মোনায়েম সরকার
লিখতে বসেই বৃহস্পতিবারের আজকের পত্রিকার একটি শিরোনামে চোখ আটকে গেল। ‘তারল্যসংকট প্রবল, ধারে চলছে ব্যাংক’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি থেকে জানা যাচ্ছে দেশের ব্যাংক খাতের বিভিন্ন দুর্বলতার কথা। দেশের ব্যাংকগুলোতে লেনদেন করার মতো নগদ অর্থ নেই, ব্যাংকগুলো ব্যাপক হারে ধার করে প্রতিদিনের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে। ব্যাংকগুলোর ধার বেড়েছে, আবার খেলাপি ঋণের পরিমাণও অনেক বেড়েছে।
সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মুখ থেকে কোনো খারাপ খবর বা সতর্কবার্তা দেওয়া না হলেও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদেরা দেশের অর্থনীতি, ব্যাংকিং খাত নিয়ে কোনো আশার কথা বলছেন না। বরং গভীর এক সংকটের দিকে আমরা যাচ্ছি বলেই শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি বলেছেন, ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, খাতটি এখন প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন অরক্ষিত বলা চলে।
আমি অর্থনীতি বা ব্যাংকিং ব্যবস্থা খুব বুঝি না, কিন্তু পরিচিত কেউ কেউ যখন বলেন, ব্যাংকে গিয়ে কিছু বেশি পরিমাণ টাকা তুলতে গেলে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন দুশ্চিন্তা হয় বৈকি! আমরা একদিকে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন লক্ষ করছি, অন্যদিকে সরকারসংশ্লিষ্ট কারও কারও দুর্নীতি-অনিয়ম-ক্ষমতার অপব্যবহারের এমন সব খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা কোনোভাবেই সরকারের মুখ উজ্জ্বল করছে না। সরকারের যাঁরা নীতিনির্ধারক, তাঁদের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। চরম বিপর্যয় আসার আগেই সাবধান হতে হবে। মনে রাখতে হবে, সময় গেলে সাধন হবে না।
কোরবানির ঈদ এসে গেছে। এবার ঈদ নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে না। অনেক মানুষই নাকি এবার কোরবানি দিতে পারবেন না। গরু-ছাগলের হাট তেমন জমছে না বলেই শুনছি। আবার কেউ কেউ অনেক দামি গরু কিনেও কোরবানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দেশে কোটিপতির সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। চোখধাঁধানো উন্নয়ন যেমন হচ্ছে, তেমনি অভাব-অনটনে চলা পরিবারের সংখ্যাও বাড়ছে। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে বিব্রতকর। কারণ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ করা হয়েছিল বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই। বৈষম্য বাড়িয়ে বা অব্যাহত রেখে আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি, তখন অনেকের কাছে বিষয়টি হাস্যকর বলে মনে হয়। বিশেষ করে যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা।
অর্থনীতির আকাশে যখন কালো মেঘের আনাগোনা, তখনই এসেছে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, এবার তিন দিনব্যাপী উদ্যাপন করা হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি। ২১ জুন ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোভাযাত্রা হবে। ২৩ তারিখে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে প্ল্যাটিনাম জন্মজয়ন্তীর শুভ উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
২৩ তারিখ বেলা ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভা এবং শুরুতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর রবীন্দ্রসরোবরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, হাতিরঝিলে নৌকাবাইচ ও সাইকেল শোভাযাত্রা হবে। দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে।
গতানুগতিক ধারায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের বাইরে কি কিছু ভাবতে পারে না দেশের ঐতিহ্যবাহী এই দল? ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যখন প্রস্তুত হচ্ছে; ঠিক এ সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনেও কিছু নতুনত্ব প্রত্যাশা করা অন্যায় নয়।
এই অঞ্চলের অন্যতম পুরোনো এই দলের জন্ম হয়েছিল, যখন আমরা ছিলাম পাকিস্তানের অংশ। পরে আবার এই দলই বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। দীর্ঘ উত্থান-পতনের ধারাবাহিকতায় দলটি এখন টানা চার মেয়াদ ধরে বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় আছে এবং সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার রেকর্ড এই দলেরই।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে যে দল আত্মপ্রকাশ করেছিল, সেই দলই আজকের আওয়ামী লীগ। আত্মপ্রকাশের ছয় বছরের মাথায় দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।
উদ্দেশ্য, দলে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা।
১৯৬৬ সালে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে যে ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয় আওয়ামী লীগের তরফ থেকে, সেটাকেই মনে করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম একটি পদক্ষেপ। এরপর ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ভূমিকা দলটিকে এই অঞ্চলের একক বৃহৎ রাজনৈতিক দলে পরিণত করে ফেলে আর শেখ মুজিবুর রহমান পরিণত হন দলের অবিসংবাদিত নেতায়। এর সঙ্গে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যুক্ত হওয়ায় শেখ মুজিব আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং বলা হয়, সেই জনপ্রিয়তাই সত্তর সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল বিজয় এনে দেয়।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের পথ ধরে এবং একপর্যায়ে একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে হামলে পড়ে বাঙালি জাতির ওপর। বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ অধিষ্ঠিত হয়, সরকারপ্রধান হন দলের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন দেশে নানা রাজনৈতিক অস্থিরতার পটভূমিতে ১৯৭৫ সালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে দিয়ে চালু করা হয় বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল নামের একদলীয় শাসনব্যবস্থা।
এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে খুন হন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘদিনের জন্য সামরিক সরকারের শাসনে চলে যায় বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগের ওপর নেমে আসে চরম দুঃসময়।
১৯৮১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর শুরু হয় আওয়ামী লীগের নতুন উত্থান পর্ব। জিয়া হত্যা, এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ, এরশাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন, যুগপৎ আন্দোলনে স্বৈরশাসকের পতন এবং ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপির বিজয় এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে বিজয়ের পর দীর্ঘ একুশ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে।
এরপর আরেক দফা ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ২০০৯ সালে আবার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ, যে মেয়াদে সংবিধানে সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয় দলটি। এরপর দেশে আরও তিনটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের সুযোগ পেয়েছে দলটি।
এই টানা শাসনের চতুর্থ মেয়াদে এসে দলটির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। বড় চ্যালেঞ্জ দলের নীতি-আদর্শের ভিত্তি মজবুত করা।
গণতন্ত্রচর্চার ক্ষেত্রে বড় ব্যত্যয় ঘটছে বলে অনেকেই মনে করছেন। নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নেই বলেই মনে হচ্ছে। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষেও দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অবস্থান একরকম দৃঢ় নয়। মনে করা হচ্ছে, বিভিন্ন কারণে এই পর্যায়ে এসে আওয়ামী লীগই হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের বড় শত্রু। নীতিহীনদের দাপটে আওয়ামী লীগ এখন কিছুটা হয়তো পথভ্রষ্ট। শেখ হাসিনাকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য ভেতর থেকেই বুঝি কলকাঠি নাড়া হচ্ছে। আজিজ আহমেদ, বেনজীর আহমেদদের উত্থান ঘটছে। আনোয়ারুল আজীম আনারদের মতো ব্যক্তিরা সংসদ সদস্য হচ্ছেন। দলের প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর উদ্যাপনের সময় এ বিষয়গুলো কি বিবেচনা করা হবে না?
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ
লিখতে বসেই বৃহস্পতিবারের আজকের পত্রিকার একটি শিরোনামে চোখ আটকে গেল। ‘তারল্যসংকট প্রবল, ধারে চলছে ব্যাংক’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি থেকে জানা যাচ্ছে দেশের ব্যাংক খাতের বিভিন্ন দুর্বলতার কথা। দেশের ব্যাংকগুলোতে লেনদেন করার মতো নগদ অর্থ নেই, ব্যাংকগুলো ব্যাপক হারে ধার করে প্রতিদিনের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে। ব্যাংকগুলোর ধার বেড়েছে, আবার খেলাপি ঋণের পরিমাণও অনেক বেড়েছে।
সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মুখ থেকে কোনো খারাপ খবর বা সতর্কবার্তা দেওয়া না হলেও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদেরা দেশের অর্থনীতি, ব্যাংকিং খাত নিয়ে কোনো আশার কথা বলছেন না। বরং গভীর এক সংকটের দিকে আমরা যাচ্ছি বলেই শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি বলেছেন, ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, খাতটি এখন প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন অরক্ষিত বলা চলে।
আমি অর্থনীতি বা ব্যাংকিং ব্যবস্থা খুব বুঝি না, কিন্তু পরিচিত কেউ কেউ যখন বলেন, ব্যাংকে গিয়ে কিছু বেশি পরিমাণ টাকা তুলতে গেলে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন দুশ্চিন্তা হয় বৈকি! আমরা একদিকে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন লক্ষ করছি, অন্যদিকে সরকারসংশ্লিষ্ট কারও কারও দুর্নীতি-অনিয়ম-ক্ষমতার অপব্যবহারের এমন সব খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা কোনোভাবেই সরকারের মুখ উজ্জ্বল করছে না। সরকারের যাঁরা নীতিনির্ধারক, তাঁদের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। চরম বিপর্যয় আসার আগেই সাবধান হতে হবে। মনে রাখতে হবে, সময় গেলে সাধন হবে না।
কোরবানির ঈদ এসে গেছে। এবার ঈদ নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে না। অনেক মানুষই নাকি এবার কোরবানি দিতে পারবেন না। গরু-ছাগলের হাট তেমন জমছে না বলেই শুনছি। আবার কেউ কেউ অনেক দামি গরু কিনেও কোরবানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দেশে কোটিপতির সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। চোখধাঁধানো উন্নয়ন যেমন হচ্ছে, তেমনি অভাব-অনটনে চলা পরিবারের সংখ্যাও বাড়ছে। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে বিব্রতকর। কারণ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ করা হয়েছিল বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই। বৈষম্য বাড়িয়ে বা অব্যাহত রেখে আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি, তখন অনেকের কাছে বিষয়টি হাস্যকর বলে মনে হয়। বিশেষ করে যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা।
অর্থনীতির আকাশে যখন কালো মেঘের আনাগোনা, তখনই এসেছে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, এবার তিন দিনব্যাপী উদ্যাপন করা হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি। ২১ জুন ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোভাযাত্রা হবে। ২৩ তারিখে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে প্ল্যাটিনাম জন্মজয়ন্তীর শুভ উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
২৩ তারিখ বেলা ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভা এবং শুরুতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর রবীন্দ্রসরোবরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, হাতিরঝিলে নৌকাবাইচ ও সাইকেল শোভাযাত্রা হবে। দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে।
গতানুগতিক ধারায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের বাইরে কি কিছু ভাবতে পারে না দেশের ঐতিহ্যবাহী এই দল? ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যখন প্রস্তুত হচ্ছে; ঠিক এ সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনেও কিছু নতুনত্ব প্রত্যাশা করা অন্যায় নয়।
এই অঞ্চলের অন্যতম পুরোনো এই দলের জন্ম হয়েছিল, যখন আমরা ছিলাম পাকিস্তানের অংশ। পরে আবার এই দলই বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। দীর্ঘ উত্থান-পতনের ধারাবাহিকতায় দলটি এখন টানা চার মেয়াদ ধরে বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় আছে এবং সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার রেকর্ড এই দলেরই।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে যে দল আত্মপ্রকাশ করেছিল, সেই দলই আজকের আওয়ামী লীগ। আত্মপ্রকাশের ছয় বছরের মাথায় দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।
উদ্দেশ্য, দলে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা।
১৯৬৬ সালে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে যে ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয় আওয়ামী লীগের তরফ থেকে, সেটাকেই মনে করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম একটি পদক্ষেপ। এরপর ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ভূমিকা দলটিকে এই অঞ্চলের একক বৃহৎ রাজনৈতিক দলে পরিণত করে ফেলে আর শেখ মুজিবুর রহমান পরিণত হন দলের অবিসংবাদিত নেতায়। এর সঙ্গে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যুক্ত হওয়ায় শেখ মুজিব আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং বলা হয়, সেই জনপ্রিয়তাই সত্তর সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল বিজয় এনে দেয়।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের পথ ধরে এবং একপর্যায়ে একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে হামলে পড়ে বাঙালি জাতির ওপর। বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ অধিষ্ঠিত হয়, সরকারপ্রধান হন দলের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন দেশে নানা রাজনৈতিক অস্থিরতার পটভূমিতে ১৯৭৫ সালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে দিয়ে চালু করা হয় বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল নামের একদলীয় শাসনব্যবস্থা।
এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে খুন হন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘদিনের জন্য সামরিক সরকারের শাসনে চলে যায় বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগের ওপর নেমে আসে চরম দুঃসময়।
১৯৮১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর শুরু হয় আওয়ামী লীগের নতুন উত্থান পর্ব। জিয়া হত্যা, এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ, এরশাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন, যুগপৎ আন্দোলনে স্বৈরশাসকের পতন এবং ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপির বিজয় এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে বিজয়ের পর দীর্ঘ একুশ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে।
এরপর আরেক দফা ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ২০০৯ সালে আবার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ, যে মেয়াদে সংবিধানে সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয় দলটি। এরপর দেশে আরও তিনটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের সুযোগ পেয়েছে দলটি।
এই টানা শাসনের চতুর্থ মেয়াদে এসে দলটির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। বড় চ্যালেঞ্জ দলের নীতি-আদর্শের ভিত্তি মজবুত করা।
গণতন্ত্রচর্চার ক্ষেত্রে বড় ব্যত্যয় ঘটছে বলে অনেকেই মনে করছেন। নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নেই বলেই মনে হচ্ছে। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষেও দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অবস্থান একরকম দৃঢ় নয়। মনে করা হচ্ছে, বিভিন্ন কারণে এই পর্যায়ে এসে আওয়ামী লীগই হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের বড় শত্রু। নীতিহীনদের দাপটে আওয়ামী লীগ এখন কিছুটা হয়তো পথভ্রষ্ট। শেখ হাসিনাকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য ভেতর থেকেই বুঝি কলকাঠি নাড়া হচ্ছে। আজিজ আহমেদ, বেনজীর আহমেদদের উত্থান ঘটছে। আনোয়ারুল আজীম আনারদের মতো ব্যক্তিরা সংসদ সদস্য হচ্ছেন। দলের প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর উদ্যাপনের সময় এ বিষয়গুলো কি বিবেচনা করা হবে না?
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে