বিভুরঞ্জন সরকার
আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টানা চতুর্থবারসহ মোট পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। শুধু বাংলাদেশের নয়, এটা হবে সারা বিশ্বেই একটি রেকর্ড। আর কোনো দেশে গণতান্ত্রিক উপায়ে এত দীর্ঘ সময় সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কোনো নজির নেই। পরপর টানা চার মেয়াদে এবং মোট পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড কেবল শেখ হাসিনাই গড়তে চলেছেন।
তিনি প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ২০১৪ সালে তৃতীয়বার এবং ২০১৯ সালে চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালে পঞ্চমবারের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে চলেছেন।
শেখ হাসিনার ঝুলিতে আরও অনেক রেকর্ড রয়েছে। দেশের বৃহত্তম এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব তাঁর চেয়ে বেশি সময় আর কেউ পালন করেননি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত। তার আগে ১০ বছর অবশ্য তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। চার দশকের বেশি সময়। এটাও একটি রেকর্ড।
সংসদীয় রাজনীতিতে বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবেও সময়ের হিসাবে এগিয়ে শেখ হাসিনা। ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন।
সরকার পরিচালনায় এবং বিরোধী রাজনীতিতে তিনি তাঁর যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, সাহসিকতা এবং দূরদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন প্রবীণ নেতাদের চেয়ে নেতৃত্বগুণে এগিয়ে গিয়ে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠেছিলেন, শেখ হাসিনাও তাঁর সময়ের সবাইকে ছাড়িয়ে নিজের নেতৃত্বকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।
রাজনীতিতে শেখ হাসিনার চলার পথ ফুল বিছানো ছিল না। তাঁকে কেউ যেচে জায়গা ছেড়ে দেয়নি; বরং অনেক প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই তাঁকে এগোতে হয়েছে। কখনো বা তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ শেরপা। বাবা-মা-ভাই-ভ্রাতৃবধূসহ অসংখ্য স্বজন হারিয়ে, পদে পদে বিপদ, এমনকি জীবননাশের হুমকি সত্ত্বেও তিনি দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণব্রতী হয়ে বলিষ্ঠভাবে এগিয়েছেন বলেই আজ তিনি দেশবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হতে পেরেছেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে ধারার রাজনীতি শুরু হয়েছিল, সেখান থেকে দেশকে ফেরানো যাবে বলে অনেকেই মনে করতেন না। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখার সব ধরনের অপচেষ্টাই বিভিন্ন মহল থেকে হয়েছে। দেশের ভেতরে এবং বাইরে শত্রুতা ছিল, আছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের মধ্যেও সব সময়ই ছদ্মবেশী মতলববাজদের উপস্থিতি ছিল এবং এখনো আছে। সবকিছু সামাল দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে জিতিয়ে ক্ষমতায় আনার একক কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। তিনি রাজনীতির গতিপ্রকৃতি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। শত্রু-মিত্রের চেহারা তাঁর দেখা। তিনি দেখেছেন, ঠকেছেন এবং শিখেছেন। তাই তাঁকে যারা হারাতে চেয়েছে, কৌশলে যারা তাঁকে অতিক্রম করতে চেয়েছে, তাদেরই তিনি হারিয়েছেন, পেছনে ফেলেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতা সব সময় প্রবল। বিরোধিতার রাজনীতি এখানে যতটা প্রভাব ফেলে, পক্ষের রাজনীতি ততটা নয়। আমাদের দেশে রাজনীতিতে ‘না’ বলে মানুষকে যতটা মাতানো যায়, ‘হ্যাঁ’তে ততটা সাড়া জাগানো যায় না। অথচ শেখ হাসিনা ‘হ্যাঁ’য়ের রাজনীতিতেই মানুষকে অভ্যস্ত করে তুলছেন।
রাজনীতি নিয়ে হতাশা, ক্ষোভ এখন প্রবল। রাজনীতি থেকে শুদ্ধতা বিদায় নিয়েছে বলে মনে করা হয়। লাভ ও লোভের কাঙাল এখন রাজনীতিতে বেশি। সরকারে থেকেই শুধু নয়, বিরোধী দলে থেকেও রাজনৈতিক ব্যবসায় পকেট ভারী করা সহজ।
বলা যায়, একটি খুব অস্থির ও জটিল সময়ে শেখ হাসিনা নতুন করে সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। দেশের ভেতরে, দলের অভ্যন্তরে সমস্যা আছে, সর্বোপরি দেশের বাইরে থেকেও সমস্যা চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা আছে।
সবকিছু সত্ত্বেও এটাই ঠিক যে শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের আগের বাংলাদেশ আর তাঁর শাসনের বাংলাদেশ এক নয়। একসময় বাংলাদেশ ছিল সম্পদশালী ও মোড়লিপনা করা দেশগুলোর করুণানির্ভর। তলাবিহীন ঝুড়ি। খাদ্যঘাটতি, ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিত্যসঙ্গী, ত্রাণ পাওয়ার আশায় হাত পেতে থাকা একটি দেশ। কিন্তু এখন বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে বলার মতো মানুষ এখন অনেক আছেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারায় এনেছেন। ২০১৫ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি পেয়েছে। এখন উন্নত দেশের লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না’। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাওয়ার গল্প তৈরি করছি একের পর এক। কেউ দাবিয়ে রাখতে পারছে না।
বিএনপি-জামায়াত শাসনের সময় দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে জঙ্গিবাদী অপশক্তি দেশকে প্রকাশ্যে মানুষ হত্যার মহড়া দিয়ে মধ্যযুগীয় বর্বরতা দেখাতে পেরেছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সরকারবিরোধিতার নামে সহিংসতার বিস্তার ঘটিয়ে মামুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা অতীতে করেছে, এখনো করছে। ২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব দমনে সরকার বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সক্ষম হয়েছে। এরপর ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে এবং পরের বছর সরকার পতনের ডাক দিয়ে দেশজুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। আগুন সন্ত্রাস ছড়িয়ে ভীতিকর অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। মানুষের মনে তৈরি হয়েছিল আতঙ্ক। সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে কি না, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে।
গণতন্ত্রের সুযোগের অপব্যবহার করে সন্ত্রাস-সহিংসতার পথে হেঁটে বিএনপি ও তার সহযোগীরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এখন রাজনীতিতে খাবি খাচ্ছে। একের পর এক ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিএনপি নামের দলটিকে এখন অস্তিত্ব-সংকটের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে। সরকার পতনের এক দফার অসফল আন্দোলন এবার বিএনপিকে আরও বিচ্ছিন্ন করেছে। ভোট বর্জনের ডাকের পরিণতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল এবং ব্যক্তিগত সাহসিকতা সামগ্রিক পরিস্থিতি তাঁর অনুকূলেই রেখেছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির আগাম অভিযোগ এনে অর্থসহায়তা না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে যারা বাংলাদেশকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল, তারা এখন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে এক নতুন সক্ষম বাংলাদেশকে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে অনেকেই মনে করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহস দেখিয়েছেন। পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্নকল্পনা নয়। দৃশ্যমান সত্য।
পদ্মা সেতু ছাড়াও মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগা প্রকল্প এখন বাস্তব চিত্র। রূপপুরে ব্যয়বহুল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষের দিকে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মতো কাজগুলো হতে পেরেছে শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও বলিষ্ঠতার কারণেই। শেখ হাসিনার শাসনকালেই প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সন্দেহ-অবিশ্বাস দূর হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যার সম্মানজনক নিষ্পত্তি হয়েছে। সমুদ্রসীমার বিরোধ মিটেছে আন্তর্জাতিক আদালতে। কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে ক্রম অগ্রসরমাণতা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। দিনবদলের সনদ রূপকল্প ২০২১-এর পর ২০২১ থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তিনি নিজে স্বপ্ন দেখেন এবং দেশের মানুষের সামনেও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন তুলে ধরেন।
দুর্নীতি-অনিয়ম, লুটপাটের ঘটনা দেশে ঘটছে না, তা নয়। বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও বাড়ছে। তবে লুটপাট, অর্থ পাচারের কাহিনি কি শুধু শেখ হাসিনার সময়েরই, নাকি এর ধারাবাহিকতা আছে? শেখ হাসিনা সব সময় সবকিছু তাঁর মতো করে করতে পারেন তা-ও হয়তো নয়। দুনিয়ার কোনো দেশেই রাজনীতি একটি সরলরেখা ধরে চলে না। সরকার এবং সরকারের বিরোধিতা হলো রাজনীতির চিরায়ত খেলা। দ্বন্দ্ব-বিরোধ রাজনীতির স্বাভাবিক প্রবণতা। এর মধ্যে যে রাজনীতি বেশিসংখ্যক মানুষের উপকার নিশ্চিত করে, সেই রাজনীতিই টেকসই হয়। বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করে শেখ হাসিনার সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছে। লাখ লাখ মানুষ বিনা মূল্যে বাসস্থান পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখেছেন: আমাদের বাঙালিদের মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হলো ‘আমরা মুসলমান, আর একটা হলো, আমরা বাঙালি।’ পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে আছে। বোধ হয় দুনিয়ার কোন ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না, ‘পরশ্রীকাতরতা’।
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে আমরা যদি উদার, অসাম্প্রদায়িক বাঙালি হয়ে উঠতে পারি এবং পরশ্রীকাতরতামুক্ত হতে পারি, তাহলে সত্যি আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন যে সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, সেই সরকার যেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি না দেখায়—সেটাই এখন দেশবাসীর প্রত্যাশা।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টানা চতুর্থবারসহ মোট পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। শুধু বাংলাদেশের নয়, এটা হবে সারা বিশ্বেই একটি রেকর্ড। আর কোনো দেশে গণতান্ত্রিক উপায়ে এত দীর্ঘ সময় সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কোনো নজির নেই। পরপর টানা চার মেয়াদে এবং মোট পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড কেবল শেখ হাসিনাই গড়তে চলেছেন।
তিনি প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ২০১৪ সালে তৃতীয়বার এবং ২০১৯ সালে চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালে পঞ্চমবারের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে চলেছেন।
শেখ হাসিনার ঝুলিতে আরও অনেক রেকর্ড রয়েছে। দেশের বৃহত্তম এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব তাঁর চেয়ে বেশি সময় আর কেউ পালন করেননি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত। তার আগে ১০ বছর অবশ্য তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। চার দশকের বেশি সময়। এটাও একটি রেকর্ড।
সংসদীয় রাজনীতিতে বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবেও সময়ের হিসাবে এগিয়ে শেখ হাসিনা। ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন।
সরকার পরিচালনায় এবং বিরোধী রাজনীতিতে তিনি তাঁর যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, সাহসিকতা এবং দূরদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন প্রবীণ নেতাদের চেয়ে নেতৃত্বগুণে এগিয়ে গিয়ে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠেছিলেন, শেখ হাসিনাও তাঁর সময়ের সবাইকে ছাড়িয়ে নিজের নেতৃত্বকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।
রাজনীতিতে শেখ হাসিনার চলার পথ ফুল বিছানো ছিল না। তাঁকে কেউ যেচে জায়গা ছেড়ে দেয়নি; বরং অনেক প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই তাঁকে এগোতে হয়েছে। কখনো বা তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ শেরপা। বাবা-মা-ভাই-ভ্রাতৃবধূসহ অসংখ্য স্বজন হারিয়ে, পদে পদে বিপদ, এমনকি জীবননাশের হুমকি সত্ত্বেও তিনি দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণব্রতী হয়ে বলিষ্ঠভাবে এগিয়েছেন বলেই আজ তিনি দেশবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হতে পেরেছেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে ধারার রাজনীতি শুরু হয়েছিল, সেখান থেকে দেশকে ফেরানো যাবে বলে অনেকেই মনে করতেন না। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখার সব ধরনের অপচেষ্টাই বিভিন্ন মহল থেকে হয়েছে। দেশের ভেতরে এবং বাইরে শত্রুতা ছিল, আছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের মধ্যেও সব সময়ই ছদ্মবেশী মতলববাজদের উপস্থিতি ছিল এবং এখনো আছে। সবকিছু সামাল দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে জিতিয়ে ক্ষমতায় আনার একক কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। তিনি রাজনীতির গতিপ্রকৃতি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। শত্রু-মিত্রের চেহারা তাঁর দেখা। তিনি দেখেছেন, ঠকেছেন এবং শিখেছেন। তাই তাঁকে যারা হারাতে চেয়েছে, কৌশলে যারা তাঁকে অতিক্রম করতে চেয়েছে, তাদেরই তিনি হারিয়েছেন, পেছনে ফেলেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতা সব সময় প্রবল। বিরোধিতার রাজনীতি এখানে যতটা প্রভাব ফেলে, পক্ষের রাজনীতি ততটা নয়। আমাদের দেশে রাজনীতিতে ‘না’ বলে মানুষকে যতটা মাতানো যায়, ‘হ্যাঁ’তে ততটা সাড়া জাগানো যায় না। অথচ শেখ হাসিনা ‘হ্যাঁ’য়ের রাজনীতিতেই মানুষকে অভ্যস্ত করে তুলছেন।
রাজনীতি নিয়ে হতাশা, ক্ষোভ এখন প্রবল। রাজনীতি থেকে শুদ্ধতা বিদায় নিয়েছে বলে মনে করা হয়। লাভ ও লোভের কাঙাল এখন রাজনীতিতে বেশি। সরকারে থেকেই শুধু নয়, বিরোধী দলে থেকেও রাজনৈতিক ব্যবসায় পকেট ভারী করা সহজ।
বলা যায়, একটি খুব অস্থির ও জটিল সময়ে শেখ হাসিনা নতুন করে সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। দেশের ভেতরে, দলের অভ্যন্তরে সমস্যা আছে, সর্বোপরি দেশের বাইরে থেকেও সমস্যা চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা আছে।
সবকিছু সত্ত্বেও এটাই ঠিক যে শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের আগের বাংলাদেশ আর তাঁর শাসনের বাংলাদেশ এক নয়। একসময় বাংলাদেশ ছিল সম্পদশালী ও মোড়লিপনা করা দেশগুলোর করুণানির্ভর। তলাবিহীন ঝুড়ি। খাদ্যঘাটতি, ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিত্যসঙ্গী, ত্রাণ পাওয়ার আশায় হাত পেতে থাকা একটি দেশ। কিন্তু এখন বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে বলার মতো মানুষ এখন অনেক আছেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারায় এনেছেন। ২০১৫ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি পেয়েছে। এখন উন্নত দেশের লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না’। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাওয়ার গল্প তৈরি করছি একের পর এক। কেউ দাবিয়ে রাখতে পারছে না।
বিএনপি-জামায়াত শাসনের সময় দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে জঙ্গিবাদী অপশক্তি দেশকে প্রকাশ্যে মানুষ হত্যার মহড়া দিয়ে মধ্যযুগীয় বর্বরতা দেখাতে পেরেছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সরকারবিরোধিতার নামে সহিংসতার বিস্তার ঘটিয়ে মামুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা অতীতে করেছে, এখনো করছে। ২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব দমনে সরকার বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সক্ষম হয়েছে। এরপর ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে এবং পরের বছর সরকার পতনের ডাক দিয়ে দেশজুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। আগুন সন্ত্রাস ছড়িয়ে ভীতিকর অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। মানুষের মনে তৈরি হয়েছিল আতঙ্ক। সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে কি না, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে।
গণতন্ত্রের সুযোগের অপব্যবহার করে সন্ত্রাস-সহিংসতার পথে হেঁটে বিএনপি ও তার সহযোগীরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এখন রাজনীতিতে খাবি খাচ্ছে। একের পর এক ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিএনপি নামের দলটিকে এখন অস্তিত্ব-সংকটের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে। সরকার পতনের এক দফার অসফল আন্দোলন এবার বিএনপিকে আরও বিচ্ছিন্ন করেছে। ভোট বর্জনের ডাকের পরিণতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল এবং ব্যক্তিগত সাহসিকতা সামগ্রিক পরিস্থিতি তাঁর অনুকূলেই রেখেছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির আগাম অভিযোগ এনে অর্থসহায়তা না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে যারা বাংলাদেশকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল, তারা এখন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে এক নতুন সক্ষম বাংলাদেশকে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে অনেকেই মনে করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহস দেখিয়েছেন। পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্নকল্পনা নয়। দৃশ্যমান সত্য।
পদ্মা সেতু ছাড়াও মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগা প্রকল্প এখন বাস্তব চিত্র। রূপপুরে ব্যয়বহুল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষের দিকে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মতো কাজগুলো হতে পেরেছে শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও বলিষ্ঠতার কারণেই। শেখ হাসিনার শাসনকালেই প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সন্দেহ-অবিশ্বাস দূর হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যার সম্মানজনক নিষ্পত্তি হয়েছে। সমুদ্রসীমার বিরোধ মিটেছে আন্তর্জাতিক আদালতে। কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে ক্রম অগ্রসরমাণতা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। দিনবদলের সনদ রূপকল্প ২০২১-এর পর ২০২১ থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তিনি নিজে স্বপ্ন দেখেন এবং দেশের মানুষের সামনেও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন তুলে ধরেন।
দুর্নীতি-অনিয়ম, লুটপাটের ঘটনা দেশে ঘটছে না, তা নয়। বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও বাড়ছে। তবে লুটপাট, অর্থ পাচারের কাহিনি কি শুধু শেখ হাসিনার সময়েরই, নাকি এর ধারাবাহিকতা আছে? শেখ হাসিনা সব সময় সবকিছু তাঁর মতো করে করতে পারেন তা-ও হয়তো নয়। দুনিয়ার কোনো দেশেই রাজনীতি একটি সরলরেখা ধরে চলে না। সরকার এবং সরকারের বিরোধিতা হলো রাজনীতির চিরায়ত খেলা। দ্বন্দ্ব-বিরোধ রাজনীতির স্বাভাবিক প্রবণতা। এর মধ্যে যে রাজনীতি বেশিসংখ্যক মানুষের উপকার নিশ্চিত করে, সেই রাজনীতিই টেকসই হয়। বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করে শেখ হাসিনার সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছে। লাখ লাখ মানুষ বিনা মূল্যে বাসস্থান পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখেছেন: আমাদের বাঙালিদের মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হলো ‘আমরা মুসলমান, আর একটা হলো, আমরা বাঙালি।’ পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে আছে। বোধ হয় দুনিয়ার কোন ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না, ‘পরশ্রীকাতরতা’।
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে আমরা যদি উদার, অসাম্প্রদায়িক বাঙালি হয়ে উঠতে পারি এবং পরশ্রীকাতরতামুক্ত হতে পারি, তাহলে সত্যি আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন যে সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, সেই সরকার যেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি না দেখায়—সেটাই এখন দেশবাসীর প্রত্যাশা।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে