ড. মাহা হিলাল
গত মাসে মার্কিন সিনেট ২০২৪ সালের জন্য ন্যাশনাল ডিফেন্স অথোরাইজেশন অ্যাক্ট (এনডিএএ) পাস করেছে। সামরিক অগ্রাধিকারগুলো সংজ্ঞায়িত করে বিলটিতে গুয়ানতানামো বের নির্যাতনের প্রতিকারের ওপর সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
আগের বছরগুলোর মতো এ বছরের বিলে কুখ্যাত এই কারাগার বন্ধ করার জন্য তহবিল বন্ধের নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেমন কারারুদ্ধ পুরুষ বন্দীদের স্থানান্তর করার জন্য তহবিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা; আফগানিস্তান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বন্দীদের স্থানান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। রয়েছে কারাগার সংস্কারের ওপর নিষেধাজ্ঞা।
এই পদক্ষেপগুলো সমর্থন করে মার্কিন কেন্দ্রীয় আইনপ্রণেতারা আবারও গুয়ানতানামোর সমস্যা চিরস্থায়ী করার পক্ষে ভোট দিলেন। সবকিছুর সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে এর কুখ্যাতি সুবিদিত। এখানে যে মুসলমান বন্দী এনে রাখা হয়, তাদের ব্যাপারে একটা সম্মিলিত দায়িত্ব তো আছে, কারণ বিচারে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তারা তো নির্দোষ। হোয়াইট হাউসের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিলটিতে ভেটো দেওয়া হবে বলে মনে হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গুয়ানতানামো বে বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বন্ধ করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি; বরং তিনি গত বছর কিউবায় অবস্থিত এ কারাগারের কিছু অংশ সংস্কার এবং এর আদালত কক্ষের মানোন্নয়নে কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন বলে জানা গেছে।
২২তম বছরে এসেও গুয়ানতানামোয় অপব্যবহার ও দায়িত্বশীলতার অভাবের কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না। একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বছরের পর বছর ন্যাশনাল ডিফেন্স অথোরাইজেশন আইনে সই করে চলেছেন, যাতে গুয়ানতানামো বের স্থিতাবস্থা বজায় থাকে। অর্থ বরাদ্দ তো এর একটা সামান্য বিষয়, যা বছরের পর বছর এই কুখ্যাত কারাগার চালিয়ে যাওয়ার দায়মুক্তি দিয়ে চলেছে।
চলছে নিষ্ঠুরতা
চলতি মাসে কুখ্যাত টর্চারস মেমোস তৈরির ২১ বছর পূর্তি হয়েছে। মার্কিন আইন কাউন্সিলের অফিস এ মেমোস বা খসড়ায় সই করে কার্যকরভাবে গুয়ানতানামো বের বন্দীদের ওপর নির্যাতনকে অনুমোদন দিয়েছে। এই অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্রকে নির্লজ্জভাবে এবং প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধ করার অনুমতি দেয়।
একটি মেমো অনুসারে, (ভেবে দেখুন) তীব্র শারীরিক ব্যথা পেলে তবেই তা অত্যাচার হিসেবে গণ্য হবে, যার ফলে শরীরের সব অঙ্গ বিকল হয়ে যাবে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হবে।
মেমোগুলো প্রকাশ হওয়ার পরে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, এসব অপরাধের জন্য কাউকে বিচার করা হবে না এবং হয়তো কয়েক বছর পরে আকস্মিকভাবে মন্তব্য করব যে ‘আমরা কিছু লোককে নির্যাতন করেছি।’
চাপের মুখে স্বীকারোক্তি এবং চরম সহিংসতার মতো সেই নির্যাতনের প্রভাব এখনো রয়েছে। এসব কিছু গুয়ানতানামোতে থাকা বাকি বন্দীদের দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাদের চলমান যন্ত্রণাকে স্থায়ী করে। ওবামার নিষ্ক্রিয়তা নিঃসন্দেহে দায়মুক্তির নজির স্থাপন করেছে—এর মাধ্যমে বারবার একে ন্যায়সংগত করা হবে।
মার্কিন সিনেটররা এনডিএএ বিল পাস করার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, জাতিসংঘ গুয়ানতানামো বেতে নির্যাতনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার ও সন্ত্রাসবিরোধীবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ফিনুয়ালা নি আলন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। নি আলন জাতিসংঘের প্রথম স্বাধীন তদন্তকারী, যিনি গুয়ানতানামো বে পরিদর্শন করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
২৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে গুয়ানতানামোর বর্তমান ও সাবেক বন্দীদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আচরণের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি মার্কিন সরকারের নিয়মতান্ত্রিক অপরাধকে অসাধারণভাবে উপস্থাপন করেছে। এর ফলে সারা বিশ্বের দৃষ্টি নতুন করে গুয়ানতানামো বের ওপর পড়েছে।
বিশেষ র্যাপোর্টার লিখেছেন, ‘এই কারাগারে কাঠামোগত ত্রুটি রয়েছে। প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, পারিবারিক কাউন্সিল এবং ন্যায়বিচারে পদ্ধতিগত স্বেচ্ছাচারিতা রয়েছে। এসব ত্রুটি দূর করতে হবে।’
প্রায় ৮০০ বন্দী ছিল এই কারাগারে। এখন মাত্র ৩০ জন রয়েছে। নি আলন সাবেক বন্দীদের গুয়ানতানামো-পরবর্তী জীবনের বিষয়েও সতর্ক রয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘অনেক সাবেক বন্দীর কাছে তাদের বাড়িতে বা তৃতীয় দেশে তাদের বর্তমান অভিজ্ঞতা গুয়ানতানামো বের মতো। এমনকি কেউ কেউ গুয়ানতানামোতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।’
তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ারের এসব সমালোচনাকে উড়িয়ে দেন। তাঁরা এ-ও বলেছেন, হতে পারে জাতিসংঘের র্যাপোর্টিয়ার গুয়ানতানামো বে সফরের আগে এসব লিখেছেন।
গুয়ানতানামো বে কারাগারের সব ধরনের সহিংসতাকে এক কথায় উড়িয়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে একধরনের অহংবোধের প্রমাণ দিল। বিষয়টা আসলে এই কারাগারের কোনো নিপীড়িতের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার একেবারে সংকুচিত হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে তারা গুয়ানতানামোর বন্দীদের জন্য নিরাপদ এবং মানবিক চিকিৎসা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ গুয়ানতানামো বের অগণিত সাবেক বন্দী, এমনকি সাবেক রক্ষীরা ভয়াবহ নির্যাতনের সাক্ষ্য দেওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্র সরকার জোর গলায় এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে।
গুয়ানতানামোতে সহিংসতা অস্বীকার করার এ চেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরটি শুধু প্রতিবেদনের একটি স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান নয়; বরং একটি শক্তিশালী প্রতীকী প্রত্যাখ্যান, যা কোনোভাবে কাম্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে তারা জাতিসংঘের সুপারিশগুলো ‘সাবধানতার সঙ্গে পর্যালোচনা করবে’ এবং ‘যথাযথ পদক্ষেপ নেবে’। আসলে কি পাল্টাবে? কারারুদ্ধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চলমান আচরণে পরিবর্তনে না হওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তো প্রতিনিয়ত নিন্দার মুখে পড়ছে। প্রকৃতপক্ষে, গত ১৩ বছরে, ইউএস ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ প্রক্রিয়ার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রেকর্ডের তিনটি মূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রতিটি মূল্যায়নে বারবার গুয়ানতানামোর অবমাননাকর অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং তা
অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রতিটি আনুষ্ঠানিক সমালোচনার জন্য, যুক্তরাষ্ট্র সরকার গুয়ানতানামোতে তার নীতি এবং পদক্ষেপের অভাবকে ন্যায্যতা দিতে অমানবিক আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করে একটি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ওবামার শাসনামলে গুয়ানতানামো বে কারাগারে শুধু বর্বরতাই অব্যাহত ছিল না, ২০১০ সাল থেকে এনডিএএতে বিধিনিষেধ, বিশেষ করে গুয়ানতানামোর বন্দীদের মুক্তি ও স্থানান্তর করার জন্য তহবিল বন্ধ করার ক্ষেত্রে, তা বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ ওবামা, অন্য প্রেসিডেন্টদের মতো বিলটিতে ভেটো না দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল।
এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে মুসলমান পুরুষদের ওপর সহিংসতা চালানো হয়েছে, তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যদিও বেশির ভাগের বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র এত কার্যকরভাবে পুরুষদের জীবনকে অর্থহীন করে তুলেছে, যেখানে ইতিহাসবিদ আশিলে মেম্বে বলেছেন, ‘এ ধরনের জীবন বা মৃত্যুর প্রতি কেউই সামান্যতম দায়িত্ব বা ন্যায়বিচারের অনুভূতিও বহন করে না।’
গুয়ানতানামোর অপব্যবহার স্থায়ী করার জন্য তহবিল বাড়ানোর পরিবর্তে, মার্কিন কর্মকর্তাদের উচিত এর শিকারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বিশেষ র্যাপোর্টারের আহ্বানে মনোযোগ দেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই কারাগারটি বন্ধ করতে হবে এবং সেখানে যে সহিংসতা চালিয়েছে তা স্বীকার করতে হবে।
(মিডল ইস্ট আই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইংরেজি লেখাটি বাংলায় অনূদিত এবং ঈষৎ সংক্ষেপিত)
লেখক: ইসলামফোবিয়া গবেষক ও লেখক
গত মাসে মার্কিন সিনেট ২০২৪ সালের জন্য ন্যাশনাল ডিফেন্স অথোরাইজেশন অ্যাক্ট (এনডিএএ) পাস করেছে। সামরিক অগ্রাধিকারগুলো সংজ্ঞায়িত করে বিলটিতে গুয়ানতানামো বের নির্যাতনের প্রতিকারের ওপর সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
আগের বছরগুলোর মতো এ বছরের বিলে কুখ্যাত এই কারাগার বন্ধ করার জন্য তহবিল বন্ধের নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেমন কারারুদ্ধ পুরুষ বন্দীদের স্থানান্তর করার জন্য তহবিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা; আফগানিস্তান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বন্দীদের স্থানান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। রয়েছে কারাগার সংস্কারের ওপর নিষেধাজ্ঞা।
এই পদক্ষেপগুলো সমর্থন করে মার্কিন কেন্দ্রীয় আইনপ্রণেতারা আবারও গুয়ানতানামোর সমস্যা চিরস্থায়ী করার পক্ষে ভোট দিলেন। সবকিছুর সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে এর কুখ্যাতি সুবিদিত। এখানে যে মুসলমান বন্দী এনে রাখা হয়, তাদের ব্যাপারে একটা সম্মিলিত দায়িত্ব তো আছে, কারণ বিচারে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তারা তো নির্দোষ। হোয়াইট হাউসের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিলটিতে ভেটো দেওয়া হবে বলে মনে হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গুয়ানতানামো বে বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বন্ধ করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি; বরং তিনি গত বছর কিউবায় অবস্থিত এ কারাগারের কিছু অংশ সংস্কার এবং এর আদালত কক্ষের মানোন্নয়নে কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন বলে জানা গেছে।
২২তম বছরে এসেও গুয়ানতানামোয় অপব্যবহার ও দায়িত্বশীলতার অভাবের কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না। একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বছরের পর বছর ন্যাশনাল ডিফেন্স অথোরাইজেশন আইনে সই করে চলেছেন, যাতে গুয়ানতানামো বের স্থিতাবস্থা বজায় থাকে। অর্থ বরাদ্দ তো এর একটা সামান্য বিষয়, যা বছরের পর বছর এই কুখ্যাত কারাগার চালিয়ে যাওয়ার দায়মুক্তি দিয়ে চলেছে।
চলছে নিষ্ঠুরতা
চলতি মাসে কুখ্যাত টর্চারস মেমোস তৈরির ২১ বছর পূর্তি হয়েছে। মার্কিন আইন কাউন্সিলের অফিস এ মেমোস বা খসড়ায় সই করে কার্যকরভাবে গুয়ানতানামো বের বন্দীদের ওপর নির্যাতনকে অনুমোদন দিয়েছে। এই অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্রকে নির্লজ্জভাবে এবং প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধ করার অনুমতি দেয়।
একটি মেমো অনুসারে, (ভেবে দেখুন) তীব্র শারীরিক ব্যথা পেলে তবেই তা অত্যাচার হিসেবে গণ্য হবে, যার ফলে শরীরের সব অঙ্গ বিকল হয়ে যাবে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হবে।
মেমোগুলো প্রকাশ হওয়ার পরে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, এসব অপরাধের জন্য কাউকে বিচার করা হবে না এবং হয়তো কয়েক বছর পরে আকস্মিকভাবে মন্তব্য করব যে ‘আমরা কিছু লোককে নির্যাতন করেছি।’
চাপের মুখে স্বীকারোক্তি এবং চরম সহিংসতার মতো সেই নির্যাতনের প্রভাব এখনো রয়েছে। এসব কিছু গুয়ানতানামোতে থাকা বাকি বন্দীদের দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাদের চলমান যন্ত্রণাকে স্থায়ী করে। ওবামার নিষ্ক্রিয়তা নিঃসন্দেহে দায়মুক্তির নজির স্থাপন করেছে—এর মাধ্যমে বারবার একে ন্যায়সংগত করা হবে।
মার্কিন সিনেটররা এনডিএএ বিল পাস করার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, জাতিসংঘ গুয়ানতানামো বেতে নির্যাতনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার ও সন্ত্রাসবিরোধীবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ফিনুয়ালা নি আলন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। নি আলন জাতিসংঘের প্রথম স্বাধীন তদন্তকারী, যিনি গুয়ানতানামো বে পরিদর্শন করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
২৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে গুয়ানতানামোর বর্তমান ও সাবেক বন্দীদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আচরণের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি মার্কিন সরকারের নিয়মতান্ত্রিক অপরাধকে অসাধারণভাবে উপস্থাপন করেছে। এর ফলে সারা বিশ্বের দৃষ্টি নতুন করে গুয়ানতানামো বের ওপর পড়েছে।
বিশেষ র্যাপোর্টার লিখেছেন, ‘এই কারাগারে কাঠামোগত ত্রুটি রয়েছে। প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, পারিবারিক কাউন্সিল এবং ন্যায়বিচারে পদ্ধতিগত স্বেচ্ছাচারিতা রয়েছে। এসব ত্রুটি দূর করতে হবে।’
প্রায় ৮০০ বন্দী ছিল এই কারাগারে। এখন মাত্র ৩০ জন রয়েছে। নি আলন সাবেক বন্দীদের গুয়ানতানামো-পরবর্তী জীবনের বিষয়েও সতর্ক রয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘অনেক সাবেক বন্দীর কাছে তাদের বাড়িতে বা তৃতীয় দেশে তাদের বর্তমান অভিজ্ঞতা গুয়ানতানামো বের মতো। এমনকি কেউ কেউ গুয়ানতানামোতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।’
তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ারের এসব সমালোচনাকে উড়িয়ে দেন। তাঁরা এ-ও বলেছেন, হতে পারে জাতিসংঘের র্যাপোর্টিয়ার গুয়ানতানামো বে সফরের আগে এসব লিখেছেন।
গুয়ানতানামো বে কারাগারের সব ধরনের সহিংসতাকে এক কথায় উড়িয়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে একধরনের অহংবোধের প্রমাণ দিল। বিষয়টা আসলে এই কারাগারের কোনো নিপীড়িতের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার একেবারে সংকুচিত হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে তারা গুয়ানতানামোর বন্দীদের জন্য নিরাপদ এবং মানবিক চিকিৎসা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ গুয়ানতানামো বের অগণিত সাবেক বন্দী, এমনকি সাবেক রক্ষীরা ভয়াবহ নির্যাতনের সাক্ষ্য দেওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্র সরকার জোর গলায় এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে।
গুয়ানতানামোতে সহিংসতা অস্বীকার করার এ চেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরটি শুধু প্রতিবেদনের একটি স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান নয়; বরং একটি শক্তিশালী প্রতীকী প্রত্যাখ্যান, যা কোনোভাবে কাম্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে তারা জাতিসংঘের সুপারিশগুলো ‘সাবধানতার সঙ্গে পর্যালোচনা করবে’ এবং ‘যথাযথ পদক্ষেপ নেবে’। আসলে কি পাল্টাবে? কারারুদ্ধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চলমান আচরণে পরিবর্তনে না হওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তো প্রতিনিয়ত নিন্দার মুখে পড়ছে। প্রকৃতপক্ষে, গত ১৩ বছরে, ইউএস ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ প্রক্রিয়ার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রেকর্ডের তিনটি মূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রতিটি মূল্যায়নে বারবার গুয়ানতানামোর অবমাননাকর অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং তা
অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রতিটি আনুষ্ঠানিক সমালোচনার জন্য, যুক্তরাষ্ট্র সরকার গুয়ানতানামোতে তার নীতি এবং পদক্ষেপের অভাবকে ন্যায্যতা দিতে অমানবিক আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করে একটি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ওবামার শাসনামলে গুয়ানতানামো বে কারাগারে শুধু বর্বরতাই অব্যাহত ছিল না, ২০১০ সাল থেকে এনডিএএতে বিধিনিষেধ, বিশেষ করে গুয়ানতানামোর বন্দীদের মুক্তি ও স্থানান্তর করার জন্য তহবিল বন্ধ করার ক্ষেত্রে, তা বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ ওবামা, অন্য প্রেসিডেন্টদের মতো বিলটিতে ভেটো না দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল।
এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে মুসলমান পুরুষদের ওপর সহিংসতা চালানো হয়েছে, তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যদিও বেশির ভাগের বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র এত কার্যকরভাবে পুরুষদের জীবনকে অর্থহীন করে তুলেছে, যেখানে ইতিহাসবিদ আশিলে মেম্বে বলেছেন, ‘এ ধরনের জীবন বা মৃত্যুর প্রতি কেউই সামান্যতম দায়িত্ব বা ন্যায়বিচারের অনুভূতিও বহন করে না।’
গুয়ানতানামোর অপব্যবহার স্থায়ী করার জন্য তহবিল বাড়ানোর পরিবর্তে, মার্কিন কর্মকর্তাদের উচিত এর শিকারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বিশেষ র্যাপোর্টারের আহ্বানে মনোযোগ দেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই কারাগারটি বন্ধ করতে হবে এবং সেখানে যে সহিংসতা চালিয়েছে তা স্বীকার করতে হবে।
(মিডল ইস্ট আই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইংরেজি লেখাটি বাংলায় অনূদিত এবং ঈষৎ সংক্ষেপিত)
লেখক: ইসলামফোবিয়া গবেষক ও লেখক
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে