প্রথম করতালি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ০৬: ৫৭
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ০৮

বিনোদিনী দাসী, যিনি নটি বিনোদিনী নামেই বেশি পরিচিত। তিনি যখন অভিনয় করার জন্য প্রথম থিয়েটারে যান, তখন রসিক নিয়োগীর গঙ্গার ধারের বাড়িটিতেই মহড়া হতো। সেই বাড়িটি দেখতে ছিল সুন্দর। গঙ্গার শীতল বাতাস প্রাণ জুড়িয়ে দিত। সেখানে ছিল অন্তিম-পথ-যাত্রীদের বিশ্রাম ঘর। বিনোদিনীর বয়স তখন কম। মহড়ার ফাঁকে ফাঁকে তিনি গঙ্গার ধারে ছুটে বেড়াতেন। খেলে বেড়াতেন।

সে সময় দারিদ্র্যের একেবারে শেষ প্রান্তে ছিল তাঁদের বসবাস। শুধু থাকার মতো একটা ঘরই ছিল তাঁদের বিলাস-ব্যসন। ভালো জামাকাপড় কিংবা আসবাব বলতে কিছু ছিল না। থিয়েটারে ‘রাজা’ নামে এক অভিনেত্রী ছিলেন, তিনিই একদিন হাত কাটা দুটো ছিটের জামা তৈরি করিয়ে দিলেন বিনোদিনীকে। সেই জামা পেয়ে বিনোদিনী যেন হাতে চাঁদ পেলেন। শীতকালে এই জামা দুটোই ছিল বিনোদিনীর সম্বল।

বিনোদিনীকে থিয়েটারের সবাই খুব পছন্দ করত। একদিন বড়রা সবাই পরামর্শ করে ঠিক করলেন, ‘বেণি-সংহার’ নামে যে নাটকটির অভিনয় হবে, তাতে ছোট একটি চরিত্র দেওয়া হবে বিনোদিনীকে। সে চরিত্রটি হলো দ্রৌপদীর একজন সখীর।

মহড়া তো হতো, তারপর ড্রেস রিহার্সেল হলো একেবারে নাট্যমন্দিরে। বিনোদিনী ড্রেস রিহার্সেলের দিন ঘাবড়ে যাননি। কারণ, বাইরের কেউ তো তেমন ছিল না সেখানে। যাঁরা ছিলেন, তাঁরা রসিক নিয়োগীর বাড়িতেও রিহার্সেল দেখতেন। কিন্তু গোল বাঁধল নাটকের দিন। সেদিন দর্শকপূর্ণ মিলনায়তন। উজ্জ্বল আলো, সহস্র মানুষের উৎসুক দৃষ্টি—এসব দেখে বিনোদিনী ঘাবড়ে গেলেন। তাঁর পা দুটি থরথর করে কাঁপতে লাগল। চোখ ধাঁধিয়ে গেল। মনজুড়ে বাসা বাঁধল ভয়।

সেই ভয় কাটানোর জন্য তিনি ঈশ্বরকে ডাকলেন। তারপর মহড়ার সময় যা করেছেন, সেটাই সুচারুভাবে করলেন। অভিনয় শেষে মঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসার সময় দর্শকদের করতালির শব্দ শুনতে পেলেন। তখনো তিনি জানতেন না, কারও অভিনয় ভালো হলে দর্শকেরা করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দিত করেন।

সূত্র: বিনোদিনী দাসী, আমার কথা ও অন্যান্য রচনা, পৃষ্ঠা ১৪-১৬

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত