নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সন্ধ্যার পর পাবনার কাজীরহাট-আরিচা (মানিকগঞ্জ) নৌপথে চলছে স্পিডবোট। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নেওয়া হলেও যাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে না লাইফ জ্যাকেট। রাতে পার করে দেওয়ার অজুহাতে আদায় করা হচ্ছে বেশি ভাড়া।

কাজীরহাট স্পিডবোট মালিক সমিতি জানায়, দুই পাড়ের (আরিচা ও কাজীরহাট) লোকজনের মালিকানায় দেড় শতাধিক স্পিডবোট রয়েছে। এর মধ্যে কাজীরহাট এলাকার লোকজনের মালিকানায় রয়েছে ৭১টি।

তবে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে দুই পারের মিলিয়ে প্রতিদিন ২০টি স্পিডবোট চলাচল করছে।

জানা গেছে, ঝড়ের মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সন্ধ্যা পর্যন্ত স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। ইতিমধ্যে যমুনার পানি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র স্রোত।

এ অবস্থায় প্রায় দিনই ঝড়-বৃষ্টি হয় বলে বিকেল ৫টার পর স্পিডবোটের মতো নৌযানগুলোর চলাচল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরও সন্ধ্যার পর স্পিডবোট চালাতে দেখা গেছে। ঘাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, যাত্রী পাওয়া গেলে বেশি ভাড়া নিয়ে অনেক সময় রাত ৮টার পরও স্পিডবোট চলাচল করে।

স্পিডবোট ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে যাত্রী নিয়ে স্পিডবোট ছেড়ে যাচ্ছে।

তবে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে স্পিডবোট কর্তৃপক্ষের লোকজনকে স্পিডবোটে আর কোনো যাত্রী তুলতে দেখা যায়নি। ১৮ ও ১২ আসনের দুই ধরনের স্পিডবোট চলাচলের জন্য রয়েছে।

অথচ এগুলোতে প্রায়ই দুই-তিনজন যাত্রী বেশি তোলা হয়। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী তোলার ব্যাপারে যাত্রীরা আপত্তি করলে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া প্রত্যেক যাত্রীকে লাইফ জ্যাকেট দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও তাঁদের তা দেওয়া হয় না বলে অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছে।

ঘাটের একাধিক দোকানি জানান, যাত্রী থাকলে রাত ৮টার দিকেও স্পিডবোট ছেড়ে যায়। তবে তিনটি ফেরির দুটি নষ্ট হওয়ার পরই রাতে বেশি স্পিডবোট চলছে। 
পাবনার মাধপুরের বাসিন্দা ফয়সাল আহম্মেদ ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্পিডবোটে আরিচায় যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, চার-পাঁচ দিন আগে তিনি সন্ধ্যা ৭টার দিকে আরিচা থেকে কাজীরহাট আসেন। বুধবার আবার ঢাকায় ফিরে যান।

কাজীরহাট ঘাটের স্পিডবোট মালিক সমিতির তত্ত্বাবধায়ক হায়দার আলী জানান, তাঁদের শেষ স্পিডবোটটি কাজীরহাট থেকে মাগরিবের আজানের আগেই ছেড়ে যায়। এরপর আর কোনো স্পিডবোট চলে না। তবে আরিচা থেকে মাগরিবের আজানের আগে ছেড়ে যে স্পিডবোটটি কাজীরহাটে আসে, সেটি যাত্রী নামিয়ে দিয়ে খালি অবস্থায় আবার আরিচায় ফিরে যায়।

হায়দার আলী বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ধারণক্ষমতার চেয়ে একজন যাত্রীও অতিরিক্ত নেওয়া হয় না। আর প্রত্যেকটি বোটে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট আছে। যাত্রীদের তা পরার অনুরোধ করা হলেও কেউ নিতে চান না।’

বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) খালেদ মোশারফ বলেন, ‘দিনের আলোতে স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি আছে। ওই সময়ের বাইরে কেউ স্পিডবোট চালালে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা নৌ-পুলিশকে জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে নগরবাড়ী নৌ-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যার পর স্পিডবোট চলাচলের বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। আমি বুধবার ঘাটে গিয়ে কঠোরভাবে নিষেধ করে এসেছি। বিষয়টি নিয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়েছে। এরপরও যদি তারা উপেক্ষা করে রাতে স্পিডবোট চালায় বা অতিরিক্ত যাত্রী নেয়, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হবে।’