শেষ মুহূর্তে আমনের ক্ষতি

মাসুদুর রহমান মাসুদ, ঝিকরগাছা ও আজিজুর রহমান, চৌগাছা
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ২৮
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ২৫

বর্ষা শেষ। শরৎ পেরিয়ে হেমন্তের মাঝামাঝি এখন। কিন্তু এমন অসময়ে টানা তিন দিনের বৃষ্টি আর বৈরি আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমন চাষিরা। বৃষ্টির কারণে যশোরের ঝিকরগাছা ও চৌগাছার বিভিন্ন এলাকায় খেতে কেটে রাখা পাকা ধান অনেক কৃষকই ঘরে তুলতে পারেননি। নিচু জমির অনেক ধান কাদা–পানিতে মিশে গেছে।

বৃষ্টিতে ভেজা এসব ধান একদিকে ঘরে তুলতে শ্রমিক খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে ভেজা ধান বিক্রি করলে আশানুরূপ দামও মিলবে না। এমনকি ভালো মানের চালও হবে না এসব ভেজা ধানে। ফলে পাকা ধান ঘরে তোলার ঠিক আগ মুহূর্তে এমন ক্ষতিতে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের।

শুধু আমন চাষিরা নন, মসুর ডালের চাষিরাও পড়েছেন বিপাকে। কৃষকেরা বলছেন, মসুর বোনার এখন ভরা মৌসুম। কিন্তু বৃষ্টির কারণে খেত ভিজে গেছে। কোথাও কোথাও নিচু জমিতে পানিও জমে গেছে। আর শুকনা জমি ছাড়া মসুর বীজ বোনা যায় না। ফলে মাটি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তাঁদের।

তবে গতকাল মঙ্গলবার রোদ ওঠায় দ্রুত অবস্থার উন্নতি হবে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, বৃষ্টি হলেও কৃষকদের কেটা রাখা পাকা ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। রোদ ওঠায় ক্ষতির শঙ্কা কেটে গেছে।

ঝিকরগাছা : শনি, রবি ও সোমবারের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ঝিকরগাছায় আমন ধান চাষিরা দুর্ভোগে পড়েছেন। অসময়ের এ বৃষ্টিতে মাঠে কাটা ধান ভিজে গেছে। উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় চাষিদের আমন ধান কাটা হয়ে গেছে। কেউ কেউ এ ধান বাড়িতে তুলেছেন। আবার কারও ধান এখনো মাঠে থাকায় বৃষ্টিতে সব ভিজে গেছে।

উপজেলার পায়রাডাঙ্গা মাঠে কথা হয় চাষি মনিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তিনি বিঘা জমির আমন ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে দুই বিঘার ধান মাঠে রয়েছে। আর এক বিঘার ধান বাড়িতে। সব ধান বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। এ ধান শুকাতে মজুরি খরচ বেড়ে গেল।’

মনিরুল আরও বলেন, ‘ধান কেটে সরিষার বীজ বুনতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু মাটি ভিজে যাওয়ায় সরিষা বুনতে কিছুদিন দেরি হবে। মাটি না শুকালে সরিষা বোনা যায় না।’

উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘দুই বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে কিন্তু এখনো সব শুকানো হয়নি। অসময়ের বৃষ্টিতে সব ভিজে গেছে। শুকাতে রোদে দিতে শ্রমিক বেশি লাগবে, তাতে একটু খরচ বাড়বে।’

এ বিষয়ে ঝিকরগাছা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘চলতি বছর আবহাওয়া আমন চাষের উপযোগী ছিল। তবে অসময়ের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে কাটা ধান ভিজে গেছে। ভারী বৃষ্টি না হলে রবি শস্যের কোনো ক্ষতি হবে না।’

চৌগাছা : কার্তিকের শেষ তিন দিনে হঠাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগে চৌগাছায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকেরা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার থেকে শুরু হয় থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সঙ্গে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। যা গত সোমবারও অব্যাহত ছিল। এর মধ্যে রোববার সারা রাত থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টি ঝরেছে। বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কৃষকের মাঠে কেটে রাখা পাকা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। একটু নিচু জমিতে পানি জমে যাওয়ায় মাঠের কেটে রাখা ধান এখন পানির নিচে।

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সিংহঝুলি, জগন্নাথপুর, জামালতা, বাড়িয়ালী, ফতেপুর, ধুলিয়ানী, চাঁদপাড়া, হাজরাখানা, বড়খানপুর, বাদেখানপুর, ফাঁশতলা, গুয়াতলী, পুড়াপাড়া, কমলাপুর, সাঞ্চাডাঙ্গা, রামকৃষ্ণপুর, সুখপুকুরিয়া, হিজলী, আন্দুলিয়া, সর্বনন্দহুদা, জগদীশপুর, হাকিমপুর, পাতিবিলাসহ বিভিন্ন মাঠে কৃষকের কেটে রাখা ধান পানির নিচে। বেশির ভাগ মাঠই পানিতে নরম হয়ে যাওয়ায় কৃষক মাঠে যেতে পারছেন না। অন্যদিকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে ধান বাড়িতেও নিতে পারছেন না তাঁরা। তবে গতকাল মঙ্গলবার রোদ ওঠায় ধান ঘরে তোলার তৎপরতা শুরু হয়েছে।

বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা জানান, এখন চলছে মসুরি বোনার ভরা মৌসুম। হঠাৎ বর্ষা ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় তাঁদের জমির জোঁ (বুননের পরিবেশ) নষ্ট হয়ে গেছে। এখন খেত আবার শুকাতে হবে। তারপর জোঁ হলে মসুর বুনতে হবে। আর যারা মসুর বুনেছেন, তাঁদেরও নষ্ট হয়ে গেছে। ফের বুনতে হবে। অন্যদিকে ধারাবাহিক বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে সবজি খেতেরও। তবে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় বেশি ক্ষতির শঙ্কা কেটে গেছে।

উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামের কৃষক সোহাগ হোসেন বলেন, ‘আমার দুই বিঘার ধান কাটা রয়েছে। বাড়িতে নিতে পারছি না। বৃষ্টিতে ভেজা ধানের দাম অনেক কমে পাব। যদি চারা গজিয়ে যায় তখন এই ধান আর কোনো কাজেই লাগবে না।’

চৌগাছা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করছেন। সঠিক ক্ষতির পরিমাণ এখনও বলা যাচ্ছে না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত