ড. মো. ফখরুল ইসলাম
খুব অল্পদিনের মধ্যে দানব হয়ে উঠেছে দ্রব্যমূল্য। এই দানব ফ্রাংকেনস্টাইনের আলোচিত ভয়ংকর দানবকে হার মানিয়েছে। মেরি শেলির উপন্যাস ‘ফ্রাংকেনস্টাইন অর দ্য মডার্ন প্রমিথিউস’-এর এক বিখ্যাত চরিত্র বিজ্ঞানী ফ্রাংকেনস্টাইন। যিনি নিজের গবেষণায় বিশেষ ধরনের বিজ্ঞান আয়ত্ত করেন। যার মাধ্যমে মৃত আত্মাকে জীবনদান করা সম্ভব হয়। এ পরীক্ষাটি এ জন্য, মৃত ব্যক্তির ওপর করলে মৃত ব্যক্তিটি বেঁচে ওঠে কিন্তু পরিণত হয় এক ভয়ংকর দানবে। এই দানব দেখতে ছিল কুৎসিত। তাকে দেখে ফ্রাংকেনস্টাইন ভয় পেয়ে দুর্ব্যবহার করলে সে প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করে। দানবটি ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে, তার পরিবার, আত্মীয়স্বজনদের হত্যা করতে থাকে। একদিন ফ্রাংকেনস্টাইনকেই হত্যার জন্য ধাওয়া করলে সে দৌড়ে বনের মধ্যে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। কিন্তু নির্জন বনে মারা যায়। ফ্রাংকেনস্টাইনের মৃত্যুর সংবাদ জানার পর দানব আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং একদিন চিরতরে হারিয়ে যায়। তাকে আর কোনো দিন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বলা হচ্ছে, করোনার প্রভাব, ইউক্রেন যুদ্ধ, দাবানল, বন্যা, মাঙ্কিপক্স, তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বিশ্ববাণিজ্য ও আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে নিত্যপণ্যের বাজারদরে আগুন লেগেছে। সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ায় ধস নেমেছে চারদিকে। দরদামের দুর্যোগ নেমে সুযোগসন্ধানী মূল্য-সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সৃষ্ট দানব চরিত্রের মৃত আত্মা পুনরুজ্জীবন লাভ করে ক্রমান্বয়ে শক্তি সঞ্চারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে নিয়েছে বাজারের সবকিছু। দখল করে ফেলে গোগ্রাসে চারদিকের সবকিছুকে খেয়ে সাবাড় করে দিচ্ছে যেন।
এবার শুধু লোভী ব্যবসায়ী নয়, নেমে পড়েছে সুযোগসন্ধানী মূল্য-সন্ত্রাসী দানবরা। তারা কাউকে ভয় করে না। বাজারে কত নামে, কত আবরণে, কত আভরণে কতশত নিয়ন্ত্রক টিম নিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। নিত্যপণ্য মূল্যের মনিটরিং চলছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ছেড়ে দেওয়া পাগলা ঘোড়াকে কোনোভাবে বেড়ি পরানো যাচ্ছে না। সবাই যেন একপ্রকার হাল ছেড়ে দিয়ে কাল্পনিক দানবকে দোষারোপ করে পার পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে কেউ শিগগির পার পাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। এই নাজুক অবস্থা আর কত দূর, কোথায় গিয়ে থামবে—তার কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না। আক্ষেপ করছেন প্রতিদিনের খাবারের বাজেটে কাটছাঁট করতে থাকা স্বল্প আয়ের নিরীহ মানুষগুলো।
তেমনি একজন আমাদের প্রতিবেশী। তাঁর নাম বলা হলো না। তবে তিনি কাজপাগল। সবার আগে অফিসে আসা এবং সবাই অফিস শেষে চলে যাওয়ার পর তাঁকে বাসায় ফিরতে হয়। তাঁর পরিবারে অনেকে আছেন। তাঁরা নিজেরা অতিব্যস্ত থাকেন। তাই তাঁর খোঁজখবর ঠিকমতো নিতে পারেন না আপনজনেরা। খুব সকালে এসে অফিসের তালা খুলে সবকিছু গুছিয়ে রেখে তিনি সকালের নাশতা সারেন দুটি রুটি ও সবজি ভাজি দিয়ে। কোনো কোনো দিন ডাল-পরোটা খান। বছর দুয়েক আগে পরোটার দাম ছিল ৫ টাকা। ২০ টাকায় নাশতা হয়ে যেত। এখন ৫০ টাকায়ও টানাটানি হয়।
দুপুরের খাবারে তাঁর পছন্দ খিচুড়ি ও একটি ডিম ভাজা। এক প্লেট খিচুড়ি ও একটি মুরগির ডিম এক বছর আগেও ৩০ টাকায় পাওয়া যেত। সেটা অফিসের কাছাকাছি অস্থায়ী খোলা দোকানে।
এরপর ছয় মাস আগে হঠাৎ একদিন ৫০ টাকা হয়ে গেল। কারণ, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছিল তখন। গত কয়েক দিন একই খাবারের মূল্য ৬০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। একটি ডিম ভাজার দাম বেড়ে নাকি ২০ টাকা হয়েছে! এ জন্য তিনি খুব নাখোশ।
তাঁর কথা হলো, ডিম, দুধের সাদা বিপ্লব কি শেষ হয়ে গেল? তাঁর বয়স অনেক হয়েছে। আগের মতো ভারী কাজ করতে পারেন না। দীর্ঘ সময় কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তিনি ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। ডাক্তার তাঁকে শরীরে বাড়তি শক্তির জন্য প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে বলেছেন। তাই তাঁর নিয়মিত ডিম খাওয়া দরকার। কিন্তু ডিমের দাম বেড়ে গেল, এটা কেমন কথা? এটা তিনি কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। তাঁর কথায়, কারও খারাপ অবস্থা থেকে আরও খারাপ হলে মেনে নেওয়া সহজ। কিন্তু একবার একটু ভালো অবস্থা হলে সেখান থেকে আবার খারাপের দিকে যাওয়া খুব কষ্টের। ডিমের মতো প্রিয় খাবারের দাম হঠাৎ এত বেশি হয়ে যাবে, সেটা তাঁর কোনো দিন মাথায় আসেনি।
দোকানদারকে খাবারের দাম বাড়ানোর কারণ জিজ্ঞেস করে তিনি জানতে পেরেছেন, ফার্মে বিদ্যুৎ ছাড়া মুরগির বাচ্চা ফোটানো যায় না। লোডশেডিং চলতে থাকায় বাচ্চা ফোটানো যাচ্ছে না। যেগুলো কোনোভাবে ফোটানো হয়েছিল, সেগুলো গরমে মরে গেছে। বিদ্যুতের অভাবে এখন বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ। জেনারেটর দিয়ে তেল খরচ অনেক বেশি। তাই ৮-১০ টাকার বাচ্চার দাম ১৭-১৮ টাকা হয়েছে।
এরপরও বাচ্চা মরে যায়। তাই অনেকে মুরগির ফার্ম বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া, মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার বা মাংসের জন্য লেয়ার, সোনালি প্রভৃতি মুরগির উৎপাদনও কমে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে অনেক। পাইকারেরা গ্রামে আসতে
চাইছেন না। ফলে দূরবর্তী গ্রাম এলাকার ফার্মের মুরগি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী।
মাত্রই আবার বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। এখন লিটারপ্রতি ১৯২ টাকা। একইভাবে মাছ, শাকসবজি, ফলমূল—সবকিছুতেই বাড়তি খরচের প্রভাব পড়েছে গার্মেন্টস প্রোটিন নামে খ্যাত পাঙাশ, কই, সিলভার কার্প, তেলাপিয়া প্রভৃতি মাছের ফিডের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং পরিবহন খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন ও সরবরাহে এসেছে ব্যাপক সমস্যা। শাকসবজি পরিবহনের ট্রাক পাম্পে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে তেল কিনতে পারছে না। রাজধানীর পাম্পে অপেক্ষারত একজন দরিদ্র ড্রাইভার বলেছেন, ‘এই অবস্থা চলতে থাকলে আমার মালিক ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। আমি হয়তো শিগগির রাস্তায় ভিক্ষা করতে নামব।’
এভাবে বাড়তে থাকা দ্রব্যমূল্যের কারণে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের কবলে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। এমনকি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে বাইসাইকেল কেনার প্রত্যাশা করেছেন। সাইকেল চালিয়ে গাড়িভাড়া বাঁচিয়ে সেই অর্থ সংসারের কাজে লাগাবেন বলে। কিন্তু বাজারে বাইসাইকেলের দামও হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। সুযোগসন্ধানী মূল্য-সন্ত্রাসীরা কোথাও বসে নেই।
মানুষ সবাই রাক্ষস নয়। কিন্তু অভাবে কেউ কেউ রাক্ষস হয়ে যায়। তবে অভাব না থাকলেও রাক্ষসের বশংবদরা কখনোই হাঁউ-মাঁউ-খাঁউ করতে ক্ষান্ত দেয় না। তারা সামনে যা পায়, তা-ই গিলতে চায়। তাৎক্ষণিক গিলতে না পারলে অপচয় করে, নষ্ট করে। এভাবে আরও বেশি সংকট তৈরি করে সবার দুর্ভোগ বাড়ায়।
ভূতের জন্য ওঝা থাকে। ওঝা দেখলে ভূতেরা শান্ত হয় অথবা পালিয়ে যায়। কিন্তু দানবেরা ওঝা দেখলে ভয় পায় না। কারণ, দানবের মাঝে ওঝা বিরাজ
করে অথবা ওদের মনের মধ্যে দানবেরা তৈরি হয়। অন্তত আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে রক্ষকেরা ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পড়ায় এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এভাবে ক্রমান্বয়ে দানব হয়ে উঠেছে দ্রব্যমূল্য। শুরু হয়েছে মূল্য-সন্ত্রাস। আর মূল্য-সন্ত্রাসীরা লাগামহীনভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে আস্ফালন করে চলেছে। বাজার নিয়ন্ত্রকেরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পিছুটান দেওয়ায় বাজারে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এত ব্যর্থতার মধ্যেও বাজারদর নিয়ে তাচ্ছিল্য করে মানুষের কষ্টকে আরও বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। অথচ জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারের বর্তমান কমতি দামের সঙ্গে সমন্বয় করে অচিরেই দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে স্বল্প চেষ্টাতে টেনে ধরা যায়। দ্রব্যমূল্যের এই কুৎসিত দানবকে ভয় পেয়ে জবুথবু হয়ে বসে থাকলে সামনে সমূহ বিপদ সামাল দেওয়া আরও কঠিন হতে পারে।
ড. মো. ফখরুল ইসলাম, অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
খুব অল্পদিনের মধ্যে দানব হয়ে উঠেছে দ্রব্যমূল্য। এই দানব ফ্রাংকেনস্টাইনের আলোচিত ভয়ংকর দানবকে হার মানিয়েছে। মেরি শেলির উপন্যাস ‘ফ্রাংকেনস্টাইন অর দ্য মডার্ন প্রমিথিউস’-এর এক বিখ্যাত চরিত্র বিজ্ঞানী ফ্রাংকেনস্টাইন। যিনি নিজের গবেষণায় বিশেষ ধরনের বিজ্ঞান আয়ত্ত করেন। যার মাধ্যমে মৃত আত্মাকে জীবনদান করা সম্ভব হয়। এ পরীক্ষাটি এ জন্য, মৃত ব্যক্তির ওপর করলে মৃত ব্যক্তিটি বেঁচে ওঠে কিন্তু পরিণত হয় এক ভয়ংকর দানবে। এই দানব দেখতে ছিল কুৎসিত। তাকে দেখে ফ্রাংকেনস্টাইন ভয় পেয়ে দুর্ব্যবহার করলে সে প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করে। দানবটি ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে, তার পরিবার, আত্মীয়স্বজনদের হত্যা করতে থাকে। একদিন ফ্রাংকেনস্টাইনকেই হত্যার জন্য ধাওয়া করলে সে দৌড়ে বনের মধ্যে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। কিন্তু নির্জন বনে মারা যায়। ফ্রাংকেনস্টাইনের মৃত্যুর সংবাদ জানার পর দানব আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং একদিন চিরতরে হারিয়ে যায়। তাকে আর কোনো দিন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বলা হচ্ছে, করোনার প্রভাব, ইউক্রেন যুদ্ধ, দাবানল, বন্যা, মাঙ্কিপক্স, তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বিশ্ববাণিজ্য ও আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে নিত্যপণ্যের বাজারদরে আগুন লেগেছে। সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ায় ধস নেমেছে চারদিকে। দরদামের দুর্যোগ নেমে সুযোগসন্ধানী মূল্য-সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সৃষ্ট দানব চরিত্রের মৃত আত্মা পুনরুজ্জীবন লাভ করে ক্রমান্বয়ে শক্তি সঞ্চারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে নিয়েছে বাজারের সবকিছু। দখল করে ফেলে গোগ্রাসে চারদিকের সবকিছুকে খেয়ে সাবাড় করে দিচ্ছে যেন।
এবার শুধু লোভী ব্যবসায়ী নয়, নেমে পড়েছে সুযোগসন্ধানী মূল্য-সন্ত্রাসী দানবরা। তারা কাউকে ভয় করে না। বাজারে কত নামে, কত আবরণে, কত আভরণে কতশত নিয়ন্ত্রক টিম নিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। নিত্যপণ্য মূল্যের মনিটরিং চলছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ছেড়ে দেওয়া পাগলা ঘোড়াকে কোনোভাবে বেড়ি পরানো যাচ্ছে না। সবাই যেন একপ্রকার হাল ছেড়ে দিয়ে কাল্পনিক দানবকে দোষারোপ করে পার পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে কেউ শিগগির পার পাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। এই নাজুক অবস্থা আর কত দূর, কোথায় গিয়ে থামবে—তার কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না। আক্ষেপ করছেন প্রতিদিনের খাবারের বাজেটে কাটছাঁট করতে থাকা স্বল্প আয়ের নিরীহ মানুষগুলো।
তেমনি একজন আমাদের প্রতিবেশী। তাঁর নাম বলা হলো না। তবে তিনি কাজপাগল। সবার আগে অফিসে আসা এবং সবাই অফিস শেষে চলে যাওয়ার পর তাঁকে বাসায় ফিরতে হয়। তাঁর পরিবারে অনেকে আছেন। তাঁরা নিজেরা অতিব্যস্ত থাকেন। তাই তাঁর খোঁজখবর ঠিকমতো নিতে পারেন না আপনজনেরা। খুব সকালে এসে অফিসের তালা খুলে সবকিছু গুছিয়ে রেখে তিনি সকালের নাশতা সারেন দুটি রুটি ও সবজি ভাজি দিয়ে। কোনো কোনো দিন ডাল-পরোটা খান। বছর দুয়েক আগে পরোটার দাম ছিল ৫ টাকা। ২০ টাকায় নাশতা হয়ে যেত। এখন ৫০ টাকায়ও টানাটানি হয়।
দুপুরের খাবারে তাঁর পছন্দ খিচুড়ি ও একটি ডিম ভাজা। এক প্লেট খিচুড়ি ও একটি মুরগির ডিম এক বছর আগেও ৩০ টাকায় পাওয়া যেত। সেটা অফিসের কাছাকাছি অস্থায়ী খোলা দোকানে।
এরপর ছয় মাস আগে হঠাৎ একদিন ৫০ টাকা হয়ে গেল। কারণ, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছিল তখন। গত কয়েক দিন একই খাবারের মূল্য ৬০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। একটি ডিম ভাজার দাম বেড়ে নাকি ২০ টাকা হয়েছে! এ জন্য তিনি খুব নাখোশ।
তাঁর কথা হলো, ডিম, দুধের সাদা বিপ্লব কি শেষ হয়ে গেল? তাঁর বয়স অনেক হয়েছে। আগের মতো ভারী কাজ করতে পারেন না। দীর্ঘ সময় কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তিনি ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। ডাক্তার তাঁকে শরীরে বাড়তি শক্তির জন্য প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে বলেছেন। তাই তাঁর নিয়মিত ডিম খাওয়া দরকার। কিন্তু ডিমের দাম বেড়ে গেল, এটা কেমন কথা? এটা তিনি কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। তাঁর কথায়, কারও খারাপ অবস্থা থেকে আরও খারাপ হলে মেনে নেওয়া সহজ। কিন্তু একবার একটু ভালো অবস্থা হলে সেখান থেকে আবার খারাপের দিকে যাওয়া খুব কষ্টের। ডিমের মতো প্রিয় খাবারের দাম হঠাৎ এত বেশি হয়ে যাবে, সেটা তাঁর কোনো দিন মাথায় আসেনি।
দোকানদারকে খাবারের দাম বাড়ানোর কারণ জিজ্ঞেস করে তিনি জানতে পেরেছেন, ফার্মে বিদ্যুৎ ছাড়া মুরগির বাচ্চা ফোটানো যায় না। লোডশেডিং চলতে থাকায় বাচ্চা ফোটানো যাচ্ছে না। যেগুলো কোনোভাবে ফোটানো হয়েছিল, সেগুলো গরমে মরে গেছে। বিদ্যুতের অভাবে এখন বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ। জেনারেটর দিয়ে তেল খরচ অনেক বেশি। তাই ৮-১০ টাকার বাচ্চার দাম ১৭-১৮ টাকা হয়েছে।
এরপরও বাচ্চা মরে যায়। তাই অনেকে মুরগির ফার্ম বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া, মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার বা মাংসের জন্য লেয়ার, সোনালি প্রভৃতি মুরগির উৎপাদনও কমে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে অনেক। পাইকারেরা গ্রামে আসতে
চাইছেন না। ফলে দূরবর্তী গ্রাম এলাকার ফার্মের মুরগি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী।
মাত্রই আবার বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। এখন লিটারপ্রতি ১৯২ টাকা। একইভাবে মাছ, শাকসবজি, ফলমূল—সবকিছুতেই বাড়তি খরচের প্রভাব পড়েছে গার্মেন্টস প্রোটিন নামে খ্যাত পাঙাশ, কই, সিলভার কার্প, তেলাপিয়া প্রভৃতি মাছের ফিডের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং পরিবহন খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন ও সরবরাহে এসেছে ব্যাপক সমস্যা। শাকসবজি পরিবহনের ট্রাক পাম্পে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে তেল কিনতে পারছে না। রাজধানীর পাম্পে অপেক্ষারত একজন দরিদ্র ড্রাইভার বলেছেন, ‘এই অবস্থা চলতে থাকলে আমার মালিক ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। আমি হয়তো শিগগির রাস্তায় ভিক্ষা করতে নামব।’
এভাবে বাড়তে থাকা দ্রব্যমূল্যের কারণে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের কবলে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। এমনকি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে বাইসাইকেল কেনার প্রত্যাশা করেছেন। সাইকেল চালিয়ে গাড়িভাড়া বাঁচিয়ে সেই অর্থ সংসারের কাজে লাগাবেন বলে। কিন্তু বাজারে বাইসাইকেলের দামও হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। সুযোগসন্ধানী মূল্য-সন্ত্রাসীরা কোথাও বসে নেই।
মানুষ সবাই রাক্ষস নয়। কিন্তু অভাবে কেউ কেউ রাক্ষস হয়ে যায়। তবে অভাব না থাকলেও রাক্ষসের বশংবদরা কখনোই হাঁউ-মাঁউ-খাঁউ করতে ক্ষান্ত দেয় না। তারা সামনে যা পায়, তা-ই গিলতে চায়। তাৎক্ষণিক গিলতে না পারলে অপচয় করে, নষ্ট করে। এভাবে আরও বেশি সংকট তৈরি করে সবার দুর্ভোগ বাড়ায়।
ভূতের জন্য ওঝা থাকে। ওঝা দেখলে ভূতেরা শান্ত হয় অথবা পালিয়ে যায়। কিন্তু দানবেরা ওঝা দেখলে ভয় পায় না। কারণ, দানবের মাঝে ওঝা বিরাজ
করে অথবা ওদের মনের মধ্যে দানবেরা তৈরি হয়। অন্তত আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে রক্ষকেরা ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পড়ায় এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এভাবে ক্রমান্বয়ে দানব হয়ে উঠেছে দ্রব্যমূল্য। শুরু হয়েছে মূল্য-সন্ত্রাস। আর মূল্য-সন্ত্রাসীরা লাগামহীনভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে আস্ফালন করে চলেছে। বাজার নিয়ন্ত্রকেরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পিছুটান দেওয়ায় বাজারে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এত ব্যর্থতার মধ্যেও বাজারদর নিয়ে তাচ্ছিল্য করে মানুষের কষ্টকে আরও বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। অথচ জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারের বর্তমান কমতি দামের সঙ্গে সমন্বয় করে অচিরেই দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে স্বল্প চেষ্টাতে টেনে ধরা যায়। দ্রব্যমূল্যের এই কুৎসিত দানবকে ভয় পেয়ে জবুথবু হয়ে বসে থাকলে সামনে সমূহ বিপদ সামাল দেওয়া আরও কঠিন হতে পারে।
ড. মো. ফখরুল ইসলাম, অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে