রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় সুপরিচিত দুটো শব্দ হলো ‘তাপদাহ’ ও ‘দাবদাহ’। আমাদের যাপিত জীবনে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে শব্দ দুটোর প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়। তীব্র গরমের এ অস্বস্তিকর অবস্থাকে কেউ বলছেন ‘তাপদাহ’, আবার কেউ বলছেন ‘দাবদাহ’। এ দুটো শব্দের অর্থ কী একই? আবার কোথাও কোথাও উচ্চারিত হচ্ছে ‘তাপপ্রবাহ’।
এর মধ্যে আবার আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক জারি করা হয়েছে ‘হিট অ্যালার্ট’। সুতরাং প্রশ্ন হলো, ভিন্ন ভিন্নভাবে উপস্থাপিত এই শব্দগুলোর যথাযথ অর্থ কী? একই সঙ্গে এটিও জানা দরকার, প্রচণ্ড গরমের এ পরিস্থিতিকে আমরা ঠিক কোন জুতসই শব্দ দিয়ে অভিহিত করব। তবে চলুন আজ জানব চলমান তাপপ্রবাহে প্রয়োগকৃত শব্দসমূহের আদ্যোপান্ত।
সংস্কৃত ‘তাপ’ ও ‘দাহ’ শব্দসহযোগে গঠিত হয়েছে ‘তাপদাহ’, অন্যদিকে সংস্কৃত ‘দাব’ ও ‘দাহ’ শব্দসহযোগে গঠিত হয়েছে ‘দাবদাহ’ শব্দটি। দুটোই বিশেষ্য পদ। সংস্কৃত ‘দাহ’ শব্দের অর্থ হলো দহন। যেমন—গৃহদাহ। আবার মৃতের সৎকার অর্থে ‘শবদাহ’ শব্দটি আমরা ব্যবহার করে থাকি। সংস্কৃত ‘দাব’ শব্দের অর্থ হলো অরণ্য, বন; অনল, অগ্নি; তাপ প্রভৃতি। দাব শব্দের প্রথম অর্থটি থেকেই আমরা দাবানল শব্দটি ব্যবহার করি। দাবানল শব্দটির অর্থ হলো, গ্রীষ্মকালে বনাঞ্চলে গাছের শুকনো ডালের পরস্পর ঘর্ষণের ফল সৃষ্ট যে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, অর্থাৎ দাবাগ্নি।
‘তাপদাহ’ বলতে অতিরিক্ত তাপের কারণে যে দহন বা শরীরে যে জ্বালাপোড়ার অস্বস্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি হয় সেটিকে বোঝায়। তাপদাহ শব্দটি দাবদাহ শব্দের ধ্বনিসাদৃশ্যেই গঠিত হয়েছে এবং অপেক্ষাকৃত নবীন শব্দ। আবার দাব শব্দের একটি অর্থ হলো তাপ, সেই সূত্রেও তাপদাহ শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত তাপের তীব্রতা বোঝাতে এর সঙ্গে ‘দাহ’ শব্দটি যুক্ত হয়েছে। যদিও আক্ষরিক অর্থে এই তাপ কাউকেই দাহ করছে না। তাপদাহ শব্দটি ব্যাকরণিকভাবে ভুল না হলেও পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে এর আক্ষরিক অর্থ বিবেচনায় অপেক্ষাকৃত কম জুতসই।
‘দাবদাহ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো দাবানল বা দাবাগ্নির তাপ। অর্থাৎ দাবানলে সৃষ্ট উত্তাপ। সূর্যের অতিরিক্ত তাপে ঘন জঙ্গলের শুকনো গাছ বা ডালে বাতাসের চাপে ব্যাপক ঘর্ষণের ফলে যে আগুন জ্বলে ওঠে, তাকে দাবানল বলে। সেই দাবানলের প্রচণ্ড উত্তাপে বনের কাঁচা গাছপালায়ও তৎক্ষণাৎ আগুন ধরে যায়। মোটকথা, দাবানল থেকে সৃষ্ট উত্তাপই হলো দাবদাহ। এখন যে উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছে, তা সরাসরি দাবানল বা দাবাগ্নির তাপ নয়। তবে চলমান উষ্ণতার অনুভূতি দাবানলের উত্তাপের সঙ্গে তুলনীয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘তাপদাহ’ ও ‘দাবদাহ’ উভয় শব্দ যে অর্থে প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা আভিধানিক অর্থ এবং বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় যথোপযুক্ত নয়। তবে ব্যাকরণিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুটো শব্দ শুদ্ধ হলেও পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে আলাদা অর্থ বহন করে। বর্তমানে যে অবস্থাদৃষ্টে ‘তাপদাহ’ ও ‘দাবদাহ’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করা হচ্ছে, তার জুতসই অর্থবহ শব্দটি হচ্ছে ‘তাপপ্রবাহ’।
সংস্কৃত ‘তাপ’ ও ‘প্রবাহ’ শব্দসহযোগে গঠিত হয়েছে ‘তাপপ্রবাহ’ শব্দটি। এটি বিশেষ্য পদ। এর অর্থ প্রচণ্ড উত্তাপ বা উষ্ণতার স্রোত। সহজ কথায়, বর্ধিষ্ণু তাপের প্রবাহ। প্রচণ্ড তাপ এক জায়গায় সীমাবদ্ধ না থেকে যখন দেশজুড়ে প্রবাহিত হয় বা বয়ে চলে, সেটিই তাপপ্রবাহ।
আমরা দেখতে পাই, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিজস্ব পরিভাষা অনুযায়ী এই পরিস্থিতিকেই তাপপ্রবাহ (হিট ওয়েভ) বলে অভিহিত করা হয়েছে। কেননা, তাপপ্রবাহ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলা ভাষায় এই শব্দের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ আরেকটি শব্দ চালু রয়েছে, সেটি হলো শৈত্যপ্রবাহ। দেশজুড়ে যখন কনকনে শীতের হিমেল হাওয়া বয়ে যায়, সেটিই শৈত্যপ্রবাহ। যদিও তাপপ্রবাহ ও শৈত্যপ্রবাহ অর্থগত দিক থেকে পরস্পর বিপরীতমুখী।
সুতরাং, দেশজুড়ে চলমান আবহাওয়ার অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সঙ্গে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দটি হলো তাপপ্রবাহ। এই শব্দ প্রয়োগের মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি বর্ণিত হচ্ছে। অপর পক্ষে প্রচণ্ড তাপের কারণে যে উষ্ণ অনুভূতি, তা অনেকটাই দাবদাহের সমতুল্য।
অর্থাৎ, তাপজনিত তারতম্যের তুলনার্থে দাবদাহ শব্দটির আলংকারিক প্রয়োগ করা যেতে পারে। আসুন, তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস মেনে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করি, সচেতন থাকি।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় সুপরিচিত দুটো শব্দ হলো ‘তাপদাহ’ ও ‘দাবদাহ’। আমাদের যাপিত জীবনে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে শব্দ দুটোর প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়। তীব্র গরমের এ অস্বস্তিকর অবস্থাকে কেউ বলছেন ‘তাপদাহ’, আবার কেউ বলছেন ‘দাবদাহ’। এ দুটো শব্দের অর্থ কী একই? আবার কোথাও কোথাও উচ্চারিত হচ্ছে ‘তাপপ্রবাহ’।
এর মধ্যে আবার আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক জারি করা হয়েছে ‘হিট অ্যালার্ট’। সুতরাং প্রশ্ন হলো, ভিন্ন ভিন্নভাবে উপস্থাপিত এই শব্দগুলোর যথাযথ অর্থ কী? একই সঙ্গে এটিও জানা দরকার, প্রচণ্ড গরমের এ পরিস্থিতিকে আমরা ঠিক কোন জুতসই শব্দ দিয়ে অভিহিত করব। তবে চলুন আজ জানব চলমান তাপপ্রবাহে প্রয়োগকৃত শব্দসমূহের আদ্যোপান্ত।
সংস্কৃত ‘তাপ’ ও ‘দাহ’ শব্দসহযোগে গঠিত হয়েছে ‘তাপদাহ’, অন্যদিকে সংস্কৃত ‘দাব’ ও ‘দাহ’ শব্দসহযোগে গঠিত হয়েছে ‘দাবদাহ’ শব্দটি। দুটোই বিশেষ্য পদ। সংস্কৃত ‘দাহ’ শব্দের অর্থ হলো দহন। যেমন—গৃহদাহ। আবার মৃতের সৎকার অর্থে ‘শবদাহ’ শব্দটি আমরা ব্যবহার করে থাকি। সংস্কৃত ‘দাব’ শব্দের অর্থ হলো অরণ্য, বন; অনল, অগ্নি; তাপ প্রভৃতি। দাব শব্দের প্রথম অর্থটি থেকেই আমরা দাবানল শব্দটি ব্যবহার করি। দাবানল শব্দটির অর্থ হলো, গ্রীষ্মকালে বনাঞ্চলে গাছের শুকনো ডালের পরস্পর ঘর্ষণের ফল সৃষ্ট যে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, অর্থাৎ দাবাগ্নি।
‘তাপদাহ’ বলতে অতিরিক্ত তাপের কারণে যে দহন বা শরীরে যে জ্বালাপোড়ার অস্বস্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি হয় সেটিকে বোঝায়। তাপদাহ শব্দটি দাবদাহ শব্দের ধ্বনিসাদৃশ্যেই গঠিত হয়েছে এবং অপেক্ষাকৃত নবীন শব্দ। আবার দাব শব্দের একটি অর্থ হলো তাপ, সেই সূত্রেও তাপদাহ শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত তাপের তীব্রতা বোঝাতে এর সঙ্গে ‘দাহ’ শব্দটি যুক্ত হয়েছে। যদিও আক্ষরিক অর্থে এই তাপ কাউকেই দাহ করছে না। তাপদাহ শব্দটি ব্যাকরণিকভাবে ভুল না হলেও পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে এর আক্ষরিক অর্থ বিবেচনায় অপেক্ষাকৃত কম জুতসই।
‘দাবদাহ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো দাবানল বা দাবাগ্নির তাপ। অর্থাৎ দাবানলে সৃষ্ট উত্তাপ। সূর্যের অতিরিক্ত তাপে ঘন জঙ্গলের শুকনো গাছ বা ডালে বাতাসের চাপে ব্যাপক ঘর্ষণের ফলে যে আগুন জ্বলে ওঠে, তাকে দাবানল বলে। সেই দাবানলের প্রচণ্ড উত্তাপে বনের কাঁচা গাছপালায়ও তৎক্ষণাৎ আগুন ধরে যায়। মোটকথা, দাবানল থেকে সৃষ্ট উত্তাপই হলো দাবদাহ। এখন যে উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছে, তা সরাসরি দাবানল বা দাবাগ্নির তাপ নয়। তবে চলমান উষ্ণতার অনুভূতি দাবানলের উত্তাপের সঙ্গে তুলনীয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘তাপদাহ’ ও ‘দাবদাহ’ উভয় শব্দ যে অর্থে প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা আভিধানিক অর্থ এবং বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় যথোপযুক্ত নয়। তবে ব্যাকরণিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুটো শব্দ শুদ্ধ হলেও পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে আলাদা অর্থ বহন করে। বর্তমানে যে অবস্থাদৃষ্টে ‘তাপদাহ’ ও ‘দাবদাহ’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করা হচ্ছে, তার জুতসই অর্থবহ শব্দটি হচ্ছে ‘তাপপ্রবাহ’।
সংস্কৃত ‘তাপ’ ও ‘প্রবাহ’ শব্দসহযোগে গঠিত হয়েছে ‘তাপপ্রবাহ’ শব্দটি। এটি বিশেষ্য পদ। এর অর্থ প্রচণ্ড উত্তাপ বা উষ্ণতার স্রোত। সহজ কথায়, বর্ধিষ্ণু তাপের প্রবাহ। প্রচণ্ড তাপ এক জায়গায় সীমাবদ্ধ না থেকে যখন দেশজুড়ে প্রবাহিত হয় বা বয়ে চলে, সেটিই তাপপ্রবাহ।
আমরা দেখতে পাই, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিজস্ব পরিভাষা অনুযায়ী এই পরিস্থিতিকেই তাপপ্রবাহ (হিট ওয়েভ) বলে অভিহিত করা হয়েছে। কেননা, তাপপ্রবাহ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলা ভাষায় এই শব্দের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ আরেকটি শব্দ চালু রয়েছে, সেটি হলো শৈত্যপ্রবাহ। দেশজুড়ে যখন কনকনে শীতের হিমেল হাওয়া বয়ে যায়, সেটিই শৈত্যপ্রবাহ। যদিও তাপপ্রবাহ ও শৈত্যপ্রবাহ অর্থগত দিক থেকে পরস্পর বিপরীতমুখী।
সুতরাং, দেশজুড়ে চলমান আবহাওয়ার অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সঙ্গে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দটি হলো তাপপ্রবাহ। এই শব্দ প্রয়োগের মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি বর্ণিত হচ্ছে। অপর পক্ষে প্রচণ্ড তাপের কারণে যে উষ্ণ অনুভূতি, তা অনেকটাই দাবদাহের সমতুল্য।
অর্থাৎ, তাপজনিত তারতম্যের তুলনার্থে দাবদাহ শব্দটির আলংকারিক প্রয়োগ করা যেতে পারে। আসুন, তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস মেনে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করি, সচেতন থাকি।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে