নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ফেরিঘাটে স্বাভাবিক সময়ে দুটি ফেরি চলাচল করে। কিন্তু বিকল হয়ে পড়ায় গত শুক্রবার থেকে চার দিন ধরে চলছে একটি ফেরি। এমন অবস্থায় নদী পারাপারে বাড়তি সময় গুনতে হচ্ছে অপেক্ষায় থাকা যানবাহনগুলোকে। এতে ভোগান্তিতে পড়া যানবাহনের চালক ও সাধারণ যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকল ফেরি মেরামত করে চালুর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে হাজীগঞ্জ ও নবীগঞ্জ ফেরিঘাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। কোনো কোনো গাড়ি দীর্ঘ সময় লাগবে বুঝে সেতুর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। মোটরসাইকেল আরোহীদের কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়েই উঠে পড়েন নৌকায়। ফেরির সংকটে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৬ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে একটি ফেরি। এর পেছনে রয়েছে কারিগরি জটিলতা। কবে নাগাদ বিকল ফেরিটি আবার চালু হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কেউ কিছু জানাতে পারেননি। মেরামতের কাজ চলছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পেছনে ফেরি মেরামতের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।

ফেরি পরিচালনার দায়িত্বরত ব্যক্তিরা বলছেন, যানবাহন পূর্ণ করে একটি ফেরি নদীর অপর প্রান্তে পৌঁছতে সময় লাগে অন্তত ২৫ মিনিট। দুটি ফেরি স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই পারাপারের অপেক্ষায় থাকা সব যানবাহন নদী অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু একটি ফেরি চলাচল করলে যানবাহনকে অন্তত ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট অপেক্ষায় থাকতে হয়। কখনো ফেরিতে যানবাহন পূর্ণ করতে বেশি সময় লাগলে পারাপারের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হয়। সাধারণত প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দুটি ফেরি চলাচল করে। কিন্তু বর্তমানে একটি ফেরি নদী পারাপারে ব্যবহৃত হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।

সম্প্রতি শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতু উদ্বোধন করার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, চাপ কমবে ফেরির ওপর। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ, ফেরি শহর ও বন্দরের মূল অংশের সঙ্গে যোগাযোগ সুগম করেছে। অন্যদিকে সেতু মূল শহর থেকে অনেকটা দূরে এবং অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়। বাড়তি তেলের খরচ বাঁচাতে সেতুর থেকেই ফেরিতেই পারাপারে আগ্রহ বেশি বিভিন্ন পরিবহনচালকদের। তবে রাতে জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীরা সেতু ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

ঘাটে অপেক্ষারত যাত্রী রাজীবের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘একটু আগেই ফেরি মিস করেছি। এখন এক ঘণ্টা বসে থাকতে হবে। একটা ফেরি চলায় বাড়তি সময় লাগবে। কদিন পরপর দেখি একটা ফেরি চলে, আরেকটা বন্ধ রাখে। ইচ্ছে করেই বোধ হয় এ কাজ করে। এক ফেরিতে গাদাগাদি করে যাত্রী নিতে পারলেই তো লাভ বেশি তাঁদের। দেখার কেউ নেই। সব সহ্য করেই চলতে হচ্ছে।’ 
বন্দরে যাওয়ার জন্য ঘাটে আসতে দেখা যায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদলকে। তিনি ঘাটে এসে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘একটি ফেরি চলছে? দুটি না চলার কথা? একটি বন্ধ রাখার কারণ কী?’ তিনিও অন্যান্য যাত্রীর মতো দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন ঘাটের হাজীগঞ্জ প্রান্তে।

ঘাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘একটি ফেরির জেনারেটর নষ্ট হয়েছে শুনেছি। তাই ফেরি একটা চলছে। বিকল ফেরিটি মেরামত না হওয়া পর্যন্ত একটি ফেরির ওপর ভরসা করেই যেতে হবে। কিছু তো করার নেই।’

জানতে চাইলে ফেরির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা রিয়েল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কারিগরি ত্রুটির কারণে ফেরি কদিন ধরে একটি চলছে। কী সমস্যা, তা সঠিক জানি না। সড়ক ও জনপথের (সওজ) লোকজন কাজ করছে এখন। আরও দু-তিন দিন লাগতে পারে ফেরি সচল হতে। কারিগরি ত্রুটির ওপর তো আমাদের হাত নেই।’