বিশেষ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ডলার বাজারের কারসাজি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মুনাফালোভী ব্যাংক, মানি চেঞ্জার্সের অসাধু চক্রের কারসাজির কারণে ৯৫ টাকার ডলার ১১৯ টাকায়ও এখন দুর্লভ হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে ছয় ব্যাংক ও পাঁচ মানি চেঞ্জার্সের কারসাজি ধরা পড়ার পর তাদের ‘গুরু পাপে লঘু দণ্ড’ দেওয়ায় কারসাজি বন্ধের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের বাজার আরও অস্থির হয়ে পড়েছে। এক দিনের ব্যবধানে প্রতি ডলারে অন্তত ৫-৬ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, দায়ী কয়েকটি ব্যাংক কারসাজি করে অন্তত চার শ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে বলে প্রমাণ মিলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ বিষয়ে উচ্চতর তদন্ত চলছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, এটা একা কেউ করেনি, এর সঙ্গে পুরো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা জড়িত থাকতে পারে। বিস্তারিত তদন্ত দরকার।
জানা যায়, বিশ্বব্যাপী ডলার সংকট চরমে। অন্য দেশে চাহিদা-সরবরাহের কারণে ডলার সংকট দেখা গেলেও বাংলাদেশে চাহিদা–সরবরাহ ছাড়িয়ে এখন তা কারসাজিতে রূপ নিয়েছে। কিছু কিছু ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার্স যোগসাজশে ডলার সংকটকে পুঁজি করে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছে। ফলে ডলার সংকট প্রতিনিয়ত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
ডলার বাজারের চিত্র ও যত অভিযোগ
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে ডলারের মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার হার অন্তত ৩১ শতাংশ এবং আমদানি ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় সোয়া ৯ শতাংশ। মানে পণ্য আমদানির জন্য জুন মাসে যে পরিমাণ ডলার লেগেছিল, জুলাই মাসে তার চেয়ে কম লেগেছে।
অথচ এ সময়ে রেমিট্যান্স আগের মাসের চেয়ে বেশি এসেছে। রপ্তানি থেকে আয়ও বেশি হয়েছে। অর্থাৎ, ডলার আসার সব উৎস থেকেই ডলার যা যোগ হয়েছে, তা আগের মাসের চেয়ে বেশি। সুতরাং তথ্য উপাত্ত এবং পর্যালোচনা বলছে, বাজারে ডলারের সংকট এত তীব্র হওয়ার কথা নয়; যা এখন চলছে।
এফবিসিসিআই, বিকেএমইএসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা ও ব্যাংকাররা সংকট তীব্র হওয়ার প্রাথমিক সময় থেকেই ডলার বিক্রি করে ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার্স হাউসগুলোর বাড়তি মুনাফা নেওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন। রপ্তানিকারকদের অভিযোগ ছিল, ব্যাংকগুলো তাঁদের কাছ থেকে ডলার কেনার সময় ব্যাংক রেট দেয়, আর কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে গেলে বেশি দামে বিক্রি করে। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীরা গত ২৮ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার হাউসগুলোর দৌরাত্ম্য নিয়ে অভিযোগ করেন।
বৈঠক শেষে এফবিসিআই সভাপতি সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ৯৪ টাকায় ডলার সরবরাহ করবে, আর আপনি (ব্যাংকার–মানি চেঞ্জার্স) ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি করবেন এটা হতে পারে না। এখানে ডিসিপ্লিন আনা দরকার, ডিসিপ্লিনের জায়গাটা শক্ত নেই। ডলার কারসাজিতে যে কোনো ব্যক্তি জড়িত হোক না কেন তাদের শক্ত হাতে ধরা উচিত।
বৈঠকের পরই বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয় যে, কারসাজির প্রমাণ পেলে মানি চেঞ্জার্সদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এরপরও ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার্সদের কারসাজি থামেনি; বরং তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে।
কারা কারসাজির সঙ্গে জড়িত
ডলারের বাজারে যে কারসাজি চলছে, এটি বেশ কিছু দিন আগে থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক আঁচ করতে পেরেছে। তাই এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা অভিযানে নামে। কয়েক দিনের অভিযানে প্রথমে পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউসকে চিহ্নিত করে কারসাজির দায়ে তাদের লাইসেন্স বাতিল করে। একই সঙ্গে আরও ৪৫টিকে কারণ দর্শাতে (শোকজ) বলা হয়। এ ছাড়া কারসাজি করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়ে নিয়মনীতি অমান্য করে ডলার বিক্রি করে অতিমুনাফা করে।
তবে আমদানি-রপ্তানিকারকেরা যখন ডলার সংকটের পেছনে নানাভাবে ব্যাংকগুলোকে দায়ী করছিলেন, তখনই কয়েকটি ব্যাংকের ডলার কারসাজি আর জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক দায়ী ছয়টি ব্যাংককের ট্রেজারি প্রধানকে ডলার কারসাজির দায়ে শাস্তিস্বরূপ ব্যাংক থেকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয়। ব্যাংকগুলো হচ্ছে বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং দেশের বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক। এই ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে এরই মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে। দায়ী ব্যাংকারদের পদে নতুন নিয়োগ করা হয়েছে। তবে তাদের নাম প্রকাশ রাজি হয়নি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো।
ব্যাংক কীভাবে কারসাজি করে
ডলার কত টাকায় বিক্রি হবে–বাংলাদেশ ব্যাংক তা ঠিক করে দিয়েছে। এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা মানেই তা অতিমুনাফা। অথচ ব্যাংকগুলো যে দামে ডলার বিক্রি করেছিল, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে গোপন করে। শুধু তাই নয়; ডলার বিক্রির দর নিয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে মনগড়া প্রতিবেদন জমা দেয়। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো মাত্রাতিরিক্ত ডলার মজুত করে এবং ব্যাংকের লেজার বুকে প্রকৃত তথ্য উল্লেখ না করে ভুয়া হিসাব তুলে রাখে, যা পরে ধরা পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, দায়ী কোনো কোনো ব্যাংক ডলার কেনাবেচা করে গত মে মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি মুনাফা করেছে। এর প্রমাণ বাংলাদেশ ব্যাংক পেয়েছে।
দায়ী ব্যাংকগুলো কী বলছে
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হাসান ও রশীদ বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। ট্রেজারি বিভাগের অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিয়েছি। তবে ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী মানবসম্পদ বিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না।’
ডলার কারসাজি বিষয়ে জানতে চাইলে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবদুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত দল পরিদর্শন শেষে চিঠিতে যে নির্দেশনা দিয়েছে তা আমরা করেছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত আরেকটি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, কোনো একক কর্মকর্তার পক্ষে কারসাজি করা সম্ভব না। এটা পুরো বিভাগের কাজ। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছিল। সেই অনুযায়ী ট্রেজারি বিভাগে চালান হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।
বিশ্লেষকেরা যা বলছেন
ডলার কারসাজির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের বর্তমান ডলার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন একটি ভালো উদ্যোগ। ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কাজ কেউ একা করতে পারে না। এর সঙ্গে আরও কারও সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে ডলারের বাজার অস্থিতিশীল ও অতি মুনাফার বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশের মাধ্যমে ব্যাখ্যা চাইতে পারত। তাদের ব্যাখ্যা পাওয়ার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর সঙ্গে ওই সব ব্যাংকের পুরো ব্যবস্থাপনা দায় রয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলার বিক্রি করে অস্বাভাবিক মুনাফা করেছে কয়েকটি ব্যাংক। এ জন্য তাদের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও অধিকতর তদন্ত শুরু করেছে। এতে যাদের নাম পাওয়া যাবে তাঁদের সবার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোলাবাজারে ডলারের দাম
কারসাজির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযান চলার মধ্যেও ডলার বাজারে দামের অস্থিরতা কমছে না। বরং ক্রমেই তা লাগামহীন হয়ে উঠছে। এক দিনের ব্যবধানে ডলারের দাম ৪-৫ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১১৮-১১৯ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। আগের দিন যা ছিল ১১৪-১১৫ টাকা। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিনে বাড়িয়েছে মাত্র ৫ পয়সা। গতকাল মতিঝিলে জামান মানি চেঞ্জার্স হাউসের বিক্রয়কর্মী আদিবা জানান, গতকাল বাজারে ডলারের প্রচুর চাহিদা ছিল। সকালে ডলার ১১৮ টাকা বিক্রয় করা হলেও বেলা গড়িয়ে পড়ায় তা ১১৯ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। যদিও তারা খোলা বাজারে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি ডলার ১১৬-১১৭ টাকায় কিনেছেন বলে জানান।
ডলার বাজারের কারসাজি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মুনাফালোভী ব্যাংক, মানি চেঞ্জার্সের অসাধু চক্রের কারসাজির কারণে ৯৫ টাকার ডলার ১১৯ টাকায়ও এখন দুর্লভ হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে ছয় ব্যাংক ও পাঁচ মানি চেঞ্জার্সের কারসাজি ধরা পড়ার পর তাদের ‘গুরু পাপে লঘু দণ্ড’ দেওয়ায় কারসাজি বন্ধের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের বাজার আরও অস্থির হয়ে পড়েছে। এক দিনের ব্যবধানে প্রতি ডলারে অন্তত ৫-৬ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, দায়ী কয়েকটি ব্যাংক কারসাজি করে অন্তত চার শ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে বলে প্রমাণ মিলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ বিষয়ে উচ্চতর তদন্ত চলছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, এটা একা কেউ করেনি, এর সঙ্গে পুরো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা জড়িত থাকতে পারে। বিস্তারিত তদন্ত দরকার।
জানা যায়, বিশ্বব্যাপী ডলার সংকট চরমে। অন্য দেশে চাহিদা-সরবরাহের কারণে ডলার সংকট দেখা গেলেও বাংলাদেশে চাহিদা–সরবরাহ ছাড়িয়ে এখন তা কারসাজিতে রূপ নিয়েছে। কিছু কিছু ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার্স যোগসাজশে ডলার সংকটকে পুঁজি করে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছে। ফলে ডলার সংকট প্রতিনিয়ত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
ডলার বাজারের চিত্র ও যত অভিযোগ
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে ডলারের মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার হার অন্তত ৩১ শতাংশ এবং আমদানি ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় সোয়া ৯ শতাংশ। মানে পণ্য আমদানির জন্য জুন মাসে যে পরিমাণ ডলার লেগেছিল, জুলাই মাসে তার চেয়ে কম লেগেছে।
অথচ এ সময়ে রেমিট্যান্স আগের মাসের চেয়ে বেশি এসেছে। রপ্তানি থেকে আয়ও বেশি হয়েছে। অর্থাৎ, ডলার আসার সব উৎস থেকেই ডলার যা যোগ হয়েছে, তা আগের মাসের চেয়ে বেশি। সুতরাং তথ্য উপাত্ত এবং পর্যালোচনা বলছে, বাজারে ডলারের সংকট এত তীব্র হওয়ার কথা নয়; যা এখন চলছে।
এফবিসিসিআই, বিকেএমইএসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা ও ব্যাংকাররা সংকট তীব্র হওয়ার প্রাথমিক সময় থেকেই ডলার বিক্রি করে ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার্স হাউসগুলোর বাড়তি মুনাফা নেওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন। রপ্তানিকারকদের অভিযোগ ছিল, ব্যাংকগুলো তাঁদের কাছ থেকে ডলার কেনার সময় ব্যাংক রেট দেয়, আর কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে গেলে বেশি দামে বিক্রি করে। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীরা গত ২৮ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার হাউসগুলোর দৌরাত্ম্য নিয়ে অভিযোগ করেন।
বৈঠক শেষে এফবিসিআই সভাপতি সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ৯৪ টাকায় ডলার সরবরাহ করবে, আর আপনি (ব্যাংকার–মানি চেঞ্জার্স) ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি করবেন এটা হতে পারে না। এখানে ডিসিপ্লিন আনা দরকার, ডিসিপ্লিনের জায়গাটা শক্ত নেই। ডলার কারসাজিতে যে কোনো ব্যক্তি জড়িত হোক না কেন তাদের শক্ত হাতে ধরা উচিত।
বৈঠকের পরই বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয় যে, কারসাজির প্রমাণ পেলে মানি চেঞ্জার্সদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এরপরও ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার্সদের কারসাজি থামেনি; বরং তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে।
কারা কারসাজির সঙ্গে জড়িত
ডলারের বাজারে যে কারসাজি চলছে, এটি বেশ কিছু দিন আগে থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক আঁচ করতে পেরেছে। তাই এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা অভিযানে নামে। কয়েক দিনের অভিযানে প্রথমে পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউসকে চিহ্নিত করে কারসাজির দায়ে তাদের লাইসেন্স বাতিল করে। একই সঙ্গে আরও ৪৫টিকে কারণ দর্শাতে (শোকজ) বলা হয়। এ ছাড়া কারসাজি করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়ে নিয়মনীতি অমান্য করে ডলার বিক্রি করে অতিমুনাফা করে।
তবে আমদানি-রপ্তানিকারকেরা যখন ডলার সংকটের পেছনে নানাভাবে ব্যাংকগুলোকে দায়ী করছিলেন, তখনই কয়েকটি ব্যাংকের ডলার কারসাজি আর জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক দায়ী ছয়টি ব্যাংককের ট্রেজারি প্রধানকে ডলার কারসাজির দায়ে শাস্তিস্বরূপ ব্যাংক থেকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয়। ব্যাংকগুলো হচ্ছে বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং দেশের বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক। এই ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে এরই মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে। দায়ী ব্যাংকারদের পদে নতুন নিয়োগ করা হয়েছে। তবে তাদের নাম প্রকাশ রাজি হয়নি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো।
ব্যাংক কীভাবে কারসাজি করে
ডলার কত টাকায় বিক্রি হবে–বাংলাদেশ ব্যাংক তা ঠিক করে দিয়েছে। এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা মানেই তা অতিমুনাফা। অথচ ব্যাংকগুলো যে দামে ডলার বিক্রি করেছিল, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে গোপন করে। শুধু তাই নয়; ডলার বিক্রির দর নিয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে মনগড়া প্রতিবেদন জমা দেয়। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো মাত্রাতিরিক্ত ডলার মজুত করে এবং ব্যাংকের লেজার বুকে প্রকৃত তথ্য উল্লেখ না করে ভুয়া হিসাব তুলে রাখে, যা পরে ধরা পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, দায়ী কোনো কোনো ব্যাংক ডলার কেনাবেচা করে গত মে মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি মুনাফা করেছে। এর প্রমাণ বাংলাদেশ ব্যাংক পেয়েছে।
দায়ী ব্যাংকগুলো কী বলছে
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হাসান ও রশীদ বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। ট্রেজারি বিভাগের অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিয়েছি। তবে ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী মানবসম্পদ বিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না।’
ডলার কারসাজি বিষয়ে জানতে চাইলে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবদুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত দল পরিদর্শন শেষে চিঠিতে যে নির্দেশনা দিয়েছে তা আমরা করেছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত আরেকটি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, কোনো একক কর্মকর্তার পক্ষে কারসাজি করা সম্ভব না। এটা পুরো বিভাগের কাজ। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছিল। সেই অনুযায়ী ট্রেজারি বিভাগে চালান হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।
বিশ্লেষকেরা যা বলছেন
ডলার কারসাজির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের বর্তমান ডলার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন একটি ভালো উদ্যোগ। ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কাজ কেউ একা করতে পারে না। এর সঙ্গে আরও কারও সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে ডলারের বাজার অস্থিতিশীল ও অতি মুনাফার বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশের মাধ্যমে ব্যাখ্যা চাইতে পারত। তাদের ব্যাখ্যা পাওয়ার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর সঙ্গে ওই সব ব্যাংকের পুরো ব্যবস্থাপনা দায় রয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলার বিক্রি করে অস্বাভাবিক মুনাফা করেছে কয়েকটি ব্যাংক। এ জন্য তাদের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও অধিকতর তদন্ত শুরু করেছে। এতে যাদের নাম পাওয়া যাবে তাঁদের সবার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোলাবাজারে ডলারের দাম
কারসাজির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযান চলার মধ্যেও ডলার বাজারে দামের অস্থিরতা কমছে না। বরং ক্রমেই তা লাগামহীন হয়ে উঠছে। এক দিনের ব্যবধানে ডলারের দাম ৪-৫ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১১৮-১১৯ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। আগের দিন যা ছিল ১১৪-১১৫ টাকা। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিনে বাড়িয়েছে মাত্র ৫ পয়সা। গতকাল মতিঝিলে জামান মানি চেঞ্জার্স হাউসের বিক্রয়কর্মী আদিবা জানান, গতকাল বাজারে ডলারের প্রচুর চাহিদা ছিল। সকালে ডলার ১১৮ টাকা বিক্রয় করা হলেও বেলা গড়িয়ে পড়ায় তা ১১৯ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। যদিও তারা খোলা বাজারে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি ডলার ১১৬-১১৭ টাকায় কিনেছেন বলে জানান।
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
৮ ঘণ্টা আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১০ ঘণ্টা আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে