে না।
এটা সত্য, স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে। হয়েছে অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন। রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। কোনো কোনো জেলা হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ স্থাপন করা এবং সেই উপযোগী দামি ও ভারী যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয় বলেও জানা যায়। কিন্তু কোনোভাবেই জানা সম্ভব হয় না, এত আয়োজনের পর চিকিৎসাসেবার গুণগত মান কেমন এবং এই সেবা নিয়মিত ও সবাই সন্তুষ্টিসহকারে পাচ্ছে কি না, তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববানেরা আদতে জানেন কি না, কিংবা জানার চেষ্টা করেন কি না। প্রচারমাধ্যমে প্রায়ই সংবাদ হয়ে এসেছে, কোনো কোনো জেলা হাসপাতালের আইসিইউ বা সিসিইউর সব যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে শুধু সেগুলো অব্যবহৃত থাকার কারণে। করোনার সময়ে এই অব্যবস্থাপনার বিষয়টি জনসম্মুখে আসে। অব্যবহৃত থাকার কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, উপযুক্ত লোকবলের অভাব। কী অপরিণত, অপরিপক্ব আর দায়িত্বহীন অজুহাত দিনের পর দিন, তা ভাবতেই হতাশ হতে হয়। এমন মাথা ও মেধা দিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রতিষ্ঠান চললে রোগ নিরাময়ের ফলাফল কখনোই ভালো হয় না। আবার উপজেলা ও জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসকদের রয়েছে অবস্থান ও কাজ করার প্রবল অনীহা। এমনও দেখা যায়, তাঁদের কেউ কেউ সপ্তাহের এক-দুদিন কর্মক্ষেত্রে কোনো রকম হাজিরা দিয়ে শহর বা রাজধানীতে চলে আসেন। সেখানে তাঁরা বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা-বাণিজ্যে যুক্ত হন।
স্বাস্থ্যব্যবস্থায় স্থাপনা নির্মাণ, যন্ত্রপাতি ও ওষুধ ক্রয়, বিদেশ ভ্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে যতটা আগ্রহ ও মনোযোগী হতে দেখা যায়, চিকিৎসাসেবাকে পরিপূর্ণভাবে পরিচালনা, নিয়মিতকরণ ও এর গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখার জন্য তেমন একনিষ্ঠ উদ্যোগ বা তৎপরতা দেখা যায় না। বলা বাহুল্য, অনেকে মনে করেন যে উল্লিখিত সব কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা ও লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে বেশি। একজন রসিকতা করে বলছিলেন, সমাজে একটা সময়ে এমন ধারণার প্রচলন ছিল—পুলিশের অবৈধ আয়ের সুযোগ বেশি। এখন সেই ধারণার সঙ্গে নতুন ধারণা ও বিশ্বাস যুক্ত হয়েছে—যাঁরা চিকিৎসাব্যবস্থা ও সেবার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের অবৈধ, অনৈতিক আয়ের সুযোগ বেশি। তাঁদের ধনসম্পদের পরিমাণ ও উৎস খতিয়ে দেখলে এর বাস্তব অবস্থা অনুধাবন করা সহজ হবে। দেখা যায়, সাধারণ জনগণ যে বিষয়গুলোর প্রতি অতিমাত্রায় দুর্বল ও সংবেদনশীল থাকে, থাকে তাদের নির্ভরশীলতা—যেমন খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা। এ বিষয়গুলোতেই তাদের জিম্মি করে ফেলে কতিপয় অসাধু ও অসৎ ব্যক্তি, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। বলতে দ্বিধা নেই, সেবাদানকারী বিভাগের কাছেই সাধারণ জনগণের অসহায়ত্ব বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে যোগ্যতা, সক্ষমতা ও উপযুক্ততা নেই এমন অনেক অবৈধ হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। রেজিস্ট্রেশনবিহীন ক্লিনিক ভূরি ভূরি। চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রি নেই অথচ এমন ব্যক্তি চিকিৎসাসেবা দেন, অস্ত্রোপচার করেন এবং সেটা প্রকাশ্যে। জেলা পর্যায়ে এমন নজির অজস্র। অথচ সেখানে একজন সিভিল সার্জন থাকেন জেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা দেখভাল ও এর গুণগত মান সুরক্ষার জন্য। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁদের কেউ কেউ বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন দ্রুত। দুর্ঘটনা ঘটার আগে সিভিল সার্জনের কাজটা কী তবে?
দেশের চিকিৎসাসেবার প্রতি আস্থা হারিয়ে অনেক রোগী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যান। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশের রোগীর সংখ্যা ৬০ ভাগের বেশি। কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু ইত্যাদি শহরে হোটেল ও অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য যেমন সচল থাকছে, তেমনি সেখানকার হাসপাতালগুলো সচল থাকছে বাংলাদেশের রোগীদের জন্য। চিকিৎসার কারণে যে পরিমাণ অর্থ রোগীদের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ভারতে যায়, এর হিসাব করা হলে বড় ধরনের টাকার অঙ্ক বেরিয়ে আসবে। এটা তো নিশ্চিত, এই পরিমাণ অর্থ দেশে থাকলে লাভটা দেশেরই হয়।
মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, দেশে ভালো ও মানবিক চিকিৎসকও আছেন। আছেন নির্লোভ চিকিৎসক, যাঁরা আর্তমানবতার মানসিকতা নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসাসেবার মধ্য দিয়ে তাঁদের দেশপ্রেম ও দেশের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা প্রতীয়মান হয়। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ভালো কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন, যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত নন। এমন ভালো ব্যক্তিদের নিয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঢেলে সাজান। প্রতিটি কাজের জবাবদিহির পথ খোলা রাখুন। কাজের গুণগত মনিটরিং ও প্রত্যেকের নিরপেক্ষ মূল্যায়নের ব্যবস্থা নিন এবং সেবাগ্রহণকারীরাই হোক প্রকৃত মূল্যায়নকারী। আমি বিশ্বাস করি, স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সাধারণ জনমনে যে দাহ, তা আপনিই নেভাতে পারবেন।
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে