আবু তাহের খান
ইতিহাসের সাক্ষ্য এই যে পৃথিবীর অধিকাংশ বড় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পেছনে তরুণদের ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে অগ্রগামী, সাহসী, সৃজনশীল ও সুদূরপ্রসারী। ১৭৮৯ সালে বাস্তিল দুর্গের পতনের মধ্য দিয়ে সূচিত ফরাসি বিপ্লব থেকে শুরু করে উপমহাদেশের ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন (১৮২৮), রুশ বিপ্লব (১৯১৭), নেলসন ম্যান্ডেলা কিংবা মার্টিন লুথার কিংয়ের নেতৃত্বাধীন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন (১৯৬০-৮০-এর দশক), বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম (১৯৪৮-৭১) ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে তরুণেরাই ছিল মূল চালিকাশক্তি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশই ছিল গ্রামীণ কৃষক পরিবারের নিরীহ-প্রতিবাদী তরুণ, যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পিছিয়ে থেকেও দেশপ্রেম ও সৃজনশীল চিন্তাভাবনায় বহুক্ষেত্রে সমকালীন নেতৃত্বকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল।
মোটকথা, তরুণেরাই হচ্ছে একটি রাষ্ট্র ও সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ আশা-আকাঙ্ক্ষার দর্পণ ও প্রতিনিধি। সেই ধারাবাহিকতায় এটাই প্রত্যাশিত ছিল, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গঠন-প্রক্রিয়ায় তরুণেরাই হবে মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রের পরিচালকেরা তরুণদের জন্য সে সুযোগটি কখনোই তৈরি হতে দেননি; বরং ক্ষণে ক্ষণে ও স্তরে স্তরে তরুণদের মেধা ও প্রতিভা বিকাশের পথকে তাঁরা এতটাই অবরুদ্ধ ও কণ্টকাকীর্ণ করে রেখেছেন যে তরুণদের পক্ষে রাষ্ট্র গঠনে নেতৃত্ব দেওয়া তো দূরের কথা—সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবতা নিয়ে স্বাধীন ও যৌক্তিকভাবে চিন্তা করার সামর্থ্যও তাদের মধ্য থেকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে গেছে; কিংবা বলা যেতে পারে, তাদের প্রতিভা ও সৃজনশীলতা বিকশিত হওয়ার সুযোগও ক্রমান্বয়ে লোপ পেয়েছে।
বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অধিকাংশ তরুণকেই এখন এই বাস্তবতার মুখোমুখি এসে দাঁড়াতে হচ্ছে যে নির্দিষ্ট সময়ান্তর তার হাতে তুলে দেওয়া জ্ঞান ও দক্ষতাবিহীন সনদটি পেশাগত জীবনে তার তেমন কোনো কাজেই আসছে না।
এ অবস্থায় তার মধ্যে এ উপলব্ধি আরও স্পষ্ট হয় যে শিক্ষার নাম করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাকে বুঝিয়ে দেওয়া সনদটি আসলে নির্ঘাত প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এই প্রতারণামূলক কাজটি এখন সবচেয়ে বেশি করছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি বড় অংশ, যে প্রতারণার মূল পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র নিজেই। তরুণদের এ-সংক্রান্ত হতাশা আরও গভীর হচ্ছে যখন সে দেখছে, রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন রাজনীতিক ও আমলাদের অনেক নিম্নমেধার সন্তানেরা বিদেশে গিয়ে দেশ থেকে পাচার করা অর্থে পড়াশোনা করছে, কিংবা পাস করে কোনো না কোনো পেশায় যুক্ত হয়ে কিংবা যুক্ত না হয়েও রাজার হালে দিন কাটাচ্ছে।
শিক্ষার্থী তরুণেরা এ-ও দেখছে, ৫৩ বছর ধরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যক্রম, পরীক্ষার প্রশ্নকাঠামো ও মূল্যায়নপদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে তাদের ওপর শুধু গিনিপিগ ধাঁচের পরীক্ষা-নিরীক্ষাই চালানো হয়নি—এ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ কবে কোথায় গিয়ে শেষ হবে, সেটাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।
চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হওয়ার একটি পরামর্শ ইদানীং নানা মহল থেকেই বেশ জোরেশোরে তরুণদের দেওয়া হচ্ছে, যে পরামর্শদাতাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীও রয়েছেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পরামর্শটি শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তরুণেরা যাতে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা পায়, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করা দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও চরম হতাশা ও পরিতাপের বিষয় এই, গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্কের (জিইএন) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, উদ্যোক্তা উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রমের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৩৭ দেশের মধ্যে ১৩৪তম।
যে ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশে ঋণ নিয়ে শিক্ষিত তরুণেরা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলবে, সেই ব্যাংকগুলোই এখন ৫৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের পক্ষে তরুণদের উৎসাহমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ঋণ দেওয়া তো দূরের কথা, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়েই তারা এখন হিমশিম খাচ্ছে। উদ্যোক্তা উন্নয়নসংক্রান্ত অন্যান্য সেবা ও অবকাঠামো সহায়তাদানের মানও মোটামুটি প্রায় একই রূপ; অর্থাৎ বিষয়গুলোর মোদ্দা ফলাফল হচ্ছে এই, সনদ নিয়ে
চাকরি না পেয়ে বিকল্প হিসেবে উদ্যোক্তা হওয়ার স্তরটিও এখন একই রূপ হতাশায় নিমজ্জিত।
কোনো শিক্ষিত তরুণ যদি কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে চায়, তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রথমে সে আকাঙ্ক্ষী দলগুলোর গঠনতন্ত্র ও তার সাম্প্রতিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে চাইবে। এ ক্ষেত্রে শতভাগ নিশ্চিত তথ্য এই যে, দেশের বড় কোনো রাজনৈতিক দলেরই ৫৩ বছরের মধ্যে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলার দৃষ্টান্ত নেই। এখানে রাজনৈতিক দলগুলো চলে ব্যক্তিবিশেষের ইচ্ছা ও নির্দেশনার আওতায় এবং এই দলীয় একনায়কত্ব যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অধিকতর নিষ্ঠুর ও স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন। আর এ রকম পরিস্থিতিতে কোনো নিষ্ঠাবান শিক্ষিত তরুণের পক্ষে কি রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রের ভাষা অনুধাবন করে এবং সেসবের বাস্তব চর্চার হালহকিকত দেখে কোনো একটি রাজনৈতিক দলে যোগদানের বিষয়ে আগ্রহী হওয়া সম্ভব?
উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে কোনো শিক্ষিত তরুণ যদি ভাবে যে সে গ্রামে ফিরে গিয়ে অরাজনৈতিকভাবে জনকল্যাণমূলক কাজে যুক্ত হবে, তাহলে সে পথও এখন রুদ্ধ। কারণ ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে গ্রামীণ সমাজের ঐক্য ও সংহতির প্রায় সবটুকু শক্তিই চরম নিষ্ঠুরভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
এমনকি একই উদ্দেশ্যে বিনষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এত দিন ধরে অতি দুর্বলভাবে হলেও টিকে থাকা গ্রামভিত্তিক স্থানীয় সরকারের অরাজনৈতিক চরিত্রের শক্তিটুকুও। রবীন্দ্রনাথের ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি’ আজ আর বাংলাদেশে টিকে নেই। ক্ষমতালিপ্সু পিশাচেরা একে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। ফলে গ্রাম নিয়ে একজন শিক্ষিত তরুণের সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা করার সুযোগটুকুও এখন প্রায় পুরোপুরিই নিঃশেষিত।
সব মিলিয়ে তাই বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে এই, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থের পীড়নে শিক্ষিত তরুণদের মেধা, প্রতিভা ও সৃজনশীলতা বিকাশের সব পথই এখন রুদ্ধপ্রায়। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ নেওয়ার পথে হলে আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে তারা যখন গণরুমে বর্বর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় কিংবা তারা যখন জানতে পারে যে তাদের শিক্ষকদের একটি বড় অংশই মেধার পরিবর্তে রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন, কিংবা তাদের উপাচার্যদের কারও কারও কাণ্ডকারখানা দেখে তাদের নিজেদেরই যখন লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে অথবা বিসিএস ও অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে তারা যখন শোনে যে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নটি ইতিমধ্যে ফাঁস হয়ে গেছে, তখন তাদের ভেতরকার সুপ্ত প্রতিভাটুকু বিকশিত হওয়ার পরিবর্তে সর্বাগ্রে লুকানোর পথই খোঁজে নাকি?
ভোরে ঘুম থেকে উঠে ওই তরুণেরা যখন শোনে যে তাদের দেশের সংসদ সদস্য সোনা চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ততার কারণে খুন হয়েছেন কিংবা যখন জানে যে তাঁদের কেউ কেউ অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত, অথবা যখন তাদের সামনে আসে এ তথ্য যে তাদের কেউ ভূমিদস্যু, কেউ অবৈধ মজুতদার, কেউ বাজার সিন্ডিকেটের সদস্য, কেউ আদম ব্যবসায়ী প্রতারক, তখন তাদের সৃজনশীল মেধাবী মন কতক্ষণই-বা নিজেদের দেশের প্রতি মমতাবান রাখতে পারে?
একই সঙ্গে এই তরুণেরা যখন জানে যে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের মতোই এ দেশের আমলাদের একটি বড় অংশও বিদেশের বেগমপাড়ায় ও অন্যত্র সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন, কিংবা তাঁদের মধ্যকার শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ দুর্নীতির অভিযোগে বিদেশি রাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার শিকার হচ্ছেন, কিংবা তাঁদের মধ্যকার কেউ কেউ বেনজীর-মতিউর-আবেদ আলী হয়ে উঠছেন, তখন ওই তরুণেরা তাদের মেধা ও প্রতিভার প্রয়োগ কোথায় ঘটাবে বলুন তো?
লেখক: সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থা
ইতিহাসের সাক্ষ্য এই যে পৃথিবীর অধিকাংশ বড় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পেছনে তরুণদের ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে অগ্রগামী, সাহসী, সৃজনশীল ও সুদূরপ্রসারী। ১৭৮৯ সালে বাস্তিল দুর্গের পতনের মধ্য দিয়ে সূচিত ফরাসি বিপ্লব থেকে শুরু করে উপমহাদেশের ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন (১৮২৮), রুশ বিপ্লব (১৯১৭), নেলসন ম্যান্ডেলা কিংবা মার্টিন লুথার কিংয়ের নেতৃত্বাধীন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন (১৯৬০-৮০-এর দশক), বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম (১৯৪৮-৭১) ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে তরুণেরাই ছিল মূল চালিকাশক্তি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশই ছিল গ্রামীণ কৃষক পরিবারের নিরীহ-প্রতিবাদী তরুণ, যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পিছিয়ে থেকেও দেশপ্রেম ও সৃজনশীল চিন্তাভাবনায় বহুক্ষেত্রে সমকালীন নেতৃত্বকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল।
মোটকথা, তরুণেরাই হচ্ছে একটি রাষ্ট্র ও সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ আশা-আকাঙ্ক্ষার দর্পণ ও প্রতিনিধি। সেই ধারাবাহিকতায় এটাই প্রত্যাশিত ছিল, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গঠন-প্রক্রিয়ায় তরুণেরাই হবে মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রের পরিচালকেরা তরুণদের জন্য সে সুযোগটি কখনোই তৈরি হতে দেননি; বরং ক্ষণে ক্ষণে ও স্তরে স্তরে তরুণদের মেধা ও প্রতিভা বিকাশের পথকে তাঁরা এতটাই অবরুদ্ধ ও কণ্টকাকীর্ণ করে রেখেছেন যে তরুণদের পক্ষে রাষ্ট্র গঠনে নেতৃত্ব দেওয়া তো দূরের কথা—সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবতা নিয়ে স্বাধীন ও যৌক্তিকভাবে চিন্তা করার সামর্থ্যও তাদের মধ্য থেকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে গেছে; কিংবা বলা যেতে পারে, তাদের প্রতিভা ও সৃজনশীলতা বিকশিত হওয়ার সুযোগও ক্রমান্বয়ে লোপ পেয়েছে।
বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অধিকাংশ তরুণকেই এখন এই বাস্তবতার মুখোমুখি এসে দাঁড়াতে হচ্ছে যে নির্দিষ্ট সময়ান্তর তার হাতে তুলে দেওয়া জ্ঞান ও দক্ষতাবিহীন সনদটি পেশাগত জীবনে তার তেমন কোনো কাজেই আসছে না।
এ অবস্থায় তার মধ্যে এ উপলব্ধি আরও স্পষ্ট হয় যে শিক্ষার নাম করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাকে বুঝিয়ে দেওয়া সনদটি আসলে নির্ঘাত প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এই প্রতারণামূলক কাজটি এখন সবচেয়ে বেশি করছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি বড় অংশ, যে প্রতারণার মূল পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র নিজেই। তরুণদের এ-সংক্রান্ত হতাশা আরও গভীর হচ্ছে যখন সে দেখছে, রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন রাজনীতিক ও আমলাদের অনেক নিম্নমেধার সন্তানেরা বিদেশে গিয়ে দেশ থেকে পাচার করা অর্থে পড়াশোনা করছে, কিংবা পাস করে কোনো না কোনো পেশায় যুক্ত হয়ে কিংবা যুক্ত না হয়েও রাজার হালে দিন কাটাচ্ছে।
শিক্ষার্থী তরুণেরা এ-ও দেখছে, ৫৩ বছর ধরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যক্রম, পরীক্ষার প্রশ্নকাঠামো ও মূল্যায়নপদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে তাদের ওপর শুধু গিনিপিগ ধাঁচের পরীক্ষা-নিরীক্ষাই চালানো হয়নি—এ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ কবে কোথায় গিয়ে শেষ হবে, সেটাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।
চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হওয়ার একটি পরামর্শ ইদানীং নানা মহল থেকেই বেশ জোরেশোরে তরুণদের দেওয়া হচ্ছে, যে পরামর্শদাতাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীও রয়েছেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পরামর্শটি শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তরুণেরা যাতে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা পায়, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করা দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও চরম হতাশা ও পরিতাপের বিষয় এই, গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্কের (জিইএন) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, উদ্যোক্তা উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রমের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৩৭ দেশের মধ্যে ১৩৪তম।
যে ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশে ঋণ নিয়ে শিক্ষিত তরুণেরা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলবে, সেই ব্যাংকগুলোই এখন ৫৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের পক্ষে তরুণদের উৎসাহমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ঋণ দেওয়া তো দূরের কথা, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়েই তারা এখন হিমশিম খাচ্ছে। উদ্যোক্তা উন্নয়নসংক্রান্ত অন্যান্য সেবা ও অবকাঠামো সহায়তাদানের মানও মোটামুটি প্রায় একই রূপ; অর্থাৎ বিষয়গুলোর মোদ্দা ফলাফল হচ্ছে এই, সনদ নিয়ে
চাকরি না পেয়ে বিকল্প হিসেবে উদ্যোক্তা হওয়ার স্তরটিও এখন একই রূপ হতাশায় নিমজ্জিত।
কোনো শিক্ষিত তরুণ যদি কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে চায়, তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রথমে সে আকাঙ্ক্ষী দলগুলোর গঠনতন্ত্র ও তার সাম্প্রতিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে চাইবে। এ ক্ষেত্রে শতভাগ নিশ্চিত তথ্য এই যে, দেশের বড় কোনো রাজনৈতিক দলেরই ৫৩ বছরের মধ্যে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলার দৃষ্টান্ত নেই। এখানে রাজনৈতিক দলগুলো চলে ব্যক্তিবিশেষের ইচ্ছা ও নির্দেশনার আওতায় এবং এই দলীয় একনায়কত্ব যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অধিকতর নিষ্ঠুর ও স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন। আর এ রকম পরিস্থিতিতে কোনো নিষ্ঠাবান শিক্ষিত তরুণের পক্ষে কি রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রের ভাষা অনুধাবন করে এবং সেসবের বাস্তব চর্চার হালহকিকত দেখে কোনো একটি রাজনৈতিক দলে যোগদানের বিষয়ে আগ্রহী হওয়া সম্ভব?
উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে কোনো শিক্ষিত তরুণ যদি ভাবে যে সে গ্রামে ফিরে গিয়ে অরাজনৈতিকভাবে জনকল্যাণমূলক কাজে যুক্ত হবে, তাহলে সে পথও এখন রুদ্ধ। কারণ ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে গ্রামীণ সমাজের ঐক্য ও সংহতির প্রায় সবটুকু শক্তিই চরম নিষ্ঠুরভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
এমনকি একই উদ্দেশ্যে বিনষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এত দিন ধরে অতি দুর্বলভাবে হলেও টিকে থাকা গ্রামভিত্তিক স্থানীয় সরকারের অরাজনৈতিক চরিত্রের শক্তিটুকুও। রবীন্দ্রনাথের ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি’ আজ আর বাংলাদেশে টিকে নেই। ক্ষমতালিপ্সু পিশাচেরা একে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। ফলে গ্রাম নিয়ে একজন শিক্ষিত তরুণের সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা করার সুযোগটুকুও এখন প্রায় পুরোপুরিই নিঃশেষিত।
সব মিলিয়ে তাই বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে এই, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থের পীড়নে শিক্ষিত তরুণদের মেধা, প্রতিভা ও সৃজনশীলতা বিকাশের সব পথই এখন রুদ্ধপ্রায়। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ নেওয়ার পথে হলে আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে তারা যখন গণরুমে বর্বর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় কিংবা তারা যখন জানতে পারে যে তাদের শিক্ষকদের একটি বড় অংশই মেধার পরিবর্তে রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন, কিংবা তাদের উপাচার্যদের কারও কারও কাণ্ডকারখানা দেখে তাদের নিজেদেরই যখন লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে অথবা বিসিএস ও অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে তারা যখন শোনে যে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নটি ইতিমধ্যে ফাঁস হয়ে গেছে, তখন তাদের ভেতরকার সুপ্ত প্রতিভাটুকু বিকশিত হওয়ার পরিবর্তে সর্বাগ্রে লুকানোর পথই খোঁজে নাকি?
ভোরে ঘুম থেকে উঠে ওই তরুণেরা যখন শোনে যে তাদের দেশের সংসদ সদস্য সোনা চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ততার কারণে খুন হয়েছেন কিংবা যখন জানে যে তাঁদের কেউ কেউ অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত, অথবা যখন তাদের সামনে আসে এ তথ্য যে তাদের কেউ ভূমিদস্যু, কেউ অবৈধ মজুতদার, কেউ বাজার সিন্ডিকেটের সদস্য, কেউ আদম ব্যবসায়ী প্রতারক, তখন তাদের সৃজনশীল মেধাবী মন কতক্ষণই-বা নিজেদের দেশের প্রতি মমতাবান রাখতে পারে?
একই সঙ্গে এই তরুণেরা যখন জানে যে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের মতোই এ দেশের আমলাদের একটি বড় অংশও বিদেশের বেগমপাড়ায় ও অন্যত্র সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন, কিংবা তাঁদের মধ্যকার শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ দুর্নীতির অভিযোগে বিদেশি রাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার শিকার হচ্ছেন, কিংবা তাঁদের মধ্যকার কেউ কেউ বেনজীর-মতিউর-আবেদ আলী হয়ে উঠছেন, তখন ওই তরুণেরা তাদের মেধা ও প্রতিভার প্রয়োগ কোথায় ঘটাবে বলুন তো?
লেখক: সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে