এবার ধাক্কা চালের দামে

জিয়াউল হক, যশোর
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২২, ০৬: ৪৪

যশোরে আবারও বেড়েছে চালের দাম। পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে বিভিন্ন জাতের চাল কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। তবে সুগন্ধি ও পোলাওয়ের চালের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের উর্ধ্বগতি এই সময়ে চালের দাম বৃদ্ধি ক্রেতাদের ওপর নতুন ধাক্কা।

আড়তদারেরা বলছেন, অটো চালকল মালিকদের শক্তিশালী চক্রের কারণে বাজারে চালের দাম লাগামহীন।

অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে চক্রটি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন।

তেল, গ্যাস, ডাল, মাংস, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে যখন নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের, তখন যশোরের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। অনেককেই বাধ্য হয়ে নামতে হয়েছে ‘শর্টকাট লিস্টে’। খাদ্য আর দৈনন্দিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার তালিকা কাটছাঁট করেও নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন চাহিদা মেটাতে।

যশোর বড় বাজারের খুচরা বিক্রেতা নির্মল সাহা জানান, এক মাস আগেও যশোরের বাজারে স্বর্ণলতা চাল প্রকারভেদে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়; দুই দফায় দাম বেড়ে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৫ টাকায়। ৩৮ টাকার হাইব্রিড জিএস চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকায়। হীরা ৩৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫ টাকা। বিরি ২৮ জাত ৬ টাকা বেড়ে ৫৬ টাকা, বিরি ৪৯ জাত ৬ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকা, বিরি ৫১ জাত ৮ টাকা বেড়ে ৫৬ টাকা। সমপরিমাণ দাম বেড়েছে বিনা ৭ জাতের চালেরও।

নির্মল সাহা আরও জানান, ৫৪ টাকা কেজির কাজললতা চাল দুই দফায় বেড়ে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫২ টাকার হাবু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়। বিরি ৮৭ জাত বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। প্রকারভেদে ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়ে বাসমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭২ টাকায়। ৫৬ টাকার জিরা মিনিকেটের দাম এখন ৬৪-৬৫ টাকা। সমপরিমাণ দাম বেড়েছে কাটারিভোগেরও। ৭৫ টাকার নাজিরশাইল ৮৮ টাকা, একইদামের মৌ জাত বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮২ টাকা। ক্ষীর কোণ ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা, কালোজিরা ৯০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩৫ টাকা।

আড়তদার মেহেদী হাসান বলেন, ‘সম্প্রতি বাজারদর একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আজ এক দামে কিনে নিয়ে আসছি তো কাল আবার সেটির দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমরা যেমন দামে কিনছি, লাভ রেখে তেমন দামেই বিক্রি করছি। এখানে আমাদের করণীয় কিছু নেই।’

ক্রেতা শরীফ খান বলেন, ‘৪ জনের সংসারে মাসে প্রায় দেড় মণ চাল লাগে। আত্মীয়-স্বজন এলে পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। এক বছর আগেও গড়ে ৩ হাজার টাকার মোটা জাতের চাল হলে পুরো মাস চলে যেতো। সেখানে গত তিন-চার মাস ধরে অতিরিক্ত আরও ১২-১৩ শ টাকা খরচ হচ্ছে। এখন সংসার চালাতে মাসে ৫ হাজার টাকার চাল কিনেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।’

চাকরিজীবী নাজমুল হোসেন বলেন, ‘এমন কোনো নিত্যপণ্য নেই, যার দাম বাড়েনি। কিন্তু করোনায় যে বেতন কমেছে, তা আগের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থাৎ করোনার আগে যে বেতন পেতাম সেটাও পাচ্ছি না এখন। সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ায় স্ত্রী-সন্তানকে বাধ্য হয়ে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

নাজমুল হোসেন আরও বলেন, ‘বাজারে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালালে তখন দাম কম রাখে বিক্রেতারা। কিন্তু তারা চলে গেলে আবার যা-তাই হয়ে যায়। এ অবস্থায় আমরা সাধারণ মানুষ চরম বিপাকে রয়েছি।’

যশোর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘বছরের এ সময়ে চালের দাম তুলনামূলক বেশি থাকে, কিন্তু এবার সেটি আরও বেড়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে সহসভাপতি ওবায়দুর রহমান আরও বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরেই ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে অটো চালকল মালিকেরা। ধান ওঠার শুরুতেই তাঁরা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে মজুত করেন। সেই মজুত থেকেই শুরু হয় তাঁদের কারসাজি। মূলত অটো চালকল মালিকদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেই কেবল ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। অন্যথায় চালের বাজার অস্থিতিশীল থাকবে।’

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, ‘শুধু চাল নয়, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এখন থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়েছে। এ অবস্থাতেও যদি বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম রাখেন, তাহলে ভোক্তা অধিদপ্তরের কাছে অভিযোগ দেওয়ার জন্য ক্রেতাদের প্রতি পরামর্শ থাকবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত