বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর নাব্যতা সংকটে নৌকা চলাচল বন্ধ আছে। ফলে কৃষিপণ্য পরিবহনে একমাত্র ভরসা এখন ঘোড়ার গাড়ি।

সারিয়াকান্দির ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়ন যমুনা নদীতে। এসব ইউনিয়নের ৭২টি চরাঞ্চলের কৃষকেরা তাঁদের কৃষিজমিতে নানা ধরনের ফসল চাষ করেন। নদীর নাব্যতা না থাকায় কৃষকদের এসব ফসল ঘোড়ার গাড়িতে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে তাঁদের বসতবাড়িতে নিয়ে আসতে হচ্ছে। বসতবাড়ি থেকে চরাঞ্চলগুলোর জমির দূরত্ব অনেক বেশি। তাই কৃষকেরা বাধ্য হয়ে কৃষিপণ্য পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, গত বছর উপজেলায় ৩ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে ২০ হাজার ৫৪২ মেট্রিক টন মরিচ উৎপাদন হয়েছিল।

এ ছাড়া উপজেলায় বিভিন্ন ফসল ও শাক-সবজির মধ্যে খেসারি কলাই, মিষ্টি আলু, তিল, চীনাবাদাম, কেশুর আলু, পেঁয়াজ, ভুট্টা, মাষকলাই, ছোলা, তিসি, কালোজিরা, মিষ্টি কুমড়া, ধনিয়াও চরাঞ্চলের উৎপন্ন হয়। তা ছাড়া এ বছর ১১ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে ৩০ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হয়েছে। এসব ফসলগুলোর শতকরা ৭০ ভাগ ফসলই সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলে উৎপন্ন হয়।

উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের বাওইটোনা চরের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়ি হতে আমাদের জমির দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। বন্যার সময় নৌকায় জমিতে যেতাম। এখন বেশির ভাগ সময় হেঁটেই জমিতে যাই। তবে ফসল বা কৃষিপণ্য বাড়িতে নিয়ে আসতে ঘোড়ার গাড়িই আমাদের একমাত্র ভরসা।’

উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের ঘোড়ার গাড়ি চালক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘প্রতিনিয়ত ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে আমি কৃষকদের মালামাল পরিবহন করি। চর হতে গাড়িবোঝাই ফসল বিল এলাকায় নিয়ে যেতে প্রতি টিপে ৬০০ হতে ৭০০ টাকা করে ভাড়া নেই। এতে আমার সংসার খুবই ভালো চলছে। আমার বাড়ি চরে হওয়ায় ঘোড়ার জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না। আশপাশের জমিগুলো হতে ঘোড়া পর্যাপ্ত ঘাস খায়।’

উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের গেন্দা সরকার বলেন, ‘আগে নদীতে পানি আছিল। তাই ফসল ঘরে আনতে কোনো খরচই হয়নি। এখন নদীতে পানি নাই। তাই ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে ফসল বাড়িত আনতে বাড়তি খরচ হচ্ছে।’

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হালিম জানান, নদীর নাব্যতা সংকটে কৃষকেরা তাঁদের ফসলাদি পরিবহনসহ নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে নাব্যতা না থাকায় চরাঞ্চলগুলোতে কৃষিজমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।