চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচারের স্থান কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রকে বিশ্বমানের জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাব তৈরি করেছে। প্রস্তাব পাস হলে দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু হবে। অচিরেই আমরা এই স্থানে একটি বিশ্বমানের জাদুঘর দেখতে পাব।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর জেলা প্রশাসক এসব কথা বলেন।

গতকাল মুক্তিযুদ্ধের গান, শোভাযাত্রা, সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষ।

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হয় কর্মসূচি। এ সময় সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সকাল ৯টায় শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, একটি পতাকা ও একটি মানচিত্র দিয়ে গেছেন। আমরা চাই এ দেশের প্রতিটি মানুষ তাঁর অধিকার নিয়ে বাঁচুক। সবাই দারিদ্র্যমুক্ত হোক। আমাদের সন্তানেরা যেন শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।’

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম। পরে আলোচনা সভায় এম এ সালাম ছাড়াও পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল ও সচিব দিদারুল আলম বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ড শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। পরে তাদের দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা হয়।

সংসদের ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে ও সহকারী কমান্ডার সাধন চন্দ্র বিশ্বাসের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ডেপুটি কমান্ডার শহীদুল হক চৌধুরী সৈয়দ, যুদ্ধাহত সহকারী কমান্ডার খোরশেদ আলম এবং অঞ্জন কুমার সেন।

এদিকে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরের উদ্যোগে নগরীর লালদীঘি চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর আলোচনা সভায় সংগঠনের জেলা সভাপতি নুরুল আলম মন্টুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকীর পরিচালনায় বক্তব্য দেন সংগঠনের মহানগর সভাপতি সরফরাজ খান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন শরীফ, নারীনেত্রী দিলোয়ারা ইউসুফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদশা মিয়া, সাহেদ মুরাদ সাকু, সাইফুন নাহার খুশী, পলাশ বড়ুয়া।

জন্মদিন উপলক্ষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নানা আয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড প্রাঙ্গণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কর্মকর্তারা। শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলির সভাপতিত্বে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল আলীম ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ সভায় বক্তব্য দেন।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ।

এরপর শোভাযাত্রা শেষে ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়া ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’-বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ‘বঙ্গবন্ধুর কৃষি ভাবনা’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতা, পথশিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণ ও আলোচনা সভা হয়েছে।

এ ছাড়া চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কলেজ, সিটি করপোরেশন পরিচালিত স্কুল-কলেজগুলোতে বঙ্গবন্ধুকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করা হয়েছে।