রাহুল শর্মা, ঢাকা
একদিকে ডলার সংকটে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, অন্যদিকে কাঁচামাল সংকটে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাজারে কাগজের সরবরাহে টান পড়েছে। এতে কাগজের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রকাশনাশিল্পের অন্যান্য উপকরণের দামও। এমনিতেই স্মরণকালের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সংসারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। এর মধ্যে কাগজসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়ায় বড় সংকটে পড়েছে প্রকাশনাশিল্প। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির পাঠক।
প্রকাশনাশিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কাগজসহ অন্যান্য উপকরণের বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে পুরো প্রকাশনাশিল্পে। এ অজুহাতে একদিকে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে নিম্নমানের কাগজে। অন্যদিকে সৃজনশীল বইয়ের সংখ্যাও কমবে, তবে দাম বাড়বে। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সব শ্রেণির পাঠক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সম্পাদক জহুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এবার প্রকাশনাশিল্পের অবস্থা খুব খারাপ। কেননা, একদিকে ডলার সংকটে কাগজ আমদানি একরকম বন্ধ, অন্যদিকে কাগজ তৈরির ভার্জিন পাল্প বা মণ্ড সংকটে দেশি পেপার মিলগুলোও চাহিদা অনুযায়ী কাগজ উৎপাদন করতে পারছে না। এতে বাজারে কাগজের ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘কাগজের সংকটের অজুহাতে মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা বিনা মূল্যের পাঠ্যবই নিম্নমানের কাগজে ছাপছে, যা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আর কাগজসহ সব ধরনের উপকরণের দাম বাড়ায় সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশনাও ব্যাহত হবে। সংকটের চিত্র পুরোপুরি ফুটে উঠবে আগামী বইমেলায়।’
অসাধু চক্রের কারসাজি
উৎপাদকদের দাবি, ডলার সংকটে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে না পারায় বিদেশ থেকে কাগজ ও কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। এতে একদিকে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে বিদেশি কাগজ আমদানিও বন্ধ। আর এতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কাগজের দাম। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে, সে তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে দেশে কাগজের দাম।
ব্যবসায়ী আহমদুল্লাহ স্বপন বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত কাগজের দাম এখন দ্বিগুণের কাছাকাছি। তিন মাসের ব্যবধানে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংকটের পাশাপাশি অবশ্যই অসাধু মিলমালিকদের সিন্ডিকেটও দায়ী।’ একই অভিযোগ প্রকাশকদেরও। সৃজনশীল প্রকাশক ঐক্য গত ২১ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে, প্রতিনিয়ত নানা ছলচাতুরী করে কাগজের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
বর্তমানে নিউজপ্রিন্টের বাজার প্রতিযোগিতাহীন। বেসরকারি কাগজকল মালিকেরা মিলে দাম নির্ধারণ করেন ইচ্ছেমতো। ফলে কাগজ ব্যবহারকারীদের কাছে কোনো বিকল্প থাকে না। একসময় দেশের অধিকাংশ নিউজপ্রিন্ট উৎপাদন ও সরবরাহ হতো খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল থেকে। ২০০২ সালে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয় ক্রমাগত লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে। অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ অনেকের অভিযোগ, মিলটি বন্ধ করার পেছনেও বেসরকারি মিলমালিকদের কারসাজি ছিল।
আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি বলেন, প্রতিবছরই বইমেলার দুই মাস আগে কাগজের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়। কিন্তু এবারের অবস্থা আরও ভয়াবহ।
কাগজের বাজারে আগুন
আরামবাগের পারফেক্ট পেপার হাউসের কর্ণধার মো. মইনুল ইসলাম বলেন, সব ধরনের কাগজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। দেশে কাগজ তৈরির কাঁচামাল নেই। আবার ডলার সংকটে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানিও করা যাচ্ছে না।
নয়াবাজারের নাদিয়া পেপার হাউসের কর্ণধার আহমদুল্লাহ স্বপন বলেন, দেশে উৎপাদিত কাগজের দাম এখন দ্বিগুণের কাছাকাছি। তিন মাসের ব্যবধানে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, প্রতি রিম ৫৫ জিএসএম হোয়াইট প্রিন্ট বা সাদা কাগজের দাম এক বছর আগে ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। এখন ২ হাজার ২৫০ টাকা। ধাপে ধাপে বেড়েছে এর দাম। আর ৮০ জিএসএম সাদা কাগজের দাম এক বছর আগে ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা, এখন ৩ হাজার ২০০ টাকা।
আরও একাধিক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি রিম নিউজপ্রিন্টের দাম মানভেদে ৯৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। বর্তমানে যে মানের নিউজপ্রিন্টের দাম ১ হাজার ৩০০ টাকা, এক বছর আগে সেটি ছিল ৬০০ টাকা। কয়েক মাস আগেও মানভেদে দাম ছিল ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা। দামের একই অবস্থা ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, কালি, প্লেটেরও।
জানা যায়, দেশে চার ধরনের কাগজ উৎপাদন ও আমদানি করা হয়। এগুলো হলো লেখার কাগজ, ছাপার কাগজ, নিউজপ্রিন্ট এবং প্যাকেজিং জাতীয় কাগজ। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ লেখার কাগজ, ৩৫ শতাংশ ছাপার কাগজ, ৪০ শতাংশ নিউজপ্রিন্ট এবং ১০ শতাংশ প্যাকেজিংয়ের কাগজ।
কাগজ, কালি, ও অন্যান্য উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ছাপাখানা ব্যবসায়ও। কারণ, দাম বাড়ায় মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা এখন সব ধরনের ছাপা কমিয়ে দিয়েছেন।
আরামবাগের শাপলা প্রিন্টার্সের মালিক মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগের মতো কাজ নেই। অর্ডার নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কমে। আগে সাতজন কর্মচারী থাকলেও এখন একজন কর্মচারী দিয়ে নিজেই কাজ চালাচ্ছি। সাধারণত এই মৌসুমে আমাদের কথা বলারও সময় থাকে না। অথচ এখন আমরা প্রায়ই অলস সময় পার করি।’
বাড়বে বইয়ের দাম
কয়েকজন প্রকাশক জানান, কাগজসহ উপকরণের চড়া দামের কারণে বইয়ের দাম বাড়বে প্রায় ৫০ শতাংশ। সংকটের কারণে এবার সৃজনশীল বইয়ের সংখ্যা কমবে। দেশে সৃজনশীল বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় অমর একুশে বইমেলায়। মূল্যবৃদ্ধি ও সংখ্যা কমায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে সৃজনশীল বইয়ের পাঠকেরা। এ ছাড়া অন্যান্য বইয়ের দাম বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ওসমান গণির মতে, নানা কারণে এবার সবকিছুরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। এতে স্বাভাবিকভাবেই বইয়ের দাম বাড়বে, বলা যায় দ্বিগুণ হবে।
উপকরণের দাম বাড়ায় বই ছাপার সংখ্যাও কমবে। তিনি বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতির কারণে গতবারের চার ভাগের এক ভাগ বই ছাপবে প্রকাশকেরা। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। না হলে পাঠক, লেখক, প্রকাশক ও সরকার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে সবকিছুরই দাম বেড়েছে। প্রকাশনাশিল্পের প্রধান কাঁচামাল কাগজ, কালির দামও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বইয়ের দাম বাড়বে। এতে পাঠক আরও কমার শঙ্কা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকাশক জানান, আগে ২৫৬ পাতার ৫০০ কপি বই ছাপাতে খরচ হতো ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এখন ৬০ হাজার টাকার নিচে সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘কাগজ-কালি সবকিছুর দাম বেড়েছে। আমরা সমিতি থেকে প্রতি ফর্মা বইয়ের দাম ২৭ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো উপায় নেই।’
এক পাঠ্যবই যেন একাধিক বছর ব্যবহার করা যায়
লেখক, কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বেলায় কাগজের মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার পাঠ্যপুস্তক দেখেছি, সেগুলোর ছাপার মান ও কাগজ খুবই উন্নত। দেশে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পাঠ্যবই ছাপা হয়। আমাদের মতো দেশের জন্য তা উপযুক্ত নয়। এতে বিপুল অর্থ ও কাগজ প্রয়োজন। আমার মনে হয়, এক পাঠ্যবই যেন একাধিক বছর ব্যবহার করা যায়, তার ব্যবস্থা করা উচিত। এতে অর্থ ও পরিবেশ দুটোর জন্যই ভালো। কারণ, কাগজ তৈরিতে প্রচুর মণ্ড প্রয়োজন হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাগজ সংকটে সৃজনশীল পাঠ্যবই ছাপা কমবে, এটা জাতির জন্য ভালো খবর নয়। আমার মতে, পাঠক যাতে কম মূল্যে ভালো মানের বই হাতে পায় সে বিষয়ে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
একদিকে ডলার সংকটে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, অন্যদিকে কাঁচামাল সংকটে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাজারে কাগজের সরবরাহে টান পড়েছে। এতে কাগজের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রকাশনাশিল্পের অন্যান্য উপকরণের দামও। এমনিতেই স্মরণকালের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সংসারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। এর মধ্যে কাগজসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়ায় বড় সংকটে পড়েছে প্রকাশনাশিল্প। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির পাঠক।
প্রকাশনাশিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কাগজসহ অন্যান্য উপকরণের বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে পুরো প্রকাশনাশিল্পে। এ অজুহাতে একদিকে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে নিম্নমানের কাগজে। অন্যদিকে সৃজনশীল বইয়ের সংখ্যাও কমবে, তবে দাম বাড়বে। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সব শ্রেণির পাঠক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সম্পাদক জহুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এবার প্রকাশনাশিল্পের অবস্থা খুব খারাপ। কেননা, একদিকে ডলার সংকটে কাগজ আমদানি একরকম বন্ধ, অন্যদিকে কাগজ তৈরির ভার্জিন পাল্প বা মণ্ড সংকটে দেশি পেপার মিলগুলোও চাহিদা অনুযায়ী কাগজ উৎপাদন করতে পারছে না। এতে বাজারে কাগজের ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘কাগজের সংকটের অজুহাতে মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা বিনা মূল্যের পাঠ্যবই নিম্নমানের কাগজে ছাপছে, যা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আর কাগজসহ সব ধরনের উপকরণের দাম বাড়ায় সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশনাও ব্যাহত হবে। সংকটের চিত্র পুরোপুরি ফুটে উঠবে আগামী বইমেলায়।’
অসাধু চক্রের কারসাজি
উৎপাদকদের দাবি, ডলার সংকটে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে না পারায় বিদেশ থেকে কাগজ ও কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। এতে একদিকে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে বিদেশি কাগজ আমদানিও বন্ধ। আর এতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কাগজের দাম। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে, সে তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে দেশে কাগজের দাম।
ব্যবসায়ী আহমদুল্লাহ স্বপন বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত কাগজের দাম এখন দ্বিগুণের কাছাকাছি। তিন মাসের ব্যবধানে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংকটের পাশাপাশি অবশ্যই অসাধু মিলমালিকদের সিন্ডিকেটও দায়ী।’ একই অভিযোগ প্রকাশকদেরও। সৃজনশীল প্রকাশক ঐক্য গত ২১ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে, প্রতিনিয়ত নানা ছলচাতুরী করে কাগজের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
বর্তমানে নিউজপ্রিন্টের বাজার প্রতিযোগিতাহীন। বেসরকারি কাগজকল মালিকেরা মিলে দাম নির্ধারণ করেন ইচ্ছেমতো। ফলে কাগজ ব্যবহারকারীদের কাছে কোনো বিকল্প থাকে না। একসময় দেশের অধিকাংশ নিউজপ্রিন্ট উৎপাদন ও সরবরাহ হতো খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল থেকে। ২০০২ সালে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয় ক্রমাগত লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে। অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ অনেকের অভিযোগ, মিলটি বন্ধ করার পেছনেও বেসরকারি মিলমালিকদের কারসাজি ছিল।
আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি বলেন, প্রতিবছরই বইমেলার দুই মাস আগে কাগজের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়। কিন্তু এবারের অবস্থা আরও ভয়াবহ।
কাগজের বাজারে আগুন
আরামবাগের পারফেক্ট পেপার হাউসের কর্ণধার মো. মইনুল ইসলাম বলেন, সব ধরনের কাগজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। দেশে কাগজ তৈরির কাঁচামাল নেই। আবার ডলার সংকটে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানিও করা যাচ্ছে না।
নয়াবাজারের নাদিয়া পেপার হাউসের কর্ণধার আহমদুল্লাহ স্বপন বলেন, দেশে উৎপাদিত কাগজের দাম এখন দ্বিগুণের কাছাকাছি। তিন মাসের ব্যবধানে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, প্রতি রিম ৫৫ জিএসএম হোয়াইট প্রিন্ট বা সাদা কাগজের দাম এক বছর আগে ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। এখন ২ হাজার ২৫০ টাকা। ধাপে ধাপে বেড়েছে এর দাম। আর ৮০ জিএসএম সাদা কাগজের দাম এক বছর আগে ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা, এখন ৩ হাজার ২০০ টাকা।
আরও একাধিক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি রিম নিউজপ্রিন্টের দাম মানভেদে ৯৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। বর্তমানে যে মানের নিউজপ্রিন্টের দাম ১ হাজার ৩০০ টাকা, এক বছর আগে সেটি ছিল ৬০০ টাকা। কয়েক মাস আগেও মানভেদে দাম ছিল ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা। দামের একই অবস্থা ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, কালি, প্লেটেরও।
জানা যায়, দেশে চার ধরনের কাগজ উৎপাদন ও আমদানি করা হয়। এগুলো হলো লেখার কাগজ, ছাপার কাগজ, নিউজপ্রিন্ট এবং প্যাকেজিং জাতীয় কাগজ। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ লেখার কাগজ, ৩৫ শতাংশ ছাপার কাগজ, ৪০ শতাংশ নিউজপ্রিন্ট এবং ১০ শতাংশ প্যাকেজিংয়ের কাগজ।
কাগজ, কালি, ও অন্যান্য উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ছাপাখানা ব্যবসায়ও। কারণ, দাম বাড়ায় মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা এখন সব ধরনের ছাপা কমিয়ে দিয়েছেন।
আরামবাগের শাপলা প্রিন্টার্সের মালিক মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগের মতো কাজ নেই। অর্ডার নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কমে। আগে সাতজন কর্মচারী থাকলেও এখন একজন কর্মচারী দিয়ে নিজেই কাজ চালাচ্ছি। সাধারণত এই মৌসুমে আমাদের কথা বলারও সময় থাকে না। অথচ এখন আমরা প্রায়ই অলস সময় পার করি।’
বাড়বে বইয়ের দাম
কয়েকজন প্রকাশক জানান, কাগজসহ উপকরণের চড়া দামের কারণে বইয়ের দাম বাড়বে প্রায় ৫০ শতাংশ। সংকটের কারণে এবার সৃজনশীল বইয়ের সংখ্যা কমবে। দেশে সৃজনশীল বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় অমর একুশে বইমেলায়। মূল্যবৃদ্ধি ও সংখ্যা কমায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে সৃজনশীল বইয়ের পাঠকেরা। এ ছাড়া অন্যান্য বইয়ের দাম বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ওসমান গণির মতে, নানা কারণে এবার সবকিছুরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। এতে স্বাভাবিকভাবেই বইয়ের দাম বাড়বে, বলা যায় দ্বিগুণ হবে।
উপকরণের দাম বাড়ায় বই ছাপার সংখ্যাও কমবে। তিনি বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতির কারণে গতবারের চার ভাগের এক ভাগ বই ছাপবে প্রকাশকেরা। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। না হলে পাঠক, লেখক, প্রকাশক ও সরকার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে সবকিছুরই দাম বেড়েছে। প্রকাশনাশিল্পের প্রধান কাঁচামাল কাগজ, কালির দামও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বইয়ের দাম বাড়বে। এতে পাঠক আরও কমার শঙ্কা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকাশক জানান, আগে ২৫৬ পাতার ৫০০ কপি বই ছাপাতে খরচ হতো ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এখন ৬০ হাজার টাকার নিচে সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘কাগজ-কালি সবকিছুর দাম বেড়েছে। আমরা সমিতি থেকে প্রতি ফর্মা বইয়ের দাম ২৭ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো উপায় নেই।’
এক পাঠ্যবই যেন একাধিক বছর ব্যবহার করা যায়
লেখক, কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বেলায় কাগজের মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার পাঠ্যপুস্তক দেখেছি, সেগুলোর ছাপার মান ও কাগজ খুবই উন্নত। দেশে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পাঠ্যবই ছাপা হয়। আমাদের মতো দেশের জন্য তা উপযুক্ত নয়। এতে বিপুল অর্থ ও কাগজ প্রয়োজন। আমার মনে হয়, এক পাঠ্যবই যেন একাধিক বছর ব্যবহার করা যায়, তার ব্যবস্থা করা উচিত। এতে অর্থ ও পরিবেশ দুটোর জন্যই ভালো। কারণ, কাগজ তৈরিতে প্রচুর মণ্ড প্রয়োজন হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাগজ সংকটে সৃজনশীল পাঠ্যবই ছাপা কমবে, এটা জাতির জন্য ভালো খবর নয়। আমার মতে, পাঠক যাতে কম মূল্যে ভালো মানের বই হাতে পায় সে বিষয়ে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে