অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
‘ভালোবাসার চেয়ে ভয় পাওয়া ভালো, যদি আপনি উভয় হতে না পারেন।’—নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি ১৬০০ শতকের একজন ফ্লোরেনটাইন দার্শনিক। তাঁকে ‘রেনেসাঁর সন্তান’ও বলা হয়। কারণ তিনি এমন একসময়ের অন্তর্গত, যখন মধ্যযুগ শেষ হয়ে আসছিল এবং আধুনিক যুগ শুরু হতে চলেছে; অর্থাৎ নবজাগরণের যুগ।
নবজাগরণের যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল নেশন স্টেটের উত্থান। তাঁর দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ‘ডিসকোর্সেস অন লিভি’ (১৫৩১) এবং ‘দ্য প্রিন্স’ (১৫৩২), যে দুটিই তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছিল। ‘ইল প্রিঞ্চিপে’ (বাংলায় ‘রাজকুমার’ ও ইংরেজিতে ‘দ্য প্রিন্স’ নামেও পরিচিত) নামের বহুল আলোড়িত গ্রন্থে তিনি বাস্তবতাবাদ সমর্থক ‘রিয়েলিস্ট’ রাজনৈতিক তত্ত্ব তুলে ধরেন।
ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্রদর্শন ছিল বস্তুবাদী। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনার বেড়াজাল থেকে বাস্তবধর্মী চিন্তায় সজ্জিত আধুনিক মতবাদের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাই তাঁকে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক বলা হয়। ইতিহাসের পাতায় তাঁর আধুনিক রাজনৈতিক চিন্তাধারা প্রকাশিত হয়:
১. তিনি ক্ষমতা-রাজনীতির প্রথম প্রবক্তা।
২. তিনিই প্রথম, যিনি জাতিরাষ্ট্র তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন।
৩. তিনিই প্রথম চিন্তাবিদ, যিনি ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করেছিলেন এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকে ন্যায়সংগত করেছিলেন।
ম্যাকিয়াভেলিবাদ কী?
ম্যাকিয়াভেলিবাদ অর্থ প্রতারণা, শঠতা, কপটতা, ধোঁকা ও দ্বিমুখী নীতি। ম্যাকিয়াভেলি শাসককে ভালোবাসা, প্রেম-প্রীতি, দয়া-দাক্ষিণ্য সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে প্রতারণা, কপটতা ও নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে মানুষের মনে ভীতির উদ্রেক করার যে নীতি শিক্ষা দিয়েছেন, তা-ই ম্যাকিয়াভেলিবাদ।
ম্যাকিয়াভেলির নীতি কী কী?
সহজ ভাষায় ধূর্ত স্বৈরাচারীদের সমার্থক নীতি। যেমন:
১. নেতাদের সর্বদা প্রকৃত উদ্দেশ্যগুলো মুখোশ পরানো উচিত।
২. অসংগতি এড়ানো উচিত এবং প্রায়ই করুণার বিরুদ্ধে, বিশ্বাসের বিরুদ্ধে, মানবতার বিরুদ্ধে, অকপটতার বিরুদ্ধে, ধর্মের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য কাজ করা উচিত।
‘দ্য প্রিন্স’ স্যাটায়ার বা ব্যঙ্গাত্মক লেখা। ম্যাকিয়াভেলি এমন লোকদের নিয়ে মজা করছেন, যাঁরা সীমাহীন নির্বাহী ক্ষমতা চান। স্পষ্টতই, ‘দ্য প্রিন্স’ হলো বাধা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ক্ষমতা অর্জন করা যায় তার পরামর্শ। বইটির মূল ধারণা একজন শাসকের জন্য শেষ উপায়—ন্যায্যতা। শাসকদের শক্তি কী, তার ব্যাখ্যা করেন ম্যাকিয়াভেলি। শক্তি হলো তাদের অবস্থান বজায় রাখা বা প্রসারিত করার জন্য প্রচেষ্টা, এমনকি যদি সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনৈতিক কাজের প্রয়োজন হলেও তা করা।
ম্যাকিয়াভেলির মতে, একজন শাসককে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে যা কিছু সাফল্য নিয়ে আসে, তা শক্তির কারণে হয়। রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের জন্য তিনি যেকোনো উপায় অবলম্বন করতে পারেন। তিনি বলেন, রাজনীতি হচ্ছে ক্ষমতার জন্য নিরন্তর লড়াই। সব রাজনীতিই ক্ষমতার রাজনীতি।
ধরুন, যদি অন্য ভুবনে, জীবন নদীর ওপারের জগতে একটা সভা শুরু হচ্ছে। তার আগে খানিকটা আড্ডা চলছে। সেই আড্ডায় ম্যাকিয়াভেলিকে রংপুরের চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন প্রশ্ন করলেন, ‘ম্যাকিয়াভেলি, এই মুহূর্তের বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আপনার অনুভূতি কী?’
ম্যাকিয়াভেলি নিশ্চয়ই মুচকি হেসে বলবেন, ‘মোনাজাতউদ্দিন ভাই, এটা পরিচিত লাগছে।’
ধরুন, এই মুহূর্তে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আগমন ঘটল সেই আড্ডায়। যেখানে আড্ডা দিচ্ছে বাংলাদেশের শিশু, কিশোর আর তরুণেরাও। সবার তো নাম জানি না, কারও নাম সাঈদ, মুগ্ধ, রিয়া, প্রিয়, জাফর, শান্ত, রিজভী, ফাইয়াজ, দীপ্ত, রুদ্র, ফাহাদ, পারভেজসহ নাম না-জানা তরুণ প্রজন্মের আরও অনেকেই। এই মুহূর্তে আলোচনা সভা শুরু হলো। খুব জানতে ইচ্ছে করছে, ম্যাকিয়াভেলি রচিত ‘দ্য প্রিন্স’ বইটির আলোচনা সভায় নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মজলিশ গরম করে আবৃত্তি করছেন কি না, তার ‘উলঙ্গ রাজা’ কবিতাটি:
...গল্পটা সবাই জানে।
কিন্তু সেই গল্পের ভেতরে
শুধুই প্রশস্তিবাক্য-উচ্চারক কিছু
আপাদমস্তক ভিতু, ফন্দিবাজ অথবা নির্বোধ
স্তাবক ছিল না।
একটি শিশুও ছিল।
সত্যবাদী, সরল, সাহসী একটি শিশু।
সে এসে একবার এই হাততালির ঊর্ধ্বে গলা তুলে
জিজ্ঞাসা করুক:
রাজা, তোর কাপড় কোথায়?’
প্রয়াত আকবর আলি খানের প্রায় পরার্থপরতার অর্থনীতি বইটির উক্তি ছিল, উন্নয়নশীল দেশের জনগণকে তাদের সরকারকে বলতে হবে: ‘হুজুর, আমরা আপনার কাছে উপকার চাই না, শুধু মেহেরবানি করে আপনার শুয়োরের বাচ্চাদের সামলান।’
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া, চিকিৎসক ও কাউন্সেলর
‘ভালোবাসার চেয়ে ভয় পাওয়া ভালো, যদি আপনি উভয় হতে না পারেন।’—নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি ১৬০০ শতকের একজন ফ্লোরেনটাইন দার্শনিক। তাঁকে ‘রেনেসাঁর সন্তান’ও বলা হয়। কারণ তিনি এমন একসময়ের অন্তর্গত, যখন মধ্যযুগ শেষ হয়ে আসছিল এবং আধুনিক যুগ শুরু হতে চলেছে; অর্থাৎ নবজাগরণের যুগ।
নবজাগরণের যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল নেশন স্টেটের উত্থান। তাঁর দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ‘ডিসকোর্সেস অন লিভি’ (১৫৩১) এবং ‘দ্য প্রিন্স’ (১৫৩২), যে দুটিই তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছিল। ‘ইল প্রিঞ্চিপে’ (বাংলায় ‘রাজকুমার’ ও ইংরেজিতে ‘দ্য প্রিন্স’ নামেও পরিচিত) নামের বহুল আলোড়িত গ্রন্থে তিনি বাস্তবতাবাদ সমর্থক ‘রিয়েলিস্ট’ রাজনৈতিক তত্ত্ব তুলে ধরেন।
ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্রদর্শন ছিল বস্তুবাদী। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনার বেড়াজাল থেকে বাস্তবধর্মী চিন্তায় সজ্জিত আধুনিক মতবাদের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাই তাঁকে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক বলা হয়। ইতিহাসের পাতায় তাঁর আধুনিক রাজনৈতিক চিন্তাধারা প্রকাশিত হয়:
১. তিনি ক্ষমতা-রাজনীতির প্রথম প্রবক্তা।
২. তিনিই প্রথম, যিনি জাতিরাষ্ট্র তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন।
৩. তিনিই প্রথম চিন্তাবিদ, যিনি ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করেছিলেন এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকে ন্যায়সংগত করেছিলেন।
ম্যাকিয়াভেলিবাদ কী?
ম্যাকিয়াভেলিবাদ অর্থ প্রতারণা, শঠতা, কপটতা, ধোঁকা ও দ্বিমুখী নীতি। ম্যাকিয়াভেলি শাসককে ভালোবাসা, প্রেম-প্রীতি, দয়া-দাক্ষিণ্য সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে প্রতারণা, কপটতা ও নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে মানুষের মনে ভীতির উদ্রেক করার যে নীতি শিক্ষা দিয়েছেন, তা-ই ম্যাকিয়াভেলিবাদ।
ম্যাকিয়াভেলির নীতি কী কী?
সহজ ভাষায় ধূর্ত স্বৈরাচারীদের সমার্থক নীতি। যেমন:
১. নেতাদের সর্বদা প্রকৃত উদ্দেশ্যগুলো মুখোশ পরানো উচিত।
২. অসংগতি এড়ানো উচিত এবং প্রায়ই করুণার বিরুদ্ধে, বিশ্বাসের বিরুদ্ধে, মানবতার বিরুদ্ধে, অকপটতার বিরুদ্ধে, ধর্মের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য কাজ করা উচিত।
‘দ্য প্রিন্স’ স্যাটায়ার বা ব্যঙ্গাত্মক লেখা। ম্যাকিয়াভেলি এমন লোকদের নিয়ে মজা করছেন, যাঁরা সীমাহীন নির্বাহী ক্ষমতা চান। স্পষ্টতই, ‘দ্য প্রিন্স’ হলো বাধা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ক্ষমতা অর্জন করা যায় তার পরামর্শ। বইটির মূল ধারণা একজন শাসকের জন্য শেষ উপায়—ন্যায্যতা। শাসকদের শক্তি কী, তার ব্যাখ্যা করেন ম্যাকিয়াভেলি। শক্তি হলো তাদের অবস্থান বজায় রাখা বা প্রসারিত করার জন্য প্রচেষ্টা, এমনকি যদি সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনৈতিক কাজের প্রয়োজন হলেও তা করা।
ম্যাকিয়াভেলির মতে, একজন শাসককে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে যা কিছু সাফল্য নিয়ে আসে, তা শক্তির কারণে হয়। রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের জন্য তিনি যেকোনো উপায় অবলম্বন করতে পারেন। তিনি বলেন, রাজনীতি হচ্ছে ক্ষমতার জন্য নিরন্তর লড়াই। সব রাজনীতিই ক্ষমতার রাজনীতি।
ধরুন, যদি অন্য ভুবনে, জীবন নদীর ওপারের জগতে একটা সভা শুরু হচ্ছে। তার আগে খানিকটা আড্ডা চলছে। সেই আড্ডায় ম্যাকিয়াভেলিকে রংপুরের চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন প্রশ্ন করলেন, ‘ম্যাকিয়াভেলি, এই মুহূর্তের বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আপনার অনুভূতি কী?’
ম্যাকিয়াভেলি নিশ্চয়ই মুচকি হেসে বলবেন, ‘মোনাজাতউদ্দিন ভাই, এটা পরিচিত লাগছে।’
ধরুন, এই মুহূর্তে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আগমন ঘটল সেই আড্ডায়। যেখানে আড্ডা দিচ্ছে বাংলাদেশের শিশু, কিশোর আর তরুণেরাও। সবার তো নাম জানি না, কারও নাম সাঈদ, মুগ্ধ, রিয়া, প্রিয়, জাফর, শান্ত, রিজভী, ফাইয়াজ, দীপ্ত, রুদ্র, ফাহাদ, পারভেজসহ নাম না-জানা তরুণ প্রজন্মের আরও অনেকেই। এই মুহূর্তে আলোচনা সভা শুরু হলো। খুব জানতে ইচ্ছে করছে, ম্যাকিয়াভেলি রচিত ‘দ্য প্রিন্স’ বইটির আলোচনা সভায় নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মজলিশ গরম করে আবৃত্তি করছেন কি না, তার ‘উলঙ্গ রাজা’ কবিতাটি:
...গল্পটা সবাই জানে।
কিন্তু সেই গল্পের ভেতরে
শুধুই প্রশস্তিবাক্য-উচ্চারক কিছু
আপাদমস্তক ভিতু, ফন্দিবাজ অথবা নির্বোধ
স্তাবক ছিল না।
একটি শিশুও ছিল।
সত্যবাদী, সরল, সাহসী একটি শিশু।
সে এসে একবার এই হাততালির ঊর্ধ্বে গলা তুলে
জিজ্ঞাসা করুক:
রাজা, তোর কাপড় কোথায়?’
প্রয়াত আকবর আলি খানের প্রায় পরার্থপরতার অর্থনীতি বইটির উক্তি ছিল, উন্নয়নশীল দেশের জনগণকে তাদের সরকারকে বলতে হবে: ‘হুজুর, আমরা আপনার কাছে উপকার চাই না, শুধু মেহেরবানি করে আপনার শুয়োরের বাচ্চাদের সামলান।’
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া, চিকিৎসক ও কাউন্সেলর
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে