ড. কানন পুরকায়স্থ
গত ৮ এপ্রিল ২০২৪ সালে তাত্ত্বিক কণা পদার্থবিজ্ঞানী ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক পিটার হিগ্স ৯৪ বছর বয়সে এডিনবরায় তাঁর নিজ বাসভবনে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি প্রায় ছয় দশক এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতা করেন। হিগ্স গাণিতিকভাবে দেখান যে কোনো কণা একটি নতুন ধরনের ক্ষেত্রের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে ভর অর্জন করে। এই ক্ষেত্রই ‘হিগ্স ক্ষেত্র’ এবং কণার নাম ‘হিগ্স বোসন’।
২০১২ সালে সার্নে হিগ্স বোসন আবিষ্কৃত হয়। ফলে ২০১৩ সালে পিটার হিস ও ফ্রাঁসো ইংলার্ট পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। এই আবিষ্কারের পেছনের ইতিহাস একটু জানা যাক। ছাত্রাবস্থায় হিগ্স বিজ্ঞান ও দর্শনের নানা বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। ১৯৫০ সালের মে মাসের কোনো এক বিকেল। লন্ডনের কিংস কলেজে ম্যাক্সওয়েল সোসাইটি আয়োজন করেছে এক বিজ্ঞান সভা। সোসাইটির সেই সময়ের নবীন সভাপতি ২০ বছরের যুবক পিটার হিগ্স।
সভায় তিনি প্রশ্ন তুললেন, ‘একজন বিজ্ঞানী কি প্রকৃতির সূত্রকে সত্যিকার অর্থে জানতে পারে?’ বিজ্ঞান হচ্ছে বাস্তবতার সূত্র অনুসন্ধান করার একটি পদ্ধতি এবং এই অনুসন্ধানের জন্য বিজ্ঞানী পরীক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। কিন্তু হিগ্সের প্রশ্ন—একজন বিজ্ঞানী কীভাবে নিশ্চিত হন যে তিনি যা পর্যবেক্ষণ করছেন তা-ই সত্য? আমরা কি নিশ্চিত যে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো এই বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা দেয়? যদি আমরা বিশ্বাস করি যে, হ্যাঁ, সঠিক কাজ করছে, তবে হিগ্সের মতে, এটি বিশ্বাসের বিষয়, যুক্তির বিষয় নয়। হিগ্স বস্তুত বলতে চেয়েছেন, যেহেতু বিষয়টি বিশ্বাসের, সেহেতু এটি বিজ্ঞান নয়। প্রকৃতির স্বভাব নিরূপণ করতে গিয়ে আমরা যে বাস্তবতাকে দেখি, তা কল্পনাপ্রসূত হতে পারে।
হিগ্সের এই যুক্তি সেদিনের সভায় বিতর্কের ঝড় তুলেছিল। তাঁর এই জিজ্ঞাসা দার্শনিকদের কাছে নতুন কোনো বিষয় নয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে দার্শনিক রেঁনে দেকার্ত দর্শনের দুটি সমস্যা নিয়ে কাজ করেন। একটি হলো, আমরা কী জানতে পারি এবং অপরটি হলো, আমরা কীভাবে তা জানতে পারি? দেকার্ত তাঁর যুক্তি বিনির্মাণে কল্পনার সাহায্য নিয়েছিলেন এইভাবে যে, এক দৈত্য তাঁকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। যদি তা-ই হয়, তাহলে কি জানা যাবে দৈত্য যা বলছে, তা প্রকৃতই সত্য? দেকার্ত চিন্তা করলেন, দৈত্য কোন বিষয়টি তাকে বিশ্বাস করানোর মাধ্যমে বোকা বানাতে পারবে না। দেকার্ত তার উত্তর দিলেন এইভাবে, ‘একটি মাত্র বিষয় আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, যদি আমি চিন্তা করি, তাহলেই আমার অস্তিত্ব আছে।’ দার্শনিক দেকার্তের ভাষায় বলা যায়, ‘আই থিংক, দেয়ারফোর আই অ্যাম।’
দেকার্ত এ কথা বলেই থেমে যাননি। তিনি সমস্যাটি অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করেন। দেকার্ত উল্লেখ করেন, আমরা যদি কোনো সদাশয় ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদের ইন্দ্রিয় পেয়ে থাকি, তাহলে এই ইন্দ্রিয় দ্বারা আমরা যে বাস্তবতাকে প্রত্যক্ষ করব, তা সত্যি হবে। প্রশ্ন হলো, ঈশ্বর যদি সদাশয় না হন, যদি তিনি বোকা বানানোর চেষ্টা করেন, তাহলে আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তবতার পর্যবেক্ষণ সত্য না-ও হতে পারে। এভাবে পর্যবেক্ষণের উভয় সংকটের মধ্যে পিটার হিগ্স যেতে চাননি। তাই তিনি তাঁর অধ্যয়ন ও গবেষণার জন্য তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানকে বেছে নেন।
১৯৬০ সালে হিগ্স এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। হিগ্স সেখানে অ্যাকাডেমিক জার্নাল রক্ষণাবেক্ষণের অতিরিক্ত দায়িত্ব পান। ১৯৬১ সালের বসন্তকালে হিগ্স ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস জার্নালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত পদার্থবিদ ইওশিরো নামবুর অতি পরিবাহী তত্ত্ব (সুপার কনডাক্টিভিটি) দিয়ে মৌলিক কণার ভর পরিমাপসংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্র দেখতে পান। এই গবেষণাপত্রই হিগ্সের গবেষণার মূল বীজমন্ত্র। সাধারণ পরিবাহক, যেমন তামার তার এবং অতিপরিবাহকের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।
অতিপরিবাহককে ১৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে ফেলে ঠান্ডা করলে তার বিদ্যুৎ রোধের ক্ষমতা লোপ পায়। এই ধর্মের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেন যে, অতি নিম্ন তাপমাত্রায় অতিপরিবাহক পদার্থের মধ্যে ইলেকট্রন কণা জোড়ায় অবস্থান করে। এ অবস্থায় অতিপরিবাহক পদার্থে কোনো ‘ল্যাটিস’ নেই বলে মনে হয়। এ অবস্থায় পদার্থ অধিফ্লুয়িডের (সুপারফ্লুইড) মতো আচরণ করে। এই আচরণের কারণে শক্তির ক্ষয় না করে পদার্থ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারে। অতিপরিবাহকের মধ্যে রোধের ক্ষমতা লোপ পাওয়াকে পদার্থবিজ্ঞানীরা বলেন ভগ্ন প্রতিসাম্য। নামবু তাঁর গবেষণাপত্রে দেখান যে, এই ভগ্ন প্রতিসাম্যই মহাবিশ্বে ভরশূন্য বস্তুকে ভরদান করে।
ইওশিরো নামবু তাঁর অতিপরিবাহী তত্ত্বের জন্য ২০০৮ সালে নোবেল পুরস্কার পান। হিগ্স অতি দ্রুত অনুধাবন করেন যে, কণা পদার্থবিজ্ঞান এই ভগ্ন প্রতিসাম্যের ধারণাকে কাজে লাগিয়ে কোনো কণার ভরের কারণ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ১৯৬৪ সালে গ্রীষ্মকালে অবকাশযাপন শেষে ফিরে এসে তাঁর এক ছাত্র লক্ষ করেন যে, তাঁর ডেস্কে রয়েছে একটি নোট, যাতে লেখা রয়েছে ‘দিজ সামার আই হ্যাভ ডিসকভার সামথিং দ্যাট ইজ টোটালি ইউজলেস।’ তার নিচে পিটার হিগ্সের স্বাক্ষর। ১৯৬৪ সালের জুলাই মাসে হিগ্স ফিজিকস লেটার জার্নালে উনআশি লাইনের একটি গবেষণাপত্রে ভগ্ন প্রতিসাম্যের বিষয়টি গাণিতিকভাবে প্রমাণ করেন। এভাবেই তাত্ত্বিকভাবে হিগ্স বোসন ও হিগ্স ক্ষেত্রের (হিগ্স ফিল্ড) জন্ম হয়। এই বোসনের সঙ্গে ফার্মিয়ন কণার পার্থক্য হচ্ছে ঘূর্ণন মানের। যেমন—ইলেকট্রনের ঘূর্ণন মান ১/২, ফোটনকণার ঘূর্ণন মান ১ এবং হিগ্স বোসন কণার ঘূর্ণন মান শূন্য।
এই গবেষণাপত্র প্রকাশের প্রায় অর্ধশতাব্দী পর ৪ জুলাই ২০১২ সালে সার্নের বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেন যে, তাঁরা পৃথিবীর শক্তিশালী ত্বরকযন্ত্র বৃহৎ হেড্রন কলাইডারে এক নতুন কণার সন্ধান পেয়েছেন, যার সঙ্গে পিটার হিগ্সের ‘ইউজলেস’ ধারণার মিল রয়েছে। সার্নের মহাপরিচালক রল্ফ ডিটার হিউয়ার ঘোষণা দেন যে, ‘উই হ্যাভ নাউ ফাউন্ড দ্য লাস্ট মিসিং কর্নারস্টোন অব দ্য স্ট্যান্ডার্ড মডেল।’ হিউয়ার আরও জানালেন যে, হিগ্স বোসন কণার ভর ১২৫ বিলিয়ন ইলেকট্রন ভোল্টের কাছাকাছি, যা প্রোটনের ভরের প্রায় ১৩৩ গুণ। সার্ন দুটি পরীক্ষা দ্বারা হিগ্স কণাকে শনাক্ত করেন। পরিসংখ্যানগত দিক থেকে তাঁদের প্রাপ্ত ফলাফল অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।
কয়েক বছর আগে রয়েল ইনস্টিটিউশনে প্রদত্ত বক্তৃতায় (যেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম) হিগ্স বলেছিলেন যে, ‘সম্ভবত আমার জীবদ্দশায় এই কণার সন্ধান মিলবে না, কারণ এর জন্য প্রয়োজন অত্যন্ত শক্তিশালী ত্বরকযন্ত্র, যার অর্থায়নে রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব রয়েছে।’
কণা পদার্থবিজ্ঞানে হিগ্স বোসন আবিষ্কার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই কণার আবিষ্কার প্রমাণ করে হিগ্সের ক্ষেত্রের অস্তিত্ব। এ ক্ষেত্র ব্যাখ্যা করে ভগ্ন প্রতিসাম্যের কলাকৌশল, যা থেকে পাওয়া যায় কোনো কণার ভর। সার্নের সামনে দাঁড়িয়ে সার্নের একদল বিজ্ঞানীকে (আমাদের গাইড) প্রশ্ন করেছিলাম, ‘হিগ্স বোসন কি কণা, না ক্ষেত্র?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘হিগ্স ক্ষেত্রকে যখন ঝাঁকুনি দেওয়া হয়, তখন তা থেকে বেরিয়ে আসে হিগ্স বোসন কণা।’
পিটার হিগ্স আজ আর আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর গাণিতিক ভাবনা কণা পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় বলিষ্ঠ অবদান রেখে চলেছে।
লেখক: অধ্যাপক ও বিজ্ঞান-পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা, যুক্তরাজ্য
গত ৮ এপ্রিল ২০২৪ সালে তাত্ত্বিক কণা পদার্থবিজ্ঞানী ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক পিটার হিগ্স ৯৪ বছর বয়সে এডিনবরায় তাঁর নিজ বাসভবনে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি প্রায় ছয় দশক এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতা করেন। হিগ্স গাণিতিকভাবে দেখান যে কোনো কণা একটি নতুন ধরনের ক্ষেত্রের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে ভর অর্জন করে। এই ক্ষেত্রই ‘হিগ্স ক্ষেত্র’ এবং কণার নাম ‘হিগ্স বোসন’।
২০১২ সালে সার্নে হিগ্স বোসন আবিষ্কৃত হয়। ফলে ২০১৩ সালে পিটার হিস ও ফ্রাঁসো ইংলার্ট পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। এই আবিষ্কারের পেছনের ইতিহাস একটু জানা যাক। ছাত্রাবস্থায় হিগ্স বিজ্ঞান ও দর্শনের নানা বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। ১৯৫০ সালের মে মাসের কোনো এক বিকেল। লন্ডনের কিংস কলেজে ম্যাক্সওয়েল সোসাইটি আয়োজন করেছে এক বিজ্ঞান সভা। সোসাইটির সেই সময়ের নবীন সভাপতি ২০ বছরের যুবক পিটার হিগ্স।
সভায় তিনি প্রশ্ন তুললেন, ‘একজন বিজ্ঞানী কি প্রকৃতির সূত্রকে সত্যিকার অর্থে জানতে পারে?’ বিজ্ঞান হচ্ছে বাস্তবতার সূত্র অনুসন্ধান করার একটি পদ্ধতি এবং এই অনুসন্ধানের জন্য বিজ্ঞানী পরীক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। কিন্তু হিগ্সের প্রশ্ন—একজন বিজ্ঞানী কীভাবে নিশ্চিত হন যে তিনি যা পর্যবেক্ষণ করছেন তা-ই সত্য? আমরা কি নিশ্চিত যে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো এই বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা দেয়? যদি আমরা বিশ্বাস করি যে, হ্যাঁ, সঠিক কাজ করছে, তবে হিগ্সের মতে, এটি বিশ্বাসের বিষয়, যুক্তির বিষয় নয়। হিগ্স বস্তুত বলতে চেয়েছেন, যেহেতু বিষয়টি বিশ্বাসের, সেহেতু এটি বিজ্ঞান নয়। প্রকৃতির স্বভাব নিরূপণ করতে গিয়ে আমরা যে বাস্তবতাকে দেখি, তা কল্পনাপ্রসূত হতে পারে।
হিগ্সের এই যুক্তি সেদিনের সভায় বিতর্কের ঝড় তুলেছিল। তাঁর এই জিজ্ঞাসা দার্শনিকদের কাছে নতুন কোনো বিষয় নয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে দার্শনিক রেঁনে দেকার্ত দর্শনের দুটি সমস্যা নিয়ে কাজ করেন। একটি হলো, আমরা কী জানতে পারি এবং অপরটি হলো, আমরা কীভাবে তা জানতে পারি? দেকার্ত তাঁর যুক্তি বিনির্মাণে কল্পনার সাহায্য নিয়েছিলেন এইভাবে যে, এক দৈত্য তাঁকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। যদি তা-ই হয়, তাহলে কি জানা যাবে দৈত্য যা বলছে, তা প্রকৃতই সত্য? দেকার্ত চিন্তা করলেন, দৈত্য কোন বিষয়টি তাকে বিশ্বাস করানোর মাধ্যমে বোকা বানাতে পারবে না। দেকার্ত তার উত্তর দিলেন এইভাবে, ‘একটি মাত্র বিষয় আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, যদি আমি চিন্তা করি, তাহলেই আমার অস্তিত্ব আছে।’ দার্শনিক দেকার্তের ভাষায় বলা যায়, ‘আই থিংক, দেয়ারফোর আই অ্যাম।’
দেকার্ত এ কথা বলেই থেমে যাননি। তিনি সমস্যাটি অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করেন। দেকার্ত উল্লেখ করেন, আমরা যদি কোনো সদাশয় ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদের ইন্দ্রিয় পেয়ে থাকি, তাহলে এই ইন্দ্রিয় দ্বারা আমরা যে বাস্তবতাকে প্রত্যক্ষ করব, তা সত্যি হবে। প্রশ্ন হলো, ঈশ্বর যদি সদাশয় না হন, যদি তিনি বোকা বানানোর চেষ্টা করেন, তাহলে আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তবতার পর্যবেক্ষণ সত্য না-ও হতে পারে। এভাবে পর্যবেক্ষণের উভয় সংকটের মধ্যে পিটার হিগ্স যেতে চাননি। তাই তিনি তাঁর অধ্যয়ন ও গবেষণার জন্য তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানকে বেছে নেন।
১৯৬০ সালে হিগ্স এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। হিগ্স সেখানে অ্যাকাডেমিক জার্নাল রক্ষণাবেক্ষণের অতিরিক্ত দায়িত্ব পান। ১৯৬১ সালের বসন্তকালে হিগ্স ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস জার্নালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত পদার্থবিদ ইওশিরো নামবুর অতি পরিবাহী তত্ত্ব (সুপার কনডাক্টিভিটি) দিয়ে মৌলিক কণার ভর পরিমাপসংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্র দেখতে পান। এই গবেষণাপত্রই হিগ্সের গবেষণার মূল বীজমন্ত্র। সাধারণ পরিবাহক, যেমন তামার তার এবং অতিপরিবাহকের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।
অতিপরিবাহককে ১৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে ফেলে ঠান্ডা করলে তার বিদ্যুৎ রোধের ক্ষমতা লোপ পায়। এই ধর্মের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেন যে, অতি নিম্ন তাপমাত্রায় অতিপরিবাহক পদার্থের মধ্যে ইলেকট্রন কণা জোড়ায় অবস্থান করে। এ অবস্থায় অতিপরিবাহক পদার্থে কোনো ‘ল্যাটিস’ নেই বলে মনে হয়। এ অবস্থায় পদার্থ অধিফ্লুয়িডের (সুপারফ্লুইড) মতো আচরণ করে। এই আচরণের কারণে শক্তির ক্ষয় না করে পদার্থ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারে। অতিপরিবাহকের মধ্যে রোধের ক্ষমতা লোপ পাওয়াকে পদার্থবিজ্ঞানীরা বলেন ভগ্ন প্রতিসাম্য। নামবু তাঁর গবেষণাপত্রে দেখান যে, এই ভগ্ন প্রতিসাম্যই মহাবিশ্বে ভরশূন্য বস্তুকে ভরদান করে।
ইওশিরো নামবু তাঁর অতিপরিবাহী তত্ত্বের জন্য ২০০৮ সালে নোবেল পুরস্কার পান। হিগ্স অতি দ্রুত অনুধাবন করেন যে, কণা পদার্থবিজ্ঞান এই ভগ্ন প্রতিসাম্যের ধারণাকে কাজে লাগিয়ে কোনো কণার ভরের কারণ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ১৯৬৪ সালে গ্রীষ্মকালে অবকাশযাপন শেষে ফিরে এসে তাঁর এক ছাত্র লক্ষ করেন যে, তাঁর ডেস্কে রয়েছে একটি নোট, যাতে লেখা রয়েছে ‘দিজ সামার আই হ্যাভ ডিসকভার সামথিং দ্যাট ইজ টোটালি ইউজলেস।’ তার নিচে পিটার হিগ্সের স্বাক্ষর। ১৯৬৪ সালের জুলাই মাসে হিগ্স ফিজিকস লেটার জার্নালে উনআশি লাইনের একটি গবেষণাপত্রে ভগ্ন প্রতিসাম্যের বিষয়টি গাণিতিকভাবে প্রমাণ করেন। এভাবেই তাত্ত্বিকভাবে হিগ্স বোসন ও হিগ্স ক্ষেত্রের (হিগ্স ফিল্ড) জন্ম হয়। এই বোসনের সঙ্গে ফার্মিয়ন কণার পার্থক্য হচ্ছে ঘূর্ণন মানের। যেমন—ইলেকট্রনের ঘূর্ণন মান ১/২, ফোটনকণার ঘূর্ণন মান ১ এবং হিগ্স বোসন কণার ঘূর্ণন মান শূন্য।
এই গবেষণাপত্র প্রকাশের প্রায় অর্ধশতাব্দী পর ৪ জুলাই ২০১২ সালে সার্নের বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেন যে, তাঁরা পৃথিবীর শক্তিশালী ত্বরকযন্ত্র বৃহৎ হেড্রন কলাইডারে এক নতুন কণার সন্ধান পেয়েছেন, যার সঙ্গে পিটার হিগ্সের ‘ইউজলেস’ ধারণার মিল রয়েছে। সার্নের মহাপরিচালক রল্ফ ডিটার হিউয়ার ঘোষণা দেন যে, ‘উই হ্যাভ নাউ ফাউন্ড দ্য লাস্ট মিসিং কর্নারস্টোন অব দ্য স্ট্যান্ডার্ড মডেল।’ হিউয়ার আরও জানালেন যে, হিগ্স বোসন কণার ভর ১২৫ বিলিয়ন ইলেকট্রন ভোল্টের কাছাকাছি, যা প্রোটনের ভরের প্রায় ১৩৩ গুণ। সার্ন দুটি পরীক্ষা দ্বারা হিগ্স কণাকে শনাক্ত করেন। পরিসংখ্যানগত দিক থেকে তাঁদের প্রাপ্ত ফলাফল অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।
কয়েক বছর আগে রয়েল ইনস্টিটিউশনে প্রদত্ত বক্তৃতায় (যেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম) হিগ্স বলেছিলেন যে, ‘সম্ভবত আমার জীবদ্দশায় এই কণার সন্ধান মিলবে না, কারণ এর জন্য প্রয়োজন অত্যন্ত শক্তিশালী ত্বরকযন্ত্র, যার অর্থায়নে রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব রয়েছে।’
কণা পদার্থবিজ্ঞানে হিগ্স বোসন আবিষ্কার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই কণার আবিষ্কার প্রমাণ করে হিগ্সের ক্ষেত্রের অস্তিত্ব। এ ক্ষেত্র ব্যাখ্যা করে ভগ্ন প্রতিসাম্যের কলাকৌশল, যা থেকে পাওয়া যায় কোনো কণার ভর। সার্নের সামনে দাঁড়িয়ে সার্নের একদল বিজ্ঞানীকে (আমাদের গাইড) প্রশ্ন করেছিলাম, ‘হিগ্স বোসন কি কণা, না ক্ষেত্র?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘হিগ্স ক্ষেত্রকে যখন ঝাঁকুনি দেওয়া হয়, তখন তা থেকে বেরিয়ে আসে হিগ্স বোসন কণা।’
পিটার হিগ্স আজ আর আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর গাণিতিক ভাবনা কণা পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় বলিষ্ঠ অবদান রেখে চলেছে।
লেখক: অধ্যাপক ও বিজ্ঞান-পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা, যুক্তরাজ্য
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে