আলম শাইন
গাছ মানুষের কাছে বন্ধু হিসেবে পরিচিত, পরিচিত ফুসফুস হিসেবেও। গাছের প্রাণ আছে– সেটি যেমন প্রমাণিত, তেমনি প্রমাণিত গাছ দিতে জানে, নিতে জানে না। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে গাছের সঙ্গে আমাদের বৈরী আচরণ কেন? কারও সঙ্গে শত্রুতা আছে, রাতের আঁধারে গাছ কেটে ফেলো। যানবাহন চলাচলের পথে গাছের শিকড়-বাকড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, পুরো গাছ কেটে ফেলো। আসবাবের প্রয়োজনে যেখানে একটি গাছ নিধন করলেই যথেষ্ট, সেখানে আরও একটি গাছ কেটে ফেলো। দূর পাহাড় কিংবা বন-বনানীর গাছ কেটে এনে ইটের ভাটায় ফেলো। এ হচ্ছে আমাদের গাছপ্রীতির নমুনা! যেখানে একটি গাছ কাটলে তিনটি লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেখানে সম্পূর্ণ উল্টোটি লক্ষ করছি আমরা। ফলে মনে হচ্ছে গাছের প্রতি আমাদের মমতা মুখে মুখেই রয়েছে। তবে সবাই যে অমন তা-ও কিন্তু নয়। আবার অনেকের ইচ্ছে আছে গাছ লাগানোর, কিন্তু তার জমি নেই। সে বিষয়টি নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। তার আগে আমরা গাছের চারা বিতরণের কিছু খণ্ডচিত্র তুলে ধরছি।
বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে এলে আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে গাছের চারা বিতরণ করা হয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিতরণ করা হয় গৃহস্থ কিংবা কৃষকদের মাঝেও। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমরা দেখেছি গ্রামাঞ্চলের চেয়ে মফস্বলে বেশি গাছের চারা বিতরণ করা হয়। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। তবে বিতরণ পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা আবশ্যক। বিষয়টি পরিষ্কার করে বলছি।
গ্রামাঞ্চল ব্যতীত আমাদের দেশের মফস্বল শহরের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ভাড়াবাড়িতে থাকতে হয়। এ ছাড়া যিনি মফস্বলের স্থায়ী বাসিন্দা, তাঁর জমিজমাও সীমিত। কারণ গ্রামের তুলনায় মফস্বলের জমির দাম অনেকটাই বেশি বিধায় সেখানকার অধিবাসীদের জমির পরিমাণও কম। ফলে অনেক স্থানীয়কেও ভাড়াবাড়িতে কাটাতে হয়।
এখন কথা হচ্ছে, যে শিক্ষার্থীর বাবা ভাড়াবাড়িতে থাকেন, তাঁকে যদি স্কুল-কলেজ থেকে একটি গাছের চারা উপহার দেওয়া হয়, সেই শিক্ষার্থী কি চারাটিকে সঠিকভাবে সৎকার করতে পারবে? নিশ্চয়ই না। তাহলে উপহার পাওয়া ওই গাছের চারাটির স্থান কোথায় হবে? বারান্দা অথবা চিলেকোঠার ঘুপচিতে নিশ্চয়ই। অথবা অতি উৎসাহী শিক্ষার্থীরা টবে লাগিয়ে দু-চার দিন পানি ঢেলে পরিশেষে বারান্দায় ফেলে রাখবে। তারপর একদিন শিক্ষার্থীর মা মরা গাছের চারাটি বাড়ির ঝিকে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেবেন।
তাহলে বিষয়টি কী দাঁড়াচ্ছে? গাছের চারা বিতরণ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বনায়ন সৃষ্টি হয়নি। যদি চারার সঠিক সৎকার হতো, তাহলে অবশ্যই এত বছরে গোটা দেশ সবুজ সমারোহে পরিণত হতো। কিন্তু সেই পরিমাণে বনায়ন সৃষ্টি হচ্ছে না, যে হারে চারা বিতরণ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ, হাজার কিংবা লাখ চারা বিতরণের প্রয়োজন নেই; বরং স্বল্পসংখ্যক চারা বিতরণ করে তা রোপণ নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা নির্ধারিত কিছু জায়গা বেছে নিতে পারি। তাতে করে বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল হবে। যেমন সরকারের প্রচুর খাসজমি রয়েছে। খালপাড়, নদীর পাড়, রাস্তার দুই পাশ, রেললাইনের দুই পাশ—এসব জায়গা পড়ে আছে। পতিত এই জায়গা আমরা অগ্রাধিকার দিতে পারি। শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করলে চিহ্নিত স্থানে রোপণের পরামর্শ দিতে পারি। প্রয়োজনে বনায়ন সৃষ্টিতে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা বাধ্যতামূলক করতে পারি। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের ভূমির ব্যবস্থা করে দিতে হবে আগে।
আমরা জেনেছি, এশিয়ারই একটি দেশ ‘ফিলিপাইন’-এ শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক কাজের অংশ হিসেবে বনায়ন সৃষ্টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তারা শুধু গাছ লাগিয়ে নম্বর পেয়ে যাবে তা নয়, গাছের পরিচর্যা করে দেখাতে হবে শিক্ষককে, তবেই নম্বর মিলবে। ইচ্ছে করলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গেও এ ধরনের বিষয় জুড়ে দেওয়া যেতে পারে। যেমন জুড়ে দেওয়া আছে গার্হস্থ্যবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে।
আর হ্যাঁ, অবশ্যই গাছের চারা শুধু শিক্ষার্থীদের মাঝেই নয়, কৃষক ও গৃহস্থদের মাঝেও বিতরণ করতে হবে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি কাউন্সেলিং করতে হবে বেশি বেশি। আমজনতাকে বোঝাতে হবে গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে।
মরূকরণ রোধে গাছের ভূমিকা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। ধারণা দিতে হবে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে গাছ কীভাবে মানুষকে আগলে রাখে সেটিও। গাছ থেকে আমরা অক্সিজেন পাচ্ছি সত্যি; কী পরিমাণে পাচ্ছি, তার ক্রয়মূল্য সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। গাছের ঔষধি গুণ সম্পর্কেও জানান দিতে হবে। তাতে করে বনায়ন সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা বেড়ে যাবে যেমন, তেমনি সফল হবে বৃক্ষরোপণ অভিযানও। গাছের চারা বিতরণ করেন এমন সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রতি আমাদের অনুরোধ বিষয়টি নিয়ে ভাবার।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে চারা রোপণ করে রক্ষণাবেক্ষণ করা, যা অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা লক্ষ করেছি, কোনো কোনো সংগঠন রাস্তার পাশে শত-হাজার গাছের চারা রোপণ করছে প্রতিবছর। কিন্তু মাসখানেক যেতে না যেতেই দেখছি গাছের চারাটি গবাদিপশু কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছে অথবা পানিশূন্যতায় গাছটি অকালে মরে গেছে। তাহলে বিষয়টি কী দাঁড়িয়েছে? ফি বছর একই স্থানে আরেকটি চারা রোপণ করতে হচ্ছে। আর এ চারাটিও যে বেঁচে থাকতে পারবে তারও নিশ্চয়তা নেই।
আমরা যদি এসব বিষয় মেনে গাছের চারা রোপণ করি, তাহলে স্বল্প সময়ের মধ্যে গোটা দেশে ব্যাপক বনায়ন সৃষ্টি হবে। আর এই সামান্য নিয়মনীতি মেনে চলতে পারলেই আমরা পাব নির্ভেজাল অক্সিজেন ফ্যাক্টরি। তবে সার্থক হবে আমাদের বৃক্ষরোপণ অভিযানও।
বৃক্ষ নিয়ে আরেকটি বিষয়ে আলোকপাত করতে হচ্ছে। সেটি হচ্ছে ‘বনসাই’। বনসাই তৈরিতে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। বনসাইশিল্পে যথেষ্ট অবদান রাখছেন দেশের বনসাইচাষিরা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত বনসাই মেলায় তার প্রমাণও মেলে। আমাদের দেশের সব ধরনের গাছ বনসাই তৈরির জন্য উপযুক্ত নয়। অপেক্ষাকৃত কষ্টসহিষ্ণু গাছ যেমন বট, পাকুড়, কৃষ্ণচূড়া, বকুল, তেঁতুল, দেবদারু, হিজল, জলপাই ইত্যাদি গাছ বনসাই তৈরির জন্য উপযুক্ত বলে জানা যায়।
বাংলাদেশই কেবল নয়, বর্তমানে বনসাই গোটা এশিয়ায় ব্যাপক সমাদৃত। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তা এ দেশের ধনী এবং বিলাসী লোকদের ড্রয়িংরুমে অনায়াসে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এতে মূলত দুটি জিনিস বোঝাতে চান তাঁরা। এক. তাঁদের রুচিবোধ বেশ উঁচু; দুই. তাঁর রয়েছে অঢেল অর্থবিত্ত। না হলে এত আকাশছোঁয়া দামে ‘পোষ মানানো’ একটি বুনো গাছ কিনে ঘরের ভেতর বন্দী করে রাখার মানেটাই বা কী! তাতে অবশ্য আমাদের মাথাব্যথা নেই, তবে মাথাব্যথা হচ্ছে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে। ড্রয়িংরুমে বনসাই লালনের পাশাপাশি বিত্তবান বনসাইপ্রেমীরা প্রত্যেকেই যদি পাঁচটি করেও গাছের চারা রোপণ করতেন, তাহলে সর্বসাধারণ উদ্বুদ্ধ হয়ে হাজার হাজার গাছ রোপণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে পারতেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসুন, সবাই মিলে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে দেশটাকে সবুজে মুড়িয়ে দিই। তাহলে বনসাইপ্রেমও বিফলে যাবে না আমাদের।
আলম শাইন, কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট
গাছ মানুষের কাছে বন্ধু হিসেবে পরিচিত, পরিচিত ফুসফুস হিসেবেও। গাছের প্রাণ আছে– সেটি যেমন প্রমাণিত, তেমনি প্রমাণিত গাছ দিতে জানে, নিতে জানে না। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে গাছের সঙ্গে আমাদের বৈরী আচরণ কেন? কারও সঙ্গে শত্রুতা আছে, রাতের আঁধারে গাছ কেটে ফেলো। যানবাহন চলাচলের পথে গাছের শিকড়-বাকড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, পুরো গাছ কেটে ফেলো। আসবাবের প্রয়োজনে যেখানে একটি গাছ নিধন করলেই যথেষ্ট, সেখানে আরও একটি গাছ কেটে ফেলো। দূর পাহাড় কিংবা বন-বনানীর গাছ কেটে এনে ইটের ভাটায় ফেলো। এ হচ্ছে আমাদের গাছপ্রীতির নমুনা! যেখানে একটি গাছ কাটলে তিনটি লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেখানে সম্পূর্ণ উল্টোটি লক্ষ করছি আমরা। ফলে মনে হচ্ছে গাছের প্রতি আমাদের মমতা মুখে মুখেই রয়েছে। তবে সবাই যে অমন তা-ও কিন্তু নয়। আবার অনেকের ইচ্ছে আছে গাছ লাগানোর, কিন্তু তার জমি নেই। সে বিষয়টি নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। তার আগে আমরা গাছের চারা বিতরণের কিছু খণ্ডচিত্র তুলে ধরছি।
বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে এলে আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে গাছের চারা বিতরণ করা হয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিতরণ করা হয় গৃহস্থ কিংবা কৃষকদের মাঝেও। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমরা দেখেছি গ্রামাঞ্চলের চেয়ে মফস্বলে বেশি গাছের চারা বিতরণ করা হয়। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। তবে বিতরণ পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা আবশ্যক। বিষয়টি পরিষ্কার করে বলছি।
গ্রামাঞ্চল ব্যতীত আমাদের দেশের মফস্বল শহরের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ভাড়াবাড়িতে থাকতে হয়। এ ছাড়া যিনি মফস্বলের স্থায়ী বাসিন্দা, তাঁর জমিজমাও সীমিত। কারণ গ্রামের তুলনায় মফস্বলের জমির দাম অনেকটাই বেশি বিধায় সেখানকার অধিবাসীদের জমির পরিমাণও কম। ফলে অনেক স্থানীয়কেও ভাড়াবাড়িতে কাটাতে হয়।
এখন কথা হচ্ছে, যে শিক্ষার্থীর বাবা ভাড়াবাড়িতে থাকেন, তাঁকে যদি স্কুল-কলেজ থেকে একটি গাছের চারা উপহার দেওয়া হয়, সেই শিক্ষার্থী কি চারাটিকে সঠিকভাবে সৎকার করতে পারবে? নিশ্চয়ই না। তাহলে উপহার পাওয়া ওই গাছের চারাটির স্থান কোথায় হবে? বারান্দা অথবা চিলেকোঠার ঘুপচিতে নিশ্চয়ই। অথবা অতি উৎসাহী শিক্ষার্থীরা টবে লাগিয়ে দু-চার দিন পানি ঢেলে পরিশেষে বারান্দায় ফেলে রাখবে। তারপর একদিন শিক্ষার্থীর মা মরা গাছের চারাটি বাড়ির ঝিকে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেবেন।
তাহলে বিষয়টি কী দাঁড়াচ্ছে? গাছের চারা বিতরণ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বনায়ন সৃষ্টি হয়নি। যদি চারার সঠিক সৎকার হতো, তাহলে অবশ্যই এত বছরে গোটা দেশ সবুজ সমারোহে পরিণত হতো। কিন্তু সেই পরিমাণে বনায়ন সৃষ্টি হচ্ছে না, যে হারে চারা বিতরণ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ, হাজার কিংবা লাখ চারা বিতরণের প্রয়োজন নেই; বরং স্বল্পসংখ্যক চারা বিতরণ করে তা রোপণ নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা নির্ধারিত কিছু জায়গা বেছে নিতে পারি। তাতে করে বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল হবে। যেমন সরকারের প্রচুর খাসজমি রয়েছে। খালপাড়, নদীর পাড়, রাস্তার দুই পাশ, রেললাইনের দুই পাশ—এসব জায়গা পড়ে আছে। পতিত এই জায়গা আমরা অগ্রাধিকার দিতে পারি। শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করলে চিহ্নিত স্থানে রোপণের পরামর্শ দিতে পারি। প্রয়োজনে বনায়ন সৃষ্টিতে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা বাধ্যতামূলক করতে পারি। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের ভূমির ব্যবস্থা করে দিতে হবে আগে।
আমরা জেনেছি, এশিয়ারই একটি দেশ ‘ফিলিপাইন’-এ শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক কাজের অংশ হিসেবে বনায়ন সৃষ্টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তারা শুধু গাছ লাগিয়ে নম্বর পেয়ে যাবে তা নয়, গাছের পরিচর্যা করে দেখাতে হবে শিক্ষককে, তবেই নম্বর মিলবে। ইচ্ছে করলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গেও এ ধরনের বিষয় জুড়ে দেওয়া যেতে পারে। যেমন জুড়ে দেওয়া আছে গার্হস্থ্যবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে।
আর হ্যাঁ, অবশ্যই গাছের চারা শুধু শিক্ষার্থীদের মাঝেই নয়, কৃষক ও গৃহস্থদের মাঝেও বিতরণ করতে হবে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি কাউন্সেলিং করতে হবে বেশি বেশি। আমজনতাকে বোঝাতে হবে গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে।
মরূকরণ রোধে গাছের ভূমিকা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। ধারণা দিতে হবে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে গাছ কীভাবে মানুষকে আগলে রাখে সেটিও। গাছ থেকে আমরা অক্সিজেন পাচ্ছি সত্যি; কী পরিমাণে পাচ্ছি, তার ক্রয়মূল্য সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। গাছের ঔষধি গুণ সম্পর্কেও জানান দিতে হবে। তাতে করে বনায়ন সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা বেড়ে যাবে যেমন, তেমনি সফল হবে বৃক্ষরোপণ অভিযানও। গাছের চারা বিতরণ করেন এমন সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রতি আমাদের অনুরোধ বিষয়টি নিয়ে ভাবার।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে চারা রোপণ করে রক্ষণাবেক্ষণ করা, যা অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা লক্ষ করেছি, কোনো কোনো সংগঠন রাস্তার পাশে শত-হাজার গাছের চারা রোপণ করছে প্রতিবছর। কিন্তু মাসখানেক যেতে না যেতেই দেখছি গাছের চারাটি গবাদিপশু কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছে অথবা পানিশূন্যতায় গাছটি অকালে মরে গেছে। তাহলে বিষয়টি কী দাঁড়িয়েছে? ফি বছর একই স্থানে আরেকটি চারা রোপণ করতে হচ্ছে। আর এ চারাটিও যে বেঁচে থাকতে পারবে তারও নিশ্চয়তা নেই।
আমরা যদি এসব বিষয় মেনে গাছের চারা রোপণ করি, তাহলে স্বল্প সময়ের মধ্যে গোটা দেশে ব্যাপক বনায়ন সৃষ্টি হবে। আর এই সামান্য নিয়মনীতি মেনে চলতে পারলেই আমরা পাব নির্ভেজাল অক্সিজেন ফ্যাক্টরি। তবে সার্থক হবে আমাদের বৃক্ষরোপণ অভিযানও।
বৃক্ষ নিয়ে আরেকটি বিষয়ে আলোকপাত করতে হচ্ছে। সেটি হচ্ছে ‘বনসাই’। বনসাই তৈরিতে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। বনসাইশিল্পে যথেষ্ট অবদান রাখছেন দেশের বনসাইচাষিরা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত বনসাই মেলায় তার প্রমাণও মেলে। আমাদের দেশের সব ধরনের গাছ বনসাই তৈরির জন্য উপযুক্ত নয়। অপেক্ষাকৃত কষ্টসহিষ্ণু গাছ যেমন বট, পাকুড়, কৃষ্ণচূড়া, বকুল, তেঁতুল, দেবদারু, হিজল, জলপাই ইত্যাদি গাছ বনসাই তৈরির জন্য উপযুক্ত বলে জানা যায়।
বাংলাদেশই কেবল নয়, বর্তমানে বনসাই গোটা এশিয়ায় ব্যাপক সমাদৃত। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তা এ দেশের ধনী এবং বিলাসী লোকদের ড্রয়িংরুমে অনায়াসে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এতে মূলত দুটি জিনিস বোঝাতে চান তাঁরা। এক. তাঁদের রুচিবোধ বেশ উঁচু; দুই. তাঁর রয়েছে অঢেল অর্থবিত্ত। না হলে এত আকাশছোঁয়া দামে ‘পোষ মানানো’ একটি বুনো গাছ কিনে ঘরের ভেতর বন্দী করে রাখার মানেটাই বা কী! তাতে অবশ্য আমাদের মাথাব্যথা নেই, তবে মাথাব্যথা হচ্ছে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে। ড্রয়িংরুমে বনসাই লালনের পাশাপাশি বিত্তবান বনসাইপ্রেমীরা প্রত্যেকেই যদি পাঁচটি করেও গাছের চারা রোপণ করতেন, তাহলে সর্বসাধারণ উদ্বুদ্ধ হয়ে হাজার হাজার গাছ রোপণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে পারতেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসুন, সবাই মিলে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে দেশটাকে সবুজে মুড়িয়ে দিই। তাহলে বনসাইপ্রেমও বিফলে যাবে না আমাদের।
আলম শাইন, কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে