এলপিজির চড়া দাম বিপাকে মানুষ

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২১, ০৮: ৪৩
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২১, ১৩: ৫০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)। গত এক মাসের ব্যবধানে সরকারিভাবে প্রায় ২৫৭ টাকা বাড়িয়ে ১২ কেজির একটি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম করা হয় ১ হাজার ২৫৯ টাকা। কিন্তু উপজেলায় ১ হাজার ৩০০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হঠাৎ মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, আখাউড়া উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়ন প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস। বেসরকারি খাতে ১২ কেজির তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। মূসকসহ প্রতি কেজি ১৮ টাকা ৮৫ পয়সা বাড়িয়ে ১০৪ টাকা ৯২ পয়সা করা হয়েছে। গত মাসে কেজি প্রতি বোতলজাত এলপিজির কেজি প্রতি দাম ছিল ৮৬ টাকা ৭ পয়সা। অর্থাৎ এখন থেকে ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার পেতে খরচ হবে ১ হাজার ২৫৯ টাকা। কিন্তু উপজেলায় ১ হাজার ৩০০ টাকার বেশি বিক্রি করা হচ্ছে এতে করে সাধারণ গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে এলপি গ্যাসের মূল্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আখাউড়া উপজেলার একাধিক গ্যাস বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা ডিলার থেকে গ্যাস কিনে অল্প লাভে বিক্রি করি। এদিকে উপজেলায় মুদি-মনোহারী দোকান, ক্রোকারিজের দোকান, ভূষা মালের দোকান এবং রড-সিমেন্টের দোকানসহ যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। অনেক দোকানি তাঁদের দোকানের সামনে রাস্তার পাশে রেখেই গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন। এতে রয়েছে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

পৌরসভার কলেজপাড়ার গৃহিণী সাদিয়া বলেন, করোনার সময় এলপি গ্যাসের মূল্য ছিল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। এখন প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকার বেশি করে। এ ছাড়া ৫০ টাকা অতিরিক্ত শ্রমিক খরচ লাগে। এ ছাড়া খুচরা দোকানে গেলে প্রতি মাসেই বিভিন্ন বাহানায় অতিরিক্ত টাকা রাখা হয়।

মোগড়া বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী আলমগীরসহ অনেকেই বলেন, ‘প্রতি ৩০ কেজি এলপি গ্যাসের ক্রয়মূল্য ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা করে ক্রয় করতাম। এখন প্রতি সিলিন্ডারে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়। এতে আমরা ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।’

আখাউড়া যমুনা ও পেট্রোম্যাক্স এল. পি. জি ডিলার আব্দুল ছামাদ বলেন, ‘আমরা দোকানদারদের কাছে ১২ কেজি গ্যাস বিক্রি করে থাকি ১ হাজার ২১০ টাকায়। দোকানদার এর চেয়ে বেশি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন এটাই স্বাভাবিক। আবার কোম্পানি অনুযায়ী দামেরও কিছুটা এদিক-সেদিক হয়ে থাকে।’

এদিকে সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী আখাউড়া বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতিপ্রাপ্ত মাত্র ১৫ জন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী রয়েছেন। কিন্তু আখাউড়ার ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স থেকে অনুমতিপত্র নিয়ে কিংবা না নিয়েই উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে শত শত দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

আখাউড়া ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা মো. মুনীম সারোয়ার বলেন, ‘বিভিন্ন হাট বাজারের ছোট ছোট দোকানিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা পর্যায়ে আমাদের ইন্সপেক্টর ও টিম প্রধান তদন্ত করে গ্যাস বিক্রির অনুমতি দেন। ডিস্ট্রিবিউটর পর্যায়ের অনুমতি পাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট শর্তাবলি মেনে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করতে হয়।’

উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা রোমানা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। দাম যদি খুচরা পর্যায়ে নির্ধারণ করা থাকে, সে ক্ষেত্রে বেশি দামে বিক্রির সুযোগ নেই। আমরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেখব। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত