আজাদুর রহমান চন্দন
গত মে মাসে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকেই কবে কাদের বিরুদ্ধে এর প্রয়োগ শুরু হয়, সেটি দেখার অপেক্ষা করতে থাকে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। তাদের সেই অপেক্ষার আংশিক অবসান হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শুরু করেছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা আছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। সুষ্ঠু নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে আরও যাঁরা দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত হবেন, ভবিষ্যতে তাঁদের বিরুদ্ধেও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শুরু করার কথা জানালেও কারা এর আওতায় এসেছেন, তা প্রকাশ করেনি। করার কথাও নয়। কারণ ভিসাসংক্রান্ত তথ্য সব দেশেই গোপন রাখা হয়। কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই সেটি জানতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া কারও নাম বা কোনো তালিকা প্রকাশ না করলেও এবং আগামী দিনেও প্রকাশ না করার ঘোষণা দিলেও আমাদের দেশে অতি-উৎসাহী অনেক লোক আড্ডা-আলোচনায় এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাবশালী নানাজনকে ইঙ্গিত করে নানা রকম মন্তব্য ছড়াতে শুরু করেছেন। এসব মন্তব্যে তাঁদের উল্লসিত হওয়ার বিষয়টিও চাপা থাকছে না; বরং বলা যায় উৎকটভাবেই প্রকাশ পাচ্ছে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতেও যা প্রকাশ পাচ্ছে তা দেশের জন্য মোটেই সম্মানের নয়।
রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে থাকা আর ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াইয়ে জিততে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর বিদেশি শক্তির কাছে ধরনা দেওয়ার প্রতিযোগিতা নতুন নয়। যখন যেই দল ক্ষমতায় থাকে, তখন তার ভূমিকা হয় এক রকম। বিরোধী দলে থাকলে অন্য রকম। ক্ষমতায় থাকলে যে দল যে কথা বলে, ক্ষমতার বাইরে গিয়ে বলে উল্টোটা। যে দলই ক্ষমতার বাইরে থাকে, সেই দলই ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে নালিশ জানায় প্রভাবশালী বিদেশি শক্তির কাছে।
এই প্রতিযোগিতার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতাধর দেশগুলো নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে চলেছে অবলীলায়। সাম্প্রতিককালে প্রভাবশালী ওই দেশগুলোর মধ্যেও বেড়েছে স্বার্থের দ্বন্দ্ব। বাংলাদেশের রাজনীতি-অর্থনীতিসহ সামগ্রিক বিষয়ে তিনটি দেশের প্রভাব নিয়ে আলোচনা এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। দেশ তিনটি হলো যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীন।
কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, বাংলাদেশ ঘিরে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির যেসব পরিবর্তন হচ্ছে তার মূল লক্ষ্য দেশটিকে চীনের প্রভাববলয়ের বাইরে রাখা। যদি ধরেও নেওয়া হয় যে নতুন মার্কিন ভিসা নীতি স্ট্র্যাটেজিক কোনো কারণে ঘোষিত হয়নি, হয়েছে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে; তাহলে প্রশ্ন ওঠে, যুক্তরাষ্ট্রের সেই ঘোষণা কার্যকর হতে শুরু করায় বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি? ভিসা নীতি প্রয়োগ করে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ যুক্তরাষ্ট্রেরই নীতি-গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।
এমন অনেক দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সখ্য দেখা যায়, যেখানে গণতন্ত্র বা নির্বাচন বলতে তেমন কিছুই নেই এবং যেসব দেশের মানবাধিকার নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন আছে। ওই দেশগুলোকে ফেলে ওয়াশিংটন হঠাৎ বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে কি না, তা নিয়ে কেন এত ব্যস্ত হয়ে উঠল, সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে অনেকের মনে। যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার মতো যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার পেছনে আসল উদ্দেশ্য ভূ-রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ; গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন বা মানবাধিকার নয়। যুক্তরাষ্ট্র আসলে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে বাংলাদেশকে চীনের প্রভাববলয়ের বাইরে রাখতে চায়।
এ প্রসঙ্গে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ড. আনু আনোয়ার কয়েক মাস আগে বিবিসিকে বলেন, ‘কোথাও গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সে অর্থে এটা অনুসৃত হয় না, কারণ ভূ-রাজনীতি ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নের মধ্যে সংঘাত দেখা দিলে এবং আমার দেখা মতে, সব সময়ই ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পায়।’
এটা সবারই জানা, বাংলাদেশে চীন অনেক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা আরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করে থাকে যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার আরও অনেক দেশের মতোই ভারত ও চীন উভয়ের সঙ্গেই ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত হতে চায় যেন বাংলাদেশ চীনের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে। ওয়াশিংটন ইদানীং স্ট্র্যাটেজির বিষয়টি মূলত চীনের সঙ্গে জটিলতার লেন্স দিয়ে দেখছে। এটা ঠিক, চীনের সঙ্গে রেষারেষিতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোকে দলে টানার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে চার দেশীয় জোট কোয়াডে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের ওপর মার্কিন চাপ থাকার খবর নানা সময়ে বেরিয়েছে। বাংলাদেশে স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো অবকাঠামোতে চীনা বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কথাও মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা বাড়াটাকেও যুক্তরাষ্ট্র ভালো চেখে দেখছে না। সবশেষ চীনের প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্যে পায়ের নিচের জমি নড়বড়ে হয়ে পড়ায় বেজায় চটে আছে বিশ্ব মোড়ল হিসেবে পরিচিত দেশটি।
সেন্ট মার্টিন ঘিরে এ অঞ্চলে মার্কিন সামরিক অবস্থান প্রতিষ্ঠার অভিলাষ বাস্তবায়ন করতে দেশটির নানা তৎপরতা নিয়ে কথাবার্তা শোনা যাচ্ছিল কয়েক দশক আগে থেকেই। ইদানীং শোনা যাচ্ছে তাদের নতুন অভিপ্রায়ের কথা। তারা নাকি বাংলাদেশের ভূখণ্ড, বিশেষ করে সমুদ্রসীমা ব্যবহার করে মিয়ানমারে শক্তি প্রয়োগ করে রাখাইন রাজ্যকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। এ নিয়ে তারা সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। নতুন ভিসা নীতি সেই চাপেরই অংশ কি না, সেটি অবশ্য নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
অতিসম্প্রতি জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই কক্সবাজারে একটি অভিজাত হোটেলের পার্কিং প্লেস ভাড়া নিয়েছে। স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারের ওপরমহলে বিষয়টি নাকি জানানোও হয়েছে। কিন্তু সরকার দূর থেকে দেখে যাওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারছে না। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—বাংলাদেশে অন্য কোনো দেশের সামরিক উপস্থিতির সুযোগই হোক আর এ দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গই হোক, এ দেশের কোনো সরকারের পক্ষে কি সেই অভিপ্রায়ে সায় দেওয়া সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, আর তার প্রতিক্রিয়ায় যদি ক্ষমতাধর দেশটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়, সে ক্ষেত্রে এ দেশের কারও পক্ষে কি তার প্রশংসা করা যৌক্তিক?
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমান সরকারসহ বিগত সরকারগুলো দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে। শাসকশ্রেণির দলগুলো নিজেদের স্বার্থে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার জন্য নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। আসন্ন নির্বাচন নিয়েও বিরোধী দলগুলোর দাবিকে সরকার গুরুত্ব না দেওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ পাচ্ছে বিদেশিরা। প্রধান বিরোধী দল ও তার মিত্ররা সেই সুযোগের পালে হাওয়া দিচ্ছে। তাতেও যদি দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ সুগম হতো তাহলে অবশ্য বলার কিছু ছিল না।
আজাদুর রহমান চন্দন, সাংবাদিক ও গবেষক
গত মে মাসে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকেই কবে কাদের বিরুদ্ধে এর প্রয়োগ শুরু হয়, সেটি দেখার অপেক্ষা করতে থাকে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। তাদের সেই অপেক্ষার আংশিক অবসান হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শুরু করেছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা আছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। সুষ্ঠু নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে আরও যাঁরা দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত হবেন, ভবিষ্যতে তাঁদের বিরুদ্ধেও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শুরু করার কথা জানালেও কারা এর আওতায় এসেছেন, তা প্রকাশ করেনি। করার কথাও নয়। কারণ ভিসাসংক্রান্ত তথ্য সব দেশেই গোপন রাখা হয়। কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই সেটি জানতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া কারও নাম বা কোনো তালিকা প্রকাশ না করলেও এবং আগামী দিনেও প্রকাশ না করার ঘোষণা দিলেও আমাদের দেশে অতি-উৎসাহী অনেক লোক আড্ডা-আলোচনায় এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাবশালী নানাজনকে ইঙ্গিত করে নানা রকম মন্তব্য ছড়াতে শুরু করেছেন। এসব মন্তব্যে তাঁদের উল্লসিত হওয়ার বিষয়টিও চাপা থাকছে না; বরং বলা যায় উৎকটভাবেই প্রকাশ পাচ্ছে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতেও যা প্রকাশ পাচ্ছে তা দেশের জন্য মোটেই সম্মানের নয়।
রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে থাকা আর ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াইয়ে জিততে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর বিদেশি শক্তির কাছে ধরনা দেওয়ার প্রতিযোগিতা নতুন নয়। যখন যেই দল ক্ষমতায় থাকে, তখন তার ভূমিকা হয় এক রকম। বিরোধী দলে থাকলে অন্য রকম। ক্ষমতায় থাকলে যে দল যে কথা বলে, ক্ষমতার বাইরে গিয়ে বলে উল্টোটা। যে দলই ক্ষমতার বাইরে থাকে, সেই দলই ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে নালিশ জানায় প্রভাবশালী বিদেশি শক্তির কাছে।
এই প্রতিযোগিতার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতাধর দেশগুলো নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে চলেছে অবলীলায়। সাম্প্রতিককালে প্রভাবশালী ওই দেশগুলোর মধ্যেও বেড়েছে স্বার্থের দ্বন্দ্ব। বাংলাদেশের রাজনীতি-অর্থনীতিসহ সামগ্রিক বিষয়ে তিনটি দেশের প্রভাব নিয়ে আলোচনা এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। দেশ তিনটি হলো যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীন।
কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, বাংলাদেশ ঘিরে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির যেসব পরিবর্তন হচ্ছে তার মূল লক্ষ্য দেশটিকে চীনের প্রভাববলয়ের বাইরে রাখা। যদি ধরেও নেওয়া হয় যে নতুন মার্কিন ভিসা নীতি স্ট্র্যাটেজিক কোনো কারণে ঘোষিত হয়নি, হয়েছে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে; তাহলে প্রশ্ন ওঠে, যুক্তরাষ্ট্রের সেই ঘোষণা কার্যকর হতে শুরু করায় বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি? ভিসা নীতি প্রয়োগ করে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ যুক্তরাষ্ট্রেরই নীতি-গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।
এমন অনেক দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সখ্য দেখা যায়, যেখানে গণতন্ত্র বা নির্বাচন বলতে তেমন কিছুই নেই এবং যেসব দেশের মানবাধিকার নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন আছে। ওই দেশগুলোকে ফেলে ওয়াশিংটন হঠাৎ বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে কি না, তা নিয়ে কেন এত ব্যস্ত হয়ে উঠল, সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে অনেকের মনে। যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার মতো যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার পেছনে আসল উদ্দেশ্য ভূ-রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ; গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন বা মানবাধিকার নয়। যুক্তরাষ্ট্র আসলে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে বাংলাদেশকে চীনের প্রভাববলয়ের বাইরে রাখতে চায়।
এ প্রসঙ্গে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ড. আনু আনোয়ার কয়েক মাস আগে বিবিসিকে বলেন, ‘কোথাও গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সে অর্থে এটা অনুসৃত হয় না, কারণ ভূ-রাজনীতি ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নের মধ্যে সংঘাত দেখা দিলে এবং আমার দেখা মতে, সব সময়ই ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পায়।’
এটা সবারই জানা, বাংলাদেশে চীন অনেক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা আরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করে থাকে যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার আরও অনেক দেশের মতোই ভারত ও চীন উভয়ের সঙ্গেই ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত হতে চায় যেন বাংলাদেশ চীনের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে। ওয়াশিংটন ইদানীং স্ট্র্যাটেজির বিষয়টি মূলত চীনের সঙ্গে জটিলতার লেন্স দিয়ে দেখছে। এটা ঠিক, চীনের সঙ্গে রেষারেষিতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোকে দলে টানার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে চার দেশীয় জোট কোয়াডে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের ওপর মার্কিন চাপ থাকার খবর নানা সময়ে বেরিয়েছে। বাংলাদেশে স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো অবকাঠামোতে চীনা বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কথাও মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা বাড়াটাকেও যুক্তরাষ্ট্র ভালো চেখে দেখছে না। সবশেষ চীনের প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্যে পায়ের নিচের জমি নড়বড়ে হয়ে পড়ায় বেজায় চটে আছে বিশ্ব মোড়ল হিসেবে পরিচিত দেশটি।
সেন্ট মার্টিন ঘিরে এ অঞ্চলে মার্কিন সামরিক অবস্থান প্রতিষ্ঠার অভিলাষ বাস্তবায়ন করতে দেশটির নানা তৎপরতা নিয়ে কথাবার্তা শোনা যাচ্ছিল কয়েক দশক আগে থেকেই। ইদানীং শোনা যাচ্ছে তাদের নতুন অভিপ্রায়ের কথা। তারা নাকি বাংলাদেশের ভূখণ্ড, বিশেষ করে সমুদ্রসীমা ব্যবহার করে মিয়ানমারে শক্তি প্রয়োগ করে রাখাইন রাজ্যকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। এ নিয়ে তারা সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। নতুন ভিসা নীতি সেই চাপেরই অংশ কি না, সেটি অবশ্য নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
অতিসম্প্রতি জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই কক্সবাজারে একটি অভিজাত হোটেলের পার্কিং প্লেস ভাড়া নিয়েছে। স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারের ওপরমহলে বিষয়টি নাকি জানানোও হয়েছে। কিন্তু সরকার দূর থেকে দেখে যাওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারছে না। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—বাংলাদেশে অন্য কোনো দেশের সামরিক উপস্থিতির সুযোগই হোক আর এ দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গই হোক, এ দেশের কোনো সরকারের পক্ষে কি সেই অভিপ্রায়ে সায় দেওয়া সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, আর তার প্রতিক্রিয়ায় যদি ক্ষমতাধর দেশটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়, সে ক্ষেত্রে এ দেশের কারও পক্ষে কি তার প্রশংসা করা যৌক্তিক?
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমান সরকারসহ বিগত সরকারগুলো দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে। শাসকশ্রেণির দলগুলো নিজেদের স্বার্থে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার জন্য নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। আসন্ন নির্বাচন নিয়েও বিরোধী দলগুলোর দাবিকে সরকার গুরুত্ব না দেওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ পাচ্ছে বিদেশিরা। প্রধান বিরোধী দল ও তার মিত্ররা সেই সুযোগের পালে হাওয়া দিচ্ছে। তাতেও যদি দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ সুগম হতো তাহলে অবশ্য বলার কিছু ছিল না।
আজাদুর রহমান চন্দন, সাংবাদিক ও গবেষক
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
৬ ঘণ্টা আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
৯ ঘণ্টা আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে